somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় গল্প: "নতুন স্বপ্ন" পার্ট ৪

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নাস্তার টেবিলে আমি যখন সবে মাত্র চায়ের কাপে চুমুক দিলাম ততখনে দেখি নিশাত নাস্তা খাওয়ার রেসে নেমেছে। আমার চা শেষ করে সাধের ফ্রেঞ্চ বানটায় একটা বাইট বসালাম কিনা পিছনে ফিরে দেখি উনি যাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ রেডি। অগত্যা সব ফেলে আমিও রেডি হয়ে ওর সঙ্গে বের হয়ে পড়লাম। গাড়ি ভাইয়া-ভাবি নিয়ে গেছে রিকশায় করে যেতে হবে। একটা রিকশা ঠিক করে উঠে বসলাম। নিশাত প্রথমে কিছুটা ইতস্ত করলেও জলদি উঠে বসলো। "আমি আগে বাড়ি যাবো" বলেই অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। অনেকটা কাছাকাছি বসে আছি। বাতাসে ওর চুল গুলো উড়ে এসে আমার মুখের উপর পড়ছে। ঘ্রাণ নেয়ার চেষ্টা করলাম। ও এখনো অন্যদিকে তাকিয়ে আছে আর চুল গুলো বারবার কানে গুজে দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ঘুরে ফিরে চুলগুলা আমার সাথেই বন্ধুত্ব করতে ফিরে আসছে। বাড়ির গেইটে প্রায় ৩০ মিনিট হলো দাঁড়িয়ে আছি। প্রচন্ড মাথা গরম হওয়ার জোগাড়। রাগ কমাতে দেয়ালে বক্সিং প্র্যাক্টিস করার ভান করলাম। তখন নজরে এলো উনি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসছেন। ড্রেস চেঞ্জ করে একটা হলদে থ্রী পিস পড়েছেন। সামনে এসে চুল গুলো একপাশে নিয়ে বললো "চলেন"।
হসপিটালে আন্টি আঙ্কেলের সঙ্গ কোনো ভাবেই ছাড়বেন না। সিদ্ধান্ত নেয়া হলো এই কয়েকটা দিন নিশাত আমাদের বাসায় থাকবে। আমি ভাবলাম ও হয়তো ইনসিস্ট করবে কিন্তু আমাকে অবাক করে ও এককথায় রাজি। নিশাত ভাইয়া আর ভাবীর সাথে বাসায় গিয়েছে নিজের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে আসতে। আমি আর মা আমাদের বাসায় আসলাম।

মা নিশাতকে কোনোভাবেই গেস্ট রুমে থাকতে দিতে রাজি নন। নিশাতের ঠাই হলো আমার রুমে আর আমার ঠাঁই হলো গেস্ট রুমে। কতদিন পরে আসা ছেলের জন্য মায়ের এই পেয়ার দেখে চোখে জল আসলো। দেখতে দেখতে নিশাত হয়ে গেলো মায়ের সবচেয়ে আদরের। আর আমি তাদের আদেশ পালন করার দৈত্য। নিশাতকে অফিসে ড্রপ করা, নিয়ে আসা আবার আঙ্কেলকে ভিজিট করতে নিয়ে যাওয়া, প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র এনে দেয়া, এটা সেটা করা আমার দৈনন্দিন রুটিনে এড হলো। কয়েকদিন পর নিশাতও আমাকে হুকুম দেয়া শুরু করলো। এমন ভাবে জোর খাটানো শুরু করলো যেন আমি ওর পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট আর ওর কাজ করে দেয়া আমার মৌলিক দায়িত্ব। অলরেডি বাবা মা সবার চোখের মণি হয়ে উঠায় কেউ বাধা দিতো না। আমার পক্ষে ছিলেন শুধু ভাবি। অনেকসময় আচ্ছা মতো বকে দিতেন ছোট বোনকে আমার উপর এই নির্যাতনের জন্য। পরে দেখা গেলো ২ জনেই হেসে কুটিকুটি।একদিন আমার রুমে গিয়ে দেখি নিশাতের হাতে আমার ল্যাপটপ ও ক্যামেরা।এই মেয়ে এগুলা কোথায় খুঁজে পেলো?! দেখি ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড ক্র্যাক করে আমার তুলা ছবিগুলাও দেখে ফেলছে। পাসওয়ার্ড তো ছিল ওর নামে তার মানে ও কি জেনে গেছে? শত প্রশ্ন যখন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তখন ও আমাকে দেখে বললো "বেশ ইন্টারেস্টিং লাইফ তো আপনার"।
গতকাল একটা চমৎকার ঘটনা ঘটে গেলো। আঙ্কেল হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ হবেন। আমি যখন সবার সাথে উনাকে পিক করতে গেলাম তখন উনি সবচেয়ে প্রথম আমাকেই দেখার ইচ্ছা পোষণ করলেন। ছোট কদমে উনার সামনে এগিয়ে যেতে উনি মাথায় হাত রাখলেন। একটা কৃতজ্ঞতার হাসি আর জড়িয়ে ধরা। এতদিনে সবার অকৃতজ্ঞ আচরণ উনি নিমিষেই মিটিয়ে দিলেন। নিশাতের চোখে মুখে তখন তারা ফুটছে। নিশাত যখন বিদায় নিবে তখন মা কেঁদে দিলেন সাথে নিশাতও। নিয়মিত মায়ের সাথে দেখা করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিলেন। লাস্ট কবে মা আমি যাওয়ার সময় কেঁদেছিলেন তা হিসাব মিলাতে পারছি না। নিশাত আমার সামনে এসে হাসিমুখে বললো "আসি। ভালো থেকো"। ব্যাপারটা মাথায় প্রসেস করতে কিছু সময় লেগে গেল। নিশাত আমাকে তুমি করে বলেছে! কয়েকদিন পর ভাবি এসে আমাকে একটা টাস্ক দিয়ে বসলেন। আঙ্কেল আন্টি ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে গেছেন। ওনার আদরের বোনকে ওর এক ফ্রেন্ডের বাসা থেকে পিক করে আনতে হবে। রাতে নিৰ্দিষ্ট এডড্রেসে পৌঁছে গাড়ির হর্ন দিতেই ও জানালা দিয়ে তাকালো। গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ও যখন গেইট দিয়ে বের হবে তখন আরেক দফা ক্রাশ খেয়ে বসলাম। এক হাতে পার্স নিয়ে আরেক হাতে শাড়ী ধরে বের হয়ে আসলো। আমি তখনো ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। ও সামনে এসে মুচকি হেসে কাশি দিলো। ধ্যান ভাঙার পর এদিক সেদিক তাকিয়ে ভাব নেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। গাড়ির দরজা খুলে ধরলাম ওর জন্য।
এখানে ফোনের সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে না। ১ ঘন্টার উপরে হলো গাড়িটা পাঞ্চার হয়ে এমনি পথের উপর পরে আছে। এতো রাতে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকাটা সেফ মনে হলো না। তাই গাড়ির ভিতরে বসেই দরজা লক করে দিলাম। আশেপাশে কোনো গাড়ি বা মানুষের ছিটে ফোটাও নেই। গাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখলাম নিশাত ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করছে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে। হঠাৎ বৃষ্টি নামলো। গ্লাস গুলো তুলে দিচ্ছিলাম। ফিরে দেখি নিশাতের পাশের গ্লাসটা অর্ধেক উঠে আটকে গেছে আর ঐ ফাঁকে বৃষ্টির পানি ঢুকে নিশাতকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। জলদি ঝুঁকে ম্যানুয়ালি গ্লাসটা তুলে দিয়েই বেসামাল হয়ে পড়লাম। প্রায় নিশাতের উপর পড়তে যাবো কোনোমতে ধরে ফেললাম নিজেকে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×