somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট ছোট ছোটবেলা , ভালো ভালো ভালোলাগা

০৫ ই এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হাতুড়ীর বাড়ীটা ঠুক্‌ করে নাকের উপর পড়তেই, আঃ করে আর্তনাদ করে উঠলো ছোট্ট ছেলেটি। তারপরও বুড়ো মানুষটা খুব অবাক হয়ে এদিক ওদিক চাইলো। দরজা খুলে বের হয়ে বাইরেটাও ভালোভাবে পরখ করে আসলো। নাহ্‌ এই রাত দুপুরে কোনো দস্যি ছেলের ঘুম ভেঙে উঠে আসবার কথা নয়। নিশ্চয় ভুল শুনেছে সে। কান পেতে জানালার বাইরের শব্দগুলোও আঁচ করতে চাইলো কিছুক্ষণ। আশে পাশে জনমনুষ্যির চিহ্ন মাত্র নেই।
আবার কাজে মন দিলো জিপিটো বুড়ো। মন দিয়ে রঙ-তুলিতে চোখ আঁকা শেষ করা মাত্রই কাঁঠের পুতুলটা চোখ পিট পিট করে তার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেঁটে উঠলো। এমন তাজ্জব ব্যাপার বুড়োমানুষটি তার সারা জীবনে দেখেনি। তাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে, ধম করে তার হাটুতে লাথি মেরে বসলো দুষ্টু ছোট্ট কাঠের পুতুল ছেলেটা আর সাথে সাথে ছুটে পালালো খোলা দরজা দিয়ে সোজা বাইরে। তারপর শুরু হলো তার নানারকম এ্যাডভেন্চার!

আমার ছোটবেলার এক বিস্ময় বালক এই পিনোকিও। আমার ডল পুতুলগুলোকে কতবার নেড়ে চেড়ে দেখেছি । কত রাত্রী,বিকেল, সকাল হা করে তাকিয়ে থেকেছি ওদের দিকে। কতশত কাল্পনিক ভাবনায় তলিয়ে গেছি। এই বুঝি পিনোকিও এর মত এখুনি কথা বলে উঠবে আমার পুতুলগুলোও।আর তারপর, তারা সবাই আমার বন্ধু হবে। কত্ত মজাই না হবে তখন!

আমার দশ বছর বয়সে বাবা যেবার অফিসিয়াল কাজে দেশের বাইরে গেলেন । উপ হার হিসেবে হরেকরকম জিনিসের মাঝে তিনি আমার জন্য এনেছিলেন এক সেট ফেইরী টেলস বুক। বইগুলোতে ছিলো হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এ্যান্ডারসনের লেখা পৃথিবী বিখ্যাত সেইসব ফেইরী টেইলস।
একটি ছোট্ট কাগজের ব্যাগে ভর্তি, সাতটি আশ্চর্য্য সুন্দর গল্পের বইগুলো। সেই সাতটি বই এর গল্পরাজ্যের কল্পপরীদের ডানায় ভেসে বা কখনও তাদের ময়ূরপঙখী নাও ভাসিয়ে আমি চলে যেতাম দূর থেকে দূর দেশে।

তবু মাঝে মাঝেই আমার মনটা ভীষন খারাপ হতো, পিনোকিও কেনো যে এত মিথ্যে বলে এসব ভেবে ভেবে আর কি ভীষন ভয় করতো যখন আমি কোনো মিথ্যে বলেই, নিজের অজান্তে ভেবে বসতাম যে আমার নাকটাও পিনোকিও এর মত লম্বা হয়ে যাচ্ছে।/:)
আর পিনোকিও এর বুড়ো বাবা মানে সেই ছুতোর মিস্ত্রী জিপিটো, যার হাতেই পিনোকিও নামক কাঠের বালকটার জন্ম, সেই মানুষটার জন্য আমার খুব কষ্ট হতো। তবে শেষমেষ ভালো কাজের বদৌলতে পিনোকিও কাঠের বালক সত্যিকারের মানুষ বালক হতে পেরেছিলো। সেই ছিলো আমার পরম প্রাপ্তি।:)



আমার সেই গল্পের ঝুলির আরেকটি বই ছিলো এ্যালাদিন'স ল্যাম্প। কি আশ্চর্য্য! কি আশ্চর্য্য! এমন আশ্চর্য্য আর কখনও কোথাও হয়!
পিতলের পিদিম ঘসা দিলেই বের হয়ে আসে এক বিকট জ্বীন! তাই বলে জ্বীনটা মোটেই ভয়ংকর নয়। সে এ্যালাদিনের বন্ধু! পিদিম যার হাতে সেই কিম্ভুত দর্শন জ্বিনটা তারই গোলাম।
আমি বাসায় কোনো পিদিম সদৃশ কিছু খুঁজে না পেয়ে চুপিচুপি বাথরুমের বদনাটাকেই একদিন ঘসে ঘসে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলাম,কোনো জ্বিনভুত বের হয় নাকি দেখতে। মা অনেকক্ষণ আমাকে ডাকাডাকি করে না পেয়ে সেদিন রীতিমত হুলুস্থূল বাঁধিয়েছিলেন। প্রায় দুইঘন্টা যাবৎ চেষ্টা করেও আমি কোনো জ্বীন ভুতের দেখা পাইনি যে কিনা আমি চাহিবা মাত্র এনে দেবে আমাকে রাশি রাশী চকলেট আর চুইংগাম আর নানারকম খেলনা আর লাল বা সোনালী জামা।/:)
স্নো হোয়াইট। খুব ইচ্ছে হত তার মত হতে। চুল তার কালো কুচকুচে মেঘবরণ, গায়ের রঙ যেন তুষারের মত সাদা। তাই তার নাম স্নো হোয়াইট বা তুষারকন্যা। ছোটচাচা বুঝিয়ে বললেন, তুষার সে আকাশ থেকে পড়ে, তিনি নাকি বিদেশে অনেক দেখেছেন । সাদা সাদা তুষারের বল নিয়ে খেলতে নাকি দারুন মজা। আমি বুঝিনা দেখে ফ্রিজে জমে থাকা ছোটো ছোটো বরফের কুচি দেখিয়ে বললেন, তুষার দেখতে কিছুটা এমন। ব্যাস আর যায় কোথা? একদিন সুযোগ পেয়ে ডীপফ্রিজের তুষার নিয়ে এক পলিব্যাগ ভর্তি করলাম আর তারপর চুপিচুপি ছাদের সিড়িঘরে নিয়ে গিয়ে সারাগায়ে ডলাডলি করে তুষারকন্যা হবার সাধ মিটাতে চাইলাম। বুয়া ছাদে কাপড় শুকাতে এসে "আল্লাহগো.... বাবাগো .......মাগো......
মাইয়া কি করছে গো ..........X(



স্লিপিং বিউটি বা ঘুমপূরীর রাজকন্যা। রাজকুমারী মেয়েটা ঠিক ষোলো বছর বয়সে হাতে চরকাকাঠী ফুঁটে মারা যাবে এমনি অভিশাপ দিলো এক দুষ্টু পরী। রাজকন্যার জন্মদিনে আমন্ত্রন না পেয়ে ভীষন রাগ করেছিলো সে। রাজা তাই দেশ হতে সব চরকাই উঠিয়ে দিলেন তবুও অভিশাপ অব্যার্থ হলো। ঠিক ষোলো বছর বয়সে চরকা কাঠি হাতে ফুঁটে ঘুমিয়ে পড়লো রাজকন্যা।
কেনো যেন কখনও স্লিপং বিউটি হবার সাধ জাগেনি মনে। অবশ্য মা চাচীরা যখন সেলাই মেশিনে সেলাই করতেন মাঝে মাঝে ইচ্ছে হতো দেবো নাকি হাতটা ঐ সুই এর ফাঁকে ঢুকিয়ে? তবে মা চাচীদের রাঙা চোখের কথা ভেবে সে চেষ্টা থেকে বিরত থেকেছি।/:)



সিনডেরেলা। আহারে দুঃখীনি সিনডেরেলার দুঃখে কলিজা ফেটে যেত। তবে সবচাইতে ভালো লাগতো তার গ্লাস হিল আর পরীমার বানানো অপরুপ সুন্দর নাচের ঘাঘরাটা। খুব আশ্চর্য্যজনক ভাবে আমি যখন ক্লাস টেনে পড়ি আমার ছোটচাচু কোথা থেকে যেন কিনে এনে দিলেন ঠিক ওমনি একজোড়া গ্লাস হিল। তবে তা কাঁচ দিয়ে নয়, কাঁচের মত দেখতে স্বচ্ছ প্লাসটিকে তৈরী। আহা পারি তো ঐ বয়সেও ঐ জুতোজোড়া বুকে নিয়ে ঘুমাই।:P



লিটল মারমেইড বা মৎস্যকন্যা। একসময় তার দুঃখে আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিলো। ভাবতাম আহা এমন একটা মেয়ে ভালোবাসার জন্য কিনা করলো। অথচ রাজপুত্র তার কানাকড়িও মূল্য দিলোনা।:(



র‌্যাপান্জেল। গরীব লোকটি ডাইনীবুড়ির বাগানের লেটুস চুরি করে খেয়েছিলো। সেই অপরাধে তার শিশুকন্যাকে কেড়ে নিয়ে এলো ডাইনী। তাকে বন্দী করে রাখলো অনেক উঁচু এক টাওয়ারে। যার দরজা, জানালা, সিড়ি কিছুই নেই।
র‌্যাপান্জেলের দিন কাঁটে একা একা। রোজ সন্ধ্যায় তার লম্বা চুল নামিয়ে দিলে ডাইনী বুড়ি সেই চুল বেয়ে উঠে আসে।
একদিন এক রাজকুমার দেখতে পেলো সেই দৃশ্য। ডাইনী চলে যাবার পরে সে উঠে এলো র‌্যাপান্জেলের চুল বেয়ে আর তারপর তাদের হলো ভালোবাসা।
ডাইনী যখন জানতে পেয়ে র‌্যাপান্জেলের চুল কেটে দিলো, এই ঘটনা আমাকে কি ভীষন কষ্ট দিয়েছিলো।:(

যাই হোক, সেবার আমার চুল কেটে নাড়ু করে দেওয়া হলো । সবাই নাড়ু বেল নাড়ু বেল করে।:( সেই দুঃখে আর আমার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো। আমি র‌্যাপান্জেলের মত লম্বা চুল বানাতে মায়ের কালো ১২ হাতী শাড়ী নিয়ে উঠলাম ছাঁদে। আর তারপর সেই শাড়ী মাথায় পেঁচিয়ে নামিয়ে দিলাম ছাঁদের রেলিং থেকে । হয়তো কোনো রাজপুত্রেরই আশায়। কিন্তু রাজপুত্রের বদলে উঠে এলো কে?

ডাইনী বুড়ী? সবাই কি সেটাই ভাবছেন?

মোটেই তা নয়, আর সেই কথা আমি বলতেও চাইনা।:( তবে তারপর পর হাসির রোল উঠেছিলো আমাকে ঘিরে আর আমি র‌্যাপান্জেল হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছিলাম আমার বাড়িতে বেশ কিছুদিন। তবে সাথে অবশ্যই অনেক হাসাহাসি বোনাসও জুটেছিলো কপালে।
/:)
/:)

:P

যাহাই হোক, আমার ছেলেবেলা আর হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এ্যান্ডারসনের ফেইরী টেইলসগুলো অতঃপ্রতভাবেই জড়িয়ে আছে, থাকবে চিরকাল।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৩
৮৭টি মন্তব্য ৮৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×