রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেনের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সারা দেশে শিবির নির্মূলের ঘোষণা দিয়ে গণগ্রেফতার করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত রাজশাহী ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে অসংখ্য শিবিরকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেককে রিমান্ডে নেয়া ও জেলে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ডের নামে স্বীকারোক্তি আদায় করতে ছাত্রশিবির কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালানোর খবর সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। এসব ছাত্রকে বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এমনকি পরীক্ষার হল থেকেও গ্রেফতার করার খবর জানা যায়। মেসগুলো থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। রাতে ঘুম থেকে তুলেও গ্রেফতার করা হয়েছে অনেককে। কোনো কোনো মন্ত্রীর শিবির নির্মূলের ঘোষণা এবং গণগ্রেফতারের মাধ্যমে সারা দেশে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে। এর ফলে বিপুলসংখ্যক ছাত্রের স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আমরা সামগ্রিক ঘটনায় বিস্মিত না হয়ে পারি না। পুলিশ একতরফাভাবে একটি ইসলামী ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধাচরণ করছে। অতীতে আমরা দেখেছি, ছাত্রলীগ এর শত গুণ বেশি দোষ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অথচ শিবির নির্মূলের নামে সারা দেশে যা করা হয়েছে এবং হচ্ছে, তার সাথে কোনো কিছুর তুলনা হয় না। নিরীহ ছাত্রদের দোষী সাব্যস্ত করার নামে যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, তাতে আইজিপি এবং পুলিশ কর্মকর্তারা কিভাবে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করবেন, যখন সময় আসবে? তাদের বিবেকে কি দংশন করে না? তারা তো অন্যায়ভাবে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে শিবির নির্মূলের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বদলির আতঙ্ক কিংবা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভীতিই কি তাদের কাছে বড়? আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা এবং নৈতিক ও পেশাগত দায়িত্ব কি তাদের কাছে কোনো ব্যাপারই না?
আমরা শিবিরকর্মী ধরপাকড়ের নামে গ্রেফতারকৃত কর্মীদের নিয়ে টিভি ক্যামেরার সামনে হাজির করানোর ছবিও দেখেছি। তাদেরকে দিয়ে বক্তব্য প্রচার করানো হয়। ফারুক হোসেন হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অভিযোগে কয়েক দিন আগে ইকরাম হোসেন নামে একজনকে গ্রেফতার করে টিভি’র সামনে হাজির করা হয়। আমরা তাতে দেখেছি কিভাবে স্বীকারোক্তি নেয়া হচ্ছে। ইকরাম হোসেনকে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড় করানো হয়েছে। আর তার পেছনে অস্ত্রসজ্জিত র্যাব দাঁড়িয়ে আছে। এ অবস্খায় তাকে কথা বলতে দেখা যায় টিভি’র পর্দায়। এটা কি সম্পূর্ণ বেআইনি ও বিধিবহির্ভূত নয়? ইতোমধ্যে দেশের নয়জন প্রধান আইনবিদ এটাকে অবৈধ বলেছেন। একইভাবে আমরা দেখতে পাই, বিভিন্ন প্রাইভেট হোস্টেল ও পরীক্ষার হল থেকে যাদের ধরা হয়েছে, তাদের নামে কোথাও কোনো সুনির্দিষ্ট মামলা নেই। তাহলে পুলিশ যে তাদের বেআইনিভাবে ধরল, তা কী করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
আমরা এই অভিযানে আরেকটি বিশেষ বিষয় লক্ষ করছি। আমরা দেখতে পাই, যেকোনো ইসলামি বইকেই কথিত জিহাদি বই হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। বিভিন্ন মেস ও হোস্টেল থেকে পাওয়া যেকোনো ইসলামি বইকেই জিহাদি বই বলে প্রচার করা হচ্ছে। এটা পাশ্চাত্য এজেন্সিগুলোর ইসলামফোবিয়া বা ইসলাম আতঙ্কে ব্যবহৃত একটি বিশেষ শব্দ। এটা আসলে এক ধরনের অজ্ঞতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। সব বই, যেগুলো নিষিদ্ধ নয়, বৈধ বলে গণ্য। তাই সবাই তা রাখতে পারে। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এসব নির্যাতন ও অহেতুক গ্রেফতার বìধ করার আহ্বান জানাই। সেই সাথে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও কলেজের প্রিন্সিপালের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন তাদের ছাত্রদের নিরাপত্তার ব্যবস্খা করেন। তাদের কোনো প্রকার হয়রানি যাতে না হয় সে দিকে যেন খেয়াল রাখেন। তারা এসব বন্ধের পদক্ষেপ নেবেন আশা করি। সেই সাথে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান রইল, তারা যেন মানবাধিকারের বিষয়ে আরো অধিক সক্রিয় এবং জুলুম-নির্যাতন বন্ধে আরো সোচ্চার হয়।
Click This Link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




