somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় গল্প: "নতুন স্বপ্ন" পার্ট ১

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যেদিন বড় ভাইয়ার বিয়ের খবর পেলাম সেইদিন রাতেই বাসে উঠে পড়লাম। খবরটা ভাইজান নিজেই দিলেন। গলার আওয়াজেই বুঝলাম উনি এত্তো এক্সসাইটেড যে অলরেডি হাওয়ায় সাঁতার কাটছেন। মিয়া ভাই এখনো বিয়ার আসল মজা বুঝেন নাই তো তাই এই অবস্থা। পরে নিজেই এসে বলবা "অনিল ,ভাই আমার ,তুর সাথে আমিও দেশ ঘুরুম, আমারে সাথে নিয়া যা। আর তো পারি না"। কুমিল্লার বিজয়পুর পাহাড়ে আমি যখন হাইকিং করতে ব্যস্ত তখন হবু জামাইয়ের ফোন আর আমি ক্যামেরা, ল্যাপটপ, কাপড় সব কিছু প্যাক করে সন্ধ্যায়ই ঢাকার বাসে।
পড়ালেখা শেষে বড় ভাই বাবার ব্যবসায় নেমে গেলেন। আর আমার পড়ালেখা যখন শেষ প্রান্তে দেখলাম আমার ভাগ্যটাও এমনি হতে যাচ্ছে। হয় বাবার ব্যবসা না হয় ঘন্টার পর ঘন্টা কোনো এক ব্যাংক বা অফিসের চেয়ারে বসে লাইফের বাকি সময় বরবাদ করা। এসব চিন্তা ভাবনায় আমার গলা শুকিয়ে এলো। তারপর আরকি ..বাবার সাথে ঝগড়া বাধিয়ে শেষ পর্যন্ত হয়ে গেলাম স্ট্রিট ট্রাভেলার। বছরে মাঝেমধ্যেই বাড়ি আসা হতো। অনেক সময় নিজে থেকেই নিখুঁজ হয়ে যেতাম। আমার এমন জীবন বাবা দুচোক্ষে সহ্য করতে পারতেন না। এমনিও উনার সাথে আমার কখনো আদুরে সম্পর্ক ছিলই না। কারণ আমি সব সময় ছিলাম উনার প্ল্যানের উল্টা যাত্রী। এক সময় বাবা আমার সব খরচ বন্ধ করে দিলেন। এত্তো সুন্দর জীবন বিপাকে দেখে শেষ পর্যন্ত এক নিউসপেপারের ট্রাভেল বিভাগে কাজ নিলাম। যদিও বেতন তেমন আহামরি না তবুও আমার জন্য যথেষ্ট। ভাইয়াও আমাকে টাকা পাঠাতেন যদিও তা বাবার অজান্তে। সারা দেশে জায়গায় জায়গায় ঘোরাঘোরি, ফটো তোলা, আর্টিকেল লেখা এ যেন আমার স্বপ্নের বাস্তবায়ন। সারাজীবনের অর্জিত ফার্স্ট ক্লাস সার্টিফিকেট এইগুলার সামনে কিছুই মনে হলো না।
বাসায় আসার পর জানতে পারলাম ভাইয়ার বলি আর কেউ না আব্বুর ফ্রেন্ড কম পার্টনার কম ভাইয়ের বড় মেয়ের সাথে ঠিক করা হয়েছে। তার মানে অর্নি আপু। মানে নিশাতের বড় বোন। নিশাত? ও আর আমি প্রায় একই সাথে পড়ালেখা করেছি। পার্থক্য হচ্ছে ও শেষ পর্যন্ত ওর বাবা আর আমার বাবার কপি ক্যাট হওয়ার পথ বেছে নিয়েছে। আর কমন একটা জিনিস হচ্ছে নিশাত,ওর বাবা আর আমার বাবার চোখের বালি একজনই। আমি। বাসায় অলরেডি বিয়ে বিয়ে সাজ। বাবা দেখেও কথা বলেন নি। মা এসে ইচ্ছামত বকে আর লম্বা হওয়া দাড়ি আর চুলগুলা টেনে গেলেন। আর ভাইয়া? উনি তো দিবাসপ্নে বিভোর। রাতে সবার সাথে বসে খেলাম। বহুদিন পর মায়ের হাতের খাবার যখন তৃপ্তি সহকারে গলদকরণ করছি তখন আমার বাবা আর্মি অফিসারের মতো আমাকে আমার কর্তব্য বুঝিয়ে দিলেন আর আমি তা ঠিক মতো পালন করতে পারবো কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে নিজের কপালকে দুষছেন।
কয়েকদিনেই পুরো বাড়ি আত্মীয়স্বজন আর মেহমানে ভর্তি। বিয়ের আয়োজন ধুমধামের সাথে চলতে থাকলো। বিয়ের আগেরদিন রাতে ভাইয়ার হবু শ্বশুরবাড়িতে আমাকে কুরিয়ার ম্যান বানিয়ে পাঠানো হলো অনেক সামগ্রী দিয়ে। দরজা খুললেন দি ইনক্রেডিবেল হাল্ক অর্থাৎ বাবার বেয়াই সাহেব নিজেই। উনার শরীরের সাইজ দেখে অলওয়েজ চোখে পানি এসে পরতো। আর মনে একটাই প্রশ্ন জাগতো "কেমনে সম্ভব?"। উনার শখের একটা বাইক ছিল দাদার আমলের। উনি যখন ওই বাইকটায় চড়তেন তখন মনে হতো প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো ছেলে বাচ্চাদের তিন চাকার সাইকেলে আরোহন করেছেন। আর বাইকটা এমন সব আওয়াজ করতো যেন দম বন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে। উনি আমাকে দেখে যে খুব খুশি হয়েছেন তেমন কিছু বুঝা যাচ্ছিল না। দাঁড়িয়ে শুধু এমনি তাকিয়ে আছেন। আমাকে কি নিখোঁজ তরুণদের তালিকায় দেখেছেন কিনা ঐটার উত্তর খুঁজার চেষ্টা করছেন মনে হয়। পিছনে আন্টি সবাইকে তাড়া দিচ্ছিলেন আমাকে দরজায় দেখে ৩২০ ভোল্টের হাসি দিয়ে এগিয়ে আসলেন। অনেক সমাদর করে ভিতরে নিয়ে গেলেন। সোফায় বসিয়ে প্লেটে করে এত্তোগুলা মিষ্টি ধরিয়ে দিলেন। উনি কি জানেন না দুনিয়ার এই খাবারটাই আমি সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করি? আঙ্কেল আবার এসে সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলেন তারপর হেঁটে ভিতরে চলে গেলেন। আন্টিও কাজের তাড়া দেখিয়ে কোথায় চলে গেলেন। রুমে শুধু আমি, আমার হাতে কয়েকটা মিষ্টি, আর কিছুক্ষন পর পর মেরাথনে অংশ নেয়া কিছু বাচ্চা মানুষের দৌড়াদৌড়ি। ছাদ থেকে গান বাজনার আওয়াজ আসছে সাথে অনেক হই হুল্লোড়। তাই কৌতহল মিটাতে ঐখানেই হাটা ধরলাম। এখানে বসে মিষ্টি বাসি করার চেয়ে ঐটাই ভালো ঠেকলো। উপরে উঠে দেখলাম ছাদে সেই লেভেলের আয়োজন। দেখেই হিংসা লাগলো। বাবা কখনোই এগুলা এলাও করেন না। সবাই জটলা পাকিয়ে কি যেন দেখছে। বেশিরভাগই তো মেয়ে তাই চিন্তা আসলো আমার কি নেমে যাওয়া উচিত কিনা। তখনই অর্নি আপু অর্থাৎ আমার হবু ভাবি কোথা থেকে উড়ে এসে খপ করে আমার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেলেন একদম জটলার মাঝে। সবাই যেন আরো দ্বিগুণ চিৎকার দিয়ে উঠলো। আমি বুঝতে পারলাম এখানে এসে কি ভুলটাই না করেছি।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×