somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপেষু, মুজিব বর্ষে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের সাত চাওয়া

১২ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনায় বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। সরকার যে সব ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে শিক্ষা তার অন্যতম, যার সূচনা করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে জাতির জনকের স্বপ্নের বাংলাদেশ এ পরিণত করার পথে আজ দ্রুত বেগে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের চোখে এক বিস্ময়। কিন্তু দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রের চেয়ে একটু পিছিয়ে আছে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীগণ। যদিও তারা মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে দেশে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছেন কয়েক যুগ ধরে। তাই কর্মক্ষেত্র হিসাবে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রকে অন্যান্য ক্ষেত্রের মত এগিয়ে নেওয়ার জন্য মুজিব বর্ষে বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকারের কাছে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারিগণের চাওয়াগুলো নিম্নে সরকারের বিবেচনার জন্য তুলে ধরা হলোঃ

১. বকেয়া টাইম-স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদানঃ
১৯৭৫ সালরে ১৪ মে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২/৫/৭৫ তারিখের স্মারক নং এঃ মঃ (বাঃ সেঃ)খ-২/৭০/৭৪৭ এর আদেশের মাধ্যমে দ্বিতীয় শ্রেণির বেতন স্কেলভুক্ত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক/ শিক্ষিকাদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদ মর্যাদা প্রদান করেছিলেন যা ১.৭.১৯৭৩ থেকে কার্যকর বলে সরকারি আদেশে উল্লেখ আছে । কিন্তু জাতির জনকের শাহাদৎ বরণের পর দ্বিতীয় শ্রেণির বেতন স্কেলভুক্ত হওয়া স্বত্বেও গেজেটেড মর্যাদা প্রদানের সেই আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি। সেই ঘটনার প্রায় ৩৮ বছর পর ২০১২ সালরে ১৫ মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি মাধ্যমকি বিদ্যালয়ের প্রায় ১০ হাজার ৫০০ সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকার বেতন স্কেল অপরিবর্তিত রেখে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদ মর্যাদা প্রদানের সেই আদেশ বাস্তবায়ন করেন। উল্লেখ্য ২০১২ সালে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড মর্যাদা প্রদানের পূর্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকাদের বেতনস্কেল যাচাইয়ের জন্য অর্থ মন্ত্রনালয়ে পত্র প্রেরণ করে। ২৯/০৬/২০১০ তারিখে উক্ত পত্রের জবাবে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায় যে, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকাদের পদ পূর্ব থেকেই দ্বিতীয় শ্রেণির বেতন স্কেলভূক্ত।
যোগদান থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির বেতন স্কেলভুক্ত ১৯৯৭, ১৯৯৯, ২০০১, ২০০২, ২০০৫ ও ২০০৬, ২০০৯, ২০১০, ২০১১ সালে নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকাগণ যোগদান থেকে চাকরিকাল গণনা করে ৪, ৮ ও ১২ বছর পূর্তিতে দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদায় সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেলের জন্য ২০১৩ ও ২০১৪ সালে আবেদন করেন। আবেদনকারী সহকারী শিক্ষক/ শিক্ষিকাদের সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেলের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এই পর্যন্ত মোট ৩ (তিন) বার ডিপিসি মিটিং হয়। প্রথম ডিপিসি সভার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রনালয়ের কাছে আবেদনকারী সহকারী শিক্ষক/ শিক্ষিকাদের টাইমস্কেল ও সিলেকশনগ্রেড প্রদানের বিষয়ে মতামত চায়। অর্থ মন্ত্রণালয় ১৯/০৬/২০১৭ তারিখে প্রদত্ত পত্রে মতামত প্রদান করে। মতামতে অর্থ মন্ত্রণালয় জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ এর ৭(২) ও ৭(৯) ধারা মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে উল্লেখ করে।
কিন্তু তারপরও কোন সমাধান না আসায় ভূক্তভোগী শিক্ষক/শিক্ষিকাগণ বকেয়া সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল প্রাপ্তির জন্য ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় ও জটিলতা নিরসনে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্টে তিনটি রীট পিটিশন দাখিল করেন (নং ৩৫৪৫/২০১৮, ৩৮৪৮/২০১৮ ও ৩৯২৫/২০১৮)। গত ০২/০৫/২০১৯ তারিখ উক্ত রীট পিটিশনগুলোর রায় প্রদান করা হয়। হাই কোর্টের রায়েও জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ এর ৭(২) ও ৭(৯) ধারা মোতাবেক পিটিশনারদের সিলেকশনগ্রেড ও টাইমস্কেল প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেন। ২৪/০৮/২০১৯ তারিখে উক্ত রীট পিটিশিনগুলোর হাই কোর্টের রায়ের সার্টিফাইড কপি মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। রায়ের কপি হাতে পৌছানোর ৩ (তিন) মাসের মধ্যে রায় বাস্তবায়নে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও অদ্যাবদি এই রায় বাস্তবায়নের কোন ব্যবস্থা দৃশ্যমান হয়নি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২৯/০৬/২০১০ ও ১৯/০৬/২০১৭ তারিখের মতামত এবং রীট পিটিশন নং ৩৫৪৫/২০১৮, ৩৮৪৮/২০১৮ ও ৩৯২৫/২০১৮ এর ০২/০৫/২০১৯ তারিখে প্রদত্ত রায়ের আলোকে সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকাদের বকেয়া (২০১৫ সালের পে স্কেল ঘোষণার পূর্বের) টাইমস্কেল ও সিলেকশনগ্রেড মঞ্জুরী আদেশ প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এইটা হবে ভুক্তভোগী শিক্ষক/শিক্ষিকাগণের জন্য মুজিব বর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার।



২. শুন্য পদগুলোতে দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা ও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রকল্পগুলোতে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক-কর্মকর্তা পদায়ন করাঃ
সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে পদোন্নতির সূযোগ খুবই সীমিত। মাত্র ৩-৪% শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারি পদোন্নপ্তির সূযোগ পায়। বাকী ৯৬-৯৭% শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারি ৩০-৩৫ বছর একই পদে চাকরি করে অবসরে যায়। এতদসত্ত্বেও বর্তমানে এই ক্ষেত্রে বিপুলসংখ্যক পদোন্নতিযোগ্য পদ দীর্ঘদিন যাবত শুন্য আছে। ৫৩০২ টি সিনিয়র শিক্ষক, 398টি সহকারী প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষিকা ও সহকারী জিলা শিক্ষা অফিসার, 264টি প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষিকা ও জিলা শিক্ষা অফিসার, মোট ১৮ টি বিদ্যালয় পরিদর্শক পদের মধ্যে ১৮ টি, মোট ১০ টি সহকারী পরিচালক উপপরিচালকের পদের ১০ টি পদই দীর্ঘদিন যাবত শূণ্য আছে। মুজিববর্ষে সিনিয়র শিক্ষক পদ সহ সকল শূন্য পদে দ্রুত পদোন্নতি চায় এই ক্ষেত্রে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তাগণ। বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যতগুলো প্রকল্প চালু আছে তার প্রায় শতভাগই মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়নের জন্য। কিন্তু মাধ্যমিকের কোন প্রকল্পেই মাধ্যমিক স্তরে কাজ করার বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মাধ্যমিক স্তরের কোন কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয় না। শতভাগ প্রকল্পেই কলেজ শিক্ষকগণ কর্মরত। মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়নের জন্য গৃহীত সকল প্রকল্পে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক-কর্মকর্তাগণের পদায়ন মুজিব বর্ষে শুরু হবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।


৩. এন্ট্রি পদ নবম গ্রেড ধরে যৌক্তিক পদসোপান সৃষ্টিঃ
স্বাধীনতার সূচনা লঘ্নে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, পিটিআই ইন্সট্রাকটর,সাব-রেজিষ্টার, থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের পদ ইত্যাদি পদগুলো ছিল জাতীয় বেতন স্কেলের সমগ্রেডের পদ অর্থাৎ জাতীয় বেতন স্কেলের ১০ম গ্রেডভূক্ত। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের পদ ছাড়া বাকী পদগুলো বর্তামানে জাতীয় বেতন স্কেলের ৯ম গ্রেড ভূক্ত। অথচ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের পদে বর্তমানে বিসিএস উত্তীর্ণ প্রার্থীগণ নিয়োগ পেয়ে থাকেন। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের পদটি ৯ম গ্রেডভূক্ত করা সময়ের দাবী।

অন্যদিকে জাতীয় বেতন স্কেল হতে পূর্বের ন্যায় টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ব্যবস্থা বাতিল হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন হল সরকারি চাকরিতে পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আধাসরকারি পত্রসংখ্যা ০৪.০০.০০০০.৭১২.০৬.০১০.১৫.১৯ তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০১৬ এর ৪৬ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৫/১২/২০১৫ তারিখের আদেশে টাইমস্কেল-সিলেকশন গ্রেড বিলুপ্ত হওয়ার কারণে কর্মচারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে জন্য নতুন পদ সৃষ্টি, পদের মানন্নোয়ন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্গানোগ্রাম সংশোধন করে পদন্নোতি যোগ্য পদ সৃষ্টি করার নির্দেশনা প্রদান করেন ।
অতএব, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের এন্ট্রি পদ নবম গ্রেড ধরে যৌক্তিক পদসোপান সৃষ্টি করা হবে মুজিব বর্ষে অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপহার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আধাসরকারি পত্রের দিক নির্দেশনা মতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পদোন্নতিযোগ্য নতুন পদ সৃষ্টি করে এবং বেতন স্কেল আপগ্রেড করে পদের মানোন্নয়ন করার জন্য উপরে উল্লেখিত প্রস্তাব বাস্তবায়ন করলে শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষাবান্ধব সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটবে।

৪. স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরঃ
জাতীয় শিক্ষা নীতি, ২০১০ এর ২৭ এর (৬) ধারা, প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সুপারিশ ও মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর অনুশাসন থাকার পরও মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য কোন আলাদা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নাই। বেনব্যাইজের তথ্য মতে বর্তমানে দেশে ২০,৪৬৫ টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ মাত্র ৬,৮৬৫টি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি স্বতন্ত্র কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাত্র ৯,২৯৪ টি মাদ্রাসার জন্য বাংলাদেশ মাদা্রসা শিক্ষা অধিদপ্তর নামে স্বতন্ত্র অধিদপ্তর রয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে মাধ্যমিক স্তর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর। মাধ্যমিকের জন্য একটি আলাদা অধিদপ্তর এখন সময়ের দাবি। যা হবে জাতির জনকের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মকর্তা- কর্মচারীর জন্য এক বিরাট উপহার এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার প্রধান হাতিয়ার।



৫. নতুন আত্তীকরণ বিধি প্রণয়ন করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় আত্তীকরণঃ
বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করারা জন্য প্রতি উপজেলায় কমপক্ষে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ চলছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হল এই ক্ষেত্রে জাতীয়করণের কোন বিধি নাই। ১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকারের মার্শাল ল এর মাধ্যমে জারি করা বিধি অনুসারে জাতীয়করণ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখানে আরো দুংখ ও পরিতাপের বিষয় হলো যে ১৯৮৩ সালের বিধিটি যে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগ ও আপীল বিভাগ প্রদত্ত সংবিধানের ৭ম সংশোধনী বাতিল আদেশ দ্বারা বাতিল হয়ে গেছে তা জানেই না কর্তৃপক্ষ। তাই মাধ্যমিক স্তরের কর্মরত সকলের প্রাণের দাবি জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর মতামতের আলোকে বর্তমানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে নতুন আত্তীকরণ বিধি তৈরী করা।



6. সাপ্তাহিক ছুটি ২ (দুই) দিন করে নন-ভেকেশনের সুবিধা প্রদানঃ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বলা হয় ভ্যাকেশনাল ইনস্টিটিউট। ভ্যাকেশনাল ইনস্টিটিউট হল সেই সব প্রতিষ্ঠান যাদের ভ্যাকেশন বা ছুটি বেশি । বিজ্ঞানী , শিক্ষাবিদ, শিশু বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, শিক্ষা মনোবিজ্ঞানীগন বাড়ন্ত শিশু, কিশোর তরুনদের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাকেশনাল ইনস্টিটিউটের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির গুরুত্ব অনেক বেশি। বাড়ন্ত বয়সের শিশু, কিশোর-কিশোরী ও তরুণ- তরুণীদের মানসিক ও শারিরীক বিকাশ যাতে যথাযথ ও পরিপূর্ণ হয় তাই বিদ্যালয়ে উপস্থিতির পাশাপাশি তাদের জন্য পর্যাপ্ত ছুটি ব্যবস্থা করেছেন।
কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন চলছে উল্টা পথে, অদ্ভূত উটের পিঠে। বাংলাদেশে যেখানে সমস্ত সরকারি অফিস আদালতে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন, সেখানে কেবল ভ্যাকেশনাল ইনস্টিটিউট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি একদিন। অন্যান্য সকল ছুটি মিলিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০২০ সালে সর্বমোট ছুটি ৮৫ দিন। এর মধ্যে ৮ দিন তালিকায় ছুটি লেখা থাকলেও বাস্তবে শিক্ষক কর্মচারি ও শিক্ষার্থী সকলকে কর্মস্থলে আসতে হয় বাধ্যতা মূলকভাবে। আবার অধিকাংশ বড় ছুটি কেটে দেয় কখনো প্রধান শিক্ষক, কখনো শিক্ষা অধিদপ্তর। যেমন ২০১৯ সালের শীত কালীণ ছুটি ১৫ দিন, যার একদিনও ভোগ করতে পারেনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। অফিস-আদালতে বছরে ৫২ সপ্তাহে ৫২টি শনিবারে ৫২ দিন বেশি ছুটি ভোগ করে। এর সাথে আছে ২৪ দিন সাধারণ ছুটি। মোট হল ১২৮ দিন। তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কীভাবে ভ্যাকেশনাল প্রতিষ্ঠান হল? ভ্যাকেশনাল প্রতিষ্ঠান হিসাবে অতিরিক্ত ছুটিটা কোথায়? অথচ অন্যান্য অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যে গড় বেতনে অর্জিত ছুটি পায়, ভ্যাকেশনাল প্রতিষ্ঠান হওয়ায় শিক্ষক কর্মচারীরা তা পায়না। শিক্ষকগণ পায় অর্ধ গড় বেতনে অর্জিত ছুটি। আবার ভ্যাকেশনাল প্রতিষ্ঠান হিসাবে সুপ্রিম কোর্ট ছুটি পায় বছরে ১২০ দিন। সাথে রয়েছে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার। সরকারি চাকুরিজীবিগণ তিন বছর পরপর ১৫দিনের শ্রান্তি বিনোদন ছুটি ও ভাতা পেয়ে থাকেন। অথচ শিক্ষকগণ শুধু ভাতা পান। কিন্তু কোন ছুটি পান না। রমজান বা অন্য কোন ছুটির মধ্যে দেখানো হয়। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাকেশনাল মর্যাদা বাতিল করে নন- ভ্যাকেশনাল এর সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান এখন সময়ের দাবি। যা শিক্ষকগণ আশা করে এই মুজিব বর্ষে।

৭. বিসিএস (মাধ্যমিক শিক্ষা) নামে নতুন ক্যাডার সৃষ্টিঃ
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষিকা, সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার, প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষিকা, জেলা শিক্ষা অফিসার, বিদ্যালয় পরিদর্শক, বিদ্যালয় পরিদর্শিকা, সহকারী পরিচালক ও উপপরিচালকের পদগুলো ‘’The Bangladesh Civil Service (Reorganisation) Order, 1980’’ ’The Bangladesh Civil Service (Education: General education) Compositions and Cadre Rules, 1980’’ ’The Bangladesh Civil Service Recruitment Rules, 1981’ এর School and Inspections Brance এর অন্তর্গত বিসিএস ক্যাডাররভূক্ত পদ। ’The Bangladesh Civil Service (Education: General education) Compositions and Cadre Rules, 1980, ১৯৮০’’ অনুযায়ী বসিএিস (শক্ষিাঃ সাধারণ শক্ষিা) ক্যাডাররে তনিটি ভাগ রয়ছে। যথাঃ (১) Combined Brance, (২) College Brance ও (৩) School and Inspection Brance। সালে বৃটিশরা যখন ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস নামে সরকারি চাকরিতে এলিট শ্রেণি সৃষ্টি করে তখন থেকেই এই পদগুলো ক্যাডারভুক্ত পদ। ক্যাডারভুক্ত ছিল পাকিস্তান আমলেও সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস অব পাকিস্তান নামে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ১৯৭৫ সালের আদেশ বলে ১৯৮০ সালে প্রথম সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস অব পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস গঠন করা হয়। পূর্বের ধারাবাহিকতায় মাধ্যমিকের এই পদগুলোও বিসিএস (শিক্ষাঃ সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের অন্তর্গত হয়। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ ব্রাঞ্চের কর্মকর্তাগণ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ উক্ত পদগুলোতে নিয়োগ পাওয়া মাধ্যমিকের কর্মকর্তাগণকে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত হিসাবে মানতে নারাজ। যার ফলে উক্ত দুই প্রতিষ্ঠানের কোন আদেশে/প্রজ্ঞাপণে এইসব পদে কর্মরত কর্মকর্তাদের নামের পাশে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) কথাটি লেখেন না। তাই বিসিএস (শিক্ষাঃ সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার ভেঙ্গে School and Inspection Brance নিয়ে বিসিএস (মাধ্যমিক শিক্ষা) নামে নতুন ক্যাডার সৃষ্টি আজ সময়ের দাবি। যা এই মুজিব বর্ষেই পূরণ হবে- এই প্রত্যাশা আমাদের।
মোঃ আবদুস সালাম
সাংগঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (বাসমাশিস)

সহকারী শিক্ষক
নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
০১৭১৬-২৩৬৭৩৭

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×