
সিডনীতে এবারের শীত মনে হয় কয়েক বছরের তুলনায় একটু বেশীই ছিলো। শীতকাতুরে আমার রাতের ঘুম তাই হারাম করে দিলো সিডনীর এবারের শয়তান শীত। রাতে অনেকেই ভূতের ভয় পায় সে কথা আমি জানি আর আমার এবারের হাল হলো রাত যত কাছে আসে আমার বাড়ে শীতের ভয়। ভূতের ভয়ের বদলে শীতের ভয় নিয়ে মহা ঝামেলায় পড়লাম আমি। সারা রাত হাত একটু নাড়াতে পারি না, পাও নাড়াই না বলতে গেলে। একেই কি তবে বলে শীতে জমে যাওয়া!!! এ সব ভাবনায় রাত কেটে যায়। ঢাকায় আমার বাসা যদিও ডিপ্লোমাটিক জোনে তবুও সেই বাসা থেকে ব্যস্ত রাস্তায় সারাদিনের চ্যা ভ্যা শব্দের মাঝে প্রায়ই ঘুম ভেঙ্গে চমকে উঠি আমি। আর সেখানে শুনশান নীরবতা!!! মনে হয় জগৎ সংসারে কোথাও কেউ নেই। জাপানীরা নাকি ডিপ্রেশনে ভোগে শুনেছি। সিডনী তো তবুও জনবহুল অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য জায়গা তো আরও নীরব নিথর। বিকাল ৫টা হতেই যে যার ঘরে ফিরে যায়। সেই নীরব নিথর সন্ধ্যা হতে গভীর রাতে কোথাও কোনো সাড়া শব্দহীন মানুষ বাঁচে কিভাবে!!! প্রায় রাতেই আমার এসব মনে হয়। জাপানের মত এখানেও মানুষ কি তবে ডিপ্রেশনে ভোগে না!!!

সে যাইহোক। শীতের রাতের জবুথবু আমি প্রায়ই ফোন দিতাম রাত দুপুরে আমার আমেরিকান কাজিনকে। শীতের ভয়ে কাঁদো কাঁদো আমির অবস্থা দেখে সে তো হেসেই কুটি কুটি। আমার শুধু ভয়ই ছিলো না সাথে ছিলো দুঃখ। আমি কাজপাগলা মানুষ। দিনের একটা সেকেন্ডও মনে হয় আমি বসে বসে অনর্থক কাটাতে রাজী নহি। সময়ও আমার সাথে পাল্লা দিয়ে পারে না। সদা ও সর্বদা আমার হাত মুখ পা মাথা কোনো না কোনোটা বা সবই একসাথে চলতেই থাকে। হা হা সেই সদা চলমান আমির ভয় হচ্ছিলো এই শীতে কি তবে আমি কোনো কাজই করতে পারবো না! যে সব কাজ নিয়ে এসেছি সে সব করবো কিভাবে!!! আমি তো শীতে হাত পাই নাড়াতে পারছি না। আমার কাজিন বলে তুই দেখি অতি শোকে কাতরের বদলে অতি শীতে কাতর এবং একই সাথে পাথর হয়ে পড়লি!!

ভয়াবহ শীতের বাতাস প্রবাহিত এক সকালের ছবি।
সত্যি বলতে আমি আমার জীবনে দুটো জিনিসের খুব মূল্যায়ন করি এক প্রবাদ প্রবচনের সত্যতা, আরেক রবিঠাকুরের আবেগ যা গানে গানে বাঁজে আমার বুকে ...... যাইহোক এই নিয়েই চলতে হবে, চলবো কেমনে? "কবে তুমি আসবে বলে, রইবো না বসে আমি চলবো, আমি চলবো বাহিরে, শুকনো ফুলের পাতাগুলো পড়তেছে খসে"... হুম শুকনো ফুল, পাতা!!! নিশ্চয় রবিঠাকুরও শীতে কাতর হয়েই আমার মত উদ্যমী হতে এই গান লিখেছিলো হা হা । যাইহোক কাজিনের উপদেশ কাজে লাগলো, সে বললো ভয় পাস না দিনের আলোয় শীতের প্রকোপ কমে যাবে তখন সব কাজ করতে পারবি আর শীত মোকাবেলার আসল উপায় শীতের যথার্থ জামাকাপড়!!! ঠিক ঠাক কাপড় জামা পরতে পারলে শীতই কাতর হয়ে পড়বে তোর কাছে।

শীতে আমি প্রায় নভোচারীর বেশে
তার কথাই ঠিক হলো । পরদিন জামা কাপড় কিনতে গিয়ে তো আমি খরচ করে ফেললাম কয়েকশো ডলার।

একা বসে থাকি..... মানে মাঝে মাঝে এই শীতেও পার্কের এই চেয়ারগুলিতে বসে থাকা এক অপার আনন্দ! নিজের কাজের সাথে সাথে এবারে খুঁজে বের করেছিলাম পুরোনো বন্ধু, পরিচিত মানুষজন, পুরোনো কলিগস, পুরোনো প্যারেন্টদেরকে। এই উদ্দেশ্যের প্রথম মানুষটাই ছিলো ইথান। সে দু'বছর হলো সিডনী ইউনিভার্সিটিতে পড়তে গেছে। আমারই স্টুডেন্ট ছিলো সে। সেমিস্টার ব্রেক চলছিলো তার। সেই মোতাবেক সে ম্যাকডোনাল্ডসে ডেইলী ৮ ঘন্টা করে শিফ্ট নিয়েছে। কাজেই আমি আসবো এ কথা তাকে আগে জানাইনি কেনো আর এখন সে তো আমাকে একেবারেই সময় দিতে পারবেনা এই কথা নিয়ে প্রথমদিনই সে আমার সাথে গন্ডগোল লাগিয়ে দিলো। সপ্তাহে ৭ দিন ৮ ঘন্টা শিফ্ট নিয়ে থার্সডেতে বন্ধুদের সাথে কোন যেন লাটসাহেবী বুফে আছে সেখানে সবাই যাবে প্লান করেছিলো। আমার জন্য সেই প্লান ক্যানসেল করে বললো সে নাকি আমাকে আজ ট্রিট দেবে। ইথানের ট্রিট মানেই ভয়াবহ কিছু, সে আমি আগেই জানতাম। আমি প্রমাদ গুনলাম। বললাম কোথায় নিয়ে যাবে! সে বললো দেখোই না তোমার অনেক ভালো লাগবে, নিউ এক্সপেরিয়েন্স পাবে। এর আগে ইথান এই নিউ এক্সপেরিয়েন্স এমনই দিয়েছিলো মালাটাং খাওয়াতে নিয়ে গিয়ে যে আমার অবস্থা ওরাং ওটাং হয় হয় আর কি .... যাইহোক আর হাজার হোক সে শখ করে আমাকে খাওয়াবে। আমি না হয় বিষ হলেও সেটা খাবো.....

নিজে নিজে রেঁধে বেড়ে খাও সেই কোরিয়ান দোকান। মূলত এটা ছিলো বার্বিকিউ। সাথে নানা ধরনের প্লাটার থাকে যে সব রাঁধাই থাকে। শুধু অর্ডার করতে হয়।

এরপর দেখা হল ইতিমনির সাথে। ইতিমনি, আমার দেখা পৃথিবীর পাঁচজন ভালোমানুষের মাঝে একজন যিনি রেবেকা আপা, আমার পুরান কলিগ, তার মেয়ে। সে যখন আমাকে ইনভাইট করলো তার বাসায় দুপুরের লাঞ্চ খেতে। আমি তখন ভাবছিলাম কেমনে যাবো। কে নিয়ে যাবে! কি করে যাই! তাই সাহস সঞ্চয় করে নিজেই পা বাড়ালাম তালাওং এর পথে।

স্টেশনের মনিটরে তালাওয়াং দেখা যাচ্ছে এবং ঠিক ঠিক একা একাই পৌছে গেলাম ইতিমনির বাসায়। তানভীর ইতিমনির হাসব্যান্ড আমাকে স্টেশনে নিতে এসেছিলো। তাকে দেখেও অবাক আমি! এত ভালো একটা ছেলে! ঠিক রেবেকা আপার জামাই হবার মতনই সে,ইতিমনির হাসব্যান্ড যেন এমনই হবার ছিলো। ইতিমনি এত কিছু রান্না করেছিলো আমি অবাক!!!আর ইতিমনির বাসা দেখে আমি মুগ্ধ!!

বারান্দা থেকে ব্লু মাউন্টেন দেখা যায়। পুরাই এক স্বপ্নীল জগতে ইতিমনির সুখের নীড়ে অনেক ভালোলাগায় মন ভরিয়ে তারপর ফিরলাম সন্ধ্যাবেলায়....... আমার ধারনা এই ব্লগের একজন ইঞ্জিনীয়ার আপুনি এই রেবেকাআপাকে চেনেন। যদিও ইতিমনি আর রেবেকা আপা দুজনের নামই এ লেখায় বদলে দিয়েছি আমি। হা হা হা

মিতিমনির বাসায় অনেকগুলো বাচ্চারা এসেছিলো মা বাবাদের সাথে। এই মেয়েটা একটু পর পর রাগ করে!! এই রাগী বুড়িটাকেই পছন্দ হলো আমার। তাই ছবি তুলে ফেললাম!!! সে ছবি তুলবেই না। মা তাকে বললো তুমি ছবি তোলো এই আন্টিটার সাথে তাহলে কোক দেবো। কোক খাওয়া তার বারণ আর তাই এই শর্তে সে এক লাফে রাজী হয়ে আমার কোলে চড়ে বসলো। হা হা

এরপর এলো রুপন্তীমনিদের সাথে দেখা করার দিন। রুপন্তী আর অনিক বিষম রকম লক্ষী বাচ্চাদের দু'জন তারা। সেই ছোট থেকে দেখছি রুপন্তীকে। রাজকন্যার মত আদরে বড় হওয়া মেয়েটা এখন সংসার ও চাকুরী সামলাচ্ছে একজন যোগ্য সহচর অনিকের সাথে। বারউডে মজাদার খানায় আমন্ত্রন জানিয়েছিলো তারা। নানা রকম গল্পে ও জরুরী কিছু আলোচনাতে কেটে গেলো সময়। বিকেলে গেলাম ওদের বাসায়। ছিমছাম বাসার কর্ত্রীকে দেখলাম আমাদের সেই ছোট্ট রুপন্তীকে। সময় কি করে যে কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না.....
পরদিন সকালে রুপন্তীমনির একটা মেসেজ আসলো টুং করে.......একটা ছবি আর মেসেজটা ছিলো..... দেখেন আমি অফিস করছি আর কফি খাচ্ছি। আমার প্রিয় মানুষগুলোর জন্য লুহ ক্রেসু ফ্রান্স সিরামিক শপ থেকে আমি মাগ কিনেছিলাম তারই একটা আমি গতকাল প্রিয় রুপন্তীমনিকে উপহার দিয়েছিলাম.......

রুপন্তীর পাঠানো ছবি যা সে পরদিন সকালে হোম অফিস করবার সময় এক মাগ ব্লাক কফি নিয়ে তুলেছিলো।
আমীরা........ছোট্ট একটা প্রজাপতির নাম। সে যখন আমার ক্লাসে ছিলো তখন আমি এনুয়াল শো এর সময়টাতে একটা নাচ শেখাচ্ছিলাম। সে প্রানপন চেষ্টায় সেই নাচ তুলে ফেললো খুব অল্পেই। আমীরা খুবই লক্ষী একটা মেয়ে ছিলো। প্লে গ্রুপে নিগার মিসেরও বড় আদরের ছিলো সে। এত সুন্দর করে কথা বলতো। কেজি ওয়ানে ওঠার পর স্কুল ছেড়ে চলে আসলো তারা অস্ট্রেলিয়া। সেই ২০১৮- ২০১৯ এর কথা।
এরপর আমি বারবার অস্ট্রেলিয়ায় এসেছি কিন্তু আমীরার সাথে দেখা হয়নি কারন সে সময়টা তারা বাংলাদেশে ছিলো। এইবার আমি আর তার মা ঠিক করলাম এবার দেখা হবেই। নিম্মী আপা আমীরার মা জব নিয়ে বাসা বদল নিয়ে এত বিজি তবুও প্লানিং এ তিনি সেরা। আমাদের দেখা শুধু দেখাই ছিলোনা। এই দেখাকে কতটা স্মরনীয় করে তুললেন উনি নিজের কিছু ক্রিয়েটিভ পরিকল্পনায়।
আমাকে আর আমীরাকে নিয়ে গেলেন এক স্বপ্নরাজ্যে অনেক ঝামেলা করে সেখানে বুকিং দিয়ে। তারপর রং বেরং এর খানা পিনা । নিম্মী আপা বলে কোনটা খাবো আমি বলি যত রংবেরং এর খাবার সেসবই খাবো। হা হা যাইহোক আমরা নানা রকম রং বেরং এর খাবার খেয়ে ঢুকে গেলাম শ্বেতশুভ্র স্বর্গরাজ্যে....... কি নেই সেখানে হরিন, ঘোড়া, পাখি, ফুল আর শুভ্র তুষার...... সবচেয়ে মজার ছিলো সিনডেরেলার মিষ্টিকুমড়ার গাড়িটা ........আমরা সবাই সেখানে লাইন ধরে ছবি তুলে ফেললাম ..... এই রেস্টুরেন্টের বিশেষত্ব তারা প্রতি সিজনে আলাদা ভাবে সাজে। ঠিক আমার বাড়িটার মত। মানে বাংলাদেশের বাড়িটার মত।

শীতের দেশের সিনডেরেলার কুমড়োগাড়ি আর সিনডেরেলার কুমড়ো গাড়িতে আমি আর আমীরা।

কুমড়োগাড়িতে আমরা তিনজনা। আমার তো এখান থেকে নামতেই ইচ্ছা করছিলো না। ধ্যাৎ শীতে কাপাকাপির জন্য একটু ভটকু জ্যাকেটটাও খুলতে পারলাম না,

বর্ণীল টাকো। নিম্মীআপা জিজ্ঞাসিলো কি খাহিবা? আমি বলিলাম রঙ্গিন খাদ্য খানা আর কিছু জানিনা....

দ্যা গার্ডেনের রঙ্গিন মজাদার চীজকেক

দ্যা গার্ডেনের রঙ্গিন খানা এবং পিনার ছবি নীচে.....

জ্যুস ইন গার্ডেন ....

যাইহোক সিডনীতে সারা সপ্তাহ লোকজন কাজ করে, অফিস যায়, বিজনেস সামলায় তবে বিকাল পাঁচটা বাঁজতেই ঘরে ফেরে আর চুপচাপ বোধ হয় ৯টাতেই ঘুমিয়ে পড়ে। তবে ছুটির দিনগুলোতে ওরা কি বাড়িতে কিছু রান্না করে না নাকি কে জানে!

ব্রেকফাস্টের দোকানে এত এত ভীড়!! আমিও চললাম একদিন অমন করেই স্পেশাল ব্রেকফাস্টে ব্রিসকেট খেতে সেই দু ঘন্টা খরচ করে উবারে চেপে এপিং থেকে সেখানে ব্লাক বিয়ারে। ছোট দোকান ও তার সামনের জায়গাটুকু পুরাই ভর্তি ছিলো। লোকজন বাচ্চাকাচ্চা দিয়ে।

অদ্ভুত রকমের জোড়া দেওয়া কাঁঠের বেঞ্জগুলো আমাকে নিয়ে গেলো যেন ২০০ বছর আগের কোনো অস্ট্রেলিয়ার গ্রামাঞ্চলে। শুনশান সেই কারখানা এলাকাতে খাবার পরে হেঁটেছিলাম কিছুক্ষন! কি আশ্চর্য্য সুন্দর শুনশান ছিমছাম রোড। পাশ ঘেষে বিশাল বড় বড় গাছে থোকা থোকা ফুল দুলছিলো। এ যেন পৃথিবীর কোনো স্থান নয়। পৃথিবীতে নেমে আসা স্বর্গরাজ্য!!!!

গিয়েছিলাম অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়ামে। অস্ট্রেলিয়া এসে আমি অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাস নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলাম প্রথম যখন আসি। কবে থেকে গড়ে উঠেছিলো এই দেশ সেই ভাবনায় আমি আকুল ছিলাম! এ যেন অন্য আরেক জগত। আমার চেনা পৃথিবী থেকে একেবারেই আলাদা। প্রাচীন কালো কালো সব পাথুরে পাহাড় কেটে বানানো রেলপথ ধরে ছুটে চলেছে ট্রেন। কিছু কিছু বাড়ি দেখে মনে হয় এর বয়স কত!! গাছপালাগুলো তো আকাশ ছুঁয়ে চলে গেছে। ঠিক যেন জ্যাক এন্ড দ্য বীনস্টকের মত। বড় বড় পাখি, পোকা মাকড় সবই যেন গ্যালিভার ট্রাভেলের দেশ। অস্ট্রেলিয়ান জাদুঘর। এটা অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীনতম এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ইতিহাস ও নৃবিজ্ঞান জাদুঘর। এটা সিডনির সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্টে, উইলিয়াম স্ট্রিটের ১ নম্বরে দাঁড়িয়ে আছে। আর বয়স!! ১৮২৭ সালে এই জাদুঘরের জন্ম হয়েছিল । এখন বয়স গুনে নাও!! বাপরে!!

পাখি বই!! অসাধারণ সব হাতে আঁকা ছবিতে!!

অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়ামে পেঙ্গুইনের মমি

মিউজিয়ামের ভেতরে পাখি চিত্রের মাঝে....

মিউজিয়ামের পাখি বই

পাখির মমি

মিউজিয়ামে জিরাফের সাথে। ভেতরে হিটিং এর কারণে একটু জোব্বা জাব্বা খোলার অবকাশ হয়েছিলো। যাইহোক অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়ামের নাম নাকি প্রথমে ছিলো Colonial Museum। ১৮৩৬ সালে "Australian Museum" নামে নামকরণ করা হয়। এই জাদুঘরে নাকি ২১ মিলিয়নেরও বেশি নিদর্শন রয়েছে, রয়েছে বিশাল ডাইনোসরের জীবাশ্ম, প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের জীবাশ্ম। গতকাল বাইরে ছিলো চরম শীত। ঠিক আগেরদিনটাতেই শীতের প্রকোপ কম থাকায় পরদিনও কম থাকবে ভেবেছিলাম আমি। কিন্তু ভাবলাম এক আর হলো আরেক। শীতে জবুথবু হয়ে ভেতরে ঢোকার পথেই স্যুভেনিয়র শপ। নীল রং এর এক বড় পাখার প্রজাপতি খুব পছন্দ হলো। কিন্তু তার দাম নাকি ১২০ ডলার। তাই আর কিনলাম না আমি।
জাদুঘরে ঢোকার মুখেই অপরুপা সব পাখিদের মমি। আর সাথে নানা সুদৃশ্য ড্রইং। আমি তো সেই বর্নীল পাখিদের দেখেই মুগ্ধ!! এরপর মাছ জীব জন্তু আরও কত কি!!!!! বিশাল বড় হাতী আর হাতীর বাচ্চার কঙ্গাল থেকে শুরু করে প্রাগৈতিহাসিক সব বড় বড় পাখিদের কঙ্কালও ঝুলে রয়েছে সেখানে। সারা পৃথিবী থেকে সংগ্রহ করা নানা দুস্প্রাপ্য জিনিসে সাজানো এই জাদুঘর। হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যাথা হয়ে এলো। কিন্তু সবশেষে পৃথিবীর সব অপরূপা রত্নভান্ডারে মন হারালো ....

রুবি ! আচ্ছা রুবিকেই কি চূনী বলে!! কেমন এক নাম এই অমূল্য রত্নের। আর একটু হলেই চুর্নী বা চুন্নী হয়ে যেত!

রত্নভান্ডারের একটি ছবি। সারা পৃথিবীর সকল সংগ্রহের ছবি দিতে গেলে আরও কয়েকটা পোস্ট লাগবে।

অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়ামে যাবার আগে প্রথমেই ঢুকেছিলাম আনজাক মেমোরিয়ালে। মিউজিয়াম স্টেশনে নেমেই সিডনি
আনজাক মেমোরিয়াল স্মৃতিস্তম্ভ। হাইড পার্কের পাশ ঘেসে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই সুউচ্চ মেমোরিয়াল। ANZAC এই নামের কারণ Australian and New Zealand Army Corps ছোটো করে ANZAC। এই মেমোরিয়াল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অস্ট্রেলীয় এবং নিউজিল্যান্ড সেনাদের স্মরণে উৎসর্গিত।

মেমোরিয়ালে ঢুকে প্রথমেই চোখে পড়ে একটি প্রতীকী ভাস্কর্য “Sacrifice”, যেখানে একজন নিহত সৈনিকের মরদেহ তার পরিবার ও জাতির প্রতীকী রূপে চারপাশে থাকা নারীর হাতে বহন করা হচ্ছে।


নানা রকম ব্যাচ

ক্যাপটেন কুক আমার কাছে একজন রহস্য বা বিস্ময়ের নাম। হয়ত অস্ট্রেলিয়ার আবিষ্কারক বা তার কুক মার্কা নামটার জন্যই। আনজাক মেমোরিয়াল থেকে বের হয়ে চললাম অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়ামের দিকে। পথে এক বিশাল ব্রোঞ্জ মূর্তি। ক্যাপ্টেন জেমস কুক তার বাম হাতে একটি টেলিস্কোপ ধরে আছেন এবং ডান হাতটি উপরের দিকে প্রসারিত করে রাখা। ভাস্কর্যটি দক্ষিণে হাইড পার্কে মোরুয়া গ্রানাইট পাথরের একটি পাদদেশে দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে ছবি তুলে নিলাম ঝটপট। এই মূর্তীটির শিল্পী টমাস উলনার।

লাইব্রেরী

সেন্ট ম্যারী’স ক্যাথেড্রাল (St Mary's Cathedral) অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম প্রাচীন এবং বৃহত্তম ক্যাথলিক গির্জার পাশ ঘেসে পৌছালাম হাইড পার্কে। যাবার আগে একটু ছবি তুলে নিলাম এই মন্দির মার্কা সুদৃশ্য গেটটা দেখে।


দূরের পানে মেলি আঁখি আমি শুধু চেয়ে থাকি

সারাদিনের ঘোরাঘুরির পর আসলে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে ফিরছিলাম আমরা। এর আগের জার্নীতে সেন্ট ম্যারীস ক্যাথড্রালে গিয়েছি বলে এবারে আর গেলাম না। বন্ডাই পিজাতে একগাঁদা পিজ্জা অর্ডার দিলাম এবং শেষ মেষ না শেষ করতে পেরে প্যাক করে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।

পিজ্জা

আল্লাহরে চীজ ব্রেড চাইছিলাম। তাই বলে এই ধামড়া ব্রেড তাও আবার দুইটা!! কেমনে খাই!!! ভেউ ভেউ !! পরে প্যাক করে বাসায় নিয়ে যেতেই হলো!!!

সুশি এটাই ছিলো আমার প্রিয় খাবার এবং এটাও রঙ্গে রঙ্গে রঙ্গিন খানা......

বারউড চায়না মার্কেটে একা একা ঘুরাঘুরির দিনে স্টেশনে দেখা হলো এক টিচার আর তার মেয়ের সাথে। সে ব্লু মাউন্টেনের এক স্কুলের টিচার এবং তার নাম সারাহ। তার ষোলো বছরের মেয়ে মিলির সাথে শপিং থেকে ফিরছিলো সে। যাইহোক বারউডের চায়না টাউনের রং ঝলমলে দারুন সব দোকান সজ্জায় মন জুড়িয়ে যায়। এক কোরিয়ান শপে (Korean Skewers Food) মজাদার সব ভাজাভুজি খেলাম।

এক কোরিয়ান মেয়ে বললো তুমি কিছুপরে নাইট স্ট্রিট মার্কেটে নানা রকম মজার খাবার পাবে। সেখানে গিয়ে থাই টি খেলাম কিন্তু সেই দোকানী কোনো দাম নিলো না ......

চায়না টাউনের সন্ধ্যার স্ট্রিট ফুড মার্কেট
একখানে একটা ফোটো শ্যুটের জায়গা ছিলো যা এক আলোর হৃদয়!!! তার মাঝে তাকিয়ে আমি অবাক!!! হাজার হাজার রং বেরং এর তালা দিয়ে বানানো হয়েছে সেই হার্ট!!!

এই মার্কেটে আমি দেখেছিলাম অসাধারণ সব চীনামাটির পুতুলগুলো। এমন সব পুতুলের ছবিই একটা সময় মিররমনি আমাকে দিয়েছিলো। এই কথাটাই আমার মনে পড়েছিলো পুতুলগুলি দেখে....

যাইহোক পথে যেতে যেতে যেন তেনো করেই নানা রকম সব অপূর্ব সুন্দর ফুলেদের ছবি তুলেছিলাম আমি। কত শত নাম না জানা ফুল। সবগুলিই চেনা চেনা লাগে তবুও অচেনা। অনেক ছবি ফোনেই পড়ে আছে। সবগুলো ল্যাপটপে রাখা হয়নি।


নাম না জানা দুইটা ফুল

নাম না জানা একটা ফুল

থোকা থোকা ফলের মত ফুল

কাগজের ফুল
ছবি তোলার উদ্দেশ্যেই একদিন চললাম সেজেগুজে সিডনীর রয়েল বোটানিক গার্ডেনে। শীতের সাজগোজ আমার এমনিতেই পছন্দ নহে আগেই বলেছি তবুও ছবি তুলতে হবে বলে একটু সাজুগুজু করতেই হলো! যদিও ছবি দেখে নিন্দুকেরা বলবেই এইটা কি একটু!!! ওম্মা!!! যাইহোক আমি ভেবেছিলাম এই গার্ডেন মনে হয় এতই বড় যা এসে দেখি অস্ট্রেলিয়ার বড় বড় পাখি, গাছ পাথর মানুষজন এসবের মতই তবে এই গার্ডেন বিশাল হলেও আমার আশাতীত আশার মত আশাতীত নহে। যদিও নাকি এর আকার ৩০০,০০০ বর্গমিটার।ওহ ৩০ হেক্টর মানে ৭৪ একর। তবে তো আসলেই অস্ট্রেলিয়ার অন্যনা্য কিছুর তুলনায় ছোটই বটে। তবুও তার গাছপালা আর ভাস্কর্য্যগুলির সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হলাম আমি ! ১৮১৬ সালে খোলা এই গার্ডেনটি নাকি একটি প্রাচীন উদ্ভিদবিদ্যা প্রতিষ্ঠানও। ছবি তুলতেই গিয়েছিলাম বটে তবে ফিরে এসে এই গার্ডেনের ইতিহাস পড়ে চক্ষু গুল্লু গুল্লু হয়ে গেলো।
রয়েল বোটানিক গার্ডেন

ন্যাশনাল গার্ডেনে ঢং ঢাং ছবি। নাচতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। তাই একটু নৃত্যের ভঙ্গিমায় ছবি আর কি। হা হা







স্টেশনের এই কারুকাজ অনেক ভালো লেগে গেলো আমার..

গাছটা অনেক সুন্দর ছিলো। কিন্তু আধা উঠলো কেনো?

লাইব্রেরীর এক সাইড

সিডনী হারবার ব্রীজ......
গিয়েছিলাম দ্যা স্টার এ। জীবনের প্রথম ক্যাসিনো দর্শন চর্মচক্ষুতে।

ছবিখানা খানা ভক্ষনের। ক্যাসিনোর ছবি তুলিনি কারণ ছবি তোলা মানা ও কোনো টাকাও খরচ করিনি কিন্তু আমি ভালা মানুষ

যাইহোক বেশ কয়েকবার আমি অস্ট্রেলিয়া সিডনী এসেছি কিন্তু প্রতিবারই আমি কারো না কারো সাথে ঘুরেছি। বাস, মেট্রো, ট্রেন সবকিছুরই এখানে একটু আলাদা নিয়ম বটে তবে খুবই সুনিয়ন্ত্রিত নিয়ম মাফিক। ওপাল কার্ড কিনে নিয়ে তারপর সেই কার্ড পাঞ্চ করে উঠে পড়া যায় বটে ট্রেনে, বাসে, ট্রামে। ওহ সেই ট্রামের নাম আবার লাইট রেইল!! ঢং আর কি !!! যাইহোক কার্ড ঘষে উঠে বসলেই তো আর হলো না। গুগল ম্যাপের মত ট্রেন সিডিউল ম্যাপ্ও মানতে হয়। যদিও সকল স্টেশনে মনিটরে সকল তথ্য টাইমিং দেওয়াই আছে। কারো সঙ্গে যখন ঘুরি আমি কোনোদিন চোখ কান মন কিছুই দেই না। ওরাই ম্যাপ দেখে ওরাই কখন কয়টায় মেট্রো বাস যাবে নাম্বার দেখা সবই তারাই করে। আমার কাজ শুধুই চারিদিকে চেয়ে দেখা। কিন্তু এবারে সেটা আর হলো না। নিজেই নিজের পথ দেখে দেখে একা একা ঘুরাঘুরির আনন্দে মেতে উঠলাম।

একা একা ঘোরার আনন্দ এটাই যা খুশি দেখো ঘুরে ঘুরে, যখন ইচ্ছা একটু বসে জিরিয়ে নাও, আবার হাঁটো, যা খুশি তাই খাও, যা ইচ্ছা কিনে ফেলো কেউ কিছু বলার নেই। তাই একা একা শপিং আমার সব সময় পছন্দ! সেদিন প্রথমেই ঢুকলাম কোরিয়ান কসমেটিকস ডাবলইউ তে। কোনো কোয়ালিটি দেখাদেখি নেই, কোনো দামের দিকে নজর নেই। খুব সুন্দর বোতলে হানি শ্যাম্পু দেখে বোতলটার জন্যই কিনে ফেললাম সেটা। সাথে আরও অপূর্ব সুন্দর লাল নীল বোতলে কন্ডিশনার। এই সব রং বেরং এর শ্যাম্পূ কন্ডিশনারের বোতল আমার বাথরুমে যখন সাজাবো কতই না সুন্দর লাগবে ভেবেই মন আনন্দে ভরে উঠলো কিন্তু ৩ কেজি কাঁধের ব্যাগে নিয়ে হাঁটতে গিয়ে একটু চিন্তিত হলাম।

ঘুরে ঘুরে পৌছুলাম লুহ ক্রেসু প্রনানসিয়েশনটা মনে হয় এমনই হবে এই নামে একটা দোকানে। সিরামিকের মাগ বাটি ঘটি অনেক দেখেছি আমি কিন্তু সেসব সিরামিকের কেটলী, থালা বাটি এমনকি ফ্রাইপ্যান সসপ্যানও যে এত সুন্দর!!! থমকে দাঁড়ালাম আমি। এত এত দাম!! কিনবো কি কিনবোনা ভাবতে ভাবতেই কিনে ফেললাম ৪টা মাগ। লালরং সবকটাই। উপহারের জন্য সবগুলা আর একটা রাখবো আমার কাছে

দোকানী মেয়েটার নাম ছিলো অদিতি। নারায়নগঞ্জের মেয়ে। ব্রাকে পড়েছে। এই সবে এসেছে ফেব্রুয়ারীতে। সেখানেই আরেক মেয়ে নাহিদের সাথে পরিচয় হলো। বাঙ্গালী। তাদের সাথে কিছুক্ষন গল্প করে উলসওয়ার্থ থেকে মাছ মাংস তন্দুর চিকেন একগাদা এসব কিনে আমি আর হাঁটতেই পারিনা। মনে মনে তখন শামীম শিমুলদেরকে ডাকছিলাম। যাইহোক অনেক কষ্টে টেনে টুনে সেই সব নিয়ে বাসায় পৌছুলাম।
শপিং কি একদিনে শেষ হয়! তাই পরদিন আবার চললাম বাকি শপিং এ... তার আগে অক্সফোর্ড স্ট্রিট, ক্যামব্রীজ স্ট্রীট, এসব দিয়ে হেঁটে বেড়ালাম। কেমিস্ট শপ থেকে লোশান, ক্রিম এসব কিনে ব্যাগ বোঝাই করলাম। তারপর সামনে সুন্দর একটা সাজুগুজু কফিশপ দেখে ঢুকে গেলাম। একটা কফি নিয়ে বসেছি মাত্র। একজন অনেক বয়স্ক লেডি এসে আমার সাথে টেবিলটা শেয়ার করতে চাইলো। আমি সানন্দে বসতে দিলাম। তারপর বকবক শুরু করলাম। তার বয়স নাকি ৬৪ আর নাম মেকান। কিন্তু এ বয়সেই সে হাপাচ্ছিলো। তার নাকি কি যেন একটা অসুখ হয়েছে। সে অল্পে ক্লান্ত হয়ে পড়ে আরও নানা কিছু বলতে লাগলো। সে কখনও বিয়ে করেনি। একা একা থাকে তাই অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। আমি আর কি বকবক করি সে তো দশগুন। আমার অবশ্য ভালো লাগছিলো তার গল্প শুনতে কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু কথা বুঝতেই পারছিলাম না। সে তখন বললো তোমার দোষ নেই আমার গলার প্রবলেমের জন্য অর্ধেক কথা আটকে যায়। তারসাথে ছবিও তুললাম আমি। তারপর বেরিয়ে এলাম শপিং সেন্টারের উদ্দেশ্যে।
প্রথমেই গেলাম জেবি হাই ফাই শপটাতে। উদ্দেশ্য একটা সেল্ফিস্টিক কেনা। কারণ আমি জেনে গেছি একা একা ঘুরতে গেলে এই সেল্ফিস্টিক লাগবে আমার। সেটা কিনে সেই দোকানী মেয়েটার সাথেও গল্প জুড়ে দিলাম। ছবিও তুললাম তার সাথে। মেয়েটা মালায়সিয়া থেকে এসেছে। খুবই লক্ষী একটা মেয়ে। তার নাম হেনা। তার সাথেও একগাদা গল্প করে জিলেটো আইসক্রিমে গেলাম। সেখানে ছিলো এক অপরূপা ইরানী মেয়ে। গ্রীন এপেল আইসক্রিম নিয়ে তার সাথেও গল্প জুড়ে দিলাম। আমি বললাম তুমি ইরানী তাই এত সুন্দর!! সে তো খুশিতে আটখানা। তাকে শুনালাম আমাদের দেশ বাংলাদেশ। সেখানে আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম। তিনি ইরানী মেয়েকে নিয়ে একটা গান লিখেছিলেন জানো? গানটা নাচে ইরানী মেয়ে। কারন তিনি ইরানী কন্যার সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হয়েছিলেন। মেয়েটা তো মন দিয়ে সেই গল্প শুনে অবাক!! অনেক খুশি হয়ে সেই গান মানে নাচ সার্চ দিয়ে দেখতে শুরু করলো।

চ্যাটসউডের স্ট্রিট শপগুলোতে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ ভুলে যাবার নয়। তবে সেখান থেকে এমন সব দুল কিনেছি আমি যা আমি স্কুলে পরে গেলে সব বেবিরা হাতে ধরে দেখতে চায়। তবে সেটা করতে গিয়ে আমার কান ধরেও টানাটানি লেগে যায় মাঝে মাঝে হা হা হা।
তবে আমি ইচ্ছে করেই কিনেছি এসব। ওদের জন্যই......

ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার খুব কম করি আমি। আমার ব্যাংক আমার উনার ড্রয়ার। যখন ইচ্ছা যাই কিনি তাই সেখান থেকেই পে করা হয়। আমার কোনো শখ ইচ্ছা পূরণে সে কখনও আমাকে প্রশ্ন করে না। এটার কারন আমি সৌখিন বটে তবে অপরিনামদর্শীও নই মনে হয়। তবে হ্যাঁ মাঝে মাঝে অনেক অনেক দামী শাড়ি বা গয়না কিনে ভেবেছিলাম হয়ত সে কিছু বলতেও পারে। কিন্তু না সে কখনও কিছুই বলেনি। যাইহোক এখানে তো সেই ড্রয়ার নেই কাজেই নিজের ক্রেডিট কার্ডই ইউজ করতে হবে। এখন নিজে নিজে ঘুরতে গিয়ে দেখি একেক শপিং এ আমার কার্ড থেকে কয়েক হাজার নেমে যাচ্ছে। এ কথা ফোনে বলতেই উনি বললেন দেখো ঐ টাকার মধ্যেই শপিং করো। ক্রেডিট কার্ড লিমিট ক্রস করে দিও না। হা হা তার মানে যা ভাবতাম তাই নহে আমাকে নিয়ে তার সংশয় আছে। আমি মোটেও পরিনামদর্শী নহি।

চঞ্চলা মেঘ রে আর কোথা যাস নে ......

এই ফুলটা অনেক প্রিয় হয়ে গিয়েছিলো এবং গাছটাও।
কিন্তু সব কিছুর পরেও আমার মনে হয় এখানে স্বছ সুন্দর নির্মল আঁকাশ আছে যা এত শীতেও একটুও ধুলো ছড়ায়নি। আমাকে অসুস্থ্য করে দেয়নি। এখানে রাস্তা দিয়ে হাঁটলে সবচাইতে বেশি মন ভালো হয় কারণ কোথাও কোনো ধুলো ময়লা নেই, খোলা ম্যনহোলে মুখ থুবড়ে পড়ার ভয় নেই, কেউ এসে ধাক্কা দেবে ভেবে অশান্তি নেই। এখানে গাড়ি না থাকলেও বাস, ট্টেন মেট্রো মিনিটে মিনিটে আসছে। নাগরিক সুবিধা কাকে বলে এখানে এসেই তা ফিল করা যায়। দোকান পাট বাড়ি ঘরের সকল কাজ কর্ম, মানুষে মানুষে নিজেদের মত শান্তিতে থাকা এ সব নিয়ে স্বর্গীয় সুখের দেশ এই দেশ।
তবুও ধুলো ময়লা কাঁদামাটি রোগ জীবানু কুচুটে লোকজন আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশি সহকর্মী এ সব নিয়েও সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্মভূমি.......
তাই আমি বারে বারে ফিরে আসি এবং আসবো এবং আসতেই চাই এই মাটি ও বাংলাদেশেই .....
খুব খুব ব্যস্ত ছিলাম তাই পোস্ট দেওয়া হয়নি বেশ কিছুদিন। স্বপ্নের শঙ্খচিলভাইয়া, সত্যপথিকভাইয়া, বিজনভাইয়া আর ঢাবিয়ান ভাইয়ারা এবং আজকে গেঁয়ো ভূত ভাইয়া আমার পোস্ট খুঁজেছিলো তাই এই পোস্টখানা তাহাদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত হইলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


