somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হৃদয় আর হৃদির গল্প

১৮ ই জুন, ২০১২ রাত ৮:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটির নাম হৃদি আর ছেলেটির নাম হৃদয় । কি অবাক রকমের মিল , একই ব্যাচে সুমন স্যারের কোচিং এ পড়ত তারা । হৃদি প্রথম যেদিন স্যারের বাসায় এসেছিল সেদিনই নামটা শুনেই চমকে উঠেছিল হৃদয় । একটা মেয়ে নামের সাথে তার নামের এরকম মিল ! মেয়েটির দিকে তাকাতেও লজ্জা পাচ্ছিল সে । এরকম নাম রাখার জন্য মনে মনে নানা বাড়ির সবার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে লাগল । আর অন্যান্য সহপাঠীরা তারদিকে এমন ভাবে মুচকি মুচকি হাসছিল যে নতুন লজ্জা লজ্জা বর-বধুকে বন্ধুরা নানাভাবে অপদস্থ করেও এভাবে হাসে না ।

বন্ধু- বান্ধবীর অনেকেই সদ্যকৈশোর এ প্রেম-ভালবাসাবাসি নিয়ে ব্যাস্ত। প্রেম-ভালবাসা মানে সময় নষ্ট, মোটামুটি এরকম জীবন দর্শন ই লালন করে হৃদয় । ভারী কাঁচের মোটা চশমা দিয়ে বিভিন্ন মোটামোটা বই পড়ে । উপন্যাসের যুগলগুলোর প্রেম-প্রেম বেহায়াপনা পড়তে ভালই লাগে কিন্তু নিজেকে ফুলটাইম নায়ক কল্পনা করলেও নায়িকার জন্য পার্টটাইম একেকবার একেকজনকে কল্পনা করে বই পড়া শেষ করতে হয় তার । আজ এ নতুন আসা মেয়েটাকে মনে ধরে যায় , মনে হয় যেন তার পাজরের হাড়েই গড়া দুষ্টু দুষ্টু মেয়েটা । মেয়েটাও তারমত লুকিয়ে লুকিয়ে তাকাচ্ছে তার দিকে । তবে ফালতু ভালবাসাবাসি করে সময় নষ্ট করার লোক নয় সে , তাই আগে যেয়ে কথা বলার তার কোন ইচ্ছাই নেই ।



মাঝে মাঝে দেখা হয় , চোখাচোখি হয় কিন্তু কথা হয় না । হৃদির পুলিশ অফিসার বাবা তাদের পাশাপাশিই বাসা ভাড়া নিয়েছেন । মা প্রতিদিন এসে দেমাগী মেয়েটার এতো এতো প্রশংসা করে যা মেয়েটার প্রতি মেজাজ আরো আরো খারাপ করে দেয় । হৃদি একটু চেষ্টা করলেও হৃদয়ের তাচ্ছিল্যের কারনে ভালবাসা তো দূরে থাক একটা ভাল বন্ধুত্বও গড়ে উঠেনা । জলের মধ্যে আকাশ আর চাঁদ-তারা যেমন কাছাকাছি মনে হয় ঠিক তেমনই কাছাকাছি থাকলেও তারা ঠিকই কিন্তু যোজন যোজন দূরেই পড়ে থাকে । বার্ষিক পরীক্ষায় ছেলে মেয়েদের সম্মিলিত ফলাফলে হৃদয় প্রথম আর হৃদি দ্বিতীয় হয়ে তাদের মাঝে প্রতিযোগীতা আরো বাড়তে থাকে ।

১৯৯৮ সালের জানুয়ারি মাস । রোমান্টিক ছবি হিসেবে টাইটানিক নিয়ে ব্যপক হই চই চলছে । একদিন বন্ধুরা সবাই মিলে একসাথে দেখেও ফেলে ছবিটা । ছবির নায়িকা রোজ অনেকটা হৃদি-হৃদি চেহারা । রোজের স্থলে বাস্তব জীবনের কাউকে দাড় করাতে গেলে সে বদমাশ মেয়েটার কথাই মনে পড়ে । অসহ্য , পড়া বাদ দিয়ে খালি তার কথাই মনে আসে । দিন যায় জগতের স্বাভাবিক নিয়মে বৈরিতা কেটে তাদের মাঝে একটু একটু করে বন্ধুত্বও হয় । কয়েকদিন ধরে প্রবল বর্ষনে মাঠ-ঘাঠ প্লাবিত হয়ে আছে । সেদিন সকালে নির্মল আকাশ থেকে মায়া মায়া রোদের ছোঁয়া পেয়ে সবাই হাফ ছেড়ে স্কুলে যায় , টিফিনের আগেই গুরু গুরু গর্জন আর ঘন কালো মেঘে ছেয়ে আসে আকাশ । কিছুক্ষনের মধ্যেই সো সো বাতাস আর নিস্তব্দ প্রকৃতি, বড় ধরনের ঝড় হওয়ার পূর্বাভাস । স্কুল ছুটি দেওয়া হয় ।

একেই বলে নিয়তি । হৃদি ছাতা আনেনি তাই মন খারাপ করে স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে । বৃষ্টি পড়া শুরু করেছে , ক্ষনে ক্ষনে আরো বাড়ছে । বাদলা হাওয়ার এ বাদল দিনে স্কুল ছুটি দিয়েছে তাই হৃদয়ের মেজাজ খুব ফুরফুরে আর খুশি-খুশি । হৃদিকে স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ,

- কি রে বাড়িত যাবিনা ?
- না , ছাতা আনিনাই । বৃষ্টি কমলে যাব ।
- বৃষ্টি তো কমবে বলে মনে হয় না , উলটো বড় ধরনের ঝড় আসতে পারে । তুই আমার সাথে চল ।

বিধাতার এ কোন খেলা ? এরকম একটা দুর্যোগ দিয়ে দুজন দুছাতার তলের মানুষকে এক করে পাশাপাশি এক ছাতার নিচে নিয়ে এসেছে !

-এই ভিজে যাচ্ছিস , ভিজে গেলে জ্বর করবে তো । আরেকটু কাছে আয় ।

বৃষ্টি মনেহয় তাদের দুজনকে আর একটু কাছে নিয়ে আসার জন্য আরো জোর বেগে পড়তে শুরু করল । কাছে আসায় দুজনের শরীরের স্পর্শ এ শীতল আবহাওয়ায় তাদের শরীরের তাপ আদান-প্রদান করছিল । এর সাথে চুপটি করে কখন যে মনের উষ্ণতাও লেনা-দেনা হয়ে গেল তা বোধহয় কেউ জানতেই পারেনি ।

ভয়াবহ বন্যা দেখা দিল সেবার । স্কুল বন্ধ , সারাদিন বাসায় বন্দি সবাই । কোথাও যাওয়ার তেমন একটা সুযোগ নাই । নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাহির হয় না । ঘুরে ফিরে তাই হৃদির সাথেই আড্ডা । মেয়েটা যে এত মিশুক , এত সুন্দর আগে কেন যে বুঝতে পারেনি এজন্য বড় আফসুস হৃদয়ের । কিভাবে যে ভালো লেগে যায় হলুদ সুন্দর মেয়েটাকে ! চোখে চোখে কথা হয় কিন্তু মুখ ফুটে বলা হয় না । একদিন হৃদয় অংকের নোট খাতা হাওলাত দেওয়ার সময় খাতার ভিতর রক্তগোলাপ আর নীল কার্ড কিনে লিখে দিল, “আমি তোমাকে ভালবাসি হৃদি , প্লিজ ফিরিয়ে দিও না । জবাবের অপেক্ষায় থাকলাম । ” কয়েকদিন পর সে খাতা ফেরত দিল । খাতার প্রতিটা পৃষ্ঠা তন্ন তন্ন করে খুজেও হৃদির কোন উত্তর পেল না , পেলনা তার দেওয়া নীল কার্ড আর রক্ত গোলাপ ও । হৃদির মনোভাব বুঝতে পেরে হতাশ হয়ে ঘুমাতে গেল সে ।

এভাবে বানের জলের সাথে ভালোবাসাও ভেসে গেল । কয়দিন পর হৃদির বাবা বদলী হয়ে অন্য শহরে চলে গেলে তাদের মাঝে আর কোন যোগাযোগ ই থাকল না । হৃদয় মান করেই আর কোন রকম যোগাযোগ রাখেনি । কারো জন্য কারো জীবন প্রবাহ থেমে থাকে না , আপন গতিতেই এগিয়ে যায় । প্রথম কয়েকদিন মনমরা থেকে , “কেন দূরে থাক...” টাইপের গান শুনত আর কেঁদে কেটে বালিশ ভিজাত । তারপর আবার প্রাত্যহিক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল হৃদয় ।

প্রতিদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠার মত একঘেয়ে জীবন নিয়ে দুটি ধারা তাদের অতীতকে ভুলে নিজ নিজ পথে ভালোই বয়ে যাচ্ছিল । একদিন হঠৎ করেই কমলাপুর স্টেশনে এ তাদের আবার দেখা হয়ে গেল । আরো সুন্দর আর পরিনত হয়েছে হৃদি । ওর সাথে ছোট্ট একটা বাবু ।

- কেমন আছো হৃদয় ?
- ভালো । আপনি হৃদি না ? এটা আপনার বেবি, অনেকটা আপনার মতই হয়েছে !
- মানে ! আপনি বলছ কেন ? আমিতো বিয়েই করিনি , ও আমার বড় আপুর মেয়ে সিনথিয়া । আপু টিকেট কাটতে গেছে ।
-আচ্ছা তোমরা ভালো থেকো , আসি ।
- আসবে মানে ? আমি তোমাকে কত খুঁজেছি । ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর তোমাদের বাসাতে গেছি । তোমরা অনেক আগেই সে বাসা ছেড়ে অন্য ডিস্ট্রিকে চলে গেছ বলে আর খুঁজে বের করতে পারিনি । তুমি কেন যোগাযোগ রাখনি ? আমি আমার মনের কথা বলতে পারিনি বলে এতদিন কত অশান্তিতে থেকেছি , কত কষ্ট পেয়েছি , কত কেঁদেছি ।
- বাদ দাও তো । তুমি অনেক সুন্দর আর স্মার্ট হয়ে গেছ । শুধু চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে ।

হৃদি হাসল । হাসলে টোল পড়ে হৃদিকে আরো ভালো লাগে । এর পর থেকে তাদের মাঝে প্রতিদিন ফোনে কথা হয় আর প্রায়ই দেখা হয় । হৃদির ভালোবাসা দেখে চোখে পানি এসে যায় হৃদয়ের । সেই ফুল আর নীল খাম এত বছর ধরে সযত্নে আগলে রেখেছে সে , ফুল শুকিয়ে গেলেও ভালোবাসা শুকোয় নি । হৃদয় কিন্তু এর মাঝে এক হালির মত প্রেম করেছে । কিছু কিছু কথা গোপন থাকলে জগতটা অনেক সুন্দর থাকে । হৃদয়ের এ গোপন অধ্যয়টাও গোপন থাকুক হৃদির কাছে । সুখে থাকুক তারা ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৩৩
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×