২০১২-২০১৩ এর এ্যাকাডেমিক ইয়ার শুরুর প্রথম দিন। বাচ্চাদেরকে নিউ ক্লাসের নিউ টিচারদের কাছে হস্তান্তর করলেন পুরোনো ক্লাসের টিচারেরা। আমিও যথারিতী প্লে-গ্রুপ টিচারের কাছ থেকে আমার নার্সারী ক্লাসের এক ঝাঁক নতুন বাচ্চা নিয়ে ক্লাসরুমে প্রবেশ করলাম।
ক্লাসে ঢুকেই কিছুক্ষন মজা করে তাদের সাথে নাচ, গান, নার্সারী রাইমস এমনকি একটুখানি মজা মজা এক্সারসাইজও করে ফেললাম। উদ্দেশ্য তাদেরকে নতুন ক্লাসের নতুন এই আমি টিচারের কাছে একটু সহজ করে তোলা।একটু পর টিফিন খাওয়া শেষ হলে আমি ওদেরকে গল্প শুনাতে বসলাম। প্রথমেই পড়ে শুনালাম "মাই ফার্স্ট ডে এ্যাট প্রিস্কুল" বইটা। যেখানে একটা বাচ্চা ও তার প্রথমদিন স্কুলে আসার নানা রকম অভিজ্ঞতা লেখা হয়েছে। মজার সেই বইটা পড়ে শেষ করবার পরও ওরা আরও আরও গল্প শুনতে চাইলো। মিস আরেত্তা বলো, আরেত্তা বলো।
তখন আমি মিঃ মেন সিরিজের মিস চ্যাটারবক্স বইটা টেনে নিলাম। এইখানে অবশ্য আমার একটা গুঢ় অভিসন্ধি ছিল যেন মিস চ্যাটারবক্সের গল্পটা শুনে ওরা প্রথম দিনেই বুঝে যায় বেশি কথা বলার কত বিপদ আর ক্লাসে যেন বেশি বক বক করে বেশি ঝামেলাও না করে । মিস চ্যাটারবক্স গল্পে মিস চ্যাটারবক্স এত কথা বলতো যে সে যেখানেই জব করতে যেত সেখানেই কথা বলতে বলতে কোনো কাজই শেষ করতে পারতোনা।এইভাবে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, ব্যাংক, শপিং মল সবখানেই জব হারালো সে। যাইহোক মিস চ্যাটারবক্সের গল্পটা ওরা খুব মন দিয়ে শুনলো।
যখন বলছিলাম মিস চ্যাটারবক্স সেস, চ্যাট চ্যাট চ্যাট চ্যাট চ্যাট চ্যাট চ্যাট চ্যাট তখন ওরা হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছিলো। এরপর টিফিন খাওয়া শেষ হতে আমি ওদের সবাইকে একটা করে পেপার দিয়ে ছবি আঁকতে বসালাম। ছবি আঁকা শুরুর আগে আমি বললাম,
: লিসেন চিলড্রেন, নাও উই আর গোইং টু ড্র মিস চ্যাটারবক্স’স পিকচার। সি, মিস চ্যাটারবক্স হ্যাজ শর্ট হেয়ার লাইক দিস, হার ড্রেস ইজ লাইক দ্যাট......... আমি সাথে সাথে বোর্ডে ড্র করে দেখাতে লাগলাম আর বুঝাতে লাগলাম ওরা কেমন করে আঁকবে। হঠাৎ একটা পিচকি হাত উঠালো। আমি ওর দিকে তাকাতেই সে বললো,
: মিস আই ওয়ান্ট টু টেল ইউ সামথিং .....
: ওকে.....
: মিস আ হ্যোয়াইল ব্যাক ইউ টোল্ড আস আবাউট মিস চ্যাটারবক্স এ্যান্ড উই স্য দেয়ার টু মাচ টকিং ওয়াজ ভেরী হার্মফুল ফর হার এ্যান্ড দ্যাট লেডি ওয়াজ ডিসগাস্টিং। সি মেড অল অফ হার কাস্টোমারস বোরড এ্যান্ড টায়ার্ড বাই ডুইং চ্যাট চ্যাট চ্যাট চ্যাট চ্যাট চ্যাট চ্যাট এ্যান্ড ইউ নো মিস, নাও ইউ আর অলসো ডুইং দ্যা সেইম থিং। ইউ আর ডুইং চ্যাট চ্যাট চ্যাট চ্যাট চ্যাট এ্যান্ড মেকিং আজ বোর্ড এ্যান্ড টায়ার্ড! সো ইউ স্যুড স্টপ ডুইং চ্যাট চ্যাট চ্যাট চ্যাট এ্যান্ড লেট আস ডু আওয়ার ওয়ার্ক।
আমার অবস্থা তখন.........
আরেকদিনের কথা- লজিক্যাল জায়না
আমি ওদেরকে পড়াচ্ছিলাম ওয়ান ওয়ান ইলেভেন, ওয়ান টু টুএল্ভ, ওয়ান থ্রী থার্টিন, ওয়ান ফোর ফোর্টিন, ওয়ান ফাইভ ফিফটিন......এমন সময় জায়না হাত উঠালো, মিস স্টপ প্লিজ! আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, হ্যোয়াটস রং? সে বললো, মিস নাথিং ইজ রং, অনলি ইউ আর রং।
:ইজ দ্যাট সো?
: ইয়েস মিস। ইউ টোল্ড ওয়ান ওয়ান ইলেভেন। ইট স্যুড বি ওয়ান ওয়ান ওয়ানটিন, ওয়ান টু টুটিন, ওয়ান থ্রী থার্টিন এ্যান্ড ইউ মেড মোর মিসটেক মিস।
: মোর? হ্যোয়াট'স দ্যাট জায়না?
: ইউ সেইড, ওয়ান ফাইভ ফিফটীন, ওয়ান ফাইভ স্যুডেন্ট বি ফিফটীন মিস। এ্যাকচুয়ালী ইট হ্যাজ টু বি ফা---ই--ভ---টি---ন এন্ড ...........
মাই গড!!! এই পন্ডিৎ পিচ্চিকে নিয়ে কই যাই আমি!!!!
আরেকদিনের আক্কেলগুড়ুম কাহিনী-
ওদের ছুটি হতে তখন আর ১৫ মিনিটসের মত বাকী আছে। আমি বললাম, ওকে লেটস ডু রাইমস। ওরা যথারিতী নো নো মিস টেল আস স্টোরী!! কি আর করা ! আমি ঢঙ্গ ঢাঙ্গ করে বললাম, ওকে চিলড্রেন আই উইল টেল ইউ আ স্ম---ল স্টোরী। ওমনি পন্ডিৎ জায়না ঠাস করে উঠে দাঁড়ালো, এক্সিউজ মি মিস। ইউ আর ইউজিং দ্যা রং ওয়ার্ড ইন দ্যা রং প্লেস। আমি তো বাকহরা এমনিতেই! ওর মিস স্টপ প্লিজ শুনলেই আমার প্রাণ উড়ে যায়।হা করে তাকিয়েই আছি এই পিচকি বলে কিরে বাবা!!! সে আমার আক্কেল গুড়ুম বাকহরা অবস্থা দেখে বললো, ইউ হ্যাভ টু সে, চিলড্রেন আই উইল টেল ইউ আ শর্ট স্টোরী নট স্মল ওকে? মিস ইউ হ্যাভ টু লার্ন হাউ টু ইউজ প্রপার ওয়ার্ড ইন প্রপার প্লেস।
জায়না যখন একজন অভিজ্ঞ বিউটিশিয়ান ও হেল্থ এক্সপার্ট- একদিন আমাদের ভাইস প্রিন্সিপাল এসেছেন ক্লাস ভিজিটে। উনি একটু হেলদী।জায়নাকে দেখে উনি বললেন, গুড মর্নিং জায়না। হাও আর ইউ ডুইং? জায়না অভিজ্ঞের মত মাথা নাড়িয়ে বললো, আই এ্যাম ডুইং ফাইন মিস বাট আই থিংক ইউ আর নট ডুইং দ্যা রাইট থিং। ভাইস প্রিন্সিপাল তো অবাক! উনি বললেন, মি!!!! হ্যোয়াট ডিড আই ডু জায়না? জায়না বললো, মিস ইউ আর গেটিং টু মাচ ফ্যাটি। ইউ স্যুড গো টু জিম। ইউ নো ইফ ইউ গো টু জিম, ইউ উইল ল্যুজ ইওর ফ্যাট, নাও ইউ আর লুকিং ফ্যাটি এ্যান্ড আগলি এ্যাজ ওয়েল, সো ইউ স্যুড থিংক অফ ইট মিস, ইফ ইউ আর ফ্যাটি এ্যান্ড আগলি নোবডি উইল লাইক ইউ এ্যান্ড মে বি ইওর হ্যাজবান্ড উইল অলসো নট লাভ ইউ এনিমোর। মে বি হি উইল নট লাইক ইউ এ্যান্ড …………………
ভাইস প্রিন্সিপালের সাথে সাথে আমিও তখন আমি অবশ্য এর সাথে সাথে টেবিলের তলা খুঁজছিলাম কিছুক্ষন নিজেকে আড়াল করার আশায়।
জায়না যখন পলিটিশিয়ান-
একদিন সে অনেক অনেক বেশী এগ্রেসিভ আচরণ শুরু করলো। একে মারছে, ওকে খামচি দিচ্ছে। আমি প্রথমে ওকে বুঝালাম , জায়না ইফ ইউ বিহেভ লাইক দ্যাট নোবডি উইল বি ইওর ফ্রেন্ড। ডু ইউ নো ইফ ইউ বিহেভ গুড উইথ আদারস এভরিওয়ান উইল হেল্প ইউ, এভরিওয়ান উইল লাভ ইউ ব্লা ব্লা ব্লা.......
কিন্তু তারপরও জায়নার বিহেভিয়ারে কোনো পরিবর্তন হলোনা। সে তারপরও ক্ষনে ক্ষনে একে খামচি ওকে ভেংচি দিতেই লাগলো। তখন আমি রাগ করে বললাম, জায়না নাও আই এ্যাম রিয়েলি গেটিং টু মাচ এংরী উইথ ইউ বিকজ ইউ আর নট লিসনিং টু মি। ইউ আর নট বিহেভিং ওয়েল উইথ আদারস আফটার সেভেরাল রিমাইন্ডারস।সো ইউ ক্যান নট গো টু গেমস ক্লাস নাও। ইউ হ্যাভ টু স্টে ইন দ্যা ক্লাসরুম ফর ২০ মিনিটস।
তখন জায়না কয়েক সেকেন্ড কি যেন ভাবলো তারপর দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, মিস ডু ইউ নো ওয়ান থিং?
: হ্যোয়াট?
: ইউ আর ভে---র---র---রী প্রিটি!!!! আমি তো এ কথা শুনে যেমনি তেমনি হয়ে গেলাম!!!!!!!!!!!!
বললাম রিয়েলী!!! আর ইউ শিওর? সে বললো, ইয়েস মিস ইউ আর জাস্ট লাইক আ রিয়েল ফেইরি প্রিন্সেস!!!!!! বলেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাজার হাজার কিস দিতে শুরু করে দিলো। তখন কি আর তাকে কোনো শাস্তি দেওয়া যায়!! হাজার হোক আমাকে আমার স্বপ্নের এ্যান্জেল থেকে রিয়েল এ্যান্জেল বানিয়ে দিয়েছে আমার প্রিয় জায়নামনি!!!!.........
জায়না যখন একজন বিশিষ্ঠ তরিৎকর্মা প্রতুতপন্নমতি গল্পকার-আমি একদিন আমার রচিত হাবলুর খাতা গবলুর গাছের গল্প বললাম আমার প্রাণপ্রিয় দুষ্টু দুষ্টু মিষ্টি মিষ্টি বেবিদেরকে এবং তাদেরকে বললাম জানো এই গল্পটা কিন্তু আমি লিখেছি। গল্পের পড়ালেখায় লাড্ডুগুড্ডু হাবলু কিভাবে একটা দুই শূন্য পাওয়া পরীক্ষার খাতা বাড়ির উঠোনে পুতে রেখে একদিন জ্যাক ইন দ্যা বিন স্টকের মত খাতার গাছ গজিয়ে উঠতে দেখলো আর তারপর সেই খাতার পাতায় প্রাকটিস করে করে কিভাবে পড়ালেখায় ভালো হয়ে উঠলো। এমনকি ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথমও হয়ে গেলো সেটাই ছিলো গল্পের মূল প্রতিপাদ্য। গল্পটা শুনে কিছুক্ষনের মধ্যে জায়না বললো, মিস আমিও একটা গল্প বলতে চাই এ্যান্ড ইটস আ রিয়েল স্টোরী মিস। আমি বললাম তাই নাকি! বলোতো শিঘরী! শুনিতো তোমার গল্পটা। জায়না দাঁড়িয়ে গেলো গল্প শোনাতে, একদিন ওর বাবা নাকি একটা ডেইরীমিল্ক ফ্রুট এ্যান্ড নাট দিয়েছিলো ওকে। সে সেটা আধাটা খেয়ে বাকি আধাটা পুতে রেখেছিলো ফুলের টবে। পরদিন সে নাকি দেখলো ছোট্ট একটা গাছ আর সেইগাছ কিছুদিনের মাঝে বড় হতেই সে পেয়ে গেলো বিশাল বিশাল সব ডেইরী মিল্ক ফ্রুট এ্যান্ড নাট চকলেট আর এই কাহিনী নাকি ১০০% সত্যি। প্রমান স্বরূপ সে পরদিন ক্লাসের সবার জন্য ডেইরী মিল্ক ফ্রুট এ্যান্ড নাট চকলেট নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি জানালো।
একদিন হঠাৎ জায়নামনি হতে আমার অপ্রত্যাশিত ও বিরল সন্মাণনা বা পুরষ্কার প্রাপ্তি-
ক্লাসে যাই করানো হয়, পড়ানো হয় বা শেখানো হয় জায়নামনি যেন আগে থেকেই সবকিছু ওর মত করে জেনে, বুঝে, শিখে বসে আছে। সে পারে তো উল্টা আমাদেরকেই শিখিয়ে দেয়। যাইহোক এ্যানুয়াল শোতে এবার আমি ওদেরকে ব্যালে ডান্স করাবো ঠিক করলাম। তো আমি ওদেরকে ব্যালে ইন্ট্রোডিউস করাতে খুব সুন্দর একটা ব্যালেরিনা ড্রেস ও জুতা পরা চুড়ো করে চুলবাঁধা ফুটফুটে একটা পিচ্চি মেয়ের ছবি দেখালাম। এরপর আমি ডিভিডিতে একটা সফ্ট ভারী সুন্দর মিউজিকের সাথে মেয়েটার নাচ দেখানো শুরু করলাম। জায়নামনি এই প্রথম মহা মুগ্ধ হয়ে গেলো ও অপার বিস্ময়ে, মুগ্ধতায় স্তব্ধ হয়ে নাচটা দেখতে শুরু করলো। ওর চোখ দুটো তখন জ্বলজ্বলে হীরের মত দ্যুতি ছড়াচ্ছিলো। নাচ শেষে আমি যখন বললাম, এবারে এই নাচটা তোমাদেরকে শেখানো হবে, ঠিক এমন সুন্দর একটা ড্রেস পরে, জুতা পরে , এইভাবে চুল বেঁধে তোমরা নাচ করবে....... এত টুকু বলতেই জায়নামনি মহা বিস্ময়ে, মুগ্ধতায় অভিভুত হয়ে গেলো। সে দৌড়ে এসে আমাকে বললো, মিস ইউ আর আ ভেরী গুড টিচার!!! আমি তো চমকে উঠলাম !!!!মহা অবাক আমি!!! মনে হয় ওর এই প্রশংসায় আমি ঠাস করে পড়েই যাচ্ছিলাম আর একটু হলে। এই প্রথম আমি জায়নামনিকে মুগ্ধ করতে পেরেছি ও জায়নামনি হতে বিরল সন্মাননা গুড টিচার উপাধি পেয়েছি। এর চাইতে বড় বিস্ময় আর কি হতে পারে!
জায়নামনি যখন দারুন সত্যবাদী ও টিচারের কথার এক নিষ্ঠ সমর্থক-
সকালবেলার এ্যাসেম্বলীতে প্রিন্সিপ্যাল বেবিদেরকে উপদেশ দিলেন। চিলড্রেন, উইন্টার ইজ কামিং সো ইউ স্যুড থিনক এবাউট দ্যা পুওর পিপল টু। প্লিজ হেলপ দেম এ্যজ মাচ এ্যাজ ইউ ক্যান। এভরিবডি স্যুড বাই এ্যাটলিস্ট ওয়ান ওর টু ওয়ার্ম ক্লথস ফর দেম। ইউ ক্যান গিভ দেম ইওর ওল্ড ওয়ার্ম ক্লথস টু।
হঠাৎ আমার জায়নামনি হাত উঠালো। প্রিন্সিপাল তাকে ডাকলো। জানতে চাইলেন, সে কি বলতে চায়। সে গট গট করে হেটে গিয়ে এক স্কুল স্টুডেন্ট টিচার ও অন্যান্য স্টাফদের সামনে দাঁড়িয়ে বললো।
:মিস উই স্যুড নট গিভ দেম এনিথিং। প্রিন্সিপালের চোখ তো ছানাবড়া, দইবড়া বা রসগোল্লার মতই মনে হয় হয়ে গেলো। মুখখানা পৌষমাসের প্রারম্ভেও যেন আষাড়ের কালীমাখা আকাশ। তিনি বললন হ্যোয়াই? হ্যোয়াই আর ইউ টকিং লাইক দ্যাট বেবি ? সে বললো, বিকজ আওয়ার টিচার সেস দ্যাট। উই স্যুড নট গিভ দেম এনিথিং, উই স্যুড নট হেল্প দেম , বিকজ দে আর থিফ, দে আর রোবার, দে আর ব্যাড, দে আর .... ....... ......... সবার দৃষ্টি তখন বিদ্যুৎ চমকের ন্যায় চমকিত হয়ে জায়নাকে ছেড়ে আমার দিকে বিদ্ধমান । আমি তো আর একটু হলে মাথা ঘুরে পড়েই যেতাম অনেক কষ্টে ফ্লাগস্টান্ডটা ধরে যাও বা রক্ষা পেয়েছি আর কি। যাইহোক তাড়াতাড়ি কে ওকে থামালো, কে ওর মাইক অফ করলো, কি করে এসেম্বলি শেষ হলো কিছুই জানিনা আমি আর। শুধু একটু পরে প্রিন্সিপ্যালের রুমে নিজেকে আবিষ্কার করলাম।
প্রিন্সিপালের রুমে আমার বয়ান-
কিছুদিন আগে জায়না আমাকে প্রশ্ন করেছিলো, মিস হ্যোয়াই সাম পিপল স্লিপ অন দ্যা রোড? আমি বলেছিলাম বিকজ দে ডোন্ট হ্যাভ হাউজ লাইক ইউ বেবি, দে আর পুওর, দে ডোন্ট হ্যাভ নাইস ড্রেস লাইক ইউ, দে ডোন্ট হ্যাভ নাইস ফার্নিচার, দে ডোন্ট গেট ফুড প্রপারলি…… দে কাম ফ্রম ভিলেজ, দে ওয়ার্ক ইন ঢাকা সিটি ফর মানি। দে আর ভেরী আনলাকি ইউ নো?
সেসব শুনে ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর চোখ ছলছল করে উঠেছিলো। আমার খুব ভালো লেগেছিলো যে তারা মানুষকে ভালোবাসে। ধনী পরিবারে জন্ম নিয়েও আর্ত মানুষের সেবায় একদিন নিশ্চয় নিজেদেরকে নিয়োজিত করবে। এরপরদিন ওর মা এসে আমাকে বললো, মিস কি বলেছেন আপনি জায়নাকে সে তো কাল সারারাত কান্না রাস্তার মানুষগুলোকে এনে তার বাসায় যেসব রুম খালি পড়ে আছে সেখানে ঘুমাতে দিতে হবে। এই নিয়ে অনেক ঝামেলা করেছে সে কাল রাতে। এটা শুনে আমি জায়নাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললাম, জায়না আম্মুকে এইভাবে আর কখনও ডিস্টার্ব করোনা বেবি। যাকে তাকে আননোন অর স্ট্রেন্জারকে তো বাসায় রাখা যায়না জায়নাবেবি। সে আমাকে আস্ক করলো হ্যোয়াই? হ্যোয়াটস দ্য প্রবলেম উইথ আননোন পিপল? আমি বললাম অল স্ট্রেন্জারস মে নট বি গুড। দে মে বি থিফ, দে মে বি রোবার অর ব্যাড সো উই ক্যান নট গিভ দেম শেল্টার এ্যাট আওয়ার হোম বিকজ উই ডোন্ট নো দেম। সো সামটাইমস উই ওয়ান্ট টু হেল্প দেম বাট উই ক্যান্ট হেল্প দেম বেবি।
এসব শুনে জায়না চুপ করে গেলো। মেনে নিলো আমার যুক্তি। জায়না অনেক চালাক একটা মেয়ে। কিছুদিন আগেই সে দেখেছে তার পাশের ফ্লাটে কাজের ছেলে আর দারোয়ান দুজন মিলে সেই বাসায় ডাকাতি করা ঘটনাটি। কাজেই রোবারি কি সে খুব ভালোই জানে। যাই হোক এসব কিছুর ফলশ্রুতিতেই সে সেদিন সবার সামনে অস্বীকৃতি জানালো গরীবদেরকে হেল্প করতে আর এটাও জানিয়ে দিলো যে, সে শিক্ষা সে তার প্রানপ্রিয় টিচারের থেকেই পেয়েছে। কি আর করা!!! রক্ষে করো জায়নামনি।
জায়না ও তার বয় ফ্রেন্ডরা-
একদিন সকালে হঠাৎ জায়না এসে আমাকে জানালো,
:মিস ইউ নো? ফ্রম নাও আবরার ইজ মাই বয়ফ্রেন্ড!
আমি শুনেও না শোনার ভান করে এড়িয়ে গেলাম। কিন্তু জায়নামনি সবার সামনে গলা ফাটিয়ে তার নব্য বয়ফ্রেন্ডকে শিক্ষা দীক্ষা দিতে শুরু করলো।
: লিসেন আবরার, ফ্রম নাও ইউ আর মাই বয়ফ্রেন্ড ওকে? সো ইউ উইল অলওয়েজ বি উইথ মি। নেভার সিট উইথ আদার গার্লস। বয়ফ্রেন্ডস স্যুডেন্ট সিট বিসাইড এনি আদার গার্লস এক্সেপ্ট হিজ গার্লফ্রেন্ড।
আমি তাড়াতাড়ি ওকে ঠেকাতে সব বাচ্চাদেরকে ডেকে নিয়ে বোর্ডের সামনে ম্যাটে বসালাম। এটা ওটা বলার পর বললাম চিলড্রেন আই থিংক আফটার আ লং হলিডে ইউ আর ভেরী এক্সাইটেড এ্যান্ড হ্যাপী( আমার গুরুতর আলোচলার লঘু সুত্রপাত আর কি) এ্যান্ড স্পেশালি জায়না ইজ ভেরী হ্যাপী বিকজ সি মেড আবরার হার বয়ফ্রেন্ড। বাট জায়না ডু ইউ নো দেয়ার আর সাম বয় এ্যন্ড গার্লস ইন আওয়ার ক্লাস এ্যান্ড উই অল আর ফ্রেন্ডস। নাও উই উইল নট কল এনিওয়ান বয়ফ্রেন্ড অর গার্লফ্রেন্ড । হোয়েন ইউ উইল গ্রোন আপ, ইউ উইল বি এইটিন ইয়ারস ওল্ড দেন অনলি ইউ ক্যান মেক বয়ফ্রেন্ড এ্যান্ড গার্ল ফ্রেন্ড বাট নাও উই আর অল ফ্রেন্ডস ওকে? সো ডোন্ট মেক এনিওয়ান স্পেশাল অর বয়ফ্রেন্ড অর গার্লফ্রেন্ড ওকে? ইফ ইউ ডু লাইক দ্যাট ইওর আদার ফ্রেন্ডস উইল বি আপসেট, ইজন্ট দ্যাট ? সো এভেরিওয়ান ইজ এভরিওয়ানস ফ্রেন্ড।
তো সবাই খুব মন দিয়ে শুনলো জায়নাও হু হা করে মাথা নাড়লো। কিন্তু কিছু পরেই সে তার বয়ফ্রেন্ড ছাড়া অন্য কারো সাথে বসতে অস্বীকৃতি জানালো। তো আমি তাকে বললাম জায়না হ্যোয়াটস রং এগেইন? সে বললো, ডোন্ট ইউ নো? আবরার ইজ মাই বয় ফ্রেন্ড? আই হ্যাভ টু সিট বিসাইড হিম। তারপর সে বললো, ও আবরার ইউ আর মাই বয়ফ্রেন্ড। আই লাভ ইউ সো মাচ, আই কান্ট লিভ উইদাউট ইউ ফর আ সেকেন্ড.... ইত্যাদি ইত্যাদি ও ইত্যাদি!!! কি আর করা? ছুটির পর ওর মাকে ডেকে বললাম সকল ঘটনা। ওর মা বললো নিক চ্যানেল দেখে দেখে নাকি সে সেসব শিখেছে। যাই হোক আমি আমার এ্যাডভাইস বললাম মাকে। আমি বললাম ওকে বলবেন, সবাই আমরা ফ্রেন্ড। মা সন্মতি জানালো কারন তিনি একজন কো-অপারেটিভ মাদার, তিনি টিচাদের হেল্প চান প্রায়শই এবং জায়নাকে সামলাতেও, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধবদের বাড়িতে অনেক খানেই বেগ পেতে হয় তাকে।
যাইহোক পরদিন সকালে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে ওর মা ওকে স্কুলে পাঠালেন। ক্লাসরুমে ঢুকেই জায়না ঘোষনা দিলো, লিসেন, ফ্রম নাও নোবডি ইজ স্পেশাল সো অনলি আবরার ইজ নট মাই বয়ফ্রেন্ড।অনলি হি ইজ নট স্পেশাল টু মি। এভরিবডি ইজ স্পেশাল! মাই মাম টোল্ড অল আর মাই ফ্রেন্ডস এ্যান্ড অল আর স্পেশাল। সো আই ডিসাইডেড ফ্রম নাও ইচ ডে ইচ বয় উইল বি মাই বয়ফ্রেন্ড। সো ইয়েসটারডে আই মেড আবরার মাই বয় ফ্রেন্ড বাট টুডে সাহিল উইল বি মাই বয়ফ্রেন্ড, টুমোরো ইহাব উইল বি মাই বয়ফ্রেন্ড, ডে আফটার টুমোরো জুনাইন উইল বি মাই বয়ফ্রেন্ড........... হ্যাপী????
আমার অবস্থা -#
মাই গড!!!!! তোকে বললাম এখন বয়ফ্রেন্ড বানানো স্থগিত রাখতে । সময় এখনও পড়ে আছে তা না তুই এখন আসলি রোজ একটা করে নিউ নিউ বয় ফ্রেন্ড বানানোর পরিকল্পনা ডিসাইড করে!!!!
যাই হোক এই আমার জায়নামনি। যদিও আমি রিয়েল নামটা ব্যাবহার করার পরিবর্তে ছদ্মনাম ব্যাবহার করেছি তবে আমার এই ছদ্মনামের জায়নামনির সত্যিকারের অসাধারণ অবিস্মরণীয় আক্কেল গুড়ুম মুহুর্তগুলি আমাকে উপহার দেবার ঘটনাবলী আরও বেশী স্মরণীয় করে রাখার জন্য আমি সেসব ব্লগের পাতায় লিখে রাখলাম এবং পুরো বছর জুড়েই তার কান্ডকীর্তি লিখে রাখবার ইচ্ছা আছে আমার। এটা শুধুমাত্র ফার্স্ট টার্মের কিছু ঘটনাবলী। সেকেন্ড টার্ম শুরু হলে বাকী ঘটনাবলীও নিয়ে আসবো ইনশাল্লাহ আর তারপর ফাইনাল টার্মের ঘটনাবলী।
ইমন জুবায়ের ভাইয়ার মৃত্যু মনকে আছন্ন করে রেখেছে তার মত একজন কির্তীমান ব্লগার,রাইটার এবং জ্ঞানী মানুষের দেখা আর কখনও এখানে পাবো কিনা জানিনা। তবে আমি আশাবাদী মানুষ। কখনও আশা হারাইনা। গতবছর যাদের লেখা পড়ে পড়ে মুগ্ধ হয়েছি এবং যাদের মধ্যে সত্যিকারের ভালো লেখকের সম্ভাবনার ছায়া দেখতে পেয়েছি আমার মতে মনে হয়েছে আর কি।
অপূর্ণ- যার চিন্তাভাবনা যুক্তিতর্কের শানিত ধারে আর লেখনীর গুণে মুগ্ধ হয়েছি। সিরাজ সাঁই- সত্যি কথা বলতে শুধু সঙ্গীত নিয়ে লিখলেও যাকে আমার আরেকজন ইমন জুবায়ের ভাইয়াই মনে হয়েছে। শের শায়রী- আরেকজন ভালো লেখকের ছায়া। রাতুল শাহ - এই ভাইয়াটাকে আমার একটু আলসে মনে হয় অথবা হয়তো ইন্জিনিয়ারিং পড়াশোনাটা নিয়ে একটু বেশিই বিজি থাকতে হয় তাকে তাই লেখালিখি কম কম হয়। তবে নিসন্দেহে আলকাপ বা আরও দু একটা লেখা দেখে বোঝা যায় চাইলেই ভাইয়াটা সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে। তামিম ইবনে আমান- আরেকজন সম্ভাবনাময় ব্লগার + রাইটার। অন্যান্য দিকে ব্যাস্ততা কমিয়ে লেখালিখিতে মন দিলে পিচ্চিটাকে ঠেকায় কে! মুশাসি- তার লেখায় একটা কোমল মধুর ভাব আছে যা আমাকে টানে। কালা মনের ধলা মানুষ- আরেকজন জেন্টেল কোমলমতী ভাইয়া। লেখালিখিটাও ভাবিয়ে তোলে। কাল্পনিক ভালোবাসা- ভাইয়াটা লেখার মাঝে টেনে নিয়ে যায় আমাদেরকে যেন গল্পছলে। চেয়ারম্যান- তার নামটা দেখলেই বা মনে পড়লেই চোখে ভাসে সদা হাস্যজ্বল এক দুষ্টু দুষ্টু ভালোমানুষ ভাইয়া। যার জীবনে বুঝি কোনো দুঃখই নেই। সবাইকে হাসিখুশী রাখার যেন ব্রত নিয়েছে ভাইয়াটা। কবি শহিদুল- এত্তটুকুন বয়সে এমন সব কবিতা দেখে মুগ্ধ হই!!!এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা- ব্লগার মানে সত্যিই আসলে কি, স্বর্ণা আপুনিটা বুঝি আমাদেরকে সত্যি সত্যিই শিখিয়ে দেবে। এই এক্সপ্লেনেশনে যাবোনা। একদিন আপুটাকে নিয়ে আস্ত একটা পোস্টই দিতে হবে। হৈমন্তী- আপুটা যদিও অনেক কম কম লিখেছে তবুও আমার কাছে সে কেনো এত প্রিয় বলতে পারবোনা। কিছু কিছু ভালোলাগা ভালোবাসা ব্যাখ্যার অযোগ্য! তার মাঝেও মাতিয়ে রাখা বা ইচ্ছে করলেই এক হাত দেখিয়ে দেবার লুক্কায়িত সম্ভাবনা আমি কেনো যেনো দেখতে পাই জানিনা। গ্রাম্যবালিকা- মজার একটা আপু!!! লেখাগুলোও মজার!!! ফারাহ দিবা জামান- একজন সত্যিকারের কবি বা শিল্পীর যতটুকু আবেগ বা ভালোবাসা থাকে বিধাতা যেন তার চাইতেই বেশি কিছু দিয়েই গড়েছেন তাকে। শামীম আরা সনি- প্রথমদিকে একটু ভয় ভয় লাগতো। কিন্তু প্রতিবাদী চেহারার এই আপুটাকে এখন অনেক অনেক চিনি ও বুঝি। তার লেখাগুলোও দারুণ হচ্ছে। শুকনোপাতা- আমি তার গল্প পড়ে তার ফ্যান হয়ে গেছি।
অপু তানভীর- আমার অপুভাইয়ার নাম প্রিয় গল্পকারের স্থানে না নিলে ভাইয়াটা তো মনে হয় রাগ করে আমার সাথে কথাই বলবেনা আর। আর আসলেই ভীষন ভালোবাসি পিচ্চি ভালোমানুষ ভাইয়াটাকে আর তার প্রতিনিয়ত প্রেমেপড়ার মজার মজার গল্প গুলোকে।এছাড়া মেহদীভাইয়ার যৌক্তিক আলোচনা সমালোচনার ক্ষমতা আমাকে কিছু জায়গায় মুগ্ধ করেছে। সালমামনির দুষ্টুমী আর মজার মজার লেখা, রাফাতভাইয়ার মুগ্ধ করা স্কেচ আর আরমানভাইয়া সহ আরও অনেকের মানবতা বা সেবামূলক কার্য্যক্রমগুলো আসলেই চোখে পড়ার মত।
নতুন বছরে আরও আরও সুলেখক, জ্ঞানী, গুণী ও ভালোমনের ব্লগার ও মানুষগুলোয় ভরে উঠুক আমাদের সামহ্যোয়ারইনব্লগ।
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা!!!!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৪৮