প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলাটিও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। দুই দিন উভয় পক্ষের শুনানি শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. শামসুল হুদা ও বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ এ রায় দেন। এ নিয়ে গত আট দিনে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পাঁচটি দুর্নীতির মামলা হাইকোর্টের রায়ে বাতিল ও অবৈধ হলো।
হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিধিমালার অসংগতি দূর করতে তা সংশোধনেরও নির্দেশনা দিয়েছেন। গতকালের এই রায়ের অনুলিপি দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানোর কথাও বলেছেন আদালত।
শেখ হাসিনার আবেদনের পৌনে দুই বছর পর ১০ মার্চ শুনানি শুরু হয় এবং গতকাল শুনানি শেষে দুপুর সোয়া ১২টা থেকে মাঝে বিরতি দিয়ে বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত আদালত রায় দেন। রায়ে আদালত বলেন, �যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্রের কোথাও দণ্ডবিধির ৪০৯ ও দুদক আইনের ৫(২) ধারার অপরাধ উন্মোচিত হয়নি। ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলাটি বাতিল হওয়া উচিত। তাই মামলাটি বাতিল (কোয়াশ) করা হলো।�
শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী রফিক-উল হক, আবদুল মতিন খসরু, এ এফ এম মেজবাহউদ্দিন, শেখ ফজলে নূর তাপস, মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী প্রমুখ মামলা পরিচালনা করেন। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। সরকারপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন।
প্রতিক্রিয়া: ফজলে নূর প্রথম আলোকে বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল যাতে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য দুদককে বিধিমালা সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রায় মাইলফলক অভিহিত করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে হয়রানি করতে যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা করা হয়েছে, তা আবারও প্রমাণিত হলো।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, হাইকোর্টের রায় কমিশনকে অবহিত করা হবে। এ বিষয়ে কমিশন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। আদালত দুদকের বিধিমালা সম্পর্কে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। অনুলিপি পাওয়ার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
গতকালের রায়: অভিমতে দুদক সম্পর্কে আদালত বলেন, দুর্নীতি দমন ব্যুরো বিলুপ্ত হয়ে ২০০৪ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠিত হয়। কিন্তু ২০০৭ সাল পর্যন্ত এটি কাজ করতে পারেনি। ওই সময় চেয়ারম্যান ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। চেয়ারম্যানের সঙ্গে অপর সদস্যদের বোঝাপড়া না থাকায় ব্যুরো কাজ করতে পারেনি। যদিও তাঁরা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন নিয়েছেন, জনগণের অর্থ ধ্বংস করেছেন। ২০০৭ সাল থেকে দুদক কাজ করতে শুরু করে। ওই সময় বিধিমালাও প্রণীত হয়। কিন্তু সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ওই বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এবং তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে দুদককে প্রভাবিত করে মামলাটি করেছে।
আদালত আরও বলেন, বিচারের ক্ষেত্রে বিচারক অন্ধ। কিন্তু বোবা, বধির নন। তাঁরা সমাজের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা ও চিন্তা করতে পারেন। কারণ তাঁরা সমাজেরই সদস্য। প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করতে এ মামলা করা হয়েছে। এজাহার দায়েরের অনুমোদন না থাকার পরও বিচারিক আদালত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে বেআইনি কাজ করছেন। অভিযোগ আমলে নেওয়া ছিল যান্ত্রিক। অভিযোগপত্র দাখিলের ক্ষেত্রে নেওয়া অনুমোদনও যথাযথ নয়, এটিও যান্ত্রিক। যথাযথভাবে অনুমোদন না দেওয়ায় মামলার ভিত্তি নেই। মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্রে প্রতীয়মান হয়, শেখ হাসিনা এক পয়সাও আত্মসাত্ করেননি।
আট দিনে পাঁচ মামলা বাতিল: বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বিদেশি প্রতিষ্ঠান নাইকোকে অবৈধভাবে গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ এনে শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলার দায় থেকে অব্যাহতির জন্য শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে হাইকোর্টে বাতিল আবেদন করলে ৭ জুলাই হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন। এই রুলের ওপর শুনানি শেষে গতকাল আদালত মামলাটি বাতিল ঘোষণা করেন।
গত ৪ মার্চ বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি বোরহানউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ নভোথিয়েটার প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা পৃথক তিনটি মামলা অবৈধ ঘোষণা করেন। ৯ মার্চ একই আদালত জোট আমলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মিগ-২৯ দুর্নীতির মামলা বাতিল করেন।
শুনানির অপেক্ষায়: তত্ত্বাবধায়ক ও জোট সরকারের আমলে করা আরও চারটি মামলা শুনানির জন্য রয়েছে। এগুলো হলো ভাসমান বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপন, ফ্রিগেট জাহাজ ক্রয়, বেপজায় পরামর্শক নিয়োগ ও মেঘনাঘাট বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনে দুর্নীতি।
জানা যায়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মোট মামলা ১৬টি। পাঁচটি মামলা উচ্চ আদালতে বাতিল হলো। চাঁদাবাজির অভিযোগে করা তিনটি মামলাসহ চারটি মামলা বাতিল বা প্রত্যাহার হয়েছে। অপর মামলাগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




