somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একুশ মানে মাথা নত না করা : শুভ জন্মদিন প্রথম আলো

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখনকার সময়ের কথা। পত্রিকা পড়ার ঝোকটা ভালোমতই মাথায় ঢুকেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ হাতে নিয়ে মানুষ ওয়াশরুমে যায়, আর আমি চলে যেতাম পত্রিকাস্ট্যান্ডে। বাবা মা দুজনেই খুব বকতো। পত্রিকা পড়া ভালো কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠেই পড়াশুনা রেখে পত্রিকা পড়াটা ভালো না। আম্মা বেশি বকতো- "তোর খালি পড়ায় ফাঁকি দেয়ার ধান্দা, কি আছে এ পত্রিকাতে!" মনে মনে বলি-কি নেই এ পত্রিকাতে? এক কান দিয়ে বকা ঢুকতো আরেক কান দিয়ে বকা বের হয়ে যেত। এভাবেই দিন শুরু হতো প্রথম আলো দিয়ে।

ঠিক কোন বয়সে মনে নেই, তবে খুব ছোট বেলায় বাংলাবাজার পত্রিকা নামে একটা দৈনিক বের হতো। তখন থেকেই পত্রিকা পড়ার অভ্যাসটা শুরু। ইত্তেফাক, জনকন্ঠ আর ভোরের কাগজ পত্রিকার নামগুলোর কথা মনে পড়ছে। ইত্তেফাকটাকে মনে হতো বুড়োদের পত্রিকা। তারপর যখন থেকে প্রথম আলো নিয়মিত পড়া শুরু করলাম, তখন মনে হলো এটি আমার পত্রিকা। সেই যে ধরেছিলাম- এখনো ধরে আছি।

ঝকঝকে লিখা ও ছবি, চমৎকার উপস্থাপনার কারনে তখন থেকে এখন প্রথম আলোই সেরা। পড়াশুনার পাতাটায় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য লিখা ছাপা হতো। আমি খুব মনযোগ দিয়ে পড়তাম, কেটে কেটে রাখতাম। আমার বদ্ধমূল বিশ্বাস ছিল এগুলো থেকেই প্রশ্ন আসবে। সিনেমা বানানোর স্বপ্নটা তখন মাত্র শৈশবে পা দিয়েছে তাই বৃহস্পতিবারের আনন্দটা পড়তাম আর ভাবতাম- আমার সিনেমার নাম কবে এ পাতাটিতে আসবে। আলপিনটার কথা ভুলতে পারি না- হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরতো। ছোটবেলা প্রায় শেষের দিকে ছিল তাই গোল্লাছুটে অতো ইন্টারেস্ট ছিল না। সবচে বেশি ইন্টারেস্ট যেখানে, সেটা ছিল বন্ধুসভা। আমার প্রিয় বন্ধুসভা। তখন অতো ইন্টারনেটের ছড়াছড়ি ছিল না। বন্ধুসভার ফরম পাতায় প্রকাশিত হতো। সেটি পূরণ করে ডাকযোগে পাঠাতে হতো। আমিও পাঠালাম, সেই সপ্তাহে আমার নাম বন্ধুসভার পাতায় প্রকাশিত হলো। আনন্দের আর সীমা নাই।

স্কুল পেড়িয়ে কলেজ, কলেজ পেড়িয়ে কোচিং। বাসা ছেড়ে আমার নতুন জীবন- ঢাকা। তখনো আছি প্রথম আলোর সাথে। যা কিছু ভালো তার সাথে প্রথম আলো। শ্লোগানটি খুব পছন্দের ছিলো। আমার বাসা ছিল ইন্দিরা রোড, কোচিং ছিল ফার্মগেট। বসুন্ধরা সিটিতে কিংবা শাহবাগের টিএসসিতে যখন বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যেতাম তখন মুগ্ধ নয়নে সিএ ভবনের প্রথম আলো আর জাহাঙ্গীর টাওয়ারের একুশে ইটিভির লোগোর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। একবার বন্ধুরা মিলে ডিসিশন নিলাম প্রথম আলো অফিসে যাবো। কিন্তু কেন যাবো, কার কাছে যাবো সেটার ঠিক হলো না। যেই কথা সেই কাজ, নেমে পরলাম বাস থেকে। শক্ত সামর্থ এক দারোয়ান আমাদের লিফটের কোথায় চাপতে শিখিয়ে দিলেন। রিসিপশনে মিষ্টি কন্ঠের একটা আপু ছিল। একটু ভয় ভয় লাগছিল যদি ঘাড় ধরে বের করে দেয়। অবশ্য শেষ পর্যন্ত কিছু হয়নি। বন্ধুসভার কনফারেন্স রুমটাতে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো। কাউকেই চিনি না। তবু সবাই খুব ভাল ব্যবহার করেছিল। বড় কালো টিপ ও কালো রংএর ফতুয়া পড়া একটা শ্যাম বর্ণের আপু আমাদের ক্যান্ডি দিয়েছিলেন। অফিস থেকে বের হয়ে এটা নিয়ে আমরা খুব হাসাহাসি করেছিলাম।

দিন যায়, কতো স্মৃতি, কতো বন্ধু। একবুক কষ্ট নিয়ে ঢাকা ছাড়ি। ভর্তি হই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখনও ধরে আছি প্রথম আলো। প্রথম দিন থেকেই ভালো লাগে ক্যাম্পাসটা। ছোট কিন্তু সবুজ। নতুন বন্ধু নতুন সভা। নতুন বন্ধুসভা। নতুন নতুন ছেলেমেয়েরা আসলে সিনিয়ররা তাদের প্রচুর খাটায়। আমাকে আলাভোলা(!) পেয়ে বন্ধুসভার বড় ভাইরা একগাদা দায়িত্ব দিলেন। পোস্টার টানানো, ফরমগুলো ফটোকপি করে সবার মাঝে বিলি করা, পূরনের পর সংগ্রহ ইত্যাদি। দু'সপ্তাহ পরেই আমাদের সবার নাম নতুন করে "সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বন্ধু" কলামে আসলো। নতুন একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে হবে, সামনের টিলায় সবুজ ঘাসে একটা মিটিং করতে হবে। অনেক কাজ করেছি বন্ধুসভার জন্য। বন্ধুসভা থেকে একটা দেয়ালিকা বের হবে, রাত জেগে কতো মজা করে কাজটা করেছিলাম।

সময়ের সাথে পরিনত হচ্ছিলাম। আমার গাধা মার্কা খাটুনিতে(!) খুশি হয়ে কর্তৃপক্ষ সিকৃবির বন্ধুসভার দায়িত্ব আমার উপর দেয়। এর মধ্যে সাংবাদিকতায় যোগ দেই। প্রথম আলো অফিসের নজরে চলে আসি। বন্ধুপ্রতিম বড় ভাই সুমনকুমার দাশ আমাকে নিয়ে তখনি ফিচার করেন- স্বপ্নবাজ ফয়সাল! প্রথম আলোর প্রতি ভালোবাসা আরো পাকাপোক্ত হয়।

অসংখ্য অনুষ্ঠান করেছি প্রথম আলো ও বন্ধুসভার সাথে। এর মধ্যে জিপিএ পাঁচ সংবর্ধনা, বিভিন্ন দিবস উদযাপন, রবীন্দ্রনাথ, হাসনরাজা, আব্দুল করিম, কাজী নজরুল সবার সাথে যেন কানেক্ট করিয়ে দিচ্ছিল এ সংগঠনটি। সিলেটের সব সৃজনশীল মানুষের সাথে আমার পরিচয় হতে শুরু করল। আছার খেতে খেতে, হাঁটতে শিখে যাই আমি। নতুন উদ্যোমে সিকৃবি ক্যাম্পাসে শুরু হয় বন্ধুসভার পথচলা।

এর মধ্যে ঢাকা থেকে ডাক আসে। গ্রামীনফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উৎসব সফল করার জন্য সারা বাংলাদেশ থেকে ৩০ জন সবচেয়ে ভালো সংগঠকদের নির্বাচন করা হয়। আমিও একজন সৌভাগ্যবান। বাংলাদেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত ঘুরে বেড়িয়েছি। নতুন জায়গা, নতুন বন্ধুসভা, নতুন অভিজ্ঞতা। লিখে বোঝাতে পারবো না কতো ভাল কেটেছে সেই দিনগুলো। বেশিদিন থাকতে পারি নি। পড়াশোনার চাপে ক্যাম্পাসে ফিরতে হলো।

ক্যাম্পাসে ফিরেই আবারো জুনিয়রদের নিয়ে স্টার্ট দিলাম থেমে থাকা বন্ধুসভার গাড়িতে। কোন একটা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের কর্মসূচি ছিলো-সারাদিন ভালো কাজ। সারা বাংলাদেশের বন্ধুসভাগুলো একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাবার প্রতিযোগিতা। বন্ধুসভা আমাকে ভালোকাজ করতে শিখিয়েছে।

মাস্টার্সে থাকাকালীন অবস্থায় প্রথম আলো আবারও আমাকে নিয়ে তাদের জনপ্রিয় স্বপ্ননিয়ে পাতায় "কাকতাড়ুয়া খলিলুর" নামে আরেকটি ফিচার প্রকাশিত করে। কাজের মূল্যায়ন পেলে ভালো লাগে। এজন্য আমি প্রথম আলোর প্রতি কৃতজ্ঞ, কারন আমি সম্মান পেয়েছি।

প্রথম আলোর সথে জড়িত থাকার কারনে তিক্ত অভিজ্ঞতাও কম নয়। ধরুন কোন একদিন ক্যাম্পাসের বড় রুই কাতলার নামে ঢাকা অফিস থেকে তার দূর্নীতির খবর ছাপা হলো। শুরুতেই আমার উপর মানসিক টর্চার শুরু হতো। আমাকে হলুদ সাংবাদিক, ঘুষ খাওয়া সাংবাদিক, একচোখা ইত্যাদি গালিগুলো শুনতে হয়েছে। আবার ছাত্রলীগের কোন ভাল খবর আসলে আমি ছাত্রলীগের দালাল, ছাত্রদলের কোন খবর আসলে আমি ছাত্রদলের দালাল ইত্যাদি গালিও শুনতে হয়েছে। ভালো খবরের কথাতো বললাম খারাপ খবর আসলে আমার অবস্থা কি হতো পাঠকই বুঝে নিন। আমি হেঁটে গেলে ট্যারা চোখে তাকাতো, অশ্লীল ও কটু কথা শোনাতো। খারাপ খবর পাঠক যেমন খায়, খারাপ মন্তব্যও মানুষ গোগ্রাশে গেলে। তবু সাহস হারাইনি। আজ প্রথম আলোর ২১ বছর। “একুশ মানে মাথা নত না করা”

প্রথম আলো আমাকে এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক কিছু দিয়েছে। জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগে ছয় বছর আগে আমার চাকরী হয়েছে। পত্রিকার ইমেইল এড্রেসে কিছু একটা লিখে পাঠিয়ে দিলেই সেটা ছাপা হয়ে যায় না। কয়েক স্তরের সম্পাদনা শেষে একটি খবর আলোর মুখ দেখে। সব খবর ছাপা যায় না, সব খবর ছাপাও হয় না। তবু ৪ বছর ক্যাম্পাস সাংবাদিক জীবনে ও ৬ বছর জনসংযোগে চাকুরীর সময়ে দৈনিক প্রথম আলো আমার ক্যাম্পাস ও আমার সংগঠনকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করেছে। সিলেট অফিসের উজ্জ্বল ভাই, সুমন দাদা, আনিস ভাই আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

আরও অনেক কিছু লিখতে মন চাইছে। বন্ধুসভার অনেক বন্ধুদের কথা লিখতে মন চাইছে। আজকের দিনে প্রাক্তন ও নতুন বন্ধুদের আমার পক্ষ থেকে অনেক শুভেচ্ছা। প্রথমআলোর সংবাদকর্মী, প্রকাশক ও পাঠক সকলকেই ভালোবাসা।

শুভ জন্মদিন দৈনিক প্রথম আলো!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৩
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×