somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণপিটুনিকে ধিক্কার জানাই কিন্তু ভার্চুয়াল গণপিটুনিকে ধিক্কার জানাই না কেন?

১০ ই মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিগুম বিচারে সত্য তাই গেলো জানা
মায়েরে ভজিলে হয় তার বাপের ঠিকানা। - লালন ফকির।
ব্যাখ্যার দরকার মনে করছি না। ভাবলেই বুঝবেন। বর্তমানে আমরাতো আসলে কোনোকিছুতেই বিশ্বাস করতে পারি না।


কুকুরের মাংস প্রমাণিত-
জেল-জরিমানা, রেস্টুরেন্ট বন্ধ, আরো অনেক কিছু....

খাসির মাংস প্রমাণিত-

১। ল্যাবকে টাকা দিয়া ম্যানেজ করছে।
২। কর্তৃপক্ষ ঘুষ খাইছে....

শেষে মানলাম তা যদি খাসির মাংসই হয় তবে, সুলতানের হারানো কাস্টমার কে এনে দিবে? মানুষের মনে বিশ্বাস ধরাতে পারবে কেউ? এই নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট কি শুধুই সুলতানের ওপর পড়ল? না কি সারাদেশের রেস্টুরেন্টের ওপর পড়ল?

একটা লাঙ্গল বানাতে ঠুকঠুক করে কেটে কেটে শতশত কোপ দিয়ে বানাতে হয়। কিন্তু মাথা হট পাবলিক ঠুকঠুক করে না কেটে যদি মাঝ বরাবর কোপ বসিয়ে দেয় তো কি দাঁড়াবে? লাঙ্গল বানানো যাবে?

এখন একটামাত্র কলেই ভোক্তা অধিকারের লোক এসে হাজির হয়। অথচ যথাযথ জায়গায় কল না দিয়ে বিশ্ববিখ্যাত আদালত ফেজবুকে ভিডিও ছাড়লেন। কয়েক মাস আগে জেনেছিলাম, প্রচুর কল যায় ৯৯৯ নম্বরে। যার অধিকাংশই ৯৯৯ এর সাথে সম্পর্কিত না হওয়ায় Others কলে ফেলে দেয়। আর এই আদার্স কলের সংখ্যাই বেশি। ভিডিও যিনি ছেড়েছিলেন তিনিও ৯৯৯ এ কল দিয়েছিলেন। তাকে বিএসটিআই এর সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল। তবে আমার মনে হয় ভোক্তা অধিকার কিংবা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকেও জানানো যেত।

যাই-হোক, সুলতান বলতেই পারে:

১। টাকা দেইনি জন্য এমন ভিডিও ছাড়ছে
২। আমাদের কম্পিটিটর আমাদের সম্মান ক্ষুন্ন করছে।

হ্যাঁ, প্রাণের দুধের টেংরা মাছ, বাটারবনে জীবন্ত কেঁচো এগুলা যমুনা টিভির নিছক মিথ্যাচার ছিল। আর আজ কে যে সত্য কে মিথ্যা তা ওই লালন ফকিরের কথার মতোই বলতে হবে, মায়েরে ভজিলে হয় তার বাপের ঠিকানা।

মন চাইল আর ভিডিও ফেজবুকে ছেড়ে দেওয়া গেল? তাহলে দেশের আইন-আদালতের কি দরকার? বিশ্ববিখ্যাত ফেজবুক আদালতে সবাই উকিল, সবাই জজ সবাই বারিস্টার। কয়েক বছর আগে ছেলেধরা সন্দেহে একজন মহিলাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এছাড়াও গণপিটুনি দিয়ে কাউকে মেরে ফেলা আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশে খুবই মজার বিষয়। এই পিটুনিতে কত জীবন গেছে তার হিসেব কে রাখে? তবে ছেলেধরা সন্দেহে রেনুকে যখন হত্যা করা হয়েছিল তখন স্মার্ট বাংলাদেশি হিসেবে আমরা অনেক ধিক্কার জানিয়েছিলাম।

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়েছে তেমনই আরেক গণপিটুনির মাধ্যম। এলাকার কোনো রেস্টুরেন্টের খাবার ভালো লাগল না। দরে দামে ঝগড়া করে আসছেন। বাসায় এসে হাড়ের টুকরার ছবি দিয়ে ভিডিও ছাড়ুন। মুরগির পরিবর্তে কাকের মাংস খাওয়াচ্ছে ডাইনীস কিচেন। বাকিটা আমরাই লাইক, কমেন্ট, শেয়ার দিয়ে গণপিটুনির কাজটা সেড়ে দিব।

এতে কার ব্যবসা গেল, কার সংসার গেল, সেই ব্যবসার ওপর নির্ভর করে যারা চলত তাদের কী হলো এতো ভাবার সময় আমাদের নাই। ঠিক যেমন চিলে কান নিয়েছে টাইপের কারবার। এখন যদি কুকুরের মাংসের প্রমাণ মেলে, ঠিকই হয়তো কেউ কেউ এসে কমেন্ট ফলাবে যে, দেখছেন কুকুরের মাংস খাওয়াইছে? আমার কথা হলো যদি সত্যিই কুকুরের মাংসের প্রমাণ না মেলে তবে এভাবে কারো ব্যবসায় হামলা করা কি ঠিক হয়েছে? এই আচরণ আর গণপিটুনীর মাঝে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় কি?

আমাদের এক পরিচিত আত্মীয় অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। রেস্টুরেন্টে বসে আছেন। এক লোক, এক মহিলার হাতের ব্যাগটা নিয়ে দৌঁড় দিল। মহিলা চিৎকার-চেচামেচি কিছুই করলেন না। আমার আত্মীয় জিজ্ঞেস করায় বললেন, চোরের পিছে যদি আমিই দৌঁড়াই তো পুলিশের কাজ কী?

দেশে যারা ভেটেরিনারি মেডিসিনের উপর পড়াশোনা করেন তারা কম্পারেটিভ এনাটমি নামক একটা সাবজেক্টও পড়েন। তারাই জানেন এই সাবজেক্ট কতটা কঠিন। কারণ অসংখ্য প্রাণির হাড়, মাংস, লোমসহ নানাবিধ উপকরণ দেওয়া থাকবে। তা থেকে আলাদা আলাদা প্রাণী সনাক্ত করতে হবে। যা শুধু হাড় চিকন না কি মোটা তা দিয়ে আদৌ বোঝা সম্ভব নয়। হাড়ের কোন কোন অংশ দেখলে বোঝা যাবে সেটা বোঝাও আম-পাবলিকের দ্বারা সম্ভব নয়।

দেশ হয়তো ডিজিটাল থেকে স্মার্ট হবে। কিন্তু আমাদের মন-মস্তিষ্ক, চিন্তা-ভাবনা স্মার্ট হবে কী? গণপিটুনিকে ধিক্কার জানাই কিন্তু ভার্চুয়াল গণপিটুনিকে ধিক্কার জানাই না কেন?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৭:১৯
১২টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×