somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শরৎ যাচ্ছে চলে

১৩ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শরৎ, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি।
ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি॥

শরৎ মানেই আমার কাছে এই গানটির চরনগুলি। শরতের ছড়িয়ে যাওয়া মোহন অঙ্গুলি কিসের ইঙ্গিতে বলেছেন রবিঠাকুর জানা নেই আমার বটে তবে শরতের মেঘই নিয়ে আসে আমাদের কাছে শরতের বারতা। এমন ঝকঝকে নীল আকাশ আর তাতে ভেসে যাওয়া সাদা সাদা মেঘের ভেলা। মনে পড়িয়ে দেয় ছোট্টবেলার শরতের স্মৃতিগুলি। ত্বরিতে মনে ভেসে আসে সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে শরতের সেই অতি পরিচিত গানের কলি "নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই লুকোচুরির খেলা।

আজকাল আকাশে কেউ তাকাক না তাকাক সামাজিক যোগাযোগ বা ফেসবুকের কল্যানে শরৎ আকাশে হাসে আর ফেসবুকে ভাসে। ফেসবুক ভেসে যায় শরতের কাশফুল আর নানা শৈল্পিক ছবিতে। কাউকে মনে করাতে হয়না যে শরৎ এসেছে। যুগের পরিবর্তনে এও বা কম কি? আমি নিজে বড় ট্রেডিশন্যাল মানুষ। আমার চোখে শরৎ মানে ভোরের বেলা শিশির ভেজা ঘাস আর শিউলিতলার ভেজা ভেজা সেই শুভ্র কোমল সিক্ত ফুলগুলি। সেই ফুল কুড়িয়ে মালা গাঁথা জানিনা আজও গ্রামাঞ্চলে বাচ্চারা গাঁথে কিনা। কিন্তু আমাদের শহুরে ছেলেমেয়েদের চোখে সে তো এক অজানা গল্পই রয়ে যাবে আজীবন।
শরৎ তোমার শিশির ধোওয়া কুন্তলে
বনের পথে লুটিয়ে পড়া অঞ্চলে
আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি।’


শরতের সই হারানো প্রভাতের জন্য আমার মন কাঁদে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে একছুটে ছেলেবেলায়। কিন্তু ফিরে তো যাওয়া যায় না তাই সঙ্গীসাথী যাদেরকেই বলি তাদের অবাক চোখ দেখে মনে হয় যেন আমার মাথায় ভূত চেপেছে নাকি? পাবনায় অতি স্বত্তর পাঠানো যায় কিনা আমাকে এমনই ভাবছে তারা। তাই বাড়ির আঙ্গিনায় সেই শিউলীফুল ছড়ানো ভোরটাকে বড় মিস করি আমি। আমার মন পাখিটা যায় রে উড়ে যায় ধান শালিকের গায়। যায়রে উড়ে যায়।


আমার উদাসী মনে হাহাকার জাগে? বেশি সুন্দরের পিছেও যে এক হাহাকার জেগে থাকে তা বুঝি রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ যেভাবে বুঝেছিলেন আর কেউ তা সেভাবে বুঝেনি।
‘এখানে আকাশ নীল
নীলাভ আকাশ জুড়ে সজিনার ফুল ফুটে থাকে
হিম সাদা রঙ আশ্বিনের আলোর মতোন
আকন্দ ফুলের কালো ভীমরূল এইখানে করে গুন্জরণ।’
আমার মনে অভিমান জাগে। অকারণ অভিমান। কার উপর কাহার তরে জানানো হয় না আর তাকে....আমার মন কেমন করে ..... আমার মন কেমন করে..... কে জানে কে জানে কে জানে কাহার তরে!


পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের কবিতার বিরহী নারী হয়ে যাই আমি। অকারনে চোখে জল আসে। কারণটা বলা বারণ। মূল্যহীন সেই অব্যক্ত বেদনার কবিতার সেই নারীটির মতন নয়ন জলে বুক ভেসে যায়।
বিরহী নারীর নয়নের জলে ভিজিল বুকের বাস।
আজকে আসিবে কালকে আসিবে, হায় নিদারূন আশা,
ভোরের পাখির মতোন শুধুই ভোরে ছেঁয়ে যায় বাসা।’




সব ভুলে মেতে উঠি শরতের প্রাতে, কাঁশবনে কাঁশবনে হাসিখেলায় সখীদের সনে।
সই পাতালো কি শরতে আজিকে স্নিগ্ধ আকাশ ধরণী?
নীলিমা বাহিয়া সওগাত নিয়া নামিছে মেঘের তরণী!
অলকার পানে বলাকা ছুটিছে, মেঘ-দূত- মন মোহিয়া!
চঞ্চুতে রাঙ্গা কল মীর কুঁড়ি- মরতের ভেট বহিয়া!
সখীর গাঁয়ের সেঁউতি- বোঁটার ফিরোজায় রেঙ্গে পেশোয়াজ
আসমানী আর মৃন্ময়ী সখী মিশিয়াছে মেঠো পথ- মাঝ!



শরৎ যাচ্ছে চলে। কালের পরিক্রমায় আবারও আসবে ফিরে। কিন্তু আমি কিংবা আমরা ফিরবো কিনা জানা নেই ......
জানিনা .......



এটি একটি ব্লগীয় শারদীয়া এলবাম অথবা ডায়েরী। যা খুশি ভেবে নেওয়া যেতে পারে। :)

সকলকে শারদীয়া শুভেচ্ছা...... :)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:১৫
৫৩টি মন্তব্য ৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×