সুখে ও শান্তিতেই দিন কাটছিলো এই পৃথিবীবাসাীদের। হঠাৎ করোনার করাল থাবায় গত বছরের মার্চ মাস হতে আমাদের দেশ তথা সারা বিশ্ববাসীর সুখ শান্তি আনন্দ ভালোবাসা আর ভালো লাগায় ছেদ পড়লো। উৎসব ও আনন্দপ্রিয় বাঙ্গালীদের আনন্দের দূয়ার রুদ্ধ হলো। গত বছর এই সময়টা একেবারেই বন্দী দশায় কেটেছে আমাদের । তবে হ্যাঁ মানুষ বড়ই অপ্রতিরোধ্য, নির্ভিক ও সকল পরিবেশেই খাপ খাইয়ে নিতে পারা জীব।
যাই বলি করোনায় আমাদের কম শিক্ষা হলো না। হঠাৎ থমকে গেলেও এই প্রতিকূলতায় চলতে শিখে গেলাম আমরা। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বসবাস শুরু হলো আমাদের। সবচয়েে মজার আর একই সাথে কষ্টের হলো আমার জীবনে অনলাইন স্কুলিং সিস্টেম। অনলাইনেই হলো র্ভতি এসেসমেন্ট। অনলাইনইে হলো প্যারেন্টস মিটিং আবার অনলাইনইে হলো নানা রকম উৎসব। এবারে হবে বৈশাখী অনুষ্ঠান। তারই তোড়জোড়ে আমাকে করতে হলো পাপেট শো বা পুতুল নাচ। কিন্ত অন্যবার তো বাঙ্গালীর হাসির গল্প দিয়ে চালিয়ে দেই এবারে অনুরোধ আসলো করোনা নিয়ে কিছু একটা করে দেখাতে হবে বাচ্চাদেরকে। একই সাথে শিক্ষামূলক ও মজাদার। বাচ্চারা যেন আনন্দের মধ্যেও শিখতে পারে করোনায় কি কি করণীয়।
একই সাথে বুক উইক বা বইমেলাও চললো অনলাইনে। সেখানেও আবার আমি পন্ডিৎ স্টোরী টেলারকে স্টোরী শুনাতে হবে বাচ্চাদেরকে। স্টোরী বা গল্প শুনাতে আমি বড়ই ভালোবাসি। ছোট থেকেই বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতাম সত্য মিথ্যায় মিলিয়ে আর এমনই সব মিথ্যে যে এক্কেবারেই সত্যেরই মত বলেই ভুল হয়ে যেত সবার!!! যাইহোক সেটাই কিন্তু সফল স্টোরী মেকারের কাজ তাইনা???
যাক করোনা ও পাপেট শো নিয়ে ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে গেলো সাজু রুপাই এর ঘটক মশাইকে। ঐ নাটকের ঘটকমশাই আমার জীবনের সবচেয়ে হাসির মানুষ মনে হয় আমার। তাই মজাদার মানুষ সেই ঘটক, সেই ঘটক থেকে সাজু রুপাই সেই সাজু রুপাই থেকে বোকা জামাই এর গল্প সব মিলেমিশে হুড়মুড় করে নামলো আমার চোখের পাতায় আর মনের দূয়ারে। সাথে সাথে পেয়ে গেলাম আইডিয়া। আর এই ব্লগের রফিকভাইয়া আর জেসনভাইয়ার সাথে ছড়িতা যুদ্ধের সুবাদে ছড়ারা থাকে এখন আমার আঙ্গুলের ডগায় ডগায়........
যাইহোক মাত্র আধা ঘন্টায় লিখে ফেলললাম অং বং চং....... তারপর যাকে শুনাই সেই হাসে। সুফিয়া বলে বালা হইসে আসমা বলে এই রমিজ্জা আর করিম্মা তো আমগো গেরামে আছে। আপনে কই পাইলেন!!! আর আমাদের প্রিন্সিপ্যাল তো মহা খুশি। আমাকে আমার মতন করইে এতগুলি এক্সক্লেমেটরী সাইনে লিখে পাঠালেন তার উচ্ছসিত আনন্দ বারতা। ঠিক এমনটাই চেয়েছিলেন তিনিও।
আচ্ছা সবাইকেই পড়াই সেই পুতুলনাচের স্ক্রিপ্টটা......
ছড়া ও ছন্দে পুতুলনাচ - করোনা ভাইরাস এবং হাবু
ন্যারাটর- নামটি তাহার হাবলু মিয়া
সবাই ডাকে হাবু.....
এই আমাদের হাবু......
হাবু- হা হা হা আমি হাবু !
নামটি আমার হাবু হলেও
করতে পারি এক নিমিষে
একশোজনকে কাবু.... হা হা হা হি হি হি হো হো হো হো
বন্ধু- আরে বাবা থামো থামো থামো
শুনছো নাকি আসিছে এক ব্যামো???
হাবু- ব্যামো?
এসব বলে বাপু মোরে বইলোনা রে থামো।
আমি হাবু , নামটি আমার হাবু।
এক নিমিষে করতে পারি একশোজনরে কাবু।
হাবু আর তার বন্ধু
বন্ধু- অতো বড়াই হাবলু মিয়া
লাগে যে হাস ফাস,
শুনছো নাকি আইছে দ্যাশে করোনা ভাইরাস?
হাবু- হা হা হা হো হো হো মাথায় উঠছে পোকা?
ভাবছো বুঝি হাবলু মিয়া এতই বুঝি বোকা?
জনম থেইকা খাইয়া আসছি করলা ভর্তা ভাজি।
আর তুমি মিয়া করলা ভাইরাস নিয়া আসলা আজি!
ভর্তা ভাজি খায়াই আমি বড়ই আছি ভালা।
তোমার ভাইরাস নিয়া তুমি দূর হও হাবা কালা।
করলো মরোলা থোড়াই কেয়ার পটল কুমড়া,ঢেড়স,
টমেটো আলু, লাউ, ঝিঙ্গা---
খাইবি পিটা বেশি যদি বাড়স।
বন্ধু- আরে বাবা করলা না করোনা ভাইরাস।
সাবধান হও নইলে মিয়া মিটবে সকল আঁশ।
হাবু- যা যা যা নিয়া যা তোর করলা ছাইবাঁশ
শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি খাইতে মুরগী গরু হাঁস।
***********************************
বাড়িতে ফিরে -----------
হাবু - ওমা ওমা ওমা, যাবো শ্বশুর বাড়ি
পোলাও খাবো কোরমা খাবো ভরা হাড়ি হাড়ি।
হাবু ও মা
মা - যাবি বাবা যাবি। পোলাও কোরমা খাবি
কিন্তু শুনি আসছে দ্যাশে করোনা নাম দানো...
হাবু_ উফ ফু মা করলা নিয়া তুমিও দেখি জানো!
জনম ভরা খাইলাম আমি করলা খেত তুইলা
কিন্তু
তুমিও আজ দানো শুইনা গেলে সবই ভুইলা!
মা- নারে বাবা না। আমি যে তোর মা।
বড়ই লাগে ভয়রে বাবা তুই যে চোখের মনি।
করনা যে প্রাণ কাইড়া নেয় রে সকলখানে শুনি।
হাবু- রাখো তোমার শুনাশুনি করলা কোর ছার
এই সব কথা আমি হাবু করিও না কেয়ার।
মা- আইচ্ছা তবে সাবধানে যা দোয়া দরুদ পইড়া
তোর কিছু বাপ হইলে আমি যাবোই যাবো মইরা।
হাবু - মা আমার মা। তোমায় বড়ই ভালোবাসি
চিন্তা কইরোনা না মা আমার এবার আমি আসি।
রাইখো মনে আমার নাম হাবু।
এক নিমিশে করতে পারি একশোজনরে কাবু।
করলা ঢেড়শ কুমড়া পটল করবে আমার কি?
আমায় তুমি এত রোগা ভোগা ভাবো ছিহ!
মা আমার মা। তোমায় বড়ই ভালোবাসি
চিন্তা কইরোনা না মা আমার এবার আমি আসি।
মা- সাবধানে যা বাবা আমার চান মানিক রতন
শুশুরবাড়ি ভালো মন্দ খাইয়া থাকিস যতন।
হাবু যখন বাজারে...
ন্যারেটর- চললো হাবু শ্বশুরবাড়ি বাজারের পথ দিয়া।
সবার মুখে মুখোশ আঁটা এইডা আবার কি হ্যা!
হাবু- ও মিয়া ভাই ও দোস্ত রতন মনে বড়ই সুখ!
ব্যাপার কি ভাই!
গরুর মতন মুখে ঠুলি! কারু খ্যাতে দিসো মুখ?
বন্ধু- আরে মিয়া রাখো তোমার আজব মশকরা।
মুখে কুলুপ তুমিও আটো তোমার বাড়িছে আশকারা।
করোনা থেইকা বাঁচতে চাইলে মুখোশ আজই পরো।
এই নাও ভাই তোমার জন্য নতুন একখান ধরো।
হাবু- হে হে হে হইতে গরু সাধ লাগিছে তোমার
এসব মুখোশ গরুর জন্য, জন্য নহে আমার।
ন্যারেটর- হাবু গেলো কিনতে মিঠাই দোকানী বলে একি।
ও মিয়াভাই তোমার মুখে মুখোশ নাই যে দেখি।
হাবু- খেতে গরু না দেয় মুখ মুখোশ আটি তাই।
তোমার মিঠাই দোকান কবে খেত হইলো ভাই?
নাকি আমায় ভাবছো গরু তাই পরাবে মুখোশ।
তোমারও দেখি ওদের মতন কঠিন মাথার দোষ!
দোকানী- না না ভাই মুখোশ ছাড়া বেচা বিক্রি বারণ।
কারণ আছে কারণ।
হাবু - মানিনা আমি কারণ বারণ লাগবেনা তোর মিঠাই।
মুখোশ ছাড়াই মিঠাই ছাড়াই শ্বশুর বাড়ি যাই।
করোলা খেত খাবো নাকি মুখোশ আটবো মুখে!
যা মলো যা আমি রাজা থাকবো আমি সুখে।
শ্বশুর বাড়িতে হাবু
ন্যারেটর- শ্বশুরবাড়ি পৌছে হাবু ডাকছে শালাশালী
হাবু- ও রমিজা ও করিম্মা কোথায় তোরা গেলি
রমিজা ও করিম- একি দুলা কোথায় তোমার মুখোশ কোথায় ভাই
করোনা ভাইরাস নিয়া তোমার কোনোই কি ভয় নাই!
হাবু- ও মোর খোদা!!!! শ্বুশুরবাড়িও আইসে সে ভাইরাস
এই দুনিয়ার কোথাও কি নেই শান্তি সুখ আর আঁশ!
রাখ রেখে দে মুখোশ বাকোস আন মন্ডা মিঠাই দুধ।
মাথার থেইকা নামা তোদের করোলা ভাইরাস ভূত।
শালাশালী- না দুলাভাই ইটি আর যে হবার নাইকো কোনো
করোনা ভাইরাস নিয়ম কানুন মানতে হবে মানো।
সাবান দিয়া গোসল করো বাইরে থিকা আয়া
হাত ধুইবা ২০ সেকেন্ডে কিছুখন পর যায়া।
মুখোশ পরো দূরে থাকো সাবধান হও আরও
অকারণে এদিক সেদিক ঘোরা ফেরা ছাড়ো।
হাবু- কি জ্বালারে সকল খানে শান্তি যে আর নাই।
শ্বশুরবাড়ি আয়াও আমার রক্ষা যে নাই ভাই।
ন্যারেটর- রাতের বেলা ঘুমায় হাবু খেয়ে খাটের পরে
আধেক রাতে ঘুমটি ভাঙ্গে গা যাচ্ছে পুড়ে জ্বরে।
গলায় ব্যাথা, সারা শরীর ক্লান্তিতে অবশ।
হাবু মিয়ার ততক্ষনে ফেরে বুঝি হুশ!
হাবু- কি সর্বনাশ করোনা বুঝি করলো ঘাড়ে ভর
করনা হইলে কম্প দিয়া আসে নাকি জ্বর।
গলায় ব্যাথা সারা শরীর ক্লান্তিতে যায় ভরে।
ও মাগো মা আমি যে আজ যাচ্ছি ভয়ে মরে।
ন্যারেটর- -মায়ের সাথে হাবুর দেখা হবে !
এ রোগ যে প্রাণঘাতি
এত রাতে কষ্টে হাবু করেন ইতিউতি।
কোয়ারেনটাইনে হাবু
শ্বশুরবাড়ি বন্ধী থাকেন দু সপ্তাহ ধরে।
শালা শালী শ্বাশুড়ি শ্বশুর থাকেন দূরে দূরে।
ওষুধ চলে পথ্য চলে বিস্বাদ লাগে জীভে।
কত বড় ভুল করেছেন হাবু এখন ভাবে।
ভয়ে পরান কাঁপে তাহার কষ্টে যে বুক ফাটে
নিয়ম কানুন মানবে এবার এ সিদ্ধান্ত আঁটে।
হাবুর উপদেশ
হাবুর মত ভুল করো না করোনাও ভয়।
একতা নিয়ে লড়াই করো হবেই হবে জয়।
আইছে দেশে প্রতিষেধক ভুল করো না নিতে
রেজিস্ট্রেশন করে ফেলে সেন্টারে যাও দিতে।
সবাই মিলে একই সাথে লড়াই করি চলো
হবেই যে জয় নেই কোনো ভয়
একতাই বল বলো।
হাবু এখন বুদ্ধিমান......
আরেকটা কথা- পুরা অডিওটাই আমার গলায় শুধু শালাশালী ছাড়া। তবে ভয়েস চেঞ্জার দিয়ে চেঞ্জ করে দিয়েছি ফিমেল টু মেল।
হা হা হা নামটি আমার ....... ??????????????????
এই পুতুলনাচটি এই ব্লগের সকল ভাইয়া আপুনিদের বাবুনিদের জন্য....... সবাই বাবুদেরকে দেখাও আমার এই করোনা মহামারীতে একটু আনন্দ ও শিক্ষালাভের জন্য মজাদার পাপেট শো টা.......
এই যে এখানে আমার আজকের পাপেট শো-
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:৪৩