somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Giant Clashes গ্রীস vs পারস্য (২)

২২ শে এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


Giant Clashes গ্রীস vs পারস্য (১)

৫০০ খ্রিষ্টপূর্বে গ্রীক রাজ্য এথেন্স সেনা পাঠায় পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ‘আইওনিয়া’ রাজ্যের বিদ্রোহীদের সাহায্য করার জন্য। সুবিশাল পারস্য সাম্রাজ্যের গালে চপোটাঘাতের মতই অপমানজনক ছিল এথেন্সের এই উদ্ধতা। বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি সম্রাট দারিয়ুসের পক্ষে হজম করা অসাধ্য হয়ে পড়ে এই অপমান, শোনা যায় প্রতিদিনের তিন বেলা খাবার আগে নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিতেন “এথেন্স যেদিন আগুনে জ্বলবে, আমার সকল দায়িত্ব শেষ হবে”

একে একে ছোট ছোট দ্বীপগুলি কব্জা করে অবশেষে ৪৯০বিসি’তে পারস্য নৌবাহিনী এথেন্স রাজ্যের ম্যারাথনে’র ‘স্কিনিয়াস’ উপকূলে এসে নামল। নিজের বিজয়ের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত ছিলেন পারস্য সেনাপতি 'দাঁতিয়াস', শুধু নিশ্চিত হতে চাইছিলেন 'কোনভাবে আক্রমণ করলে বিজয় সহজসাধ্য হবে'। ভেবে দেখলেন সমুদ্র হতে এথন্সের সুদৃঢ় দেয়াল প্রাচীর ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকা সহজ হবেনা, তার চেয়ে স্থল পথে এগুনোই সুবিধাজনক মনে হোল তার কাছে। প্রায় ২৫হাজার সৈন্যের পার্সিয়ান বাহিনী নিয়ে শুরু করলেন অভিযান।


পার্সিয়ান বাহিনীর ম্যারাথন যাত্রা

এদিকে গনতান্ত্রিক এথেন্সে কিভাবে এই শক্তিশালী পারস্য বাহিনীর মোকাবেলা করা হবে, তা নিয়ে শুরু হোল তুমুল বিতর্ক। কেউ বলল এথেন্স ছেড়ে পালিয়ে যেতে আবার কেউ বলল দেয়াল প্রাচীরের ভিতরে থেকে পার্সিয়ানদের প্রতিরোধ করা হোক। কিন্তু একজন এসবের বিরোধিতা করল, 'ম্যাল্টিয়াডিস' নামে একজন মত দিল সামনে এগিয়ে সুবিধাজনক স্থানে গিয়ে মোকাবেলা করা হোক পার্সিয়ানদের।

তো কে এই ম্যাল্টিয়াডিস??
দারুন এক বর্ণময় জীবন ছিল সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া ম্যাল্টিয়াডিসের। উত্তরাধিকার সূত্রে চাচার কাছ থেকে গ্রীক কলোনি থ্রাসিয়ানে'র ‘টাইর‍্যান্ট’ বা অধিকর্তা নির্বাচিত হন। এই টাইর‍্যান্টদের এথেন্সবাসীরা আবার ঘৃণার চোখে দেখত, কারণ তারা প্রকৃতপক্ষে এথেন্সের ভূমি বাহুবলে দখল করে রেখেছিল।
এদিকে পূর্ব ইউরোপে পার্সিয়ান আক্রমণের সময় তাদের সাহায্য করতে গিয়ে রাজা দারিয়ুসের চক্ষুশূলে পরিণত হন ম্যাল্টিয়াডিস। পার্সিয়ান বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে টিকতে না পেরে ৪৯২বিসি’তে পালিয়ে আসেন এথেন্সে। আশ্রয়ের পরিবর্তে অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য নিক্ষিপ্ত হন এথেন্সের কারাগারে এবং ঘোষণা করা হয় মৃত্যুদণ্ড।

এ অবস্থায় ৪৯০বিসি’তে এথেন্স আক্রান্ত হলে, ম্যাল্টিয়াডিস পারস্য বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ইচ্ছা জানান এথেন্সের জনপ্রতিনিধিদের। সবদিক বিবেচনা করে, প্রতিনিধিরা তাকে মুক্ত করে এথেনিয়ান বাহিনীর কর্তৃত্ব তুলে দেয় তারই হাতে।
পারস্য বাহিনীর মোকাবেলা করার জন্য ১০০০০ এথেনীয় সৈন্য নিয়ে, ম্যাল্টিয়াডিস সমবেত হন ম্যারাথনের প্রান্তরে।

যুদ্ধের বর্ণনায় যাবার আগে দুই বাহিনী সম্পর্কে কিছু ধারণা নেওয়া যাক।

পার্সিয়ান বাহিনীঃ
রাজা দারিয়ুসের বাহিনীতে প্রায় ৩-৫লক্ষ সৈন্য ছিল বলে ধারণা করা হয়। আর তাদের অন্যতম মূলশক্তি ছিল অশ্বারোহী বাহিনী। প্রাক্তন রাজা সাইরাসের আমল হতেই অশ্বারোহী বাহিনীর স্বার্থক প্রয়োগ শুরু হয় এবং যেকোনো অভিযানে মূল বাহিনীর ২০% রাখা হত এই ঘোড়সওয়ারদের।
তাদের আক্রমণের বৈশিষ্ট্য ছিল, সামনে পদাতিক বাহিনী দিয়ে দুই পাশ হতে অশ্বারোহী বাহিনীর প্রচন্ড আক্রমণ। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে শত্রুরা নির্বিচারে কাটা পড়ত। মধ্য এশিয়ার সমভূমিতে এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে প্রায় সব রাজ্য দখলে নেয় তারা।

পদাতিক বাহিনীর প্রথম অংশটি ছিল হালকা অস্ত্রসজ্জিত বা ‘লাইট ইনফ্যান্ট্রি’; সংখ্যায় অগণিত হওয়ার কারণে মুহুর্মুহু আক্রমণে শত্রুকে ধরাশায়ী করাই ছিল তাদের কাজ।

কিন্তু সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশটি ছিল ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ‘ইমমরটালস(Immortals)’ বা অমরবাহিনী। অভিজ্ঞ এবং হত্যা করতে বিশেষ পারদর্শী এই ইমমরটাল’দের ব্যবহার করা হতো শুধুমাত্র যখন যুদ্ধের নিয়তি ঠিক করে দেবার প্রয়োজন হত। তাদের যুদ্ধে নামা মানেই ছিল নিশ্চিত বিজয়। মুখ পাতলা কাপড়ে আবৃত করে পুরোপুরি নিঃশব্দে আক্রমণে এগিয়ে যেত, যা প্রতিপক্ষের মনে মৃত্যুদুতের কথা স্মরণ করিয়ে দিত।


300 সিনেমায় প্রদর্শিত ইমমরটাল

গ্রীক বাহিনীঃ
যোদ্ধা হিসেবে স্পার্টা, এথেন্সের মাঝে পার্থক্য থাকলেও রণকৌশলে সমগ্র গ্রীস একই পদ্ধতি অনুসরণ করত; আর তা হচ্ছে ‘গ্রীক ফ্যালাংস’ ফর্মেশন। অস্ত্র, ঢাল ও বর্মে সুসজ্জিত সৈন্যরা সুশৃঙ্খলভাবে সাড়ি করে দাঁড়াত। অস্ত্র হিসেবে প্রধান ব্যবহার ছিল ‘ডোরি’ নামক বর্শার আর অপর হাতে থাকত 'হাপ-লান' নামক কাঠ এবং ব্রোঞ্জ নির্মিত অত্যন্ত মজবুত ঢাল।


হাপ-লান ঢাল

পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সামনে ঢাল বিস্তৃত করে তৈরি করত নিচ্ছিদ্র প্রতিরক্ষা দেয়াল আর অপর হাতে বর্শা দিয়ে চালানো হত শত্রুর উপর আক্রমণ। পিছন হতে আবার দ্বিতীয় সাড়ির সৈন্যরা উপর হতে চার্জ করত তাদের হাতের বর্শা দিয়ে, ফলে উপর-নিচের ক্রমাগত আক্রমণে নাস্তানাবুদ হতো সামনে থাকা শত্রুরা।


ফ্যালাংস বিন্যাস

বার চলুন ঘুরে আসি সেই ম্যারাথনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে,

এথেন্সের ২৬মাইল পূবে অবস্থিত ম্যারাথন প্রান্তর, যার একদিকে ছিল বিস্তীর্ণ জলাভূমি এবং অপরদিকে পাহাড়ি উপত্যকা। পারস্য বাহিনী তীরে পৌঁছানোর পর এথেন্সে যাওয়ার দুটি রাস্তা খোলা ছিল তাদের সামনে, একটি হোল দুর্গম জলাভূমি পেরিয়ে অগ্রসর হওয়া এবং অপর দিকে 'ভ্রানা' উপত্যকার মাঝের সরু পথ ধরে অগ্রসর হওয়া। পার্সিয়ান সেনাপতি দাঁতিয়াস দ্বিতীয় পথটিই বেছে নিলেন।

ম্যাল্টিয়াডিস এই সুযোগটিই কাজে লাগালেন, এথেনীয় বাহিনী নিয়ে উপত্যকার ভিতরে সরু একটি জায়গায় অবস্থান নিলেন। গাছ গাছালি আর পাথরে পূর্ণ পাহাড়ি ঢালের কারণে দু’পাশ দিয়ে গিয়ে অশ্বারোহী বাহিনীর আক্রমণের পথ রুদ্ধ হয়ে গেল, ফলে পারস্য বাহিনীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে রইল।

ভ্রানা উপত্যকায় এথেনীয় বাহিনীর অবস্থান

বোতলের গলার মত একটি জায়গায় ‘ফ্যালাংস’ তৈরি করে অবস্থান নিল এথেনীয় বাহিনী। পারস্য সেনাপতি চাচ্ছিল তারা উপত্যকা ছেড়ে বাহিরে বেরিয়ে আক্রমণ করবে, কিন্তু তার চাওয়ার কোনও দাম দিলনা এথেনীয়রা। এথেন্সকে রক্ষা করাই তাদের দায়িত্ব, কাজেই এই উপত্যকার ভিতরে যুগ পেরিয়ে গেলেও তাদের সমস্যা নেই। অবশেষে দাঁতিয়াসই আক্রমণের নির্দেশ দিল।

প্রথমেই আক্রমণে গেল দুই হাজার সৈন্যের তীরন্দাজ বাহিনী, তাদের নিক্ষিপ্ত হাজার হাজার তীরে আকাশের সূর্য ঢেকে গেল কিন্তু এথেনীয়দের ব্রোঞ্জের ঢালে সামান্য আঁচর কাটতেও ব্যর্থ হোল। তীরন্দাজদের ব্যর্থতায় তাদের পিছিয়ে আনলেন দাঁতিয়াস, আদেশ দিলেন সরাসরি আক্রমণের। প্রথমেই আক্রমণে গেল ‘লাইট ইনফ্যান্ট্রি’।

হাজার হাজার পার্সিয়ান সৈন্য স্রোতের মত আছড়ে পড়ল এথেনীয় সৈন্যদের ব্রোঞ্জের দেয়ালে। মাটিতে খুঁটি গেঁড়ে থাকা এথেনীয় সৈন্যদের শক্ত হাতের প্রতিরোধে সেই ধাক্কার রেশটুকু একসময় স্থির হয়ে গেল ব্রোঞ্জ দেয়ালে। তারপরেই রক্ষণাত্মক খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এল তারা, ঢালের দেওয়ালের পিছে সুরক্ষিত থেকে বর্শার আঘাত হানল উন্মুক্ত পার্সিয়ানদের শরীরে; মাটিতে লুটিয়ে পড়ল তারা। এরই সাথে হঠাৎ হঠাৎ ‘ফ্যালাংস’ ভেঙ্গে সামনে এগিয়ে আক্রমণ করেই মুহূর্তের মাঝে আবার ফিরে এল দেওয়ালে। অসহায় পার্সিয়ানরা কচুকাটা হতে থাকল সমানে।


শিল্পীর চোখে গ্রীক-পার্সিয়ান যুদ্ধ

এথেনীয়দের গায়ে ছিল লিনেনে ও চামড়ার তৈরি দুইস্তরের মজবুত বর্ম, ফলে মারাত্মক আঘাত থেকে অনেকটাই রক্ষা পেল তারা, অপরদিকে পার্সিয়ান লাইট ইনফ্যান্ট্রির সৈন্যদের গায়ে কোনরূপ বর্ম ছিলনা। সারাদিন ধরে একের পর এক আক্রমণ ব্যর্থ হতে লাগল, পারস্য রক্তে আর লাশে ভরে উঠল যুদ্ধক্ষেত্র।

এরূপ ব্যর্থতায় নিরুপায় দাঁতিয়াস শরণাপন্ন হোল তার শেষ তুরুপের তাস ইমমরটাল’দের। যুদ্ধের ময়দানে ইমমরটাল’দের নামতে দেখে প্রমাদ গুনল ম্যাল্টিয়াডিস। ভেবে দেখলেন, এমন কৌশলী যোদ্ধাদের এভাবে বেশীক্ষণ আটকে রাখা যাবেনা আর যুদ্ধ শেষ করতে হলেও অবশ্যই তাকে কোন ঝুঁকি নিতেই হবে। সিদ্ধান্ত নিলেন সরু উপত্যকা ছেড়ে বেরিয়ে সামনে ফাঁকা জায়গায় অবস্থান নেওয়ার।

কিন্তু ১০০০০ ইমমরটালকে পরাজিত করতে হলে অবশ্যই ভিন্ন কোন কৌশলের দরকার, এ উদ্দেশ্যে মাঝখানের ফ্যালাংস হতে সৈন্য সরিয়ে দুপাশের ফ্যালাংসগুলোকে শক্তিশালী করলেন। উপত্যকা হতে বেরিয়ে ফ্যালাংসের নিয়ম ভেঙ্গে আদেশ দিলেন দৌড়ে আক্রমণ করার, পার্সিয়ান বাহিনীও দ্রুত অগ্রসর হোল; কিন্তু মুখোমুখি হবার ঠিক পূর্বমুহূর্তে আবারো এথেনীয়ানরা ফিরে গেল তাদের সেই সুশৃঙ্খল ফ্যালাংস বিন্যাসে।

শুরু হোল তাদের প্রতিরোধ যুদ্ধ। মাঝের ফ্যালাংস রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করে তাদের জায়গা ধরে রাখল আর দুপাশের শক্ত ফ্যালিংসের হাতে পারস্য বাহিনীর পার্শ্ব বুহ্য ভালোই মার খেল। এদিকে মাঝে আক্রমণের চাপ বাড়ায় মাঝের ফ্যালাংস ধীরে ধীরে পিছু হটতে লাগল। পারস্য বাহিনী এই ফাঁদ বুঝতে পারেনি, ভাবল ভেঙ্গে পড়ছে এথেনীয় প্রতিরোধ। আরও ভিতরে ঢুকে পড়ল তারা, আর এই সময়ই পাশের ফ্যালাংসগুলো মুখ ঘুরিয়ে দুইপাশ হতে আক্রমণ চালাল।


অ্যানিমেশনে যুদ্ধের গতি-বিধি

এইবার পারস্য বাহিনী ফাঁদে পড়ে গেছে বুঝতে পারল, কিন্তু কিছুই করার নেই। সমানে কচুকাটা হতে লাগল, অল্প সময়ের মাঝে ৬০০০ পার্সিয়ান সেনা নিহত হোল, অপরদিকে মাত্র ২০০এথেনীয় সেনা মৃত্যুর স্বাদ পেল। শেষপর্যন্ত আর ধরে রাখা সম্ভব হলনা, উল্টাদিকে ঘুরে জাহাজের উদ্দেশ্যে পালাতে শুরু করল পার্সিয়ানরা।

এই পর্যায়ে ম্যাল্টিয়াডিস আবারো বুদ্ধির পরিচয় দিলেন, সৈন্যদের পিছু ধাওয়া করা হতে বিরত রাখলেন। দীর্ঘ যুদ্ধে ক্লান্ত সৈন্যদের বিশ্রাম দিলেন, কারণ জানতেন অপ্রস্তুত জাহাজে পাল তুলে আবারো যাত্রা শুরু করতে দীর্ঘ সময় নিবে পার্সিয়ানরা। বিশ্রাম নিয়ে সৈন্যরা যখন আবার বল ফিরে পেল, আক্রমণ চালাল উপকূলের জাহাজগুলোর উপর। তড়িঘড়ি করে পাল তুলে রওনা দিল প্রায় ৬০০জাহাজ, তা সত্ত্বেও অনেকগুলো আগুনে পুড়ে গেল, ৭টি ধরা পড়ল ম্যাল্টিয়াডিসের বাহিনীর হাতে আর তীরে পড়ে থাকল অসংখ্য পার্সিয়ান সেনার মৃতদেহ।


সাগরতীরে গ্রীক সেনাদের হামলা এবং
পলায়নরত পার্সিয়ান জাহাজ

বিখ্যাত গ্রীক ইতিহাস লেখক ও ইতিহাসের জনক হেরাডিটাস এই আক্রমণটির বর্ণনা দিয়েছেন এইভাবে, “এক গ্রীক সেনা তার ডান হাত দিয়ে জাহাজের রশি টেনে ধরে রাখল কিন্তু পার্সিয়ানদের তরবারির আঘাতে তার হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, তৎক্ষণাৎ সে বা’হাত দিয়ে রশিটি ধরল এবং আবারো অস্ত্রের আঘাতে তার বা’হাত বিচ্ছিন্ন হোল; এরপর সে রশিটি দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে মাটিতে শুয়ে পড়ল।” অতিরঞ্জিত সন্দেহ নেই, বারবার হাতে কোপ দেওয়ার চেয়ে এক কোপে রশি কেটে ফেলাই কি বুদ্ধিমানের হতোনা!!

যাই হোক, এভাবেই ম্যারাথনের প্রান্তরে যুদ্ধের সমাপ্তি হোল; কিন্তু ম্যাল্টিয়াডিস বুঝল এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি। পারস্য বাহিনীর একটা বড় অংশ এখনো অক্ষত আছে, তারা এবার নিশ্চয়ই জলপথে এথেন্সে হামলা চালাবে। একজন সংবাদ-বাহককে দ্রুত পাঠিয়ে দিলেন ম্যারাথনে’র বিজয় সংবাদ এথেন্সে পৌঁছে দিতে, আর নিজে সেনাবাহিনী নিয়ে রাতের পথ পাড়ি দিয়ে অগ্রসর হলেন এথেন্সের দিকে।

তো, সেই সংবাদ-বাহক ২৬মাইল পথ দৌড়ে পাড়ি দিয়ে নগরের মাঝে গিয়ে প্রবেশ করল আর জোরে চিৎকার করে বলে উঠল ‘এথেন্স যুদ্ধে জিতে গেছে’। এই বলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল বেচারা এবং আপনারা জানেন তার স্মরণেই পৃথিবীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে 'ম্যারাথন দৌড়' আর তাতে প্রতিযোগীদের অতিক্রম করতে হয় ঠিক ঐ দূরত্ব যা তাঁকে অতিক্রম করতে হয়েছিল ঐ দিনটিতে।

এদিকে সমুদ্রপথে ৬২মাইল পাড়ি দিয়ে পার্সিয়ান নৌবহর সকালে উপস্থিত হোল এথেন্সের নগর প্রাচীরে, কিন্তু দাঁতিয়াস আবারো হতাশাভরে দেখলেন প্রাচীরের উপর দৃঢ়চিত্ত ম্যাল্টিয়াডিস পুরো সেনাবাহিনী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে পারলেন এথেন্স বিজয় করা আর সম্ভব নয়, কোন আক্রমণ ছাড়াই জাহাজ ঘুরিয়ে পরাজয় মেনে নিয়ে ফিরে চললেন দারিয়ুসের দরবারে।
পারস্য বাহিনীর এই পিছুহটা দেখে আনন্দে মেতে উঠল এথেন্সবাসী। শুরু হোল উৎসব, আর মহান বীরদের আপ্যায়ন। বিজয়কে স্মরণ রাখতে তারা নির্মাণ করল জগদ্বিখ্যাত মন্দির ‘প্রোপাইলিয়া’; যা উৎসর্গ করা হয় দেবী এথেনাইকির উদ্দেশ্যে।


এথিনিয়া-প্রোপাইলিয়া

এদিকে দেশে ফিরে হতভাগা দাঁতিয়াস’কে বরণ করতে হয় মৃত্যুদন্ড। পরাজয়ের ব্যর্থতা সম্রাট দারিয়ুস’কে আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে, শপথ নেয় মৃত্যুর পূর্বে এর প্রতিশোধ নেবার। কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি তার পক্ষে, তিনি মারা যাওয়ার পর পিতার প্রতিশোধ নিতে পুত্র ‘জারক্সিস’ প্রায় ৫-২০লক্ষের বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে ম্যারাথনের যুদ্ধের ১০ বছর পরে আবারো আক্রমণ চালায় গ্রীস এবং এই সময়ই রচিত হয় 300খ্যাত থারমোপলি’র যুদ্ধের ইতিহাস।

যা পরের পর্বে থাকবে...... (চলবে) :) :)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১২ সকাল ৭:২৬
৩১টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×