লম্বা করিডোর আর লিভিংরুমটা পেরিয়ে দরজা ঠেলে ঢুকলো একটা সাজানো গোছানো অফিস রুমে। রুমি এতটাই কাজে নিমগ্ন ছিলো যে স্বয়ং যমদূত তার পিছে এসে যে দাঁড়িয়েছে খেয়ালই করলো না একেবারে। রুমির এই ভাবে সারারাত জেগে কাজ করাটা একদমই পছন্দ না মৌমিতার। ভীষন রকম বিরক্ত হয় সে এই বেহিসেবী নিয়ম কানুন না মানা অবাধ্য ছেলেটার কান্ড কারখানায়।
রুমি আর মৌমিতা স্বভাবে, আচার আচরণে, পছন্দে অপছন্দে যেন দু মেরুর বাসিন্দা। তবুও তবুও ওর হৃদপিন্ডের ঠিক মধ্যিখানে ছোট একটা কুঠুরীতে শুধুই রুমির বাস। কবে কখন কিভাবে যে এই দুর্বোধ্য অবাধ্য ছেলেটা ওর হৃদপিন্জরে জায়গা করে নিলো সে তা নিজেও জানেনা।এই দুরন্ত অশান্ত ছেলেটা যে এক শিশুর মত পরাজিত ওর আশ্চর্য্যরকম সেই ভালোবাসার কাছে সেটা ভেবেও ঘোর লাগে মৌমিতার।
- সারারাত্রী এক ফোটাও ঘুমাওনি তুমি? পরম বিস্ময় আর বিরক্তি নিয়ে জিগাসা করে মৌমিতা।
-কাজটা শেষ হয়নি তো। তিনদিনের মধ্যে শেষ করতেই হবে আর তাছাড়া ঘুম আসছিলোনা আমার।
-চুপ করো। এখুনি উঠো । উঠো বলছি।
এগিয়ে এসে রুমির শার্টের হাতা ধরে টেনে উঠাতে চেষ্টা করে মৌমিতা।
- আরে আরে কি করিস তুই? সব এলোমেলো হয়ে যাবে তো।
- চুপ। সব নষ্ট হয়ে যাক । তুমি এখুনি উঠবে। এখুনি ঘুমাতে হবে তোমাকে।আর হ্যা তোমাকে না বলেছি আর তুই তুই করবেনা। নো মোর তুই তুই ? মনে থাকে না ....... .... .....রুদ্র মূর্তী ধারণ করে মৌমিতা এই সাত সকালে।
- আচ্ছা আচ্ছা বাবা আর বলবো না, তুই আমার শার্ট তো ছাড়।
- কিসের ছাড় ছাড়?? ফের তুই তুই? রক্তচক্ষু মেলে মৌমিতা।
হো হো করে হাসতে থাকে রুমি। ওর হাসি দেখে আরও গা জ্বলে যায় মৌমিতার। রুমি দুষ্টুমী করে রিভলভিং চেয়ারটা ঘুরিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে ওর।
তড়িঘড়ি ফ্রেশ হয়ে বাটারটোস্ট আর চা দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে রুমির জন্য সিরিয়ালের প্যাক আর মিল্ক ডাইনিং টেবিলের উপর রেডী করে রেখে বেড রুমে আসে মৌমিতা।ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুলে ব্রাশ চালাতে চালাতেই খেয়াল করে গভীর ঘুমে অচেতন রুমিকে। আরও একবার রাগ হয় ওর। রাত জাগা যে শরীরের জন্য কতখানি খারাপ এই ছেলেটা যে কবে বুঝবে?
চুলে ক্লিপ লাগিয়ে, শাড়ীটা ঠিকঠাক করে পিন লাগিয়ে বেডের পাশে এসে দাঁড়ায় মৌমিতা। অকাতরে ঘুমাচ্ছে রুমি। রুমির ঘুমন্ত মুখটা দেখে ভীষণ মায়া হয় ওর। বেডের পাশে মেঝের উপর হাঁটু গেড়ে বসে ও। ঠিক যেন ছোট্ট এক দুরন্ত শিশু । ঘুমিয়ে পড়েছে ক্লান্ত হয়ে। আলতো করে ঠোঁট ছোয়ায় ও রুমির গালে। কপালের উপর দিয়ে এসে পড়া এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে দেয়।
চোখ মেলে তাকায় রুমি। কপালের উপর হাতটা চেপে ধরে ওর। টেনে এনে ঠোঁটে ছোয়ায়।
-বাই রুম্মুসোনা। টেবিলে ব্রেকফাস্ট রেডী করা আছে। ঠিকঠাক খেয়ে নিও ওকে?
-ওকে বেবী। বাই বাই। তাড়াতাড়ি চলে এসো।
মেইন দরজার লক চেপে দিয়ে বেরিয়ে আসে মৌমিতা। গ্যারাজ থেকে গাড়ি বের করে স্টার্ট দেয়।
চলবে.....
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১১ রাত ৯:৫৭