somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুল বানানও ‘ভূল’!

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার অন্য যে কোনো ভাষার চেয়ে সমৃদ্ধ। বিশ্বে ইংরেজি ভাষার শব্দ যেখানে ৮০ হাজার, বাংলা ভাষার শব্দ সেখানে এক লাখ ২০ হাজার।

তাই যোগাযোগ ও ভাব-ভালোবাসা প্রকাশে বাংলার জুড়ি মেলা ভার। রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে কষ্টার্জিত আমাদের এই ভাষা, শব্দ এবং বর্ণমালা। কবির ভাষায় যেটি-‘দুঃখিনী বর্ণমালা।’

ব্যানারে, সাইনবোর্ডে, লিফলেটে, বিলবোর্ডে এবং আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কেমন আছে সেই দুঃখিনী বর্ণমালা।

তারই খোঁজ নিয়েছেন-সজিব তৌহিদ, ছবি তুলেছেন শাকিল আহমেদ এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনে ছিলেন রোজারিও।

সম্প্রতি ভুল বানান অনুসন্ধানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে শুরু করি আমাদের অভিযান। মোটরসাইকেল স্টার্ট করতেই চোখে পড়ে একটি দোকানের সাইনবোর্ড। বহুল প্রচলিত ভুল বানান ‘ষ্টোর’ লেখা দেখে আর দেরি সইলো না।

পরে স্টার্ট বন্ধ করে তুলে আনা হলো সেই ছবি। পাশেই লেখা ‘ষ্টীল’ এটাও ক্যামেরাবন্দি করতে কালক্ষেপণ করা গেল না। তবে স্টুডিও এর সঠিক বানান দেখে মুগ্ধ হতেই হলো।

আবার মোটরসাইকেল চলতে শুরু করলো। পিছন থেকে রাস্তার দু’পাশের লেখাগুলো পর্যবেক্ষণ করতে থাকলাম। অসংখ্য ইংরেজি লেখার প্রভাবে বাংলারও দেখা মিললো বেশ।

শ্যামলী, গাবতলী, আমিন বাজার, হেমায়েতপুর হয়ে সাভার বাসস্ট্যান্ড পৌঁছালাম আমরা। পরে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের পাশে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল কি ভয়াবহ ঘটনাই না ঘটেছিল এখানে। সেই বিধ্বংসী শোকস্মৃতি নিভৃতে রোমন্থন করে আমরা সে স্থান ত্যাগ করলাম।

সেখান থেকে ভিতরের গলিতে একটি বিরিয়ানি হাউজের সামনে মোটরসাইকেল আচমকা ব্রেক কষলেন সহকর্মী ফটোগ্রাফার শাকিল।

কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা তার জিগরি বন্ধুর বিরিয়ানি হাউজ। সুতরাং বিরিয়ানি হাউজের মালিক তোফায়েলের বিনয়ী আতিথেয়তায় দুপুরের আগেই দুপুরের খাবার সেরে ফেলতে বাধ্য হলাম।

সেখান থেকে সাভার সিঅ্যান্ডবি মোড় হয়ে আশুলিয়ার পাশ ঘেঁষে শটকার্ট রাস্তায় উত্তরায় পৌঁছালাম। ইতোমধ্যে আমরা ভুল বানান ব্যবহার ও প্রয়োগের অনেক আলোকচিত্রই ক্যামেরাবন্দি করে ফেলেছি।

দুপুর গড়িয়ে সূর্য পশ্চিম আকাশের পথে। এবার আর দেরি করা চলে না। উত্তরা থেকে ঢাকা অভিমুখে ততক্ষণে আমাদের বাইকের গতি ঘণ্টায় প্রায় ৭৫ কিলোমিটার।

আকস্মিকভাবে একটি সাইনবোর্ড চোখে পড়লে আমাদের গতিরোধ করি। রাস্তা পার হয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এর কার্যালয় নয় ‘কার্য্যালয়’ লেখাটি ক্যামেরার ফ্রেমবন্দি করা হলো।

এরপর আমরা কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে যাই। আশ্চর্যরকম ভুলভ্রান্তি সেখানেও পাওয়া গেল।

সড়ক ও জনপদ (সওজ) কর্তৃপক্ষের সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেখে আমরাও সতর্কভাবে লক্ষ্য করলাম দুর্ঘটনা বানানে ‘দূর্ঘটনা’ ঘটানো হয়েছে।

বিশ্বাসের অভাব থাকলেই বুঝি ট্রাস্ট বানান হয়ে যায় ‘ট্রাষ্ট’।

ইংরেজি বা বিদেশি শব্দে ‘ষ’ ব্যবহৃত হয় না। স্টেডিয়ামের জৌলুস কমে গেলেই কি স্টেডিয়াম বানান এমন হয়।

স্টুডিও শব্দটির বানান কি যেন অপরাধ করেছে। তাই বেশির ভাগ স্টুডিও হয়ে গেছে ‘ষ্টুডিও’।

ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে প্রস্রাবের চাপ দিলে আমরা দেখি-‘এখানে প্রসাব করা নিষেধ।’ যদিও শব্দটি হওয়া উচিত ‘নিষিদ্ধ’। সেটা না হয় বাদই দিলাম।

রাজধানীসহ সারাদেশের বেশিরভাগ মসজিদে, মন্দির বা যে কোনো স্থানে ‘প্রস্রাবখানা‘ খুঁজে পাওয়া কঠিন। যা পাওয়া যায় তা হলো- ‘প্রসাবখানা’, ‘প্রশাবখানা’ অবার কোথাও ‘পেশাবাখান’ দেখা যায়।

অসচেতনতা এবং অজ্ঞতার ডায়াবেটিস মাত্রা বেড়ে গেলেই বুঝি প্রস্রাবে সমস্যা দেখা দেয়।

এটা সত্য ভুলের ঊর্ধ্বে আমরা কেউ নই। ব্যক্তি, পরিবার ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সবাই আমরা ভুল করি। কিন্তু একটু সচেতনতা, অবহেলা এবং অজ্ঞতার কারণে এসব ভুল আমাদের কি লজ্জায় না ফেলে দেয়?

রাজধানীর অলিগলি ঘুরে বানান ও ভাষা ব্যবহারের যে হালচাল দেখা যায়। তাতে দেশের নীতি-নির্ধারকরা হতাশ হলেও ব্যথিত হয়ে প্রতিকারে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন কি?

ঘুরে ঘুরে শেষ মুহূর্তে আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ ( ঢামেক) হাসপাতালে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ি। কারণ এখানে যত বানান ভুল পেয়েছি তাতে আর আমাদের বাড়তি খাটনি করতে হয়নি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মত বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে আমরা ভুল বানান‍ ‘ভূল’ দেখে মুচকি হেসে ক্লান্তি রেশে ঘরে ফিরি।

আর মনে মনে বলি, আমরা বাঙালি, বাংলাদেশি। ভুল করি, ভুলে পড়ি, ভুলে ভুলে জীবন গড়ি, কিন্তু ভ‍ুল শোধরানোর তিলার্ধ চেষ্টা করি ন‍া।



ভুল শুদ্ধ
----- ------

ষ্টীল স্টিল
ফার্ণিচার ফার্নিচার
পোষ্টার পোস্টার
ষ্টেশন স্টেশন
বাসষ্ট্যান্ড বাসস্ট্যান্ড
রেস্তোরা রেস্তোরাঁ
কর্ণেল কর্নেল
চেকপোষ্ট চেকপোস্ট
সুপারষ্টার সুপারস্টার
ডায়াগনষ্টিক ডায়াগনস্টিক
বাড়ী বাড়ি
ষ্টুডিও স্টুডিও
শ্রেণী শ্রেণি
ভূল ভুল
বার্ণ বার্ন
প্লাষ্টিক প্লাস্টিক
হর্ণ হর্ন
শ্রদ্ধঞ্জলী শ্রদ্ধাঞ্জলি
শ্রমজীবি শ্রমজীবী
ফেব্রুয়ারী ফেব্রুয়ারি
ট্রাষ্ট ট্রাস্ট
আকর্ষনীয় আকর্ষণীয়
সেষ্টেডিয়াম স্টেডিয়াম
সংরক্ষীত সংরক্ষিত
ষ্টাফ স্টাফ
দূর্ঘটনা দুর্ঘটনা
কার্য্যালয় কার্যালয়
বাড়ী বাড়ি
ধুমপান ধূমপান
একাডেমী একাডেমি
ডাঃ ড.
মো মো.
শ্রেষ্ট শ্রেষ্ঠ
গ্রামীন গ্রামীণ
প্রসাব/প্রশাব প্রস্রাব
দাড়াও দাঁড়াও
রেজিষ্ট্রী রেজিস্ট্রি
ঘন্টা ঘণ্টা
জংগী জঙ্গি
জরুরী জরুরি

দন্ডনীয় দণ্ডনীয়

ছবিসহ দেখতে ক্লিক করুন...
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×