কয়েকদিন পর দেশে আমলারা আন্দলন শুরু করবেন এই বলে যে
ঘুষ চাই না সাংবাদিক ঠেকা
নিচের নিউজ টা পড়ুন
‘আমি ৪০০ টাকার কমে সই করি না’
ময়মনসিংহ অফিস | তারিখ: ১৮-০৪-২০১২
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন টাকা ছাড়া স্বাস্থ্যসনদে সই করেন না। প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরি পাওয়া এক সনদপ্রত্যাশীকে নিজেই এই তথ্য দিয়ে ৪০০ টাকা দাবি করেছেন সিভিল সার্জন আতিয়ার রহমান। পরে অবশ্য তিনি এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করে খবরটি না করার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করেছেন।
সরকারি চাকরিতে যোগদানের জন্য সিভিল সার্জনের কাছ থেকে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রত্যয়নপত্র (স্বাস্থ্যসনদ) নিতে হয়। সরকারিভাবে এর জন্য টাকা নেওয়ার কোনো বিধান নেই। কিন্তু ময়মনসিংহ সিভিল সার্জনের দপ্তর এর জন্য সনদপ্রতি ৪০০ টাকা করে নেয়।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনে ১৫-২০ জন স্বাস্থ্যসনদ নিতে আসেন। আর বড় ধরনের নিয়োগ, যেমন—জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, খাদ্য অধিদপ্তরসহ অন্যান্য বিভাগে নিয়োগ হলে অনেক লোক একসঙ্গে সনদ নিতে আসেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে চাকরি পেয়েছেন শরীফুল ইসলাম। স্বাস্থ্যসনদ নিতে গতকাল তিনি ময়মনসিংহ সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে যান। নির্ধারিত ফরম পূরণের পর ওই কার্যালয়ের প্রধান সহকারী মো. আবদুল বাছেদ বলেন, ‘টাকা দেন।’
—টাকা কেন?
—সনদের, ৪০০ টাকা।
—এটা কি সরকারি ফি? রসিদ দেবেন?
—না।
—সরকারি ফি কত বলেন। আর রসিদ না দিলে টাকা দেওয়া তো সম্ভব না।
—টাকা ছাড়া আমার স্যার সনদে সই করেন না। টাকা দিতে না চাইলে স্যারের সাথে যোগাযোগ করেন।
শরীফুল ইসলাম সিভিল সার্জনের সাক্ষাৎ চান। পাঁচ-সাত মিনিট পর তাঁর ডাক পড়ে। ইতিমধ্যে একজন সহকারী গিয়ে তাঁর পূরণ করা ফরমটি সিভিল সার্জনকে দিয়ে আসেন। শরীফুল ইসলাম তাঁর কক্ষে গেলে সিভিল সার্জন চোখ পরীক্ষা করবেন বলে জানান। পরীক্ষা শেষে তিনি বলেন, ‘ঠিক আছে। দেন, টাকা দেন।’
শরীফুল বলেন, ‘আমি এই বিষয়টিই আপনাকে জানাতে এসেছি।’
—আমি ৪০০ টাকার নিচে সই করি না।
—স্যার, আমি আগেই আপনার সহকারীকে বলেছি, রসিদ দিলে আমি টাকা দেব। রসিদ ছাড়া টাকা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
—তাহলে আপনি সনদ পাবেন না।
—আপনি তো ডিসির (জেলা প্রশাসক) সমমানের পদে আসীন। কেন এভাবে টাকা নিচ্ছেন?
—নিচ্ছি তো কী হয়েছে? সব সিভিল সার্জনই নেয়।
—এটা সদম্ভে বলার কী আছে!
—এটা আবার গোপন রাখার কী আছে? এটা ওপেন সিক্রেট। আমি যে টাকা নেই, এটা সবাই জানে। আপনাকেও ৪০০ টাকা দিতে হবে। আমি ৪০০ টাকার নিচে সই করি না।
এই পর্যায়ে শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘স্যার, আমি দুঃখিত, আপনাকে বলতে হচ্ছে; আমি একজন সাংবাদিক। প্রথম আলোয় কাজ করি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। আপনি আমার সঙ্গে এটা করবেন না।’
—সাংবাদিক হয়েছেন তো কী হয়েছে? টাকা না দিলে আপনারটা সাইন হবে না। তবে আপনার যদি একান্ত আর্থিক অসংগতি থাকে, তাহলে আপনি ২০০ টাকা দিতে পারেন।
—স্যার, আপনি যদি রসিদ দেন, তাহলে আমি ৪০০ টাকার বেশি চাইলেও দিতে পারব।
শরীফুল ইসলাম জানান, এই পর্যায়ে তিনি সিভিল সার্জনের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। ঘটনার পুরো সময় দৈনিক সমকাল-এর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শাহীন আলম তাঁর সঙ্গে ছিলেন। সিভিল সার্জনের ওই কক্ষে তাঁর অফিস সহকারী আবদুল বাসেতসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
পরে একজন অফিস সহকারী বাইরে এসে শরীফকে বলেন, ‘আপনার নিয়োগপত্রের ফটোকপি দেন, সনদ নিয়ে যান।’ নিয়োগপত্র ফটোকপি করে নিয়ে এলে অন্য কর্মকর্তারা জানান, সিভিল সার্জন শরীফকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন। শরীফ তাঁর কক্ষে গেলে তিনি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে তিনি তাঁর কক্ষে থাকা সাবেক সিভিল সার্জনদের তালিকা দেখিয়ে বলেন, ‘এই ১৭ জন সবাই এই কাজ (টাকা নেওয়া) করে গেছেন। এটা হয়ে আসছে। এখন তুমি নিউজ করলে আমারটা শুধু লোকজন জানবে। মানসম্মানের ক্ষতি হবে।’
বিকেলে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘উনি (শরীফ) আগে পরিচয় দিলে এমনটা হতো না। আর সনদের জন্য টাকা নেওয়ার বিষয়টি ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে।’ তিনি স্বীকার করেন, এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয় না। তিনি ও তাঁর প্রধান অফিস সহকারী ভাগ করে নেন।
প্রধান অফিস সহকারী আবদুল বাছেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ রকম ১০০-২০০ টাকা ঘুষ নেই না।’
বিষয়টি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকিরকে জানানো হলে তিনি বলেন, অভিযোগ সম্পর্কে তিনি খোঁজ নেবেন। প্রয়োজনে সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আতিয়ার রহমান এর আগে ভোলার সিভিল সার্জন ছিলেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ময়মনসিংহে যোগ দেন।
সুত্রঃ Click This Link