somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমকামী সাজ্জাদের মৃর্ত্যুর জন্য দায়ী কে?

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সাজ্জাদ হোসেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক বিভাগীয় শহরের সদ্য কলেজ পাশ করা এক সদা হাস্যময়ী সমকামী তরুন, যে কিনা কিছুদিন আগে পরিবারের চাপে বিয়ে করে বাসর রাতেই আত্বহত্যা করেছে। শুধু সাজ্জাদ নয় এরকম অহরহ সমকামী ছেলে মেয়ে পরিবার, সমাজ আর রাষ্ট্রের চাপে সমকামী হওয়া সত্ত্বেও বিপরীত লিঙ্গের ছেলে মেয়েকে বিবাহ করতে বাধ্য হচ্ছে। যাদের মধ্যে অনেকেই আত্বহত্যা করে নিজেদের মুক্ত করছে, আর যারা পারছে না তারা শত কষ্টে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিপরীত লিঙ্গের ছেলে মেয়ের সাথে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছে।

পরিবারের নেতিবাচক মনোভাবের জন্য সাজ্জাদ প্রকাশ করতে পারেনি তাঁর যৌন প্রবৃত্তির কথা। পরিবারের সদস্যদের বুঝাতে পারেনি যে সে একজন সমকামী। তাঁর যে বিপরীত লিংগ অর্থাৎ মেয়েদের প্রতি কোন আকর্ষণ নেই, সে যে সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে, সে যে পুরুষকে ভালবাসে, একজন পুরুষকে নিয়ে ঘরসংসার করার স্বপ্ন দেখে তা তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে খোলাসা করে বলতে পারেনি শুধুমাত্র সমকামীতা সম্পর্কে তাঁর পরিবারের নেতিবাচক মনোভাবের কারনে।

যদিও তাঁর পরিবার বুঝতে পেরছিল সাজ্জাদ একজন সমকামী ব্যক্তি, তবুও তারা তাঁর পাশে এসে দাড়ায়নি। বরং সমাজের আর দশজন কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের মত তাঁরা চেষ্টা করেছিল সাজ্জাদকে একজন নারীর সাথে বিবাহ দিতে। তারা তাঁর বিবাহ ঠিকও করেছিল এক মেয়ের সাথে। যদিও সাজ্জাদ বিবাহ করবে না বলে জানিয়েছিল কিন্তু তাঁর পরিবারের সদস্যদের চাপে তাকে বিবাহে রাজি হতে বাধ্য হতে হয়েছিল। সাজ্জাদ পারেনি তাঁর পুরুষবেশী দেহে লালিত নারী মনে অন্য একজন নারীকে জীবনসংগী হিসাবে গ্রহণ করতে। তাইত পরিনতিতে তাকে আত্ত্বহত্যার পথ বেঁচে নিতে হয়েছে। এখন প্রশ্ন সাজ্জাদের মৃর্ত্যুর জন্য দায়ী কে? তাঁর পরিবার, এই সমাজ নাকি প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা?

ব্রিটিশদের প্রনীত আইনে বাংলাদেশে সমকামীতার জন্য সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন ও সর্বনিম্ন ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থ দণ্ডের বিধান রাখা হলেও ব্রিটেনে সমকামীতা কোন অপরাধ নয়। আর আমাদের দেশে প্রচলিত আইনে সমকামিতা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে রাষ্ট্র যেভাবে পারছে সমকামীদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। জাত পাত ধর্ম বর্ণ পেশা লিঙ্গভেদে সকল নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করা যেখানে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব, সেখানে যৌনপ্রবৃত্তিগত সংখ্যালঘু সমকামীদের অধিকার প্রদান তো দূরে থাক তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি পর্যন্ত নেই।

কোন নাগরিক যেন সমকামী হিসাবে নিজেদের প্রকাশ করতে না পারে সে জন্য সমকামিতাকে অপরাধ বলে গন্য করে শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছে এই রাষ্ট্রযন্ত্র। আর প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা? সেতো সমকামীতাকে ধর্ষণের চেয়েও জঘন্য বলে মনে করে। একজন ধর্ষক হয়ত ধর্ষণ করে পার পেয়ে যেতে পারে। কিন্তু দুজন পুরুষ বা নারী পরস্পরকে ভালবেসে পার পেয়ে যাবে এ সমাজ তা কখনো মেনে নিতে পারে না। অথচ চাইলেই এ সমাজ এ রাষ্ট্র সাজ্জাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করতে পারত। কিন্তু তা না করে এ সমাজ এ রাষ্ট্র তার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তার প্রচলিত আইন দিয়ে সাজ্জাদের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিয়েছে।

তাইত সাজ্জাদের পরিবার যখন তাকে জোড়পূর্বক বিবাহ দেয়ার চেষ্টা করছিল তখন সে পারেনি সমাজের কাছে আশ্রয় চাইতে। এমনকি রাষ্ট্রের কাছেও সহযোগিতা চাইতে পারেনি। কারণ এ রাষ্ট্র সমলিঙ্গের ভালবাসা আর সমকামিতাকে অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। নাগরিক হিসাবে সাজ্জাদ যখন রাষ্ট্র বা সমাজের কাছে তাঁর অধিকার চাইতে ভয় পায়, যখন তাঁর অধিকারের কথা বলতে ভয় পায়, যখন তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের নিকট যেতে পারে না তখন তাঁর আত্বহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকে না। আর যে সমাজ যে রাস্ট্র একজন মানুষের স্বাভাবিক মৃর্ত্যুর নিশ্চয়তা দিতে পারে না সেখানে আইনের শাসন কোন পর্যায়ে অবস্থান করে তা সহজে অনুমানীয়।

সাজ্জাদের মৃর্ত্যুতে হয়তবা তা পরিবার হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। হয়তবা তাঁর পরিবার ভাবছে সাজ্জাদের মৃর্ত্যুতে অন্ততপক্ষে সমাজের কাছে তাদের মাথা নিচু হওয়া থেকে মুক্তি পেয়েছে। এ সমাজ হয়ত ভাবছে যে অন্ততপক্ষে একজন পাপীর পরিসমাপ্তি ঘটেছে, তাঁর নোংরামী থেকে এ সমাজ মুক্তি পেয়েছে। এ রাষ্ট্র হয়ত ভাবছে শাস্তি প্রদানের আগেই সাজ্জাদ আত্বহত্যা করে একজন অপরাধীর সংখ্যা কমেছে। আসলে সাজ্জাদের আত্বহত্যায় মানবতা ভুলন্ঠিত হয়েছে, আইনের শাসন ভুলন্ঠিত হয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না সমাজে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী, লিংগ, জাত, পাত প্রভৃতির সংমিশ্রণে বৈচিত্রময় মানুষের একত্রে বিচরণই সৌন্দর্য

তাইত নারী ও পুরুষের মাঝে সমকামীদের স্বাভাবিক মানুষের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সাথে নিয়ে সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন দেখায় আমাদের সবার ব্রত হওয়া উচিত। অন্যথায় সাজ্জাদের মৃর্ত্যু কখনো আমাদের ক্ষমা করবে না, সর্বদা আমাদের পিছু তাড়া করে কুড়ে কুড়ে খাবে। আসুন সবাই মিলে সমকামীদের অপরাধীর চোখে না দেখে সমাজের আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মত তাদের সাথে নিয়ে সবার জন্য বসবাসযোগ্য একটি মানবিক পৃথিবী গঠনে অগ্রসর হই।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×