ছোট থেকেই আমি বকবক করতে পারি। তখনও আমি গল্পের বই পড়তে শিখিনি, তখনও আমি বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতে পারতাম। আর আমার সে সব গল্প শুনে বাড়ির সকলে হাসতে হাসতে মরে যেত কিংবা বলতো আরও একটা গল্প বল না??? আমি গল্প শুনেছি মায়ের কাছে, দাদীর কাছে, নানীর কাছে, এমনকি বাসার কাজের লোকজন যারা থাকতো তাদের কাছেও। এই গল্প বলাও যে একটা আর্ট সেটা জেনেছিলাম ছোট্ট বেলায় নতুন কুঁড়ি থেকে। সে সব দিনে এই নতুন কুড়ি আমার খুব পছন্দের এক অনুষ্ঠান ছিলো। নাচ, গান কবিতার পাশাপাশি সেখানে কোরান তেলওয়াৎ এবং গল্প বলার মত বিষয়গুলিও প্রাধন্য পেত। সেখান থেকেই আমি জেনেছিলাম গল্প বলাও যে কত রকম আর কত ধরন হতে পারে।
যাইহোক, এমনিতেই আমি এই গল্প করা বা বকবকের ওস্তাদ ছিলাম, সেই আমি স্কুলে জব করতে গিয়ে, বাচ্চাদেরকে গল্প শুনাতে শুনাতে এক সময় হয়ে গেলাম প্রফেশনাল গল্প কথক। স্টোরি রিডিং বা গল্প পড়া, স্টোরি টেলিং বা গল্প বলা এই আর্ট বাচ্চাদের স্কুলে যে কি বিশেষ প্রয়োজন তা আমি বুঝতে পারি যখন দেখি আমি যখন গল্প বলি তখন চরম অশান্ত বাচ্চাটিও শান্ত হয়ে বসে আর মগ্ন হয়ে যায় গল্পের ভেতরে। আমার তখন খুব মজাই লাগে। যেন আমি তাদেরকে হিপনোটাইজড করে ফেলেছি। হ্যামিলনের বাঁশীওয়ালার মত বাঁশী না বাঁজিয়ে হলেও, আমার গল্পের যাদু দিয়ে বটে। হা হা এমনটাই মনে হয় আমার।
তবে যাই বলি না কেনো? ছোটবেলার বকবক আর সত্যিকারের গল্প বলা আর্টের মাঝে একটু পার্থক্য আছে। মানে গল্প তো সবাই বলে কিন্তু একটু প্রফেশনালী কিংবা আর্ট বানাতে গেলে গল্প বলার সময় কিছু বৈশিষ্ঠ বা ক্রাইটেরিয়া মনে রাখতে হয়। সেটাকেই বলে স্টোরি টেলিং টেকনিকস। যেমন-
১। উচ্চারণ - উচ্চারন সঠিক ও স্পষ্ট হতে হবে। এটি একটি বাচিক শিল্প আর তাই গল্প পড়ার সময় বড় বাক্যের জন্য দম ধরে রাখতে হবে। আর বলার সময়ও একই ভাবে একটি পুরো বাক্য শেষ করতে হবে।
২। টেইল ড্রপ বা আধা আধা কথা - পুরো বাক্যের সবগুলি শব্দ যেন শোনা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে বাক্যের শেষ শব্দটা স্পষ্ট হতে হবে। শক্তি কমে যাওয়া বা হালকা হয়ে যাওয়া চলবে না।
৩। গল্পের ছন্দ- কবিতা পাঠের মত গল্পেরও একটা ছন্দ আছে। এই ছন্দের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অতি দ্রুত হড়বড় করে বলাও যাবেনা। আবার ধীরে ধীরে মিঃ স্লো হয়েও পড়া বা বলা যাবে না।
৪। শ্রোতার অনুধাবনের জন্য সময় দিতে হবে - গড়গড় করে পড়ে গেলাম বা বলে গেলাম শ্রোতার মাথায় কিছুই ঢুকলো না এমনটা কোনোভাবেই হবে না। একটি বাক্য থেকে বা একটি সংলাপ থেকে আরেকটিতে যাবার সময় পজ বা বিরতি খেয়াল রাখতে হবে। শ্রোতা যেন বুঝতে পারে কোথায় পরিবর্তনটা হচ্ছে।
৫। কন্ঠে অভিব্যাক্তি- কন্ঠে বৈচিত্র, অভিনয়, ঢং থাকতে হবে। কিন্তু ঢংটা যেন অতি অভিনয় হয়ে গিয়ে বিরক্তির সৃষ্টি না করে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। গল্পপাঠে গাম্ভীর্য্য বজায় রাখাটাও কিছুটা জরুরী। ভয়েজ প্রজেকশন বা নারী পুরুষ বাচ্চার গলায় কথা বলার সময় কন্ঠে বিভিন্নতা আনার চেষ্টা করতে হবে। এটা খুব সহজ বিষয় না। একজন চিনচিনে গলার মেয়ে একজন মোটাসোটা ভোম্বল লোকের গলায় কিন্তু কথা বলতে কষ্ট হবে। তাই এত ভাবনা না ভেবে এমনভাবে বলতে হবে যেন চরিত্রগুলোকে অন্তত আলাদা করা যায়।
৬। মুখ ও শরীরের অভিব্যাক্তি- কন্ঠ ছাড়াও চেহারায় অবাক হওয়া, হাসি, দুঃখ কান্না এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়েও ভয়, লাফ দিয়ে ওঠার অভিনয় এসব গল্পকে আরও প্রানবন্ত করে। তাই বলে হাত, পা মাথা অতিরিক্ত নাড়িয়ে বিরক্তির সৃষ্টি করা যাবে না।
৭। পরিবর্ধন বা পরিমার্জন- গল্প বলার সময় অতিরিক্ত বিরক্তিকর অংশ বাদ দিয়ে বা কিছু দর্শক শ্রোতার আগ্রহের জন্য কিছু যোগ করেও বলা যেতে পারে। এতে গল্প আরও আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে।
এই গেলো গল্প বলার কিছু সাধারণ টেকনিক। তবে গল্প বলাটাকে আরও রিয়েলস্টিক আকর্ষনীয় করে তুলতে কিন্তু উপকরণ বা প্রপসের জুড়ি নেই। একটা স্কেল বা রুলারকেই বানানো যেতে পারে তলোয়ার আবার সেটাও কখনও কখনও বৈঠা হয়ে যেতে পারে। আরও আকর্ষনী্য করতে ছোট ছোট প্রপস বানিয়ে রাখা যেতে পারে। বড় জায়গায় বা মঞ্চে গল্প বলার সময় পরিবেশের আবহ তৈরী করা যেতে পারে।
একজন ভালো গল্প কথককে হতে হবে-
উদ্যমী ও আত্মবিশ্বাসী - তাহলেই সঠিক ভাবে ভয়েস ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে গল্প দিয়ে কথক ও শ্রোতার মাঝে সেতুবন্ধন প্রতিষ্ঠিত হবে।
অডিয়েন্স বা দর্শক ও শ্রোতাদের সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। ছোট ছোট প্রশ্ন, হাসি তামাশা বা আগ্রহ উদ্দীপনা দিয়ে দর্শক শ্রোতাদেরকে যুক্ত করতে হবে।
একজন গল্পকথক তার গল্প বলার সাচ্ছন্দ্য, দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস দিয়ে অন্যকেও উৎসাহ ও উদ্দিপনা দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
দর্শক ও শ্রোতার সাথে মানসিক যোগাযোগ ও সাচ্ছন্দ তৈরী করা অতীব জরুরী। গল্প কথক নিজের কোনো অভিজ্ঞতা খোলাখুলি বলে নিজেকে আরও গ্রহনযোগ্য ও সহজ করে তুলতে পারে।
পরিবেশ পরিস্তিতি ও মেজাজ বুঝতে পারা- দর্শকদের প্রতিক্রিয়া এবং দর্শকদের ব্যস্ততার উপর ভিত্তি করে গল্পের সুর, গতি বা এমনকি উপাদানগুলিকে পরিবর্তন করতে হবে। ইনস্টান্ট ডিসিশন নিতে হবে।
সৃজনশীলতা- গল্পকথক যত সৃজনশীল হবে ততটাই সুন্দরভাবে গল্প পরিবেশন করতে পারবেন কারণ গল্পের মাঝে রং রস সুধা ঢেলে দেবার কাজে তাকে পটু হতে হবে।
সহানুভূতিশীলতা- একজন মহান গল্পকারের গভীর সহানুভূতির প্রকাশ তাদের গল্পের চরিত্রগুলির আবেগ বুঝতে এবং প্রকাশ করতে সাহায্য করে এবং সেইসাথে দর্শকদের অনুভূতির সাথে সংযোগ স্থাপন করে।
গল্প আমরা যতই করি না কেনো গল্প বলা বা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাবার জন্য অনুশীলন বা প্রাকটিস অবশ্য করণীয়। সহজ কথা যায় না বলা সহজে। কবিগুরুর এই কথাটিকে মাথায় রেখে জীবনে সব শিক্ষার জন্যই অনুশীলন প্রয়োজন আসলে।
যাইহোক বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনের সাথে গল্প গুজবও যেমন মন ভালো করে ঠিক তেমনই গল্প শোনাটাও বিশেষ করে ছেলেবেলার গল্পগুলো শুনলে মন হারিয়ে যায় ছেলেবেলার মোহময় সুন্দর স্মৃতিময় অতীতে। কিছু সময়ের জন্যও ভালো থাকি আমরা। প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে যায় মনে।
চলে গেলো আমাদের স্কুলের রোড টু ওয়েলনেস দিনটি। আমার গল্পের ঝুলি নিয়ে বসেছিলাম আমি ও আমার দল। এই গল্পের ঝুলি ভরতে আমাদের সময়, শ্রম ও ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলোনা। যতভাবে সম্ভব ততভাবের চাইতেও বেশি চেষ্টা ছিলো আমাদের। সেই চেষ্টার সুন্দর প্রতিফল যখন দেখেছিলাম আমাদের বাচ্চাদের চোখেমুখে, প্রশান্তির পরশ ছিলো অভিভাবকদের মুখচ্ছবিতে। তখন আর এর চাইতে বেশি কিছু চাওয়া বা পাওয়ার ছিলো না।
আমাদের গল্প ছিলো কাক ও কলসের গল্প এবং আরেকটি ছিলো কাঠুরে ও জলপরী। গল্প শেষে অভিভাবকেরা স্মৃতি রোমন্থন করেছিলেন তাদের ছেলেবেলার মধুময় কিছু গল্প শোনার সময় বা বিভিন্ন ঘটনার যা আমার মনে গেঁথে থাকবে হয়ত চিরকাল।
অনেক বকবক হলো। এবারে চিরায়ত শ্বাশত গল্পগুলিকে কি পরিবর্ধন, পরিমার্জন করেছিলাম সেই স্ক্রিপ্ট দুইটাও দিয়ে দিলাম।
কাক ও কলসের গল্প
সে অনেকদিন আগের কথা। এক গ্রামে অনেক বড় এক গাছের ডালে বাস করতো একটা কাক। তখন ছিলো গ্রীস্ম কাল। তাই সূর্য্যমামাও ছিলো ভীষন গনগনে। এক দুপুরে এত রৌদ্র ছিলো চারদিকে। কাকটার ভীষন তেষ্টা পেয়েছিলো। ।সে চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে পানি খুঁজছিলো। কিন্তু তখন তো গ্রীস্মকাল ছিলো তাই খাল বিল নালা সব শুকিয়ে গিয়েছিলো। কোথাও এক ফোটা পানিও দেখা যাচ্ছিলো না। সে কি বলছিলো জানো?
- কা কা কা উফফ কি প্রখর সূর্য্যরে বাবা। চারিদিকে চোখ মেলে চাওয়াই যায় না। গলা শুকিয়ে কাঁঠ হয়ে গিয়েছে। বড্ড তেষ্টা পেয়েছে। কোথায় যে একটু পানি পাই?
ঊড়তে উড়তে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় সে ভীষন ক্লান্ত হয়ে পড়লো। ।
সে গিয়ে বসলো এক গৃহস্ত বাড়ির চালে। সেখানে গৃহস্ত বউ কিছু মরিচ শুকাতে দিয়েছিলো। সেই মরিচ দেখে কাক ভীষন খুশি হলো। ক্ষুধা তৃষ্ণা ভুলে আনন্দে গান ধরলো-
মরিচ মরিচ লাল টকটক
ঝেড়ে মুছে ঝা চকচক
রোদে শুকিয়ে মুড়মুড়ে
খাবো আমি কুড়মুড়ে।
মচমচে লাল মরিচ।
খেতে যেন চিপস।
কা কা কা কা বাহ! কি লাল টকটকে ঝকঝকে মরিচ। রোদে শুকিয়ে মচমচে মুড়মুড়ে হয়ে গেছে। একদম ঐ যে মানুষের বাচ্চারা খায় না চিপস। ঠিক তেমন ঠিক তেমন। না জানি এই মরিচ খেতে কি না মজা!!! তাড়াতাড়ি খাই তাড়াতাড়ি খাই।
বলেই সে খপ খপ খপ করে টকটকে লাল ঝকঝকে, রোদে শুকিয়ে মুড়মুড়ে ও মচমচে মরিচ খেতে লাগলো। খেতে খেতে খেতে খেতে সব মরিচ শেষ করে ফেললো। তারপর বললো।
-উফ কি ঝালরে বাবা। যাই যাই পানি খাই। পানি খাই। এবারে তার পানির তেষ্টা আরও বেশি বেড়ে গেলো।
কিন্তু হায়! কোথায় পানি? গ্রীস্মের সেই কাঁঠফাটা দুপুরে পানি তো দূরের কথা কোথাও কোনো জনমনিষ্যর দেখাও ছিলো না। চারিদিকে ধু ধু খা খা করছিলো। কাকের তো তখন এমনিতেই ঝাল খেয়ে অবস্থা কাহিল তার উপরে গরম আর পানির তৃষ্ণা পেয়েছিল। । সে দূরে হঠাৎ দেখতে পেলো একটা পানির কল। কাকটা বললো-
- ঐ তো ঐ তো একটা পানির কল দেখা যাচ্ছে। সেখানে গেলে নিশ্চয়ই দু এক ফোটা পানি জুটবে কপালে। তাড়াতাড়ি যাই তাড়াতাড়ি যাই।
সে অনেক আশা নিয়ে পানির কলটার কাছে উড়ে গেলো। আর তারপর কলটার উপরে গিয়ে বসলো । তারপর এদিক ঘোরে ওদিক ঘোরে উপরে নীচে সবখানে পানি খুঁজতে শুরু করলো। কিন্তু কলটা ছিলো একদম পানিশূন্য শুকনো খটখটে। সে কিছুতে ই এক ফোটা পানিও সেখানে পেলো না। কাকটার খুব দুঃখ হলো। সে বললো-
- হায়রে কপাল! এই কলের গায়ে তো এক ফোটা পানিও দুলছে না। এখন আমি কি খাবো!!! এমনিতেই ঝালে জীভ জ্বলে যাচ্ছে তার উপরে আবার এই গরমের কাঁঠফাটা দুপুর। এখন আমি কোথায় পানি পাই? তারপরেই সে দেখতে পেলো একটা বালতি। কাকটা বললো-
-ঐ যে একটা বালতি দেখা যাচ্ছে। যাই তো যাই তো ।
সে আবারও অনেক আশা নিয়ে উড়ে গিয়ে বসলো বালতির কানায়। কিন্তু এক ফোটাও পানিও ছিলো না তাতে। কাকটা বালতির কানায় বসে ভেতরে দেখে। উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে চারিদিক দেখে তবুও কোনো পানির সন্ধান পায় না। শেষে রাগে দুঃখে পানির বালতিটার উপর হুটোপুটি করতে করতে বালতিটাই ফেলে দিলো তারপর উড়ে গেলো আকাশে। উড়তে উড়তে এবার সে দেখতে পেলো একটা পানির পাত্র।
- ঐ যে ঐযে একটা পানি ভর্তি পাত্র দেখা যাচ্ছে। এবার আমি নিশ্চয়ই পানি পাবো।
সে অনেক আশা নিয়ে উড়ে গিয়ে বসলো পাত্রটার কানায়। কিন্তু এবারেও বিধি বাম। পাত্রে পানি ছিলো বটে তবে পানিটা ছিলো এখটু নীচে যেখানে কাকটার ঠোট পৌছাচ্ছিলো না।
- নাহ। পানি তো অনেকটা নীচে। আমি তো ঠোঁট ডুবিয়ে পানি অবধি যেতেই পারছি না। তেষ্টায় বুক ফেটে যাচ্ছে। ওহ আমি এইভাবে আর থাকতে পারছি না। আমাকে পানি খেতেই হবে। তাই সে বারবার চে্ষটা করতে লাগলো। কিন্তু বার বার চেষ্টা করেও কোনোই লাভ হলোনা। কাকের ঠোট কোনোভাবেই সেই পানি পরযন্ত পৌছালো না। তখন হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।
কাক মনে মনে ভাবতে লাগলো। কি করা যায় কি করা যায়! হঠাৎ সে আনন্দে নেচে উঠলো। সে দেখলো চারিদিকে নুড়ি পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাই দেখেই তার মাথায় বুদ্ধি এলো। সে উড়ে গিয়ে একটা নুড়ি পাথর ঠোঁটে করে এনে ফেলে দিলো পানির পাত্রে। তারপর একের পর এক নুড়ি এনে এনে ফেলতে লাগলো। কেনো বলোতো? নুড়ি ফেলার সাথে সাথে দেখো পানি কিন্তু উপরে উঠে আসছে। দেখতে পাচ্ছো?? তার মানে পানির পাত্রে নুড়ি ফেললেই পানি একটু একটু করে উপরে উঠে আসে। কাকটা সেটা ভেবে বের করেছিলো। কাকটার কি বুদ্ধি দেখেছো?
এইভাবে একের পর এক নুড়ি ফেলে ফেলে পানিটা একদম উপরে উঠে এলো। আর কাকটা প্রান ভরে পানি খেয়ে তৃষ্ণা মিটিয়ে উড়ে চলে গেল। আর কি বললো জানো? -
সব সমস্যাই সমাধান আছে। শুধু ইচ্ছে ও উদ্যোম নিয়ে কাজ করে যেতে হবে …
কাঠুরে ও জলপরী
সে অনেকদিন আগের কথা। বিশাল বড় এক বনের ধারে বাস করতো এক কাঠুরিয়া। সে সেই গহীন বনে রোজ কাঠ কাটতে যেত। কাঠুরিয়াটা ভারি গরিব ছিলো। রোজ কাঠ বিক্রি করে যেই টাকা পেত তাই দিয়ে কোনোরকমে খেয়ে-পরে দিন চলত তার।
একদিন এক নদীর ধারে সে গেল কাঠ কাটতে। সেখানে গিয়ে একটা গাছে যেই কুড়াল দিয়ে ঘা মেরেছে, অমনি তার হাত ফসকে কুড়ালটা গভীর পানির মধ্যে পড়ে গেল। কাঠুরিয়া তো ভীষন ভয় পেয়ে গেলো আর কাঁদতে লাগলো-
- হায় হায় এখন কি হবে? আমার তো আর কোনো কুড়াল নেই এমনকি আমার কাছে কোনো টাকা পয়সাও নেই যে আরেকটা কুড়াল কিনে নেবো। এখন আমি কি করবো? এই কাঠ কেটে বিক্রি না করতে পারলে তো আমার ছেলে মেয়েরা সবাই না খেয়ে থাকবে।
সে এতই গরিব ছিলো যে তার আবার একটা কুড়াল কেনার মতো সংগতি ছিল না। তাই কী উপায় করবে, গাছের গোড়ায় বসে বসে সে কাঁদতেই থাকলো।
এমনি করে কিছুক্ষণ কেটে যাবার পর হঠাৎ এক জলপরী নদীর মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে প্রশ্ন করল, তোমার কি হয়েছে? তুমি কাঁদছ কেন?
কাঠুরিয়া বলল, - সে আর তোমাকে বলে কি হবে? জলপরী বললো
- বলো আমাকে। দেখি আমি তোমাকে কোনো সাহায্য করতে পারি কিনা? কাঠুরিয়া বললো-
- না না তুমি কিছুই করতে পারবে না । জলপরী বললো,
- বলেই দেখো না কিছু করতে পারি কিনা? কাঠুরিয়া বললো-
-আমি বড় গরিব, আমার কুড়ালটা পানিতে পড়ে গেছে, তাই কাঁদছি। এই কুড়াল ছাড়া আমার কি করে চলবে? আমার ছেলেমেয়েরা কি খাবে?
জলপরী বলল, আচ্ছা তোমার কুড়াল আমি এনে দিচ্ছি, তুমি কেঁদো না। কাঠুরিয়া বললো-
-ধ্যাৎ তুমি কিছুই করতে পারবেনা।আমি অনেকক্ষন যাবৎ নিজেই চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আমার কুড়ালটাকে কোথাও খুঁজেই পেলাম না। এটা একেবারেই তলিয়ে গেছে। জলপরী বললো
- দেখি আমি একটু চেষ্টা করে তোমার কুড়ালটা আনতে পারি কিনা?
এই বলে সে নদীতে ডুব দিয়ে একখানা সোনার কুড়াল তুলে আনলো। জলপরী জিজ্ঞাসা করল, এটা কি তোমার ?
কাঠুরিয়া ভালো করে দেখে বলল, না। এটা তো সোনার কুড়াল। অনেক দামী। আমারটা তো লোহার কুড়াল ছিলো।
জলপরী আবার পানির মধ্যে ডুব দিয়ে একটা রুপার কুড়াল নিয়ে আসলো। তারপর আবারও জিজ্ঞাসা করল, তবে এটা কি তোমার ?
এবারও কাঠুরিয়া বিশেষ ভাবে পরীক্ষা করে বলল, না, এটাও নয়। এটা তো রুপার। অনেক দামী। আমারটা তো লোহার কুড়াল।
তখন জলপরী আবার ডুব দিয়ে একটা লোহার কুড়াল এনে তাকে দেখাল। কাঠুরিয়া এতক্ষণ পরে নিজের কুড়ালখানি চিনতে পেরে সানন্দে বলে উঠল, হ্যাঁ, হ্যাঁ এটাই আমার এটাই আমার।
জলপরী কাঠুরিয়ার এই সততা দেখে মুগ্ধ হল। সে তাকে তার নিজের কুড়ালটি তো ফিরিয়ে দিলই, উপরন্তু সোনার ও রুপার কুড়াল দুটিও উপহার দিলো- বললো
- কাঠুরিয়া তুমি গরীব বটে তবে লোভী নও। তুমি সোনার আর রুপার কুড়াল দুটি দেখেও লোভ করোনি। নিজের কুড়ালটাকেই পেতে চেয়েছো। মিথ্যা বলেও সেই দুটি নেবার চেষ্টা করোনি। তাই এই লোহার কুড়ালটির সাথে সাথে এই সোনার আর রুপার কুড়াল দুটিও তোমাকে উপহার দিলাম। কাঠুরিয়া বললো-
- ধন্যবাদ জলপরী। তোমার এই উপকারের কথা সর্বদা মনে রাখবো।জলপরী বললো,
- বেশবেশ! সারাজীবন এমন সৎ ও পরিশ্রমী থেকো। বলেই পানির মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল।
এতখানি সোনা ও রুপা পেয়ে কাঠুরিয়ার অবস্থা বেশ ভালো হয়ে গেল। কেননা সেই কুড়াল দুটি বাজারে বিক্রি করে সে অনেক টাকা পেল, তারপর সুখে ও স্বচ্ছন্দে তার পুরো পরিবার নিয়ে বাস করতে লাগলো।
সবাই সবার বেবিদেরকে পড়ে শুনিও কিন্তু!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:১০