কিছুটা কষ্ট আর হতাশা নিয়ে বসে আছি। বাসটা চলে গেল। আজকেও দেখা হলো না। তিন দিন হচ্ছে তাকে দেখি না। মিস টাইমিং বারবার। মেইন রোডের উপর স্কুল বাসটা এসে এখন আর বেশিক্ষণ দাঁড়ায় না। এখন সে লেইট কুইন থেকে পাংচুয়াল কুইন হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু বিপদে তো আমি। তিনটা দিন বাসের পিছনে দৌঁড়ালাম পর্যন্ত। দেখা পেলাম না।
আজকে প্রায় তিনমাস হচ্ছে মেয়েটাকে দেখলাম যে। নাম জানার যদিও বা কোন প্রশ্নই আসে না, তবুও কেমনে কেমনে যেন বের করে ফেললাম। ওর নাম "ফুল ". কথা বলার মত সুযোগ কখনো হয়নি। হলে এট লিস্ট জিজ্ঞেস করতাম " মানুষ ত ফুলের নামে নাম রাখে, আর তুমি ফুলই রেখে দিলা" সে আশা গুড়ে বালি। সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া প্রত্যেকদিন নিজের ক্লাস মিস দিয়ে ওর স্কুল বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকাটাও আর সম্ভব না। আজকেই বিহিত করে ফেললাম। বহুত ফাইজলামি করে ফেলসি। আর না। মেয়েটা আমাকে চিনে পর্যন্ত না। তাই সবকিছু বাদ।।
সেবার পরপর টানা তিনদিন না দেখার পর আমি স্কুল বাসের জন্য আর ওয়েইট করতাম না। একদিন, আমি ঘরে বসে বসে মোবাইলে গান শুনতাসিলাম। হঠাৎ কলিংবেল, আমি নির্লিপ্ত অবস্থাতেই ছিলাম। ঘরের দরজা কখনো আমি খুলি না। আমার ছোট বোন দরজা খুলল। আমি রুম থেকে উঁকি মারতাসিলাম কে আসল। দেখি ফুল আর আরেকজন মহিলা। এই সারল। স্কুল বাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি সেজন্য কমপ্লেন দিতে এল না ত? আমি ভয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিসি অলরেডি। কোনোভাবেই ওদের হাতে ধরা দেয়া যাবে না। প্রায় দুই ঘন্টা পর দরজা খুললাম। বোনকে জিজ্ঞেস করলাম
- কিরে কে আসছিল রে?
- আমার কোচিং এর একটা বড় আপু।
- বড় আপু এইখানে আসল কেন?
- আসলে আমরা কোচিং এ মাঝেমাঝে একসাথে যাই ত,তো একদিন কথা প্রসঙ্গে উনাকে বলসিলাম যে আমার ভাইয়া এসএসসি তে অনেক ভালো করসিল।
- বেদ্দপ, ফাইজলামির আর জায়গা পাস না?
- আমি কি করলাম?
- আগ বাড়াইয়া এগুলা বলার কি দরকার ছিল?
- আরে তুমি কথা শেষ করতে দাও। তো ফুল আপু তুমি কোন কোচিং এ পড়তা ওগুলা জিজ্ঞেস করতে আসছে।
- ফুল আপু কে?
ন্যাকামী পর্ব চলতাসে আমার। কারন ফুলকে আমার সম্পর্কে বলায় আমি খুশি হয়সি সেটা প্রকাশ না করে বোনকে উল্টা ঝাড়ি মারলাম।
এরপর থেকে ফুল দেখি প্রায় সময় আমাদের বাসায় আসত। যদিও বা আমি কখনো তার সামনে যেতাম না।
একদিন আমি দোকান থেকে কি যেন কিনে বাসায় ফিরতাসিলাম। হঠাৎ দেখি কে যেন ডাক দিল আমাকে,
- রাফি ভাইয়া।
আমি তাকালাম। দেখি ফুল।
- রাফি ভাইয়া কেমন আছেন?
- ভালো। তুমি?
- এইত। আপনাদের বাসায় সবসময় যাই, আপনি কখনো কথাও বলেন না।
- আসলে ব্যস্ত থাকি ত তাই।
- স্কুল বাসের পিছনে দৌঁড়ানোর সময় ব্যস্ততা থাকে না?
- মানে?
- মানে এখন আর দাঁড়ান না কেন?শখ মিটে গেসে নাকি নতুন কাউকে পাই গেসেন?
আমি টোটাল বোবা হয়ে গেলাম। হাত পা কাঁপতাসে।
- আ,,, আসলে, আসলে,,,
- আসলে টাসলে বাদ দেন। ক্লাস বাদ দিয়া আর স্কুল বাসের পিছনে দৌঁড়াইয়েন না।
- আচ্ছা।
- কি আচ্ছা?
- এএএ।
- পাগল হয় গেসেন?
আমি মাথা চুলকালাম। আসলেই পাগল হয় গেলাম নাকি?।
- আচ্ছা বাসায় যান।
আমি পিছন ফিরে বাসার দিকে যাচ্ছি, হঠাৎ করে কোথা থেকে সাহস চলে আসল।
আমি বকে ফেললাম,
- আচ্ছা আজব বেপার না? মানুষ ফুলের নামে নাম রাখে আর তুমি ফুলকেই নাম বানায়লা।
ফুল একটু খানি করে মিস্টি হেসে চলে গেল।।।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:৩২