নিরু
কবিতার ভাষায় লেখা
তোর চিঠিটা পড়লাম
ভুলে গিয়েছিলাম, অনেক কিছুই
কিছুটা ইচ্ছেই, কিছুটা অনিচ্ছেই।
চিঠিটা পড়তে পড়তে একরাশ স্মৃতি
হুড়মুড় করে নামলো, হৃদয়ের দূয়ারে।
আজকাল বুকে প্রায়ই একটা ব্যাথা হয়
অনিয়মিত জীবন যাপনের ফল।
চিঠিটা পড়ার পর থেকে চাপধরা ব্যাথাটা
যেন বেড়ে চলেছে।
যাইহোক, ভালোই আছিস তাহলে
মনেও রেখেছিস আমাকে?
ভালো আছিস
কেমন করে বুঝলাম জানিস?
মানুষ যখন সবচেয়ে বেশী সূখে থাকে
তখনি ধরে তাকে দুঃখবিলাস রোগ
তোরও হয়েছে সেটাই।
রাগ করিসনা, একটা সত্যি বলি
তোকে ভুলে গেছি
যদি বলিস ইচ্ছে করে, তাহলে তাই।
তোর সব গান , ছবি, কলকথা, সব ভুলেছি আমি
নইলে এই আমার
আর বেঁচে থাকার উপায় ছিলোনারে।
ভুল শুনেছিলি তুই
বিয়ের পরদিন থেকে নয়,
নিরুদিষ্ট আমি তোর বিয়ের দিনটি হতেই।
সেদিন সন্ধ্যায় টুনি বাল্বে সজ্জিত ঝলমলে বাড়ী থেকে
যখন তুই মেরুনরঙ মার্সিডিজে চড়ে
ভুস করে বেরিয়ে গেলি-
সন্ধ্যার আবছায়া আলোয়,
গলির ধারের বুড়ো অশত্থ গাছটার আড়ালে
দেখতে পাসনি আমাকে ।
সেদিন রাতের ট্রেনেই চলে গিয়েছিলাম
কক্সেস বাজার
বিশালতার অবগাহন অসীম সমুদ্ররাশ্রয়ে
সমুদ্র আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলো
প্রতিদানে সমুদ্রকে দিয়েছিলাম
এই নিস্বের
কয়েকফোটা দূর্লভ অশ্রুজল।
ভালো থাকিস নিরু,
পারলে আমাকে ভুলে যাস।
প্রাচুর্য্য তোর সঙ্গী,
তুই চাইলেই মুঠো মুঠো দিতে পারিস।
বিত্ত বৈভবের কমতি নেই তোর
আমার মত ভ্যাগাবন্ডের থেকে
কি আর পাবার ছিলো বল?
এমন করে আর কখনও লিখিসনা আমাকে
আমার কষ্ট হয়,
ভীষন কষ্ট!
তুই কি পারিস আমাকে কষ্ট দিতে?
প্রতিত্তরে নিরুপমার ছোট্ট শেষ চিঠিটি।
খোকাভাই
আর কখনও লিখবোনা তোমাকে
জানতে চাইবো না আর কখনও
কেমন আছো?
শুধু
তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম।
এই ছিলো খোকাভাই ও নিরুর শেষ চিঠি। মানে আমি তাদের চিঠি লেখালিখিটা এখানেই শেষ করে দিলাম। পৃথিবীতে কিছুই অবিনস্মর নয়। সবকিছুই একদিন শেষ হয়। শেষ হতে হয়। তাই মনে হলো খোকাভাইকেও শেষ করে দেবার সময় এসেছে।
অনেকে অনেকদিন আমার কাছে জানতে চেয়েছেন কে এই খোকাভাই ? আমার লেখা যারা পড়েছেন তাদের মজা করে হোক বা সত্যি কৌতুহল থেকেই হোক খোকাভাইকে নিয়ে জানার কিছু ইচ্ছে ছিলো বলেই মনে হয়েছে আমার। অনেকে অনেককিছু সন্দেহ করেছেন। সাদেক হোসেন খোকা থেকে শুরু করে গলির ধারের পাগলা বুড়ো খোকা পর্যন্ত বাদ যায়নি সে সন্দেহ তালিকা থেকে।
মনে হলো, খোকাভাইকে শেষ করে দেবার আগে তার শুরুটা একটু খোলাসা করে দেই সবার কাছে। তবে তার আগে একটা কথা বলার আছে আমার, এই লেখাগুলোর মান যেমনই হোক, আমার কাছে এ ছিলো এক পরম ভালোলাগা ও ভালোবাসার লেখালিখি। যে কোনো ধরনের লেখায় লেখক বা লেখিকার আত্মতৃপ্তি বলে একটা কথা আছে বলে আমি মনে করি। সে যতই আমার মত অগা বগা লেখক বা লেখিকা হোক না কেনো? নিজের ভালো লাগার মূল্য সবার আগে। আমি সেই পরম আত্মতৃপ্তিটুকুই অনুভব করেছি খোকাভাই ও নিরুপমাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে। লেখার মান কি ছিলো সে বিচার করতে চাইনা আমি, শুধু আমি জানি কতখানি বক্ষে ধারন করেছি আমি এ দুটি চরিত্রকে।
খোকাভাই আমার এমন এক লেখা। নিরুপমা আর খোকাভাই এর কথা লিখতে গিয়ে আমি নিজেই রুপান্তরীত হয়েছি নিরুপমায়। নিরুপমার সাথে সাথে আমি চলে গেছি সেই জীর্ণ, পুরোনো, একটু সেকেলে বনেদী বাড়িটাতেই। সেখানেই কাটিয়ে এসেছি আমার শৈশব ও কিশোরীকাল।
কখন যে হয়ে গেছি আমি নিজেরি অজান্তে বেনীদুলানো স্কুল পালানো মেয়েটি ! আর খোকাভাই, বাড়ির মৃত বড়চাচার একমাত্র সন্তান। সঠিক কেয়ারিং এর অভাবে শেষ হয়ে যাওয়া অবহেলিত ছেলেটিকে পরম মমতায় বুকে টেনে নিয়েছি। ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে চেয়েছি। দূর করে দিতে চেয়েছি তার সকল কষ্ট ও বেদনা।
তবুও আর দশটা বাঙ্গালী কিশোরীর মত পারিনি সমাজ ও পরিবারে রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করতে । অসহায় কিন্তু লক্ষী মেয়েটির মত বাবা মায়ের পছন্দের প্রতিষ্ঠিত পাত্রকেই বরন করে নিয়েছি জীবন সঙ্গী হিসাবে। ঠিক যেমনটা হয় আমাদের এ স্বার্থপর সমাজে।
ওদের কষ্টটা সত্যিই যেন মনে প্রাণে অনুভব করেছি। কিন্তু কোথা থেকে উদয় হলো এই খোকাভাই আর নিরু? হ্যা নির্মলেন্দু গুণের সেই বিখ্যাত প্রিয় কবিতা অমীমাংসিত রমনী Click This Link আমার ভেতরে খোকাভাই চরিত্রের সূচনা। কবিতাটা পড়তে গিয়েই আমি চোখের সামনে যেন দেখতে পেলাম চুপচাপ শান্ত গভীর দুখী ছেলেটাকে। আর মমতা ? তার জায়গায় বসিয়ে নিলাম নিরুপমারুপী এই আমাকেই। খোকাভাইকে নিয়ে লেখা প্রথম কথামালা।
Click This Link
পরবর্তীগুলো
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
একটা গোপন কথা বলি আজ, খোকাভাই আর নিরুকে আমি স্বপ্নে দেখেছি, ঘুমিয়ে, জেগে জেগে, ঘুম ভেঙে ওঠা ভোর সকালে, বা ঘুমুতে যাবার আগে নিদ্রা দেবীর আগমনের ঠিক আগেভাগে। রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে কলেজ ফেরৎ কোনো কিশোরীতে। বা কোনো বাড়ীর ছাদে হলুদ সবুজ জামা ঝুলে থাকবার দৃশ্যে। আমি খুব কল্পনা প্রবন একটা মানুষ। তাই আমার কল্পনা আর সামনে দেখা মানুষ আর দৃশ্য গুলো একসময় কবিতার নিরুপমা ও খোকাভাই হয়ে আমার অন্তরে প্রবিষ্ঠ হয়েছে।
যে যেভাবেই দেখুক, যে যাই ভাবুক আমার পঁচাঘচা কবিতা সমাদৃত হয়েছে কারো কারো কাছে। আর আমার নিজের কাছে তো বটেই। আমি অসংখ্য অসংখ্য কৃতজ্ঞতা জানাই যারা সেসব লেখা পড়েছেন আমাকে সঙ্গ দিয়েছেন আমার কল্পনার সাথী হয়ে। খোকাভাই আর নিরুপমা অনেক অনেকদিন, হয়তোবা সারাটাজীবন জেগে রইবে আমার হৃদয়ে। তাই নিরুপমার শেষকথাটিই হোক আমার অন্তরের কথা।
তুমি( খোকাভাই) আর তোমরা( যারা পড়েছিলো আমার লেখাগুলি) রবে নীরবে হৃদয়ে মম।
খোকাভাই এর চিঠি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১২১টি মন্তব্য ১২২টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ
কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুহূর্ত কথাঃ সময়

সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।