somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পবিত্র রমযান সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিসঃ

২২ শে জুলাই, ২০১২ সকাল ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রামাযান মাসের আগমণ ঘটলে অধিকহারে আল্লাহর প্রশংসা করি, কেননা আল্লাহর অনুগ্রহসমূহের মাঝে এটিও একটি বড় অনুগ্রহ যে, তিনি রামাযানকে আমাদের মাঝে পৌছিয়ে দিয়েছেন যার মাধ্যমে আমাদের জীবনের পাপ রাশিগুলো মুছিয়ে নেয়ার সুযোগ গ্রহণ করতে পারি। কেননা অনেক মানুষ আছে যাদের ভাগ্যে এ রামাযান মাস আর ফিরে আসেনি রামাযান আগমণের পূর্বেই বিদায় গ্রহণ করেছে।
আসুন পবিত্র রমযান সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস জেনে রাখি এবং তা সবার সাথে শেয়ার করি এবং আমাদের বাস্তব জীবনে তা যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত করিঃ
=============================================
● রামাযান হলো সেই মাস যে মাসে কুরআন নাযিল হয়েছিল। মানবজাতির জন্য হিদায়াত ও সুস্পষ্ট পথ নির্দেশক এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য নির্ণয়কারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারাই এ মাস পাবে তারা যেন অবশ্যই সিয়াম পালন করে। (সূরা বাকারাহ, আয়াতঃ ১৮৫)
● আবূ উমামাহ (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ- একদা আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, একটি সম্প্রদায় উল্টোভাবে ঝুলছে। তাদের গালটি ফাড়া। তাথেকে রক্ত ঝরছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? বলা হল এরা তারা, রমযান মাসে বিনা ওযরে যারা সিয়াম রাখে না। [সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, ইবনে হিব্বান]
● যে ব্যক্তি শরীয়তী ওযর ছাড়া এ মাসের একটি রোযাও ছেড়ে দিবে সে যদি সারা জীবনেও সিয়াম পালন করে তবুও তার পাপের খেসারত হবে না। [বুখারি শরীফ]
● নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে মিথ্যা বলা ও অজ্ঞতামূলক কর্ম পরিত্যাগ করল না অথচ খানা-পিনা পরিহার করে রোযা রাখল এধরণের রোযা আল্লাহর নিটক মূল্যহীন। (বুখারী শরীফ)
● মাহে রমজানের দিন-রাতগুলো আমাদের আমলের গুদামঘর, আমাদের আমলের সঞ্চয়-ব্যাংক যা কিয়ামতের ময়দানে হাজির হবে আমাদের সঞ্চিত আমলের পুঙ্খানুপুঙ্খ রেকর্ড নিয়ে। আর সেদিন রাব্বুল আলামীন ডেকে বলবেনঃ ‘হে আমার বান্দারা! এগুলো তো তোমাদের আমল, যা আমি তোমাদের জন্য হিসাব করছি। অতএব যে ভালো পাবে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে, আর যে অন্যরকম পাবে সে যেন নিজকে ছাড়া অন্য কাউকে দোষারোপ না করে’ (মুসলিম)।
● রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যার নাম হলো রাইয়্যান। কিয়ামতের দিন ঐ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে কেবলমাত্র সিয়াম পালনকারী ব্যক্তিরা। ঐ দরজা দিয়ে সিয়াম পালনকারী ব্যতীত আর কেউই প্রবেশ করতে পারবে না। বলা হবে সিয়াম পালনকারীগণ কোথায়? তখন তারা সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন, তারা ব্যতীত ঐ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। যখন তারা প্রবেশ করা সমাপ্ত হবে তখন সেই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে আর কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)
● রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: এ মাসের সম্মানার্থে এবং রোযাদারদের সম্মানে আল্লাহ্‌ তা’আলা জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেন এবং জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেন।
● রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: রোযা জাহান্নাম হতে ঢাল স্বরূপ। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন রোযা রাখবে তখন সে যেন বাড়াবাড়ি না করে। যদি কোন মানুষ তার উপর বাড়িবাড়ি করে বা চড়াও হয়, তবুও সে তাকে গালিগালাজ করবে না। বরং সে বলবে, ‘আমি রোযাদার।’
● রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: “কিয়ামত দিবসে সিয়াম ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনের বেলায় খানা-পিনা ও প্রবৃত্তির কাজ থেকে বিরত রেখেছিলাম। তাই তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবূল কর। কুরআন বলবেঃ আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছিলাম (অর্থাৎ- সে রাত জেগে আমাকে পাঠ করেছে) তাই তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবূল কর। তখন তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।” (মুসনাদে আহমদ ও মুসতাদরাক হাকিম)
● মহানবী (সা) ইরশাদ করেছেন,’রোজাদারের জন্য দুটি খুশি একটি হলো তার ইফতারের সময়, আর অপরটি হলো আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।(বুখারী ও মুসলিম)
● রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযানের সিয়াম পালন করে তার পূর্বকৃত সমস্ত পাপ মোচন করা হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় লায়লাতুল কদরের রাতে কিয়াম করে তারও পূর্বকৃত সকর গুনাহ মোচন করা হয়। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
● নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ আদম সন্তাদের প্রতিটি আমল তার জন্য সিয়াম ব্যতীত আর সিয়াম হলো একমাত্র আমার জন্য অতএব আমিই তার প্রতিদান দান করবো। (বুখারী ও মুসলিম)
● নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যত্র বলেনঃ রোজা ঢাল স্বরূপ। সুতরাং রোজাদার অশ্লীল কথা বলবেনা এবং মূর্খের ন্যায় আচরণ করবেনা। কেউ যদি তার সাথে ঝগড়া করে অথবা গালি দেয় সে যেন বলে আমি রোজাদার। এ কথাটি দু’বা বলবে। ঐ সত্বার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট কস্তরীর সুগন্ধি থেকেও উত্তম। আর নেক কাজের পুরস্কার দশগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেয়া হয়ে থাকে। (বুখারী শরীফ)
● হজরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যারা পরিপূর্ণভাবে রোজা পালন করে তারা রমজান শেষে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো পূতঃপবিত্র হয়ে যায়। এজন্য অনাদিকাল থেকে আল্লাহপাকের হুকুমে খোদাভীরুরা রোজা পালন করে আসছেন। দয়াপরবশ হয়ে রাব্বুল আলামিন উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য রমজানের ত্রিশ দিন রোজা পালন ফরজ করেছেন, যাতে তারা আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ পান।
হাদিস শরীফে এসেছে, যে ব্যাক্তি রমজান মাস পেলো অথচ নিজের গোনাহ মাফ করাতে পারলো না, সেই ব্যাক্তি ধ্বংস হোক।
● আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, অপদস্থ হোক সে ব্যাক্তি, যার সম্মুখে আমার প্রসংগ উত্থাপিত হল অথচ সে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করল না। অপদস্থ হোক সে ব্যাক্তি, যার জন্য রমযান মাস এলো এবং তার জন্য মাগফিরাতের ফয়সালা না হতেই তা চলেও গেলো। অপদস্থ হোক সে ব্যাক্তি, যার পিতামাতা উভয়কে অথবা যে কোন একজনকে তাদের বার্ধ্যকের অবস্থায় পেলো অথচ সে তাদের খিদমত ও সন্তুষ্টির মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন করতে পারলো না। [তিরমিযী] অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, জিবরীল আমীন (আঃ) রাসুল (সাঃ) ঐ বদ দু’আতে আমীন! আমীন! বলেছিলেন। [ইবনে খযাইমাহ]
আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের মাহে রমজানের যথাযথ মর্যাদা আদায় করার মাধ্যমে আমাদের গুনাহ মাফ করার তৌফিক দান করেন। আমিন...।
......................................................
Posted by: মোঃ সেলিম হোসেন
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×