হোটেলের বারান্দা থেকে তোলা ।
আমার জানালা দিয়ে দেখা দূরের স্কুল...
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে। আমার মেয়ে একা একা চলছে ......ঝুলন্ত ব্রীজের উপর থেকে।
আলুটিলা পাহাড়ের উপর আমি।
হোটেলের বারান্দায়। আমার বউয়ের ভীষন ভাব!!
আলুটিলা থেকে পুরো খাগড়াছড়ি শহর দেখা যায়।
হে অরন্য! ভালবাসি তোমাদের
আলুটিলা গুহায় নামার সিড়ি
সিড়ি দিয়ে উঠার সময়
হার্টিকালচার পার্কে। এই ছবিটা আমার ৫ বছর বয়সী মেয়ের তোলা।
সাজেকের পথে ..
আমাদের পাইলট লিটন চাকমা। এই গাড়ীতে করে আমারা গিয়েছিলাম সাজেক।
পাহাড়ি আকা বাকা পথ ।
পাহাড়িদের ঘরবাড়ী। যেন এক শিল্পকর্ম ।
পাহাড়ের কোলে আমাদের চাদের গাড়ী।
আজ আকার ক্লাস, ক্লাস রুমে হবে না। আজ ক্লাস হবে জলাপাহাড়ে। পাহাড়ের বুকে স্কুল।
নিঃসঙ্গতার একশ বছর । বুনো পাহাড়ি পথ ।
এই পথ বেয়ে বেয়ে চলে যাওয়া যাচ্ছে সাজেকের চুড়োয়।
দূর থেকে ভেসে ভেসে আসা। অদ্ভুত এক গান পাহাড়ি ভাসা।হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলার কুয়াশা।
দূরে দেখা যাচ্ছে মিজোরামের পাহাড় ।পাহাড় যেন দেখায় তাহার আহাড় ভরা বুক।
নেলী খালার কথা মনে আছে ? আর তার সেই জলপাই রঙের চিঠি ? যে চিঠিটা হাতে পেয়ে জাহাজের কেবিনের মত চিলেকোঠায় বসে সারাদিন বইয়ের পাতায় আর কল্পনাময় পৃথিবীতে এডভেঞ্চাচার করা আবীর ও বাবু চলে গিয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী নুলিয়াছড়িতে। তারপর পাহাড়ের কোলে হারিয়ে যাওয়া সোনার খনির গুজব আর সাথে যুক্ত হল জলদস্যুর ভূত। আমার পড়া অন্যতম সেরা একটা কিশোর উপন্যাস ‘নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়’। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে আমার মত তিরিশোর্ধ হয়েও মনের গহীনে হারিয়ে যাওয়া সেই দুরন্ত রহস্য-রোমাঞ্চপ্রিয় বালকটিকে নতুন করে খুঁজে পাবার জন্য বার বার ইচ্ছে করে ইট-কাঠের বিবর্ণ এই শহরটা পেছনে রেখে ছুটে যেতে পাহাড়ের কোলে, অরণ্যের বুকে। যেখানে ডানায় রৌদ্রের গন্ধ মুছে ঘরে ফেরে চিল আর পাহাড়ের কোল বেয়ে নেমে আসে হারিয়ে যাওয়া দিনের সূর্য।
গত দুদিনের ছুটিতে চলে গেলাম খাগড়াছড়ি। শ্যামলী পরিবহনের নাইট কোচে উঠতেই ক্লান্তির কারনেই কিনা জানি না রাজ্যের ঘুম চলে এল চোখে! ভোরে ঘুম ভাংতেই দেখি পৌছে গেছি মাটিরাঙ্গা! মাটির মতই সুন্দর আকাবাকা অরণ্য ঘেরা রাস্তা দিতে পথ চলল প্রায় ঘন্টা খানেক। কোথাও উচু কোথাও বা নীচু।খাগড়াছড়ি নামতেই শীত যেন জেকে বসল। শাপলা চত্বরে নেমেই একটা অটোরিক্সায় করে চলে গেলাম ‘হোটেল ইকোছড়ি ইনে’। শহর থেকে প্রায় ৩/৪ কিমি দূরে একট ছোট্ট টিলার উপর। হোটেলের লবিতে প্রবেশ করতেই সারারাতের জার্নির ক্লান্তি এক লহমায় দূরে চলে গেল। যেদিকেই তাকাই সেদিকেই অরণ্য ঘেরা পাহাড়। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিয়ে চলে গেলাম নগরীর শাপলা চত্বরে । একটা অটোরিক্সা ঠিক করে চলে গেলাম আলুটিলা গুহা ও ঝুলন্ত সেতুতে। আলুটিলার উপর থেকে শহরটা পুরো দেখা যায়। ল্যান্ডস্কেপ ভিউ অবশ্য বান্দরবান আর খাগড়াছড়ির অনেকটা একই রকম। তবে খাগরাছড়ির আসল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে খাগড়াছড়ি অনেক বেশী বুনো আর অকৃত্রিম। এখানে বুনো জঙ্গল আর পাহাড় যেন মিশে গেছে। । আর শীতের বাতাসে সর্বত্র যেন ছড়িয়ে আছে একটা ভাললাগাময়।
পরদিন খুব ভোরে রওনা দিলাম সাজেকের উদ্দেশ্যে। খাগরাছড়ি থেকে প্রায় ৭০ কিমি দূরে রাঙ্গামাটির জেলায় সাজেক। যে সাজকের কথা খুব শুনেছি, পড়েছি ব্লগে -পত্রিকায়। বুনো গন্ধ, আকাবাকা পাহাড়ি রাস্তা, জন ডেনভারের গান আর পাহাড়ি মেয়েদের ভুবন ভোলানো হাসি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের গাড়ী। গেছে। পথে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিতে হয়। সাজেক যাওয়ার শেষ ৩/৪ কিমি পথ ভীষন রোমাঞ্চকর। পুরো খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠতে হয়। পাহাড়, মেঘ, আড়িপাতা ঝর্না , বুনো পাখির ডাক সব কিছু ছাপিয়ে উঠে গেলাম সাজেকের চুড়োয়। আহ সাজেক! মেঘ আর বুনো পাহাড়ের মিতালী নাকি খুনসুটি! পাহাড় যেন দেখায় তার আহার ভরা বুক। সাজেক যাওয়ার পথে পাহাড়ি আদিবাসী, আর্মি জোয়ান সবাইকেই আমার ভীষন অমায়িক মনে হয়েছে। প্রকৃতি বোধহয় মানুষের আচরনের উপর ভীষন প্রভাব ফেলে।
পাহাড়ি রাস্তায় সূর্য সোনার পাতের মত ঝলমল করে উঠে। ঠিক যেন ভ্যানগগের আকা কোন নিসর্গ দৃশ্য। কোথাও কোন চিৎকার নেই , মানুষের সাক্ষাৎ নেই, প্রকৃতি যেন সবুজ চাদর পড়ে আছে। দূরে দূরে বাড়িঘর । বইছে পৌষের শীতল হাওয়া। এই সময়ে বোধহয় সবারই আমলকান্তির মত রোদ্দুর হতে ইচ্ছে করে । এই সময়ে কেমন যেন ঘোর লাগে।
প্রতিবারই যখন পাহাড়ে যাই তখন এক ধরনের নতুন ধরনের উপলব্ধি হয়, ভাললাগা জন্মায় ।মনে হয় মানুষ হিসেবে যেন আরেকটু বড় হলাম, নিজেকে আরেকটু চিনতে শিখলাম। নিজেকে কেবলি এক মানুষ- নগ্ন এক মানুষ- সাধারন এক মানুষ - অতি সামান্য এক মানুষ মনে হয়। ক্রোধে, ঘৃনায় , ভালবাসায়, মমতায়, ক্ষুদ্রতায়, মহত্বে পুরিত এক মানুষ মনে হয় ।যে মানুষটিকে কতকাল দেখা হয়নি। অরণ্য ঘেরা পাহাড়ের এই শান্ত ,নিঝুম স্তন্ধতার ভিতর এক ধরনের হাহাকার উঠে। প্রকৃতিকে দেখা এক অর্থে নিজেকেই দেখা। নিজেকে হারালেযে খুজে নিতে হয় প্রকৃতির ভিতরেই। মনে হচ্ছিল কতকাল দেখিনি আমাকেই, দেখা হয়নি নিজেকেই, কতকাল যে লিখা হয়নি কবিতা। এই অরন্য, এই পাহাড় এই মেঘপুঞ্জি ভালবাসি তোমাদের...ভালবাসি...
যেভাবে যাওয়া যায়ঃ
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি শ্যামলী ও শান্তি পরিবহনের বাস যায়। শ্যামলীর ভাড়া ৫২০ টাকা। নাইট কোচ। রাত ১১টা ও ১১ঃ৪৫ টায় গাড়ী ছাড়ে। সকাল ৭টার ভিতর বাস খাগড়াছড়ী পৌছে যায়।খাগড়াছড়িতে মোটামুনি মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। হোটেল অরনয় বিলাস, হোটেল ইকোছড়ি ইন, পর্যটন এর মোটেলো আছে। ইকোছড়ি ইন শহর থেকে ৩/৪ কিমঃ দূরে। কিন্তু হুব সুন্দর। ভাড়া ১০০০-১২০০,১৫০০ টাকা। অরণ্য বিলাস শহরের ভিতরেই। শাপলা চত্বরের কাছে। ভাড়া ১০০০-১২০০ টাকা । সাজেক যাওয়ার জন্য চাদের গাড়ী ভাড়া ৫০০০ এর মত ১২-১৪ জন বসতে পারেন। আমরা ৩ জন ছিলাম চাই মহেন্দ্র ৩ হুইলারে গিয়েছিলাম ভাড়া নিয়েছিল ২৮০০ টাকা ।
সাজেক থেকে ফিরাবার রাস্তা
পাহাড় আকা কতই সোজা , হারিয়ে গেছে আমার সেই ড্রইং খাতা
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২০