
গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত শীত বসন্ত,
ছয়টি পাখি ছয়টি রূপে এসে বাংলাদেশে ছয়টি সূরে করে ডাকাডাকি .....
আমাদের ছোটবেলায় বিটিভির পর্দায় ফেরদৌসী খালামনির কন্ঠে এই গান মনে হয় আমাদের মতন যারা শুনেছে সবারই জানা। কারণ আমরা সবাই তখন একই গান গাইতাম, একই নাচ শিখতাম, একই জামা পরতাম, একই নাটক দেখতাম সারা দেশ এক সাথে। সেই ছোটবেলা হারিয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে আমাদের সেই একই সাথে গান শেখা, নাটক দেখার দিনগুলো।
আজকের এই আলো ঝলমলে রঙ্গিন দুনিয়ায় সে সব স্মৃতি তারপরেও যেন বড় জ্বলজ্বলে মধুর। দিন বদলের সাথে সাথে প্রকৃতিতেও এসেছে রং বদলের খেলা। তবুও আজও গ্রীস্ম আসে, বর্ষা ফুরোয় প্রকৃতিতে জাগে সাদায় নীলে শরতের আভা, হেমন্তিকার দ্বীপগুলি জ্বলে মিটিমিটি সন্ধ্যাকাশে, শীতও তার রুপের ডালি নিয়ে হাজির হয়ে যায় আজও আমাদের বাংলাদেশে। আর ফাগুনের কথা কি বলবো! সে তো সবার দ্বারেই পৌছে দেয় ফাল্গুনী হাওয়া, ফুলের মৌ মৌ সুবাস!
এই সেদিন আমাদের ছাদবাগানে নেমেছিলো বর্ষা। আর সেই বর্ষার রিমঝিম বৃষ্টিতে ভিজেছিলো আমাদের হৃদয়!!! আমরা ক'জন দুঃখভোলা এবং জীবনের প্রান্ত থেকে শুষে নেওয়া মানুষগুলো উচ্ছাসে মেতেছিলাম সেদিন। প্রায় দু সপ্তাহের বেশি প্লান ছিলো আমাদের এই বর্ষার আয়োজন নিয়ে। কি হবে বর্ষার খানাখাদ্য, গান বাজনা, হাসি আনন্দ। কি হবে আমাদের পোশাক আশাক, চুলের ফুল, খোপার মালা সে সবই ছিলো আমাদের পরিকল্পনায়। তবে যদি সেদিন বৃষ্টি না নামে!! তবে ভিজবো কিভাবে! বলতেই আমার চাইতেও মিশন ইম্পসিবল আমার উনি(রিমো রোবোট
ওহ আমাদের এই বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠানের নাম ছিলো - এসো নীপবনে ছায়াবিথী তলে এসো করো স্নান নবধারা জলে ....... কাজেই বৃষ্টি তো নামাতেই হবে সে আকাশ ডাকুক বা না ডাকুক মেঘ কাঁদুক বা না কাঁদুক!!
বর্ষামঙ্গলে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, লোকগান, নৃত্য, কবিতা ও আবৃত্তি। সাজসজ্জা, আলপনা, ফুল আর রঙিন পোশাকে প্রাণ পায় এ অনুষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুরুতে বর্ষামঙ্গল আয়োজন করে। এ উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয়,বর্ষা শুধু সৌন্দর্যের উৎস নয়, কৃষিজীবনের প্রাণশক্তিও বটে। বর্ষামঙ্গল তাই প্রকৃতি, প্রেম আর সৃষ্টিশীলতার এক অনন্য উদ্যাপন।
আমাদের উৎসবে আমি বসে বসে বানালাম বর্ষার সকল খানাপিনার আয়োজননামা! ঝালমুড়ি, চটপটি, ফুচকা, বর্ষার খিঁচুড়ি, গরুর মাংস, মাছ ভাঁজা বেগুন ভাঁজাসহ, নানারকম মিষ্টি দই ও বর্ষার ফলমূল!!! আমার তো সকল কাজে একটু বৈচিত্র লাগবেই আর তাই সেসব কি করে সাজাবো ভাবতেই মাথায় আসলো আইডিয়া। বানিয়ে ফেললাম ঝালমুড়ি, চটপটি, চা ও ফলমূলের স্টল আর বর্ষার খানাপিনার হোটেল। সেসবের নামও দিলাম আবার একেক জনের নামে।
চটপটি স্টল

ঠিক যেভাবে সত্যিকারের চটপটিওয়ালা তার বিশাল বড় সসপ্যানে টগবগে গরম ডাবলীগুলো ঢেলে রাখে, ঠিক যেভাবে সেখানে থাকে ডিমকুচি, পেয়াজ, মরিচ, ধনেপাতা, টমেটো শশা কুচি?

ঠিক যেভাবে থাকে এক কড়াই তেঁতুলের টক গোলা। ঠিক ঠিক যেভাবেই সাজিয়ে দিলাম আমি মিথ্যেকারের চটপটিওয়ালা হয়ে........

তবে সত্যিকারের চটপটির চাইতেও মজাদার স্বাদে।

খেলা খেলা ঝালমুড়ি স্টল

খেলা খেলা ঝালমুড়ি স্টলটাও দারুন করে বানালাম। সত্যিকারের মুড়িওয়ালা যেমন পলিথিনে মুড়ি রাখে, তেমনই করেই রাখলাম আমিও। আমার খানদানী কাঁচের বয়ামে ঢেলে দিলাম চানাচুর গরম গরম, ছোট ছোট খেলনা বাটি টাইপ কড়াই এ দিলাম পেঁয়াজকুচি, মরিচ কুচি, ধনেপাতা আর সরিষার তেলের বোতলটা ডাইরেক্ট একশান করে রেখে দিলাম ওদের মতনই। এখন ঐ যে যেই কৌটায় সব দিয়ে ঝাঁকি দিয়ে ঝালমুড়ি বানায় ঝালমুড়িওয়ালারা কোথায় পাবো তারে!!! শামীমকে পাঠালাম কেড়ে নিয়ে যায়!!! হা হা হা মানে আমাদের শামীমের সবাই দোস্ত ইয়ার আশেপাশের বাড়িগুলোর দারোয়ান ড্রাইভার থেকে শুরু করে মুদিদোকান তরকারীওয়ালা ঝালমুড়িওয়ালারাও। তো তাদের কাছে পাঠালাম ওটাই লাগবে আমার। সে নিয়ে এলো তেলচিটে একটা কনডেন্সমিল্কের টিন!!! ইয়াক থু এই থেকে বানানো ঝালমুড়ি খাই আমরা!!!!!! ছি ছি!!!!!!!!
মুড়িওয়ালার থেকে কেড়ে নিয়ে আসা কৌটা ফেলে আমার পলিমার ক্লের ছোট্ট পরিষ্কার কৌটাটাকেই বানিয়ে ফেললাম ঝালমুড়ি ঝকাঝক!!!
বর্ষার খিঁচুড়ি হোটেল

খিঁচুড়িটা এনেছিলো আমন্ত্রিতা আত্মীয়া। আর গরুর মাংস ভূনা, মাছ ভাঁজা, দই মিষ্টি, পিঠা আচারও একেকজন একেকটা। আমাদের ছাদ বাগানের সব্জী বেগুনভাজা ছিলো সাথে আর ছিলো আমার স্পেশাল আচারী পেঁয়াজ!!!
বর্ষার ফলমূল

আমড়া, আমলকী, পেয়ারা, করমচা, বাড়ির ছাদের ড্রাগনফল আনারস আরও কত কি ছিলো নিজেরই মনে নাই আর। তবে হ্যাঁ আমড়ার জন্য বিট লবন আর মরিচগুড়া তো ছিলোই আর আমড়াগুলো ফুলের মত কেঁটে কাঁঠিতে আটকাতে ভুলিনি কিন্তু!!!!!!!!!!
বর্ষার চা গরম

আদা চা, লেবু চা, দুধ চা, মালাই চা, গুড়ের চা , মসলা চা, সবুজ চা সব চায়েরই আয়োজন ছিলো রুপা আর মাটির তৈজসে।
বর্ষার সাজ

কদম ফুল এবং বেলোয়াড়ী রেশমী চুড়ি একদম এক নাম্বার কোয়ালিটি, এক নাম্বার গামছা সব কিছুর আয়োজন ছিলো সবার জন্যই। সিলেট থেকে আনিয়ে নিলাম শীতলপাটি কুল কুল!! সে যাই হোক সকল আয়োজন শেষে মেতে উঠলাম আমরা বৃষ্টি বিলাসে।

আমরা ভুলেই গেলাম আমাদেরকে। আমাদের বয়স পেশা দায়িত্ব সবই যেন কৈশোর আর তারুন্যে ফিরে গেলো।

মন মোর মেঘেরও সঙ্গী, উড়ে চলে দিগ দিগন্তেরও পানে.....নিঃসীম শূন্যে শ্রাবণবর্ষণসঙ্গীতে, রিমিঝিম রিমিঝিম রিমিঝিম....

আকাশে বাতাসে চল সাথী উড়ে যাই চল ছাতা মেলে রে .......

বৃষ্টিতে ভেজাভেজির পর শুরু হলো গান ও কবিতার আসর!!! এত গান, নাচ, কবিতা! তবুও প্রান ভরেনা। যেন ফিরে যেতে মনই চায় না সত্যিকারের পৃথিবীতে। সেদিন ছিলো পূর্নিমা। ভেজা আকাশে মেঘ সরে গিয়ে জেগে উঠেছিলো পূর্ণ চাদ!!!
আমরা সবাই মেতে উঠেছিলাম এক এক করে টেলিস্কোপে........ ব্যাকগ্রাউন্ডে তখন বাঁজছিলো মান্না দের হায়রে হায়রে চাঁদ দেখতে গিয়ে আমি তোমায় দেখে ফেলেছি....... হা হা এটাই বাঁজা উচিৎ ছিলো বটে ...... তাইনা???

সবার জন্য বর্ষার কদমফুলের শুভেচ্ছা......

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


