দুনিয়ার মানুষগুলো (সবাই না) এত বোকা কেন? দুনিয়ায় একমাত্র আমিই, যার গায়ে লিখা থাকে আমাকে ছুইও না, আমি বিষ। আমাকে ব্যাবহার করলে মরবে। তার পরোও মানুষ আমাকে ছুয়,ব্যাবহার করে। শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত, ধনি কিংবা গরিব, পুরুষ-নারী,কিশোর,যুবক, বৃদ্ধ সকলেই। অথচ, আমি নিজেই ঘোষনা দিচ্ছি- "আমি বিষ"।
আমি ধোয়া ছাড়া আর কিছু নই। আমি যেমনি জ্বলি ঠিক তেমনি অন্যকেও জ্বালিয়ে মারি। শুধু কি মানুষকেই জ্বালি? কত বাড়ি-ঘর,অফিস-আদালত, কল কারখানা পর্যন্ত জ্বালিয়েছি তার কোন ইয়ত্তা নেই।আর কেনই বা জ্বালাবো না? আমাকে পরম আরাদনার সহিত ব্যাবহার করে আমার অবশিষ্টাংশ তাচ্ছিল্যের সহিত যেখানে সেখানে ফেলে দেয়।আমার প্রচন্ড গোসসা হয় তাই আমিও সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে রাগ নিবারণ করি।
পৃথিবীতে কত অসংখ্য মানুষ আমাকে ব্যাবহার করে মরেছে তার কোন হিসাব নেই।যাদের কাছে হিসাব আছে, যারা জানে আমাকে ব্যাবহারের প্রতিফল কি, সেই ডাক্তাররাও আমাকে ব্যাবহার করে।আমি হেসে মরি,যখন ডাক্তাররা নিজে আমাকে ব্যাবহার করে অন্যকে উপদেশ দেয় আমাকে ব্যাবহার না করার। মসজিদের হুজুর কিংবা মাদ্রাসা শিক্ষিতরাও আমাকে ব্যাবহার করে, আমাকে ব্যাবহার করা মাকরুহ এই ফতোয়া দিয়ে।
হা, আমি এক সময় মাকরুহ ছিলাম।যখন চিকিৎসা বিজ্ঞান এতটা উন্নত ছিলোনা।যখন মানুষ জানতে পারেনি আমার মাঝে কি আছে। এখন সময় বদলেছে,চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে,তারা আমার মাঝে কি আছে তা স্পষ্ট করতে পারছে। তাই বর্তমানে আমাকে ইসলামিক স্কলার ইউসুফ আল কারদাভী হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন এবং তার এই ফতোয়াকে বেশিরভাগ আলেম উলামা গ্রহণ করেছেন।শুধু তারা গ্রহণ করতে পারেন নি, যারা আমাকে ব্যাবহার করবেন।
আমাকে নানাভাবে, নানা আংগিকে ব্যাবহার করা হয়।গরিব- ধনি সকলেই যাতে আমাকে ব্যাবহার করতে পারে সেভাবে সহজলভ্য করে আমাকে বানানো হয়। আমি যখন বড়লোকদের হাতে পড়ি তখন আমার খুব ভালো লাগে।আর গরিবের হাতে পড়লে খারাপ লাগে।আবার যখন রাজা বাদশাদের হাতে আমি শোভা পাই তখন আমার সুখের সীমা থাকে না।তরুণ -যুবকরা আমাকে স্মার্টলি ব্যাবহার করে।হতাশাগ্রস্ত মানুষগুলো আমার মাঝে আশা খুঁজে,সুখ খুঁজে।বিশেষ করে প্রেমে ব্যার্থ হওয়া যুবক যুবতীরা আমার মাঝে তাদের হারানো প্রেম খুঁজে পায়। অথচ তখন তারা জ্বলছে আর আমি তাদেরকে জ্বলতে আরো সাহায্য করি।
আমিতো অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। হাজার হাজার টাকা মানুষ আমার জন্য অপচয় করে।না আমি পেটের ক্ষুধা নিবারণ করি আর না মনের ক্ষুধা। আমিতো মনের ক্ষুধা কে আরোও বাড়িয়ে দেই।যার কারনে যারা একবার আমার সংগ পেয়েছে তারা আর কোনদিন আমাকে ছাড়তে পারেনি।আমাকে দিয়ে যে হাজার টাকার অপচয় করা হয় তা দিয়ে অনেক উন্নয়নমুলক কাজ করা যেত।অসংখ্য গরিব অসহায় মানুষদের সাহায্য করা যেত।
ক্যান্সার সহ নানা রুগের উপসর্গ এই আমিই।অথচ, আমাকে কি আয়েশেই না ব্যবহার করা হয়।আমি নিজেই নেশা। তারপরও বর্তমান সময়ে আমার মাঝে আরোও নানা জাতের জিনিষ ঢুকিয়ে ব্যবহার করে অনেকেই।নেশার উপর বাড়তি নেশা।উন্নত,অনুন্নত সকল দেশেই আমি সমানভাবে ব্যবহৃত হচ্ছি।যারা মদ পান করেন তারা মদ পানের সময় আমি সাথে না থাকলে যেন মদ পানই বৃথা হয়ে যাচ্ছে।ঠিক তদ্রূপ, চা পানের সময় ও অনেকে তার আংগুলের মধ্যখানে রাখেন। অনেকে মনে করেন যে যিনি আমাকে ব্যবহার করছেন শুধু তিনিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।কিন্তু না। আমি পাশে থাকা অন্যের ও সমান ক্ষতির কারণ। আমার ধোয়া যাদেরই নাক দিয়ে প্রবেশ করবে আমি তাদেরকেও রক্ষা দেইনা,সে আমাকে ব্যবহার করুক বা না করুক।যে কোন মানুষের চরিত্র নষ্টটা কিন্তু আমাকে দিয়ে শুরু হয়। তাই বলে আমাকে ব্যবহার করে সবাই চরিত্রহীন হয়ে যায় এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই।পৃথিবীর সকল ধর্মীয় মানুষের কাছে, সকল পেশার মানুষের কাছে আমি সমানভাবে সমাদৃত। মজার ব্যাপার হলো যারা আমাকে ব্যবহার করেন তারা জেনে শুনেই আমাকে ব্যবহার করেন।তাইতো দেখা যায়, তাদের প্রিয়জন যাতে আমার নাগাল না পায় সেদিকে তারা সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।
একটা কষ্টের কথা বলে শেষ করতে চাই,আর তা হলো- আমি বিষ,ধুমপান বিষ পান,যে ধুমপান করলো সে মরন ডেকে আনলো ইত্যাদি লিখা আমার গায়ে দেখেও মানুষ আমাকে ব্যবহার করে, আমার কাছে আসে। অথচ, যার গায়ে লিখা আছে " আমি সেই কিতাব যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই, আমি আল্লাহভীরুদের জন্য পথপ্রদর্শক "সেই কিতাবকে মানুষ অবজ্ঞা করে,তার থেকে দূরে থাকে।