somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Assassin(আসাসিন ) অথবা Hashishin, রহস্যে ভরা একটি গোপন সংগঠনের নাম। হত্যা করাই ছিল যার মুলমন্ত্র।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আরবী ভাষা থেকে যে সকল শব্দ ইংরেজী ভাষায় প্রবেশ করেছে তাদের মধ্যে একটি হল Assassin. যার আবিধানিক অর্থ গুপ্তহত্যাকারী বা রাজণৈতিক হত্যাকারি।এর verb হল Assaniate যার meaning হল রাজনৈতিক বা ধর্মিয় উদ্দেশ্যে কাউকে হত্যা করা।কিন্তু এই আরবী শব্দটি কেন ইংরেজীতে এসে এই অর্থ ধারন করল তা জানতে গিয়ে রিতিমত ভীম্রি খেয়ে গেলাম।

Assasin হল আরবীশব্দ Hasheshin এর আধুনিক সংস্করন। যা নেয়া হয়েছে বিখ্যাত পরিব্রাজক Marco Polo এর কোনো লেখা থেকে।যেখানে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের এমন একটি রহস্যময় গোপন হত্যাকারীদের সংগঠনের কথা ব্যাক্ত করেছেন যারা একসময় দাপীয়ে বেরিয়েছিল সারা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে।
Assasin দের শুরুটা হয়েছিল প্রথম ক্রুসেডের কিছু পুর্বে ১০৮০ সালের দিকে। Assasin দের নিয়ে খুব বেশি তথ্য যে পাওয়া গেছে তা নয়। এদের নিয়ে যে সকল বই লেখা হয়েছিল তাদের বেশিরভাগএ হয় তাদের বিরোধী গ্রুপের লিখা কংবা লোক কথা থেকে নেয়া। এটা গঠিত হয়েছিল শীয়া মুসলমানদের নিয়ে। 632 সালে হযরত মোহাম্মদ (স) এর মৃত্যুর পর মুসলমান রা যখন সুন্নি ও শিয়া এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় , তখন এই দুই সম্প্রদয়ের মানুষের মধ্যে দাঙ্গা হানাহানি একটা নিত্য নৈমিত্যিক ঘটনা হয়ে দারায়। আর এই হত্যাকে ধর্মীয় সীকৃতি দিতেই Hassan-i-Sabbah নামের জনপ্রিয় একজন শীয়া ধর্মীয় নেতা Hasheshin বা Assassin এর মত কুখ্যাত মতবাদ প্রবর্তন করেন।যে মতবাদের উদ্দেশ্য হল হত্যার মাদ্ধমে শত্রদের দমন করা।

তৎকালীন সময়ে Hassan-i-Sabbah সিরিয়া সহ মদ্ধপ্রাচ্যের অনেক জায়গায় প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল।যার ফলশ্রুতিতে তার অনুসারিদের পরিমান প্রচুর পরিমানে বাড়তে থাকে। আগেই বলা হয়েছে তার অনুসারীরা শীয়া ধর্মালম্বি। আর এই জনপ্রিয়তা কে পুঞ্জি করেই সে Assasin এর মত মতবাদ প্রবর্তন করেন ।যদিও তার এই মতবাদ এর পিছনে হাসানের আসল কি উদ্দেশ্ ছিল তা কখনই জানা যায় নি। এটা ধারনা করা হয় তার এই মতবাদের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক এবং ব্যাক্তিগত স্বার্থ হাসিল। এবং হত্যার মাধ্যমে শত্রুদের দমন করা। রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতি তার কেন এত দুর্বলতা ছিল তার কারন হিসেবে বলা হয়েছে সুন্নিদের সাথে বিরাজমান সহিংসতা। কিন্তু ১ম ক্রুসেড শুরু হবার পর Assassin রা ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধেও অস্ত্র ধারন করে. আবার কোথাও কোথাও বলা হয়েছে যে তারা অনেকসময় ক্রুসেডারদের পক্ষে ও কন্ট্রাক্টে কাজ করেছে। আমরা যারা Prince of Parsia(The Sands of Time) মুভিটি দেখেছি তারা সেখানে দেখেছি যে Prince Dastan কে হত্যা করার জন্য তার চাচা নিজাম Hashassin দের সাথে চুক্তি করে। সেখানে Hashassin দের দুধ্বর্ষ হত্যাকারী হিসেবে পরিচিত করা হয়েছে।

যাইহোক তুমুল জনপ্রিয়তা এবং Assassin গঠনের পর হাসান তার দুর্গ সৃষ্টির জন্য উপযুক্ত জায়গা খুজতে থাকে। এবং তিনি এর জন্য Almut কেই নির্বাচন করেন Almut হল এমন একটি জায়গা যা উঁচু উঁচু পর্বত শৃঙ্ঘ দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৬০০০ মি উপরে। কিন্তু হাসান কি Almut দুর্গ বানীয়েছিল নাকি আগেই এখানে কেউ দুর্গ বানিয়েছিল তা অজানা। হাসান এই দুর্গ বানিয়েছিল শুধুমাত্র নিজের নিরাপত্তার জন্যই নয়।এর পাশাপাশি এই দুর্গে তার অনুশারী কুখ্যাত Assassin দের হত্যার প্রশিক্ষন দেওয়া হত।


Assassin ছিল তৎকালীন আধুনিক সমর সাস্ত্রে শিক্ষিত এবং প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত কিলার সংগঠন। এটাকে গঠন করা হয় বেশ কিছু পদবীর মাধ্যমে। Hassan-i-Sabbah হলgrand master .তার অধীনে ধারাভাহিক ভাবে যেই পদ গুলো ছিল সেগুল হল greater propagandists যাদের অনুসরন করত propagandists, The Rafiq, এবং The Lasiqs. Lasiqs রা হল এমন একটি দল যাদের প্রশিক্ষন দিয়ে তৈরি করা হত ভয়ংকর কিলার বা assassin. এদেরকে Fida`I নামেও ডাকা হত।ফিদাই এর অর্থ আত্মঘাতী।


Fida`I রা অন্ধের মত তাদের উঃধস্তনদের আদেশ অনুশরন করত। অর্থাৎ যখনি তাদের কোনো হত্যার নির্দেশ দেয়া হত । তারা তখনি তা পালন করত। কিন্তু কেন তারা অন্ধের মত Hassan কে অনুসরন করত তার বর্ননা পাওয়া যায় Marco Polo এর কাছ থেকে। Marco Polo হাসান সাবা কে Man of MOuntani bole আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন হাসান তার অনুসারীদের hasHis নামে একধরনের এমন মাদক সেবন করাত। যার ফলে তাদের মদ্ধে হেলুসিনেসন সৃষ্টি হত এবং ঘুমিয়ে পরত। তারপর তাদের একটি বাগানে নিয়ে যাওয়া হত যেটা সর্গীয় সুযোগ সুবিধায় পরিপুরন। হাসান সাবা তার এই বাগান্টিকে সাজিয়েছিল কোরানের বিভিন্ন আয়াত দিয়ে । এখানে সর্গিয় ফুল ও ফলের গাছ, গনীকাদের মনোরঞ্জন সহ সকল সুজোগ সুবিধা যুক্ত করা হয়েছিল। সুতরাং ঘুম থেকে জাগার পর তারা নিজেদের সর্গে আবিষ্কার করত। এইভাবে আবার তাদের পুনরায় মাদক সেবন করানো হত এবং বাস্তবে ফিরেয়ে আনা হত। বাস্তবে ফিরে আসার পর তারা আবার সর্গে ফিরে যাবার জন্য মরিয়া হয়ে পরত। তারা মনে করত একমাত্র হাসান সাবাই তাদের পুনরায় সর্গে প্রেরন করতে পারবে। এইভাবেই হাসান তার অনুসারিদের নিয়ন্ত্রন করত। hasHis এর বাংলা অনুবাদ হল গাঁজা বা ভাং । এই অস্ত্র ব্যাবহার করে হাসান তার গুপ্ত হত্যা বহুগুন বারিয়ে দেয়। হাসান কখনোই কোনো সাধারন মানুষ্কে হত্যা করেনি। শুধুমাত্র সমাজের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিকবা ধর্মীয় ব্যাক্তিরাই তার শত্রুরুপে বিবেচিত হত।


যাইহোক ধারনা করা হয় Almut এ প্রবেশ করার পর Hassan-i-Sabbah আর কখনোই এর ভিতর থেকে বাহির হয়নি। যাইহোক দের পদবীগুলোর মধ্যে Fida`I রা সবচেয়ে নিম্ন পদবী হলেও তাদের প্রশিক্ষন কার্যে ব্যাবহার করা হত সবচেয়ে আদজুনিক প্রযুক্তি। Assassinদের মদ্ধে শুধুমাত্র যুবকদেরই Fida`I পদবী দেয়া হত মানে গুপ্ত হতার কার্যে শুধু যুবকদের ই ব্যাবহার করা হত।তাই সমরাস্ত্রের পাশাপাশি তাদের উন্নত শারিরীক প্রশিক্ষন দেওয়া হত। তারপরেও শুধুমাত্র শারিরিক শক্তিই Assassin দের মুল শক্তি ছিল না। একটা শফল Assaination এর জন্য তাদের অনেক সাহসী ধৈর্যশীল এবং হিসেবী হতে হত। তাদের অনেক বুদ্ধিমান ও মেধাবী হতে হত। কারন তাদের অনেক সময় তাদের শত্রুদের ভাষা ,ভৌগলিক পরিবেশ, গোত্র প্রভৃতি সম্পর্কে অবগত থাকতে হত। তাদের শিক্ষা দেওয়া হত কিভাবে ছদ্ববেশ ধারন করতে হয় এবং বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে শ্ত্রুদের ঘায়েল করে সেই স্থান ত্যাগ করতে হয়।শুরুর দিকে তারা হত্যার জন্য daggar ব্যাবহার করত। এবং হত্যার আগে victim কে হত্যার হুমকী পাঠাত।

তাই নিঃসন্দেহে বলাযায় Assassinরা গুপ্তুত্যাকারীদের এমন একটি সংগঠন ছিল যাদের কর্মের ভয়াবহতা কখনো বলে শেষ করা যাবেনা।

১১২৪ সালের দিকে Hassan-i-Sabbah মৃত্যু বরন করে। কিন্তু তাতে Assassinরা আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে। তাদেরেই সংগঠনের ইতি ঘটে mongol দের Almut আক্রমন করে দখল করার পর। ১২৫৬ সালের দিকে Halugu Khan এর নেতৃত্বে মঙ্গল সেনাবাহিনী Almut দখল এবং ধ্বংশ করে। Almut ধ্বংশ হয়ে যাবার পর Assassin রা সারা মধ্যপ্রাচ্যে ছরিয়ে পরে।

যাইহোক Assassin রা কতজন উচ্ছপদস্থ নেতাদের হত্যা করেছে তার সঠিক হিসাব নেই। তবে ধারনা করা হয় প্রায় ১০০০ বুদ্ধিজিবি ও পন্দিত ব্যাক্তি তাদের দ্বারা নিহত হয়। তৎকালীন সময়ে Assassinরা এতটাই দূধ্বর্ষ ছিল যে তাদের নিয়ে রচিত লোক কথা আজও মধ্যপ্রাচ্যের ঘরে ঘরে মানুষের মুখে মুখে ফিরে যায়।
বিস্তারিতঃ- http://en.wikipedia.org/wiki/Assassins
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১২ রাত ১:১৭
৩৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×