somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টমি ও তার মালকীনের গল্প

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





রাত দশটা , গুনে গুনে আটবার বেল।
-কে?
আমি।
-আমি কে?নাম নাই?
আরে ধুর দরজা খোল তো!
-ও তুমি। এতোবার বেল দেয়ার কি আছে। আজব!
ডিনার রেডি কর,আমি গোসল করে আসি।
গোসল শেষ করে ডিনারে...
এই এদিকে আসো তো একটু?
কি রান্না করছো , মাইনসে খায় এগুলো?(চিবোতে চিবোতে)
-আরে কর কি! কর কি !! এটা তো তোমার না,টমির !!!
ওয়াক থু! আগে বলবানা!! বিলাইয়ের খাবার টেবিলে ক্যান!!! কতবার না বলছি বিলাইয়ের খাবার টেবিলে রাখবানা?
-এইটা বিলাই না। এইটা টমি ।
হ বুঝছি, এইটা টমি ।ক্ষিদা লাগছে খুব। বসের চামচামি করতে করতে দুপুরে খাওয়ার সময় পাইনাই।
-আমি অনেক চিন্তা করে দেখলাম, তোমার বসটা আসলে মানুষের জাতই না।
ঠিক বলছো , এখন মাইনসের কোন খাবার টাবার থাকলে দাও।
-আজ ভাত ছাড়া কিছুই রান্না হয় নাই, টমি অসুস্থ। আমিও কিচ্ছু খাইনাই সারাদিন, টমিটার চিন্তায়। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে, দেখো দেখো?
আরে আরে,তুমি কাঁদছো কেনো??
-আমার টমির জ্বর আর আমি কাঁদবোনা? আমার বদলি তুমি কাঁদবা? তুমি কতবার মারার চেষ্টা করছো ওরে,আমি কিচ্ছু বলি নাই। কত নিষ্ঠুর তুমি, একটা ফোটা পানিও আসেনা চোখ দিয়ে...
আচ্ছা ঠিক আছে , পরে কাঁদবো । সারাদিন খাইছো কিছু?
-উহু, খাবার গলা দিয়ে নামে না। টমি বোধহয় বাঁচবেনা......
আচ্ছা ঠিক আছে , বাঁচা মরা পরে দেখা যাবে। রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু নিয়ে আসি, কি খাবা?
-থাই সুপ। টমির জন্যেও...( কাঁদতে কাঁদতে)

থাই স্যুপ, টমি,থাইস্যুপ টমি...হাটছি অন্ধকারে ,অজান্তেই মুখ দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। টমি আর থাই স্যুপ এই দুটুকেই মনে প্রানে ঘৃণা করি। ঢাকায় যখন প্রথম এসে মামার বাসায় উঠি তখন থেকেই শত্রু থাই স্যুপের সাথে পরিচয়। যেদিন মুখে দিয়েছিলাম প্রথম তখন মনে হয়েছিলো পচা পাট ভূল করে বোধ হয় খাচ্ছি...
কি আজব ব্যাপার! একটা দোকান ও খোলা নাই! কাল হরতাল, এ জন্যই হয়তো এই অবস্থা।
বাসায় ফিরে দেখি দরজা খোলা। দরজা খোলা কেনো? টমিকে কোলে নিয়ে সে সোফাতেই ঘুমিয়ে আছে।। ক্ষিদে আর টমির জন্য টেনশন, এই দুইয়ের ফসল ঘুম বুঝতে বাকী রইলোনা।
কিছু না কিছু তো একটা করতেই হবে , পাগলীটা সারাদিন কিছু খায়নাই। ফ্রিজে মানুষের খাবার বলতে শুধু মলাই শুটকি আছে ,বাকি সব মাননীয় টমি সাহেবের। বাজে ১১ টা। ঝটপট পেয়াজ কাটা আর কান্না দুইটাই সফলভাবে শেষ করে রান্নায় হাত দিলাম, আমি শুটকি একটু ভালোই রাধি। পেয়াজ তেলে শুটকিগুলো কিছুক্ষন ভেজে মসলা দিলাম এখন লবন নিয়ে একটু ঝামেলা, যাই হোক একটু একটু করে চারবার লবন দেয়া শেষ করে পানি দিয়ে ঢেকে টমি পাগলীর কাছে এসে বসলাম ।
আজকাল ওর দিকে তাকালেই বটগাছের কথা মনে হয়।

জীবনের প্রথম ওকে আবিষ্কার করি ভার্সিটির মোটা বটগাছটার নিচে, একটা সাদা বিড়াল কোলে নিয়ে বসে ছিলো । । কোন ছেলের সাথে মেশা তো দূরে থাক কথা বলছে এমন নজির নাই, এইটা ওর একমাত্র বান্ধবীর মতামত।
কথা বলবো বলবো বলে কত বার যে ফিরে এসেছি ,কতরাতে যে আমি ঘুমের ঘোরে ওর নাম নিয়ে প্রলাপ বকেছি তা একমাত্র নাঈম জানে। নাঈম ছিলো আমার বন্ধু, রুমমেট এবং প্রথম বাঙ্গালী যে কিনা জীবনে কোনদিন মূড়ি খায় নাই। আজ নাঈম মস্ত অফিসার, তবে এখনো মূড়ি খায়না।
যাই হোক , একদিন বুকে সাহস নিয়ে ওর কাছে গিয়ে বসলাম ...
আপু
-বলেন ভাইয়া
তোমার বিড়ালটা কই। দেখছিনা যে ?
-ঐটা বিড়ালনাতো ভাইয়া, টমি। আমার বান্ধবী তৃপ্তির।
টমি খুব সুন্দর।
তোমাকে প্রায়ই ৮ টার দিকে একা এই বটতলায় দেখি, ব্যাপার কি?
-আসলে ভাইয়া , তৃপ্তি আমাদের ডিপার্টমেন্টের ইবরাহিম স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ে । টমি ওর সুইটহার্ট, সারাদিনর টমিকে নিয়ে ঘুরে। কিন্তু , স্যার ওকে নিয়ে ভেতরে যেতে দেয়না। রুমে নাকি জানোয়ার এলাও না। আমার ও টমিটা পছন্দ, খুব কিউট না?

হ,কিউট।

তৃপ্তির টমির সুবাদে প্রতিদিন বটতলায় বসে গল্প করতাম, রাতে একটা করে মজার টপিক্স মুখস্ত করতাম আর সকালে হাফেজের মত গলগল করে ছাড়তাম।
একদিন একটা বড় জোকস খুব ভালোভাবে মুখস্ত করে আগে আগে বটতলায় বসে আছি। জোক্সটা মনে করছি আর নিজে নিজে হাসছি। একঘন্টা ,দুইঘন্টা তিনঘন্টা বসে আছি কিন্তু সে লাপাত্তা । কিছুক্ষন পর আজানের শব্দ শুনতে পেলাম। আজকে আবার কি হলো, এতো তাড়াতাড়ি আজান ?
ওফফ!!! আজ শুক্রবার, তৃপ্তির প্রাইভেট নাই তারমানে টমি সে তিনটাই নাই ।
একদিন দুইদিন তিনদিনের দিনেও তার দেখা পেলামনা। সে কি আর কোনদিনই আসবেনা নাকি বিয়ে হয়ে গেছে নাকি অন্য কিছু ? অজানা একটা ব্যাথায় তখন কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছিলো , মনে হচ্ছিলো কলিজা বেড়িয়ে আসবে এক্ষুনি।
চতুর্থদিন মঙ্গলবার, বসে আছি বটতলায় । চোখের নিচে কালি উশখো খুশখো চুল প্যান্ট হাটু অবধি উঠানো, রাস্তার দিকে তাকিয়ে । আজ বলেই ফেলবো, আমি তাকে চাই। যে কোন মূল্যেই যেভাবেই হোক।
ঐ যে আসছে, হ্যা ঠিকই আসছে...টমি নাই। মারা গেলো নাকি?

কেমন আছো? টমি কই ? এতোদিন আসলানা কেনো?
-ভাইয়া ,তৃপ্তির বিয়ে হয়ে গেছে। আমি আর আসবোনা ,এটা বলতেই এখানে এসেছি।
নাআআ!
-কি না?
ভালবাসি
-আমিও , খুব ভালবাসি খুব খুব মিস করবো টমোটাকে।(কান্না কান্না ভাব)

তুমার জন্যে আমি সারা দেশের টমিদের হাজির করবো তোমার জন্য আমি টমি হবো তোমাকে আমি ভালবাসি বাচবোনা তোমাকে ছাড়া আমি টমি বানানোর ব্যাবসা দেবো আমি টমিদের ভালবাসি তিনদিন ধরে কিছু খাইনাই আমি একটা ভালো চাকরি পাইছি আমি তোমাকে টমি কিনে দেবো গত তিনদিন ধরে ব্রাশ করিনাই গোসল করিনাই আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই ঘুমাইনাই আমি টমি হয়ে সারাদিন তোমার পেছন পেছন ঘুরবো আমি তোমাকে ভালবাসি আমি সারা দুনিয়ার টমিদের ভালবাসি ......


তরকারীর ঝোল গড়িয়ে পড়ার শব্দ শোনে কিচেনে গেলাম। মাশাআল্লাহ, টেস্ট করে দেখি খাওয়ার যোগ্য!!!
তাড়াতাড়ি রান্না শেষ হয়েছে , এই ভেবে তৃপ্তির একটা হাসি দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত বাজে ১২ টা!
সব কিছু ডাইনিং এ সাজিয়ে ওকে খাওয়ার জন্য ডাক দিয়েই টেনে তুলে বসালাম, চোখে দুনিয়ার ঘুম ।
ডাইনিং এ তরকারী দেখে অবাক...
-কে রান্না করছে?
আমি
-ওরে বাপরে তুমি রান্না করতেও জানো?(চোখের দিকে তাকিয়ে)

-তুমি আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসো, তাইনা?(নিচে তাকিয়ে)
তোমার কি মনে হয়?
-আমারও তাই মনে হয়।
তুমি বাসোনা?
- তুমি ই বুঝে নেও...
কি বুঝবো?
-যা বোঝার
কি বোঝার?
-আজ কয় তারিখ?
কথা পাল্টাচ্ছো কেনো?
-জানিনা
টমির চেয়ে কম নাকি বেশি? 
-বেশি...অনেক বেশি ।টমির মালকীনের চেয়েও বেশি .........  








সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২০
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×