শরৎ, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি।
ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি॥
শরৎ মানেই আমার কাছে এই গানটির চরনগুলি। শরতের ছড়িয়ে যাওয়া মোহন অঙ্গুলি কিসের ইঙ্গিতে বলেছেন রবিঠাকুর জানা নেই আমার বটে তবে শরতের মেঘই নিয়ে আসে আমাদের কাছে শরতের বারতা। এমন ঝকঝকে নীল আকাশ আর তাতে ভেসে যাওয়া সাদা সাদা মেঘের ভেলা। মনে পড়িয়ে দেয় ছোট্টবেলার শরতের স্মৃতিগুলি। ত্বরিতে মনে ভেসে আসে সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে শরতের সেই অতি পরিচিত গানের কলি "নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই লুকোচুরির খেলা।
আজকাল আকাশে কেউ তাকাক না তাকাক সামাজিক যোগাযোগ বা ফেসবুকের কল্যানে শরৎ আকাশে হাসে আর ফেসবুকে ভাসে। ফেসবুক ভেসে যায় শরতের কাশফুল আর নানা শৈল্পিক ছবিতে। কাউকে মনে করাতে হয়না যে শরৎ এসেছে। যুগের পরিবর্তনে এও বা কম কি? আমি নিজে বড় ট্রেডিশন্যাল মানুষ। আমার চোখে শরৎ মানে ভোরের বেলা শিশির ভেজা ঘাস আর শিউলিতলার ভেজা ভেজা সেই শুভ্র কোমল সিক্ত ফুলগুলি। সেই ফুল কুড়িয়ে মালা গাঁথা জানিনা আজও গ্রামাঞ্চলে বাচ্চারা গাঁথে কিনা। কিন্তু আমাদের শহুরে ছেলেমেয়েদের চোখে সে তো এক অজানা গল্পই রয়ে যাবে আজীবন।
শরৎ তোমার শিশির ধোওয়া কুন্তলে
বনের পথে লুটিয়ে পড়া অঞ্চলে
আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি।’
শরতের সই হারানো প্রভাতের জন্য আমার মন কাঁদে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে একছুটে ছেলেবেলায়। কিন্তু ফিরে তো যাওয়া যায় না তাই সঙ্গীসাথী যাদেরকেই বলি তাদের অবাক চোখ দেখে মনে হয় যেন আমার মাথায় ভূত চেপেছে নাকি? পাবনায় অতি স্বত্তর পাঠানো যায় কিনা আমাকে এমনই ভাবছে তারা। তাই বাড়ির আঙ্গিনায় সেই শিউলীফুল ছড়ানো ভোরটাকে বড় মিস করি আমি। আমার মন পাখিটা যায় রে উড়ে যায় ধান শালিকের গায়। যায়রে উড়ে যায়।
আমার উদাসী মনে হাহাকার জাগে? বেশি সুন্দরের পিছেও যে এক হাহাকার জেগে থাকে তা বুঝি রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ যেভাবে বুঝেছিলেন আর কেউ তা সেভাবে বুঝেনি।
‘এখানে আকাশ নীল
নীলাভ আকাশ জুড়ে সজিনার ফুল ফুটে থাকে
হিম সাদা রঙ আশ্বিনের আলোর মতোন
আকন্দ ফুলের কালো ভীমরূল এইখানে করে গুন্জরণ।’
আমার মনে অভিমান জাগে। অকারণ অভিমান। কার উপর কাহার তরে জানানো হয় না আর তাকে....আমার মন কেমন করে ..... আমার মন কেমন করে..... কে জানে কে জানে কে জানে কাহার তরে!
পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের কবিতার বিরহী নারী হয়ে যাই আমি। অকারনে চোখে জল আসে। কারণটা বলা বারণ। মূল্যহীন সেই অব্যক্ত বেদনার কবিতার সেই নারীটির মতন নয়ন জলে বুক ভেসে যায়।
বিরহী নারীর নয়নের জলে ভিজিল বুকের বাস।
আজকে আসিবে কালকে আসিবে, হায় নিদারূন আশা,
ভোরের পাখির মতোন শুধুই ভোরে ছেঁয়ে যায় বাসা।’
সব ভুলে মেতে উঠি শরতের প্রাতে, কাঁশবনে কাঁশবনে হাসিখেলায় সখীদের সনে।
সই পাতালো কি শরতে আজিকে স্নিগ্ধ আকাশ ধরণী?
নীলিমা বাহিয়া সওগাত নিয়া নামিছে মেঘের তরণী!
অলকার পানে বলাকা ছুটিছে, মেঘ-দূত- মন মোহিয়া!
চঞ্চুতে রাঙ্গা কল মীর কুঁড়ি- মরতের ভেট বহিয়া!
সখীর গাঁয়ের সেঁউতি- বোঁটার ফিরোজায় রেঙ্গে পেশোয়াজ
আসমানী আর মৃন্ময়ী সখী মিশিয়াছে মেঠো পথ- মাঝ!
শরৎ যাচ্ছে চলে। কালের পরিক্রমায় আবারও আসবে ফিরে। কিন্তু আমি কিংবা আমরা ফিরবো কিনা জানা নেই ......
জানিনা .......
এটি একটি ব্লগীয় শারদীয়া এলবাম অথবা ডায়েরী। যা খুশি ভেবে নেওয়া যেতে পারে।
সকলকে শারদীয়া শুভেচ্ছা......
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:১৫