নিগুম বিচারে সত্য তাই গেলো জানা
মায়েরে ভজিলে হয় তার বাপের ঠিকানা। - লালন ফকির।
ব্যাখ্যার দরকার মনে করছি না। ভাবলেই বুঝবেন। বর্তমানে আমরাতো আসলে কোনোকিছুতেই বিশ্বাস করতে পারি না।
কুকুরের মাংস প্রমাণিত-
জেল-জরিমানা, রেস্টুরেন্ট বন্ধ, আরো অনেক কিছু....
খাসির মাংস প্রমাণিত-
১। ল্যাবকে টাকা দিয়া ম্যানেজ করছে।
২। কর্তৃপক্ষ ঘুষ খাইছে....
শেষে মানলাম তা যদি খাসির মাংসই হয় তবে, সুলতানের হারানো কাস্টমার কে এনে দিবে? মানুষের মনে বিশ্বাস ধরাতে পারবে কেউ? এই নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট কি শুধুই সুলতানের ওপর পড়ল? না কি সারাদেশের রেস্টুরেন্টের ওপর পড়ল?
একটা লাঙ্গল বানাতে ঠুকঠুক করে কেটে কেটে শতশত কোপ দিয়ে বানাতে হয়। কিন্তু মাথা হট পাবলিক ঠুকঠুক করে না কেটে যদি মাঝ বরাবর কোপ বসিয়ে দেয় তো কি দাঁড়াবে? লাঙ্গল বানানো যাবে?
এখন একটামাত্র কলেই ভোক্তা অধিকারের লোক এসে হাজির হয়। অথচ যথাযথ জায়গায় কল না দিয়ে বিশ্ববিখ্যাত আদালত ফেজবুকে ভিডিও ছাড়লেন। কয়েক মাস আগে জেনেছিলাম, প্রচুর কল যায় ৯৯৯ নম্বরে। যার অধিকাংশই ৯৯৯ এর সাথে সম্পর্কিত না হওয়ায় Others কলে ফেলে দেয়। আর এই আদার্স কলের সংখ্যাই বেশি। ভিডিও যিনি ছেড়েছিলেন তিনিও ৯৯৯ এ কল দিয়েছিলেন। তাকে বিএসটিআই এর সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল। তবে আমার মনে হয় ভোক্তা অধিকার কিংবা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকেও জানানো যেত।
যাই-হোক, সুলতান বলতেই পারে:
১। টাকা দেইনি জন্য এমন ভিডিও ছাড়ছে
২। আমাদের কম্পিটিটর আমাদের সম্মান ক্ষুন্ন করছে।
হ্যাঁ, প্রাণের দুধের টেংরা মাছ, বাটারবনে জীবন্ত কেঁচো এগুলা যমুনা টিভির নিছক মিথ্যাচার ছিল। আর আজ কে যে সত্য কে মিথ্যা তা ওই লালন ফকিরের কথার মতোই বলতে হবে, মায়েরে ভজিলে হয় তার বাপের ঠিকানা।
মন চাইল আর ভিডিও ফেজবুকে ছেড়ে দেওয়া গেল? তাহলে দেশের আইন-আদালতের কি দরকার? বিশ্ববিখ্যাত ফেজবুক আদালতে সবাই উকিল, সবাই জজ সবাই বারিস্টার। কয়েক বছর আগে ছেলেধরা সন্দেহে একজন মহিলাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এছাড়াও গণপিটুনি দিয়ে কাউকে মেরে ফেলা আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশে খুবই মজার বিষয়। এই পিটুনিতে কত জীবন গেছে তার হিসেব কে রাখে? তবে ছেলেধরা সন্দেহে রেনুকে যখন হত্যা করা হয়েছিল তখন স্মার্ট বাংলাদেশি হিসেবে আমরা অনেক ধিক্কার জানিয়েছিলাম।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়েছে তেমনই আরেক গণপিটুনির মাধ্যম। এলাকার কোনো রেস্টুরেন্টের খাবার ভালো লাগল না। দরে দামে ঝগড়া করে আসছেন। বাসায় এসে হাড়ের টুকরার ছবি দিয়ে ভিডিও ছাড়ুন। মুরগির পরিবর্তে কাকের মাংস খাওয়াচ্ছে ডাইনীস কিচেন। বাকিটা আমরাই লাইক, কমেন্ট, শেয়ার দিয়ে গণপিটুনির কাজটা সেড়ে দিব।
এতে কার ব্যবসা গেল, কার সংসার গেল, সেই ব্যবসার ওপর নির্ভর করে যারা চলত তাদের কী হলো এতো ভাবার সময় আমাদের নাই। ঠিক যেমন চিলে কান নিয়েছে টাইপের কারবার। এখন যদি কুকুরের মাংসের প্রমাণ মেলে, ঠিকই হয়তো কেউ কেউ এসে কমেন্ট ফলাবে যে, দেখছেন কুকুরের মাংস খাওয়াইছে? আমার কথা হলো যদি সত্যিই কুকুরের মাংসের প্রমাণ না মেলে তবে এভাবে কারো ব্যবসায় হামলা করা কি ঠিক হয়েছে? এই আচরণ আর গণপিটুনীর মাঝে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় কি?
আমাদের এক পরিচিত আত্মীয় অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। রেস্টুরেন্টে বসে আছেন। এক লোক, এক মহিলার হাতের ব্যাগটা নিয়ে দৌঁড় দিল। মহিলা চিৎকার-চেচামেচি কিছুই করলেন না। আমার আত্মীয় জিজ্ঞেস করায় বললেন, চোরের পিছে যদি আমিই দৌঁড়াই তো পুলিশের কাজ কী?
দেশে যারা ভেটেরিনারি মেডিসিনের উপর পড়াশোনা করেন তারা কম্পারেটিভ এনাটমি নামক একটা সাবজেক্টও পড়েন। তারাই জানেন এই সাবজেক্ট কতটা কঠিন। কারণ অসংখ্য প্রাণির হাড়, মাংস, লোমসহ নানাবিধ উপকরণ দেওয়া থাকবে। তা থেকে আলাদা আলাদা প্রাণী সনাক্ত করতে হবে। যা শুধু হাড় চিকন না কি মোটা তা দিয়ে আদৌ বোঝা সম্ভব নয়। হাড়ের কোন কোন অংশ দেখলে বোঝা যাবে সেটা বোঝাও আম-পাবলিকের দ্বারা সম্ভব নয়।
দেশ হয়তো ডিজিটাল থেকে স্মার্ট হবে। কিন্তু আমাদের মন-মস্তিষ্ক, চিন্তা-ভাবনা স্মার্ট হবে কী? গণপিটুনিকে ধিক্কার জানাই কিন্তু ভার্চুয়াল গণপিটুনিকে ধিক্কার জানাই না কেন?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৭:১৯