somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

*** আমার এ বছরের সামু ঈদসংখ্যা ২০২২***

০৭ ই মে, ২০২২ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঈদ-উল-ফিতর ২০২২। দুই দুইটা বছর পর আবার স্বাভাবিক নিয়মে যেন কিছুটা ফিরেছে ঈদ। তাই চাঁদরাতে মেহেদীর ভূত মাথায় চাপলো। নিজে নিজে পন্ডিতি না করলে কি চলে? তাই অং বং পান্ডিত্যে নিজের হাতে নিজেই মেহেন্দীর আঁকিবুকি।
বাম হাতেরটা ডান হাত দিয়ে তো দিলাম কোনোমতে....
এবার ডান হাতেরটা বাম হাত দিয়ে কতই না কষ্টে।
আর সেটা ল্যাপটপের সামনেই বসে বসে ইউটিউব দেখে দেখে
এবং সাথে সামু খোলা রেখে...


বাম হাতেরটা ডান হাত দিয়ে দিয়েছি....


এটাও ভূত ভূতং হলেও আরামেই ডান হাত ব্যাথা করে দিলাম।


কিন্তু এইবার! কত কসরৎ করে যে ডান হাতে মেহেন্দী দিলাম বাম হাত দিয়ে.... এত্ত কষ্ট করতে হয় যে আমাকে.. :(

ঈদের সকাল


ছেলেবেলা থেকেই ঈদ মানেই আমার কাছে এক অন্য রকম আনন্দের দিন। লোকে বলে ছেলেবেলার আনন্দের ঈদ আর ফিরে আসে না। আমি সে কথাই বিশ্বাসী নই। আমার কাছে ঈদ মানে আনন্দ আর আনন্দ বেদনা দুঃখ বা ক্রোধের ইতিহাস বা স্বাদ গন্ধ রুচি তো দিন বদলের সাথে বদলাবেই।


কাজেই ঈদের আনন্দ নেই সে কথা সঠিক নয়। সঠিকটা আসলে আমরাই বদলেছি বা বদলে যাচ্ছি। জীবনের দিন বদলের সাথে সাথে হারাচ্ছি আশেপাশের মানুষগুলোর সান্নিধ্য, সম্পর্কের জটিলতায় বা অবশ্য সম্ভাবী নিয়তির কারণে বদলে যাচ্ছে আমাদের চারপাশ। চিরচেনা আনন্দ বেদনা দুঃখগুলোও বদলাচ্ছে।



আর এই বদলানোটা জগতের নিয়মে বড়ই সরল আবার বড়ই জটিল। যাইহোক এত কিছু জানবার পরেও, এত কিছু মানবার পরেও আমাদের মন মানে না। যাইহোক পুরোনো আমার আমির ঐতিহ্যের নিয়মে আমি টেবিল সাজালাম।


আমার এইসব ইজি কাজে বিজি বা অকারণ সময় নষ্ট করা কাজ কারবারে আমাদের বাসার মানুষজনের না পাত্তা সত্বেও।

তারা মনে মনে এবং মাঝে মাঝে প্রকাশ্যেও বলে, আরে বাবা এই সাত সকালে কে আসছে যে তোমাকে এমন তাক লাগানো টেবিল সজ্জা করতেই হবে। যখন লোক জন পাড়া পড়শী আত্মীয় স্বজন কেউ আসবে তখন না হয় তাদেরকে তাক লাগিও । আমাদেরকে অনেক লাগিয়েছো। তাক লাগাতে লাগাতে আমরা তাক, সেলফ/rack সব তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। কোনটা কাকে বলে ভুলেই গেছি। হা হা হা


যাইহোক তবুও এই সারাজীবনের আমি নিজের আনন্দে নিজেই মহীয়ান........
এইখানে রাখছি আমার ঈদ সকালের মিষ্টান্ন সজ্জিত টেবিলের ছবিগুলি .....



জর্দা আর শনপাপড়ি


হাবশী হালুয়া আর বালুশাহী মিষ্টি


বাসায় বানানো শন পাপড়ি


এটা আমার সাগুর পুডিং ভেরী স্পেশাল জীবনে এই প্রথম কেকা ফেরদৌসী হতে সাহসী হয়ে।


লাচ্চা সেমাই


জর্দা সেমাই


এটা আমার অরেঞ্জ জেলো পুডিং ছোট ছোট বাটিতে


প্রতিবারই ঈদ আসলে মনে পড়ে যায় আমার ছেলেবেলাা। সেসব দিনে এখনকার দিনের প্লেসম্যাট ছিলো না বটে ছিলো মায়ের হাতে বোনা কুরশী কাটার ম্যাট। আমি ছবি আঁকতে পারি আমার মা ছবি আঁকতে পারতেন না। কিন্তু সারাদিন অবসরে আনমনে বুনে চলতেন কুরশী কাটায় বোনা নানা ডিজাইনের সুদৃশ্য সব ম্যাট ঢাকনী কাভার। তখনকার দিনে কেনো যেন দুনিয়ার সব ঢেকে রাখার রেওয়াজ ছিলো। হা হা এটা ভাবলেও হাসি পায় আমার। আমাদের হামা ভাইয়ু এই কথাটা লিখেছিলো তার ছহি রকেট সায়েন্স বইটাতে হা হা । যাইহোক সৌন্দর্য্য বিলাসী আমি সে সব দিয়েই সাজিয়ে গুছিয়ে অপরুপা করে তুলতাম আমাদের বাসার ঘর বাড়ি টেবিল চেয়ার। সত্যি বলতে আমার ঘর বাড়ি আশপাশ ও নিজেকে সাজিয়ে রাখার অভ্যাসটা আমি মায়ের থেকেই পেয়েছিলাম...... তবুও দীর্ঘশ্বাস.....
আহা ছেলেবেলা কোথায় হারালো সেই সব দিন.....
দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইলো না.....
সেই যে আমার নানা রঙ্গের দিনগুলি .....

ঈদের দিনের দুপুরবেলা


সারা মাস রোজার পরে কিন্তু কিছুই খাওয়া যায় না তখন। কেউ খাবেও না। তবুও আমাকে ঈদের টেবিল সাজাতেই হবে আর তাই টেবিলের সাজুগুজু শুরু হলো।
সুফিয়া বললো, আফা কি করেন এই সব? গুরুর মাংস দেওন যাইত না।
আমি বললাম কেনো? কেনো যাইত না শুনি?
- না যাইত না। বার বার গরম কইল্লে সোয়াদ যায় গা।
আমি বললাম গরম না করেই দাও আমি ছবি তুলবো।
সে বলে ঠান্ডা জমা মাংসের ছবি কি বালা হইবো? কি যে কন না।
-লাগবেনা গরুর মাংস চপ দাও রোস্ট দাও চিংড়ির মালাইকারী দাও।
-আইচ্ছা চপ নেন । চপ দেখে আমি অবাক কাঁচা চপ এনেছেন। কাঁচা কেনো?
-ছবিৎ কি মাইনষে বুঝবো? হেইডাই তুলেন। হায়রে দুই্ন্না মাইনষে আজকাল খাওনের জন্য রান্ধে না ছুবি তুলনের জন্য রাইন্ধে? আফা এই সবে পাপ হইবো..... আর ছুবি তুইল্লেন না যেন।
বললাম রাখো তোমার পাপ কই থেকে ছবক আনলে শুনি? মনে মনে অবাক হলাম নূরুভাইয়ার থেকে শুনলো নাকি?
যাইহোক সুফিয়া বলে চললো- আফা হুনেন পাপ না অইলেই নজর লাগবো।
আমি অবাক নজর! কেনো?
সুফিয়া বলে হ নজর লাগবো তখন হেইসব খাইলে প্যাডের ওসুখ অইব।
এমন রাগ লাগে। একটু সাজুগুজু করে ঈদ ঈদ ভাব আনবো তাও না উনার বয়ান শুরু হলো। কিছুতেই চপ ভেঁজে দিলো না!!!!!!!!! তাই কাঁচা চপ সাজিয়েই ছবি তুলতে হলো। আর গরুর মাংস তো কাঁচা পাকা ঠান্ডা, জমা কোনোটাই কিছুতেই দিলোই না...... :(


দুপুরের খানা টেবিল সজ্জা


ক্যান্ডি আর জেলো পুডিং


সেই চপ যা সে ভাঁজতে দেয়নি। :(


সাদা পোলাও


রোস্ট কোরমা মানে কোরমাটাই রোস্ট স্টাইলে কাটা হয়েছে।


টেবিল এবং দুপুরের খানাপিনা
তারপর সাজুগুজু। এই বছরে ঈদ উপলক্ষে পেয়েছি শ্রেষ্ঠ উপহার মীনা করা স্বর্ণময়ূর কানের দুল। আমার ময়ূরপ্রীতি দেখে যিনি উপহার দিয়েছেন তিনি দুই জোড়ার মাঝে কোন জোড়া নেবে ভাবতে ভাবতে দুইটাই নিয়ে এসেছেন। যাক ভালোই হলো সেই ছোট্টবেলার মত আমি সেই অপরূপা দুল জোড়া নিয়ে মেতে উঠলাম আনন্দে আর ভালো লাগায়। এই দুল পরে আমি স্কুলে যাবো। আমার বাচ্চারা মনে হয় এইবার আর আমার কান আস্তই রাখবে না। :(


কর্ণে আমার স্বর্ণ ময়ূর ......খোঁপায় তারার ফুল...

ময়ূরদুল, ময়ুর কঙ্কন আর ময়ূর শাড়ি পরে নিজেকে এক নাম্বারের খেত্তু লাগছিলো। তা লাগুক। আমি আপনার মাঝে আপনি হারা আপন সৌরভে সারা.... যেন আপনার মন আপনার প্রান আপনারে সঁপিয়াছি। খেত্তু লাগুক আর পেত্তু লাগুক। আমি তো নিজের আনন্দে নিজেই আত্মহারা থাকি কে কি ভাবলো জানবার সময় কোথা? মাঝেমাঝে নিজেকে কস্তরী হরিনী মনে হয়। পাগল হইয়া বনে বনে ফিরি আপন গন্ধ মম। কস্তুরী মৃগসম।


যাইহোক খেত্তু সাজ শেষ হলে এখন বাইরে যাবার পালা। তাই খেত্তু সাজ ছেড়ে লাল শাড়ি পরলাম.......


আমার এবারের আরেক ঈদ উপহার আড়ং স্পেশাল লাল শাড়ি.....
বের হবার আগে আমার সাধের বাগানে দোলনায় দুলে দুলে একটু ছবি না তুললে চলে!!! :)

যাইহোক এরপর দিন আবার আরেক জোড়া স্বর্ণ ময়ুরে নুপুরে নিক্কনে সেজে গুজে বসলাম। বসতে কি আর পারলাম!


এক গাদা লোকজন এবার হাজির হলো আমাদের বাসাতেই।


এরই মাঝে ছাদে উঠে ক্লিক ক্লিক। মানে আসমা রূপাকে দিয়ে ক্লিক ক্লিক ক্লিক.....

যাইহোক লোকজনের জন্য বেশি তুলতে পারিনি। মিররমনির জন্য পুরা জামাটাই দিতে চাচ্ছিলাম কিন্তু অন্যরা হাসবে এই বুড়িকালে ছুড়িদের মত (মানে আমার ছোট্টবেলার স্মৃতি ভুলতে না পারার কারণে যেসব পরি) সেই ঘাগরি দেখে তাই দিলাম না। :(

যা হোক ছবি তোলার মাঝেই পরোটা করো, মাংস রাঁধো, কাবাব ভাঁজো। আমি অবশ্য কিচেনে যাইনি। তবুও টেবিল সাজানোও কি কম কষ্ট বলো???

তবুও সব কষ্ট সব বেদনা মধুর হয়ে যায়। যখন নিজের সজ্জায় নিজেই মুগ্ধ হয়ে যাই। :)

সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা।

এই ঈদে সবাই আনব্যানড হয়ে যাক। যে যা ভুল করেছে শুধরে নিয়ে ফিরে আসুক। ভালোবাসুক আর ভালো থাকুক সবাই অনেক আনন্দে..... সত্যিই আমি চাই যারা লেখা অন্ত প্রাণ আর যাদের একদিনও না লিখলে চলেনা। যারা সত্যিই রোজ রোজ কিছু মিছু লিখে ভালো থাকেন আর সচল রাখেন ব্লগের পাতা তারা অচল না হয়ে যাক। শুধু মনে রাখতে হবে নিয়ম নীতি, আলোচনা সমালোচনা বুঝেই চলতে হয় আমাদের এই সব পাবলিক প্লাটফর্মে।

সব কিছুর পরেও আমরা একই পরিবার। তারপরেও সামু পরিবার। এই যে অদেখা ভূবনের মানুষগুলো রোজ পরিবারের কাছে দূরে থাকা মানুষগুলোর সাথেও দেখা হয় না কিন্তু দেখা হয় তাদের সাথে। আপন একাত্মতা কি গড়ে ওঠে না? তবুও কেনো একজন আরেকজনকে দুঃখ কষ্ট দেবো? মজা করা যেতে পারে রসিকতাও করা যেতে পারে। একে অন্যের মতের অমিল হতেই পারে তবুও একে অন্যের উপর রেসপেক্ট যারা রাখতে পারিনি, রাখিনি তারাও বদলে যাই, শুধরে যাই। শেখার কি শেষ আছে? জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ শেখে, মানুষ বদলায়......

সবাইকে ভালোবাসা...... ঈদের শুভেচ্ছা। আগামী দিনগুলো সবাই যে যার মত আনন্দে থাকি.... আনন্দে ভাসি.....
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:০৫
৬২টি মন্তব্য ৬৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×