
নাস্তার টেবিলে আমি যখন সবে মাত্র চায়ের কাপে চুমুক দিলাম ততখনে দেখি নিশাত নাস্তা খাওয়ার রেসে নেমেছে। আমার চা শেষ করে সাধের ফ্রেঞ্চ বানটায় একটা বাইট বসালাম কিনা পিছনে ফিরে দেখি উনি যাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ রেডি। অগত্যা সব ফেলে আমিও রেডি হয়ে ওর সঙ্গে বের হয়ে পড়লাম। গাড়ি ভাইয়া-ভাবি নিয়ে গেছে রিকশায় করে যেতে হবে। একটা রিকশা ঠিক করে উঠে বসলাম। নিশাত প্রথমে কিছুটা ইতস্ত করলেও জলদি উঠে বসলো। "আমি আগে বাড়ি যাবো" বলেই অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। অনেকটা কাছাকাছি বসে আছি। বাতাসে ওর চুল গুলো উড়ে এসে আমার মুখের উপর পড়ছে। ঘ্রাণ নেয়ার চেষ্টা করলাম। ও এখনো অন্যদিকে তাকিয়ে আছে আর চুল গুলো বারবার কানে গুজে দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ঘুরে ফিরে চুলগুলা আমার সাথেই বন্ধুত্ব করতে ফিরে আসছে। বাড়ির গেইটে প্রায় ৩০ মিনিট হলো দাঁড়িয়ে আছি। প্রচন্ড মাথা গরম হওয়ার জোগাড়। রাগ কমাতে দেয়ালে বক্সিং প্র্যাক্টিস করার ভান করলাম। তখন নজরে এলো উনি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসছেন। ড্রেস চেঞ্জ করে একটা হলদে থ্রী পিস পড়েছেন। সামনে এসে চুল গুলো একপাশে নিয়ে বললো "চলেন"।
হসপিটালে আন্টি আঙ্কেলের সঙ্গ কোনো ভাবেই ছাড়বেন না। সিদ্ধান্ত নেয়া হলো এই কয়েকটা দিন নিশাত আমাদের বাসায় থাকবে। আমি ভাবলাম ও হয়তো ইনসিস্ট করবে কিন্তু আমাকে অবাক করে ও এককথায় রাজি। নিশাত ভাইয়া আর ভাবীর সাথে বাসায় গিয়েছে নিজের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে আসতে। আমি আর মা আমাদের বাসায় আসলাম।
মা নিশাতকে কোনোভাবেই গেস্ট রুমে থাকতে দিতে রাজি নন। নিশাতের ঠাই হলো আমার রুমে আর আমার ঠাঁই হলো গেস্ট রুমে। কতদিন পরে আসা ছেলের জন্য মায়ের এই পেয়ার দেখে চোখে জল আসলো। দেখতে দেখতে নিশাত হয়ে গেলো মায়ের সবচেয়ে আদরের। আর আমি তাদের আদেশ পালন করার দৈত্য। নিশাতকে অফিসে ড্রপ করা, নিয়ে আসা আবার আঙ্কেলকে ভিজিট করতে নিয়ে যাওয়া, প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র এনে দেয়া, এটা সেটা করা আমার দৈনন্দিন রুটিনে এড হলো। কয়েকদিন পর নিশাতও আমাকে হুকুম দেয়া শুরু করলো। এমন ভাবে জোর খাটানো শুরু করলো যেন আমি ওর পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট আর ওর কাজ করে দেয়া আমার মৌলিক দায়িত্ব। অলরেডি বাবা মা সবার চোখের মণি হয়ে উঠায় কেউ বাধা দিতো না। আমার পক্ষে ছিলেন শুধু ভাবি। অনেকসময় আচ্ছা মতো বকে দিতেন ছোট বোনকে আমার উপর এই নির্যাতনের জন্য। পরে দেখা গেলো ২ জনেই হেসে কুটিকুটি।একদিন আমার রুমে গিয়ে দেখি নিশাতের হাতে আমার ল্যাপটপ ও ক্যামেরা।এই মেয়ে এগুলা কোথায় খুঁজে পেলো?! দেখি ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড ক্র্যাক করে আমার তুলা ছবিগুলাও দেখে ফেলছে। পাসওয়ার্ড তো ছিল ওর নামে তার মানে ও কি জেনে গেছে? শত প্রশ্ন যখন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তখন ও আমাকে দেখে বললো "বেশ ইন্টারেস্টিং লাইফ তো আপনার"।
গতকাল একটা চমৎকার ঘটনা ঘটে গেলো। আঙ্কেল হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ হবেন। আমি যখন সবার সাথে উনাকে পিক করতে গেলাম তখন উনি সবচেয়ে প্রথম আমাকেই দেখার ইচ্ছা পোষণ করলেন। ছোট কদমে উনার সামনে এগিয়ে যেতে উনি মাথায় হাত রাখলেন। একটা কৃতজ্ঞতার হাসি আর জড়িয়ে ধরা। এতদিনে সবার অকৃতজ্ঞ আচরণ উনি নিমিষেই মিটিয়ে দিলেন। নিশাতের চোখে মুখে তখন তারা ফুটছে। নিশাত যখন বিদায় নিবে তখন মা কেঁদে দিলেন সাথে নিশাতও। নিয়মিত মায়ের সাথে দেখা করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিলেন। লাস্ট কবে মা আমি যাওয়ার সময় কেঁদেছিলেন তা হিসাব মিলাতে পারছি না। নিশাত আমার সামনে এসে হাসিমুখে বললো "আসি। ভালো থেকো"। ব্যাপারটা মাথায় প্রসেস করতে কিছু সময় লেগে গেল। নিশাত আমাকে তুমি করে বলেছে! কয়েকদিন পর ভাবি এসে আমাকে একটা টাস্ক দিয়ে বসলেন। আঙ্কেল আন্টি ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে গেছেন। ওনার আদরের বোনকে ওর এক ফ্রেন্ডের বাসা থেকে পিক করে আনতে হবে। রাতে নিৰ্দিষ্ট এডড্রেসে পৌঁছে গাড়ির হর্ন দিতেই ও জানালা দিয়ে তাকালো। গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ও যখন গেইট দিয়ে বের হবে তখন আরেক দফা ক্রাশ খেয়ে বসলাম। এক হাতে পার্স নিয়ে আরেক হাতে শাড়ী ধরে বের হয়ে আসলো। আমি তখনো ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। ও সামনে এসে মুচকি হেসে কাশি দিলো। ধ্যান ভাঙার পর এদিক সেদিক তাকিয়ে ভাব নেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। গাড়ির দরজা খুলে ধরলাম ওর জন্য।
এখানে ফোনের সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে না। ১ ঘন্টার উপরে হলো গাড়িটা পাঞ্চার হয়ে এমনি পথের উপর পরে আছে। এতো রাতে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকাটা সেফ মনে হলো না। তাই গাড়ির ভিতরে বসেই দরজা লক করে দিলাম। আশেপাশে কোনো গাড়ি বা মানুষের ছিটে ফোটাও নেই। গাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখলাম নিশাত ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করছে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে। হঠাৎ বৃষ্টি নামলো। গ্লাস গুলো তুলে দিচ্ছিলাম। ফিরে দেখি নিশাতের পাশের গ্লাসটা অর্ধেক উঠে আটকে গেছে আর ঐ ফাঁকে বৃষ্টির পানি ঢুকে নিশাতকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। জলদি ঝুঁকে ম্যানুয়ালি গ্লাসটা তুলে দিয়েই বেসামাল হয়ে পড়লাম। প্রায় নিশাতের উপর পড়তে যাবো কোনোমতে ধরে ফেললাম নিজেকে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




