আমাদের এই উপমহাদেশের অধিকাংশ মানুষ অল্প শিক্ষিত ধর্মভীরু। তারা ইসলাম বলতে সৌদিকেই মনে করে। ধর্মের সবকিছুতেই সৌদিকে অনুসরন করার চেষ্টা করে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে তথা সুদুর অতীতেও এমন হয়েছে। আর এর পুরো ফায়দা গ্রহন করেছে উমাইয়া-আব্বাসীয় শাসকরা। কথিত হাদিছ দ্বারাই উমাইয়া এবং আব্বাসীয়রা মানুষকে বশে রেখে নির্বিঘ্নে রাজত্ব চালিয়ে যেতে পেরেছেন। বুখারি মুসলিমের হাদিছ দিয়ে মুয়াবিয়াকে উচ্চ মর্যাদার সাহাবী বানানো গেছে। ধর্ম পালনকে একটা ফরমেটের মধ্যে আনা গেছে। মানুষের বিবেক বুদ্ধি রুদ্ধ করা গেছে। রাজতন্ত্রকে জায়েজ করা গেছে। আজকের সৌদি রাজতন্ত্রও টিকে আছে ঐ হাদিছের উপর ভিত্তি করেই। হাদিছ ভিত্তিক জীবন গঠনের নিমিত্তে বিশ্বব্যাপী তারা হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে আসছে এবং মুসলিম বিশ্বের হত্তাকত্তায় পরিণত হয়েছে। হাদিস দ্বারাই যাজক বা মোল্লা শ্রেনীর ধর্ম ব্যবসাকে জায়েজ করা গেছে। আল্লাহর কালাম থেকে হেদায়েত নেয়া থেকে মানুষকে রুখে দেয়া গেছে। হাদিস দ্বারা আহলে বাইতের হত্যাকারীদেরও সাহাবী-তাবেইন বানানো গেছে। এজিদও জান্নাতে যাবে মর্মে সহীহ হাদিছ রচিত হয়েছে। কারবালার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে খুশী এবং শুকরিয়ার রোজার সহীহ হাদিছ রচনা করে ছড়িয়ে দেয়া গেছে। উমাইয়াদের অপকর্মগুলোকে জায়েজ করতে মহানবীকে কখনো ধর্ষক, কখনো যুদ্ধবাজ, কখনো শিশুকামী আবার কখনো দয়ালু এবং চরিত্রবান তথা মহানবীর একটা ম্যাসাকার চরিত্র চিত্রিত করা গেছে। নারীদের কুকুরের সমপর্যায়ে নামিয়ে আনা গেছে। বুখারি-মুসলিমের সেই হাদিছগুলোই মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে এবং তা দিয়েই সৌদিরা মুসলিম বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে চাইছেন। সেই লক্ষ্যেই তথাকথিত সহিহ আকিদার নামে মগজধোলাই করা আলেম নামীয় কিছু গন্ডমূর্খ প্রোডাক্ট দিয়ে দেশে দেশে প্রেরন করা হচ্ছে। কখনো সহীহ আকিদার নামে, কখনো আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের নামে, কখনো সালাফী কিম্বা আহলে হাদিছের নামে। সৌদি আরব জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, শিল্প-সংস্কৃতিতে চরমভাবে পিছিয়ে থাকা অনুন্নত একটি রাষ্ট্র হওয়া সত্বেও কেবল ধর্মীয় নেত্বত্বের কারনে প্রচন্ড প্রভাবশালী রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়ে আসছে। এর পেছনে মুল ভুমিকা রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। এটি ১৯৬১ সালে সউদি সরকারের একটি রাজকীয় ফরমান জারির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি ওয়াহাবি–সালাফি মতাদর্শ ধারণ করে এবং বিশ্বজুড়ে সালাফিবাদী ধর্মতাত্ত্বিক, পণ্ডিত ও প্রচারকদের ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নামে বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এটা মুলতঃ একটি মাদ্রাসা পর্যায়ের একমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভিন্ন মত এখানে পড়ানো হয় না। যদিও কমপারেটিভ রিলিজিওন নামের একটা বিষয় সিলেবাসের অর্ন্তভূক্ত আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, স্নাতোকত্তর ও ডক্টরেট এ তিন শ্রেণীতে শিক্ষাদান ও ডিগ্রী প্রদান করা হয়। বুঝুন ঠেলা, এখান থেকে পাশ করাদের ডক্টরও বলা যায়। বিশ্বের প্রায় ১৭০টি দেশের শিক্ষার্থীরা সেখানে পড়াশুনা করছেন এবং প্রতি বছর এইসব শায়খরা রাজতন্ত্রের আকীদা প্রচারে মাঠে নামছেন।
একথা বলাই বাহুল্য যে, মহানবীর মৃত্যুর পরই শুরু হয় মুনাফিকদের নামামুখী ষড়যন্ত্র। অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে সফল খেলাফত পরিচালিত হয় খোলাফায়ে রাশেদীন পর্যন্ত। আহলে বাইতের চরম বিদ্বেষী মুয়াবিয়া আহলে বাইতের সদস্য হযরত আলীর বিরুদ্ধে নানামূখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এই দুষ্কর্মে মুয়াবিয়াকে সহায়তা করেন আমর ইবনুল আস এবং মুগীরা ইবনে শোবা নামীয় দুই সাহাবী। এই মুয়াবিয়া গং যে উমাইয়া রাজত্বের পত্তন করেছিলেন সেই রাজতন্ত্রের ধারা এখনো চালু আছে। উমাইয়া এবং আব্বাসীয় শাসনামলেই ধর্মের সবকিছু রাজতন্ত্রের অনুকুলে নিয়ে আসা হয় এবং ব্যাখ্যা করা হয়। যদিও প্রকৃত কোরআনের ইসলাম আর উমাইয়াদের প্রতিষ্ঠিত ইসলামের মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। সুদীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকার কারনে উমাইয়া সৃষ্ট ধর্মই প্রাধান্য পেয়ে যায়। সৃষ্টি করা হয় তাদের অনুকুলের আকীদা। বর্তমানের মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় এইসব আকীদার মুল ঘাটি। এখানে মগজধোলাইকৃত শায়খরা প্রতি বৎসর গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পরছে। মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শায়খ আবদুর রহমানের কথা নিশ্চয় ভুলে যাননি। তবে আজকাল তারা ভিন্ন পন্থায় এগিয়ে যাচ্ছেন। ফেসবুক ইউটিউব তাদের দখলে। সহীহ আকীদার নামে রাজতান্ত্রিক ইসলামের দীক্ষা দিয়ে চলেছেন তারা নিজের অজান্তেই। শিরক বিদআত নির্মুলের মিশনে নেমে তারা মানুষের ঈমান আকীদাও ধ্বংস করে চলেছেন। [চলবে]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




