somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্লোগানের রাজনীতি-রাজনীতির শ্লোগান

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের অস্থিতিশীল ও বিপদজনক রাজনীতির একটা মজার দিক হলো এর শ্লোগান।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গণতন্ত্র থেকে শুরু করে বাকশাল,সেনাশাসক থেকে পুনরায় গণতন্ত্র উত্তরণ সমকাল পর্যন্ত রাজনীতিতে শ্লোগান ছিল বেশ কার্যকর এবং সক্রিয় হাতিয়ার।তৎকালীন সময়ের রাজনীতির অবস্থা এবং সমকালীন মনস্তত্বও বোঝার ভালো উপায় তা।

স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম দেয়াল লিখন ছিল:
অস্ত্র জমা দিয়েছি _ ট্রেনিং জমা দেয়নি। [ফলাফল স্পষ্ট]

এরপর দুর্ভিক্ষ এলো। ছাত্রলীগের বিদ্রোহী অংশ শ্লোগান দিল:
মুজিববাদ বস্তায় ভর_চালের দাম সস্তা কর।

ছাত্রলীগের সরকার সমর্থক অংশ তখন পাল্টা আওয়াজ দিল:
নিক্সন পেড়েছে ডিম,
মাও দিয়েছে তা,
তা থেকে বের হলো
বৈজ্ঞানিকের ছা।

ছাত্র ইউনিয়ন তখন সরকারের সমর্থক। জাসদ ছাত্রলীগ তাদের নিয়ে শ্লোগান দিল:
শেখ মুজিবের দুই শনি
শেখ মনি আর সিং মনি।

এরপর বড় ঘটনা ৭৫-এর নভেম্বর অভ্যুত্থান। জাসদ শ্লোগান দিল:
জিয়া তাহের লাল সালাম_ লাল সালাম,
রুশ-ভারতের দালালেরা হুশিয়ার সাবধান।

এক পর্যায়ে জাসদ ছাত্রলীগ ভাগ হলো। তৈরি হলো বাসদ। তাদের একটি শ্লোগান ছিল:
১৯৮০ সাল
জাসদ হইলো বাকশাল।

মান্না ভাই এসময় বাসদে ছিলেন। জাসদ ছাত্রলীগ তাই তার বিরুদ্ধে শ্লোগান দিল:
বংগভবনে আছে গাই
তার বাছুর মান্না ভাই
এস্ইউসি’র নাত জামাই
বলে নতুন পার্টি চাই
-১৯৭৩ সালে দ্বিতীয় ডাকসু নির্বাচনে একটি অতি উচ্চারিত শ্লোগান ছিল-

‘লেনিন-গামা
নূরা পাগলা থামা।‘

পটভূমি ও ফলাফল
লেনিন মানে নূহ উল আলম লেনিন, আর গামা মানে ইসমাত কাদির গামা। একজন ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের, অপরজন ছাত্রলীগের। যৌথ প্যানেল। জাতীয় রাজনীতিতেও তখন সিপিবি-আওয়ামী লীগ ত্রিদলীয় ঐক্যজোটের অংশ। আর ‘নূরা পাগলা’ বলে যাকে গালি দেয়া হচ্ছে তিনি হলেন জাসদ ছাত্রলীগের আ ফ ম মাহবুবুল হক। তিনি ছিলেন জাসদ ছাত্রলীগের প্যানেলের ভিপি ক্যান্ডিডেট। অসম্ভব জনপ্রিয়। ক্যাম্পাসে তার পোশাক আশাকও তখনকার তরুণরা নকল করতো। মুখ ভর্তি দাড়ি-গোফ ছিল। সেজন্য বিপক্ষ দলীয়রা তাকে নূরা পাগলা বলতে শুরু করে। ঐ সময় হাইকোর্টের মাজারে নূরু নামে একজন লোকপ্রিয় পাগল ছিলেন। সেই সূত্রেই এই তুলনা।
এই গল্পের শেষ অংশ অবশ্য রাজনীতির জন্য অতি করুণ হয়েছে। আসলেই ‘লেনিন-গামা পরিষদ’ নূরা পাগলাকে থামিয়েছিল। তবে তা ভোটের পথে নয়। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন শেষে প্রথমে হলগুলোর ভোট গণনা শেষে যখন দেখা যায় মাহবুবের জনপ্রিয়তায় ভর করে জাসদ ছাত্রলীগ হলে একচেটিয়াভাবে জিতেছে তখন সন্ধ্যার দিকে ডাকসুর ব্যালট বক্সগুলো ছিনতাই করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সামনেই ঘটনাটি ঘটে। কেউ প্রতিবাদ করেছেন বলে শোনা যায়নি। তবে রাজনীতিতে, বিশেষত তখনকার সরকারী দলের জন্য এই ঘটনার ফলাফল হয়েছিল বিধ্বংসী।
রাজনীতির শ্লোগান-শ্লোগানের রাজনীতি ৩

এ আড্ডায় যেসব শ্লোগান নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তার অধিকাংশ স্বাধীনতা-উত্তর সময়ের।
এ সময়ের একটি মুখ্য রাজনৈতিক ধারা ছিল সিপিবি। ছাত্র ইউনিয়ন ছিল তাদের ছাত্র সংগঠন। স্বাধীনতার পর এই ঘরানার একটি আলোচিত শ্লোগান ছিল:

‘লক্ষ শহীদের আত্মদানে
মুক্ত স্বদেশ
এসো দেশ গড়ি‘।

জাতীয় রাজনীতিতে এসময় সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়ন ছিল আওয়ামী লীগ [ও পরে বাকশালের]-এর মিত্র। ফলে মুজিব বিরোধিদের তরফ থেকে এরা শ্লোগানে শ্লোগানে আক্রান্ত হয়। তেমনি একটি শ্লোগান ছিল:

‘আচলে আচল ধরি
এসো দেশ গড়ি।‘

ছাত্র ইউনিয়নের মিত্র হওয়ায় মুজিববাদী ছাত্রলীগও বিপক্ষ মহল থেকে, বিশেষত জাসদ ও পিকিংপন্থী কমিউনিস্টদের তরফ থেকে আক্রান্ত হয়েছে এসময়। তারই একটি নমুনা ছিল নিচের শ্লোগানটি:

ইন্দিরা পেড়েছে ডিম
কোশিগিন দিয়েছে তা
তা থেকে বেরিয়ে এলো
মুজিববাদের ছা।

বলাবাহু্ল্য, ছাত্র ইউনিয়ন ও সরকারী ছাত্রলীগও থেমে থাকেনি - পাল্টা আক্রমণ করেছে তারা নিম্নোক্ত শ্লোগানে:

ঐতিহাসিক পুরাতত্ত্ব
বের করেছি মহাশয়
মাও-নিক্সনের পাঠশালাতে
রব-সিরাজের শিক্ষা হয়।

তথ্য আহরণঃ ‘শ্লোগানে শ্লোগানে রাজনীতি’-আবু সাঈদ খান এবং
বিশেষ কৃতজ্ঞতা সাংবাদিক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×