somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের কুখ্যাত রোমান সম্রাট নিরো ও তার বাঁশি

০১ লা মে, ২০১৩ রাত ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইতিহাসের কুখ্যাত সম্রাট নিরোর বাশি নাকি এখন বাংলাদেশে। অনেকেই তার হারান সেই অভিশপ্ত বাঁশি বাজাচ্ছেন এবং বাঁজাতে ইচ্ছুক। ইতিহাসে আছে যখন রোম নগরী পুড়ছিল সেদিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপ ছিল না। এই খেয়ালী রোমান সম্রাট এর পুরো নাম Nero Claudius Caesar Augustus Germanicus;জন্ম ১৫ ডিসেম্বর, ৩৭ ,জন্মস্থান অ্যান্টিয়াম, ইতালি। মৃত্যুঃ ৯ জুন, ৬৮ (৩০ বছর) মৃত্যুস্থান রোমের বাইরে
সমাধিস্থল মউসোলিয়াম অব দ্য দোমিতি আহেনোবারবি, পিনসিয়ান হিল, রোম।
পিতার নাম নেইয়াস দোমিতিয়াস আহেনোবারবাস আর মাতা এগ্রিপ্পিনা দি ইয়াঙ্গার। ক্লদিয়াস ছিলেন সৎপিতা। একজন সৎভাই এর কথাও জানা যায় , নাম ব্রিটানিকাস।

তার বেশ কজন স্ত্রী ছিল তাদের নামঃ ক্লদিয়া অক্টাভিয়া,পপ্পাইয়া সাবিনা,স্তাতিলিয়া মেসালিনা। ক্লদিয়া অগাস্টা নামে তার এক সন্তানও ছিল ।


নিরো ও পপ্পাইয়া সাবিনা


রাজত্বকালঃ ১৩ অক্টোবর, খ্রিষ্ট-পূর্ব ৫৪ থেকে ৬৮ সময়কালে রোমান সাম্রাজ্যের পঞ্চম এবং জুলিও-ক্লদিয়ান রাজতন্ত্রের সর্বশেষ রোমান সম্রাট ছিলেন।
ক্লদিয়াস নিরোকে উত্তরাধিকারী হিসেবে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে দত্তক সন্তানরূপে গ্রহণ করেছিলেন।


ক্লদিয়াস ও নিরো
ক্লদিয়াসের মৃত্যুর পর ১৩ অক্টোবর, ৫৪ তারিখে সম্রাট হন। খুব সম্ভবতঃ ক্লদিয়াস নিরো'র মা এগ্রিপ্পিনা দি ইয়াঙ্গার কর্তৃক নিহত হয়েছিলেন। নিরোকে ক্লদিয়াসের পুত্র ব্রিটানিকাসের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ নিশ্চিতকল্পে ইয়াঙ্গার এ পদক্ষেপ নেন।



খেয়ালী রোমান সম্রাট নিরো ও তার মা এগ্রিপ্পিনা দি ইয়াঙ্গার

শাসন ব্যবস্থাঃ

তাঁর শাসনকালে নিরো কূটনীতিবিদ্যায় পারদর্শীতা দেখান। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সাম্রাজ্যের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ করে ব্যাপকভাবে সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। তিনি থিয়েটারের জন্য ভবন নির্মাণের আদেশ দেন এবং অ্যাথলেটিক ক্রীড়ার প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এ সময়ে সফলভাবে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে এবং শান্তি রক্ষার্থে পার্থিয়া সাম্রাজ্যের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হন। প্রথম রোমান-ইহুদি যুদ্ধ শুরু হয় এ সময়েই।
নিরো'র শাসনামলে অমিতব্যয়িতা লক্ষ্য করা যায় এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের সাথে জড়িত ছিল। তিনি অনেকগুলো হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। এমনকি তিনি নিজ মাতাকেও সৎভাইকে হত্যা করেছেন। এছাড়াও বিষ প্রয়োগে সৎভাই ব্রিটানিকাসকে হত্যার সাথেও জড়িত ছিলেন তিনি।


মাকে হত্যার পর বিষণ্ণ নিরো'

রোমের অগ্নিকাণ্ড

তাঁকে জনপ্রিয়তাবিহীন সম্রাটরূপে আখ্যায়িত করা হয়, যিনি রোম পুড়ে যাওয়া অবস্থায় বেহালা বাজাচ্ছিলেন। পরবর্তীকালে এ কথাটি ভুল প্রমাণিত হয় ও গুজব হিসেবে বিবেচিত হয়। কেননা, তখনও বেহালা বাদ্যযন্ত্রের আবিষ্কার ঘটেনি। কিন্তু তিনি প্রাচীন গ্রীসের উদ্ভাবিত লির বাজাতে পারতেন।

১৯ জুলাই, ৬৪ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে অগ্নিকাণ্ডে (লাতিন: Magnum Incendium Romae) রোম নগরীর অধিকাংশ এলাকা আগুনে পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়। টাসিটাসের মতে, এ অগ্নিকাণ্ডের জন্য নিরো খ্রিস্টানদেরকে দায়ী করেছিলেন। কিন্তু অনেক রোমান অধিবাসী মনে করেন যে, নিরো স্বয়ং ডোমাস অরেয়া স্বর্ণ ভবন নির্মাণে আগুন লাগানোর আদেশ দিয়েছিলেন।

তিনি খ্রিস্টানদের প্রথমদিককার উৎপীড়নকারীর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রাতে আলোর উৎস থেকে আগুন নিয়ে তাঁর উদ্যান পুড়াতে গিয়ে খ্রিস্টানদেরকে আটক করেছিলেন।


আগুন লাগানোর অভিযোগে খ্রিস্টান রমণীর উপর আক্রোশ

প্রেক্ষাপটঃ

প্রাচীন রোমান ঐতিহাসিক টাসিটাসের মতে, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ছয় দিন ধরে জ্বলতে থাকে। প্রাচীন রোমের চৌদ্দটি জেলার মধ্যে মাত্র চারটি আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রক্ষা পেয়েছিল। তিনটি জেলা পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং বাকী সাতটির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়।অন্যান্য সমসাময়িক ইতিহাসবিদদের মধ্যে একমাত্র প্লিনি দি ইল্ডার লিখেছেন যে, এ অগ্নিকাণ্ড স্বল্প সময়ের ছিল।

ঐ সময়ে জীবিত ইতিহাসবিদদের মধ্যে দিও ক্রাইসোসতম, প্লুতার্ক এবং এপিকটেটাস এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি। আগুনের ভয়াবহতা সম্বন্ধে সেনেকা পলকে চিঠিতে লিখেছিলেন যে, একশত ত্রিশটি ঘর এবং চারটি ব্লক ছয়দিনের মধ্যে ভস্মিভূত হয়ে যায়। এ হিসাবে কমপক্ষে শহরের এক-দশমাংশ পুড়ে যায়।


রোম নগরী পুড়ছে শিল্পির চোখে , দ্যা গ্রেট ফায়ার অফ রোম

ঐ সময় রোমে ১,৭০০ ব্যক্তিগত গৃহ এবং ৪৭,০০০ ইনসুলা ছিল।
ক্যাসিয়াস দিও বলেছেন যে, ঐ সময়ে সম্রাট নিরো মঞ্চের পোশাক পরিহিত অবস্থায় গ্রীক মহাকাব্য ইলাপারসিস থেকে গান গাচ্ছিলেন।
এছাড়াও, টাসিটাসের মতে অগ্নিকাণ্ডের সময় নিরো অ্যান্টিয়ামে ছিলেন। টাসিটাস বলেছেন, নিরো লির বাদ্যযন্ত্র সহযোগে গান গাচ্ছিলেন এবং নগর পুড়ে যাবার খবরটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন।

টাসিটাসের মতে, আগুনের সংবাদ শোনে নিরো দ্রুত রোমে ফিরে যান। ত্রাণকার্য পরিচালনার উদ্যোগী হন ও নিজ তহবিল থেকে যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করেন তিনি।অগ্নিকাণ্ডের পর নিরো নিজ প্রাসাদে গৃহহীনদের জন্যে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন এবং দূর্গতদের জন্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।


দ্যা টর্চার অন খ্রিস্টান

ক্ষমতাচ্যুতঃ

৬৮ সালে কর ব্যবস্থার প্রতিবাদ জানিয়ে গলে ভিনডেক্সের সহায়তায় বিদ্রোহ এবং হিস্পানিয়ায় (স্পেন) গালবা কর্তৃক আক্রমণের শিকার হয়ে নিরো পলায়ণপূর্বক সিংহাসনচ্যুত হন।

ফাঁসীকাষ্ঠে ঝুলবেন এ আশঙ্কায় ৯ জুন, ৬৮ তারিখে প্রথম রোমান,অত্যাচাড়ি,খামখেয়ালি,পাশান্ড সম্রাট হিসেবে আত্মহত্যা করেন নিরো। তাঁর এ আত্মহননের মধ্য দিয়ে জুলিও-ক্লদিয়ান রাজত্বকালের পরিসমাপ্তি ঘটে।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৪
২২টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×