somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শব্দের পোস্টমর্টেম-২১৫ (কলম)

০৩ রা মে, ২০১১ সকাল ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলা ভাষায় সাধারণত ছয় প্রকার কলমের সন্ধান পাওয়া যায়। বাংলায় বানান একই হলেও এদের উৎস ভিন্ন। আরবি ‘কলম’ বা সংস্কৃত ‘কলম’ থেকে তৈরি কলম বলতে লেখনী বুঝায়।

যে সব গাছের বীজ হয় না বা যে সব গাছের বীজ থেকে উদ্ভূত গাছে উৎকৃষ্ট ফল পাওয়া যায় না এবং ফল পেতে অনেক দেরি হয়, সে- সব গাছের কলমাকৃতির (লেখনী কলমের মতো) শাখার কিছু অংশের ছাল ছাড়িয়ে সেখানে সারযুক্ত কাদামাটি বেঁধে অথবা আরো নানা পদ্ধতিতে যে চারা উৎপাদন করে গাছের অঙ্গজ বংশ বিস্তার ঘটানো হয় তাকে ‘কলম’ বলে। এ কলম আরবি ‘কলম’ বা হিন্দি ‘কলম’ থেকে এসেছে।

আবার অভিধান, সংবাদপত্র ইত্যাদির প্রতি পৃষ্ঠায় ছাপানো লেখার স্তম্ভাকৃতির ভাগকেও বলা হয় ‘কলম’। এটাকে কথ্য ভাষায় বলা হয় ‘কলাম’। এই ‘কলম’ বা ‘কলাম’ এসেছে ইংরেজি column থেকে।

তবে আদেশ, হুকুম, নির্দেশ, লিখিত বিধান বুঝাতে আমরা যে ‘কলম’ ব্যবহার করি, তার উৎসও আরবি। বাংলা বাগধারায় ব্যবহৃত কলমরদ করা মানে আদেশ বা সিদ্ধান্ত বাতিল করা।

আবার কলমা ধান বা শালি ধান অর্থে যে ‘কলম’ ব্যবহার করি তা এসেছে সংস্কৃত থেকে (কল্ + অম)। অন্যদিকে পলবিশিষ্ট লম্বা কাচখণ্ড বা স্ফটিক বোঝাতেও ‘কলম’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এই ‘কলম’ এর উৎস ইংরেজি column (এক হাজার চারশ চলি­শটা করে কাঁচের কলম চব্বিশ রঙের রামধনুকের মতো আভা দিচ্ছে - অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।

সংস্কৃত কলম্ব থেকেও কলম শব্দটি এসেছে। এই 'কলম' শব্দের অর্থ শরগাছ বা খাগ, শাকের ডাঁটা। এককালে শরগাছ বা খাগের মুখ সরু করে কেটে তা দিয়ে লেখা হত। এ কারণে কলম শব্দটি খুব বেশি নতুন নয়। সংস্কৃত মেদিনীকোষ, হেমকোষ, বিশ্ব, ত্রিকাণ্ড, জটাবধ ও শব্দকল্পদ্রুমে কলম শব্দের অর্থ ‘লেখনি’ হিসেবে পাওয়া যায়। তবে অমরকোষে কলম শব্দটি নেই। অমরকোষ সাতশ শতকে রচিত। এ কারণে মনে করা হয়, ‘লেখনি’ অর্থে কলম শব্দটি সংস্কৃত নয়, আরবি ‘কলম’ থেকে এসেছে। তবে নালী শাক বা ঘাসের ডাঁটা যে লেখনি, তার অনুরূপ শব্দ লাতিন, গ্রিক, আরবি ইত্যাদি ভাষায় পাওয়া যায়। অথচ প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে লেখনিবাচক 'কলম' শব্দের প্রয়োগ নেই। পরবর্তী যুগের সংস্কৃত সাহিত্যেও লেখনি অর্থে কলম শব্দটি বিরল। অথচ হিন্দি, তেলেগু, উড়িয়া ও বাংলা ভাষায় লেখনি অর্থে কলম শব্দের প্রয়োগ অনেক বেশি পরিমাণে দেখা যায়।

সংস্কৃতে কলমের প্রতিশব্দ হচ্ছে বর্ণতুলি, বর্ণমাতা, বর্ণতুলিকা, অক্ষর তুলিকা। কিন্তু মুসলমানরা ভারতবর্ষ শাসন করার কালে আদালতে ফারসি দফতরে ও ফারসি লেখাপড়ায় কলমদান, কাগজ, কলম, দোয়াত-কলম (দবাত্-কলম), কলমবন্ধ, কলমতরাশ ইত্যাদি শব্দের বহুল প্রচলনের কারণে কলমের সংস্কৃত প্রতিশব্দগুলোর জায়গায় কলম শব্দের প্রচলন হয়ে যায়। অর্থাৎ সংস্কৃতেও কলম শব্দটি গৃহীত হয়।

অভিধানকার যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধির মতে, ‘অন্তত মেদেনীকোষের সময় হইতে কলম সংস্কৃত শব্দ।’

আবার প্রাচীন কালে বঙ্গদেশে ভালো ধানকে ‘কলম’ বলা হত। পরবর্তীকালে এ ‘কলম’ ধানই কলমা ধান নামে পরিচিতি পায়। কালিদাসের এক শ্লোকে­ এ ‘কলম’ বা ‘কলমা’ ধানের বর্ণনা রয়েছে। শে­াকটি হচ্ছে :
‘আপাদপদ্মপ্রণতাঃ কলমা ইব তে রঘুম।
ফলৈঃ সংবর্দ্ধায়ামার্সু উৎখাত প্রতিরোপিতা:'

অর্থাৎ ‘তারা (বঙ্গোরা) কলমা ধানের মত পা পর্যন্ত নুইয়ে পড়ে রঘুর প্রভুত্ব স্বীকার করল। নানা ফল দিয়ে তার পুজা করল। তারা আবার স্বস্থানে প্রতিষ্ঠিত হল’। কালিদাস তাঁর শে­াকের মাধ্যমে এ কলমা ধান চাষের রীতির কথাও লিখেছেন ‘উৎখাত প্রতিরোপিতা’ অর্থাৎ এক ক্ষেতে বীজ পুতে চারা গজানোর পর অন্য ক্ষেতে তা রোপন করা। ধানগাছ রোপণের এটা এদেশীয় প্রাচীন রীতি। এখনো কিছু ধান দুধকলমা, জটা কলমা নামে পরিচিত।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×