somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপ্ত আত্মজীবনী ~ শেখ মুজিবুর রহমান// অনুচ্ছেদ ১০

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই সময় একটা আলোড়ন সৃষ্টি হল। হাশিম সাহেব শহীদ সাহেবের সাথে পরামর্শ করে একটা মুসলিম লীগের একটা Draft manifesto বের করলেন। মুসলীম লীগ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং এর একটি রাজনৈতিক দাবীও থাকবে, ভবিষ্যতে পাকিস্তান পেলে এর অর্থনৈতিক কাঠামো কি থাকবে তাও থাকতে হবে। জমিদারি প্রথা বিলোপসহ আরো অনেক কিছু এতে ছিল। ভীষন হৈ চৈ পড়ে গেলো। আমরা যুবক, ছাত্র ও প্রগতিবাদীরা এটা নিয়ে ভীষনভাবে প্রপ্পাগান্ডা শুরু করলাম। পাকিস্তান আমাদের আদায় করতে হবে এবং পাকিস্তান কায়েম হবার পরে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কাঠামো কি হবে তার একটা সুস্পষ্ট রূপরেখা থাকা দরকার। হাশিম সাহেব আমাদের নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ক্লাস করতেন।........................ ...................................... ............................ ............................ .....................
এই সময়কার একজন ছাত্রনেতার নাম উল্লেখ না করলে অন্যায় হবে; কারণ তিনি কোন গ্রুপে ছিলেন না এবং অন্যায় সহ্য করতেন না। সত্যবাদী বলে সকলে তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন। নেতাদের সকলে তাকে স্নেহ করতেন। তার নাম এখন সকলেই জানেন, জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী বার এট ল’।.এখন ঢাকা হাইকোর্টের জজসাহেব। তিনি দুই গ্রুপের মধ্যে আপোষ করতে চেষ্টা করতেন। শহীদ সাহেবও চৌধুরী সাহেবের কথার যথেষ্ট দাম দিতেন।
…………………………… …………………………. ……………………………… …………………………
………………………………….. ………………………………. ……………………………..
এই সময় বাংলায় মুসলিম লীগ সরকারের পতন হয়। গভর্নর শাষন ক্ষমতা নিজের হাতে নেন। শহীদ সাহেব দেখলেন যুদ্ধের সময় অধিক লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা কালো বাজারে কাপড় বিক্রি করার জন্যে গুদামজাত করতে শুরু করেছে। একদিকে খাদ্য সমস্যা ভয়াবহ, শহীদ সাহেব রাতদিন পরিশ্রম করছেন, আরেকদিকে অসাধু ব্যবসায়ীরা জনগনের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করেছে। শহীদ সাহেব কর্মচারীদের হুকুম দিলেন, মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীদের আড্ডাখানা বড়বাজার ঘেরাও করতে। সমস্ত বড়বাজার ঘেরাও করা হল। হাজার হাজার গজ কাপড় ধরা পড়লো, এমনকি দালানগুলির নিচেও এক একটা গুদাম করে রেখেছিলো সেগুলোও বাদ গেলো না। এমন করে সমস্ত শহরে চাউল গুদামজাতকারীদের ধরবার জন্যে একইভাবে তল্লাসী শুরু করলেন। মাড়োয়ারিরাও কম পাত্র ছিল না। কয়েকলক্ষ টাকা তুলে লীগ মন্ত্রীসভাকে খতম করার জন্যে কয়েকজন MLA কিনে ফেললো। ফলে এক ভোটে লীগ মন্ত্রীত্বকে পরাজয় বরণ করতে হল। ....................................
............................. .................................... ............................ ...................
আমি কিছু সংখ্যক ছাত্র নিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। খবর যখন রটে গেল লীগ মন্ত্রিত্ব নাই, তখন দেখি টুপি ও পাগড়ি পরা মাড়োয়ারিরা বাজি পোড়াতে শুরু করেছে এবং হৈ চৈ করতে আরম্ভ করেছে। সহ্য করতে না পেরে, আরও অনেক কর্মী ছিল, মাড়োয়ারিদের খুব মারপিট করলাম, ওরা ভাগতে শুরু করল। জনাব মোহাম্মদ আলী আমাকে বাইরে এসে ধরে ফেললেন এবং সকলকে বুঝানোর চেষ্টা করলেন। হিন্দু নেতারাও বাইরে এসে প্রতিবাদ করল।
..................... .......................................... ........................................... .....................................
......................................... ...............................

এর পূর্বে আমার ধারনা ছিলো না যে MLA রা এইভাবে টাকা নিতে পারে। এরাই দেশের ও জনগনের প্রতিনিধি ! আমার মনে আছে, আমাদের উপর ভার পড়লো কয়েকজন এমএলএ কে পাহারা দেবার, যাতে তারা দল ত্যাগ করে অন্য দলে যেতে না পারেন। আমি তাদের নাম বলতে চাই না, কারণ তাদের অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। একজন এমএলএ কে মুসলিম লীগ অফিসে আটকানো হল। তিনি বারবার চেষ্টা করেন বাইরে যেতে, কিন্তু আমাদের জন্যে পারছেন না। কিছু সময় পরে বললেন,
"আমাকে বাইরে যেতে দিন। কোন ভয় নাই। বিরোধী দল টাকা দিতেছে, যদি কিছু টাকা নিয়ে আসতে পারি তাহলে আপনাদের ক্ষতি কি? ভোট আমি মুসলিম লীগের পক্ষেই দেবো।"
আশ্চর্য হয়ে চেয়ে রইলাম তার দিকে। বৃদ্ধ লোক, সুন্দর চেহারা, লিখাপড়া জানেন। কেমন করে বলতে পারলেন এই কথা আমাদের কাছে? টাকা নেবেন একদল থেকে অন্য দলের সভ্য হয়ে, আবার টাকা এনে ভোটও দেবেন না! কতোটা অধঃপতন হতে পারে আমাদের সমাজের! এই ভদ্রলোককে একবার রাস্তা থেকে ধরে আনতে হয়েছিল আমাদের।শুধু সুজোগ খুঁজছিলেন কেমন করে অন্য দলের কাছে যাবেন।

♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣

পার্লামেন্ট মেম্বার কিনে নেয়ার রীতিটা শুরু হইসিলো সে তখনই... এখন তো বলাই বাহুল্য! এখন তো পয়সা দিয়ে নেতা কিনতে হয় না... বরং ব্যবসায়ীরা পয়সা খরচ করে তারপর বিক্রী হয়ে নেতা হন।
শেখ মুজিব খুব মারকুটে তরুণ ছিলেন, যারা বলেন তিনি মুক্তিযুদ্ধ চান নাই, ভয়ে পালাইসেন পাকিস্তান... তাদের জন্যে আমার মায়া হয়। এমন গর্ব করার মত ইতিহাস থেকে বঞ্চিত তারা।
শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মত দেশপ্রেমিক যদি এখন ১০০ জনকেও আমরা পেতাম, অনেক ভালো হত!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×