হুমম অনেকদিন পরে লিখছি। গত কিছু মাসে মনের ভেতরে যা যা জমে গিয়েছে সেসব নিয়েই লিখব। দেখুন তো, আপনার আর আমার মনের কথাগুলো মেলে কিনা?
পূর্ব রোস্ট পোস্ট: রোস্ট পোস্ট (১) - "আপনি কি কালো, বেঁটে, মোটা? তাহলে আপনার বেঁচে থাকা অর্থহীন!" ওহ মিডিয়া প্লিজ শ্যাট আপ!
রোস্ট পোস্ট (২) - বাংলাদেশী বিয়ে - দুটি মনের মিলন নাকি অপসংস্কৃতি, অসহায়ত্ব, অশ্লীলতা প্রকাশের মাধ্যম? শেম শেম!
রোস্ট পোস্ট (৩) - বিবাহ বানিজ্য, পাত্র পাত্রীর নির্বাক অসহায়ত্ব, অশ্লীলতা - ঝলমলে লাইটিং এর পেছনের অন্ধকারের গল্প!
সু্স্থ রুচি বিরূদ্ধ কন্টেন্ট:
সোশ্যাল মিডিয়ায় অসাধারণ কন্টেট পাওয়া যায়। শিক্ষামূলক থেকে শুরু করে বিনোদনমূলক, কি নেই ভার্চুয়াল জগতে? বড় বড় তারকারাও আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজস্ব একাউন্ট থেকে কন্টেন্ট নির্মাণ করছেন। আগে ইয়াং ছেলেমেয়েরা ফ্রি টাইমে নানা রকমের বাজে কাজে জড়িয়ে পড়ত, আজকাল তারাই বাড়িতে বসে মেধা ও শ্রম দিয়ে ভিডিও তৈরি করছে আর ভালো টাকা পয়সাও পাচ্ছে। যেসব মানুষেরা বাইরে কাজ করতে পারেনা কোন পারিবারিক দায়িত্বের কারণে তাদের জন্যেও সুন্দর একটি আয়ের মাধ্যম হয়ে দাড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের পেশাটি। তো সমস্যা কি?
সমস্যা হচ্ছে উদ্ভট কিছু কন্টেন্ট। সৃষ্টিশীল কোনকিছু না করে অনর্থক বিষয়ে ভিডিও বানিয়ে অনেকেই হচ্ছেন ভাইরাল।
যেমন খাবার বিষয়ক ভিডিও যদি রেস্টুরেন্ট রিভিউ হয় তবে কোন রেস্টুরেন্টে যাবার আগে ভিডিওতে সেখানকার মেন্যু, প্রাইস, স্বাদ ইত্যাদি সম্পর্কিত আইডিয়া পেয়ে অনেক মানুষ উপকৃত হতে পারেন।
কিন্তু বাড়িতে বসে বসে সিম্পল ডাল ভাত হাত দিয়ে চেটে চেটে খাবার ভিডিও করা আর উদ্ভট উচ্চারণে কথা বলা কোন কন্টেন্ট হলো? নাহ হলোনা, কিন্তু এমনকিছু কন্টেন্ট মাত্রাতিরিক্ত ভাইরাল হলো!
view this link
view this link
ওপরের ভিডিও শুধু একটি উদাহরণ। আরো নানা রকম নিরর্থক ভিডিও ইউটিউবে ঘুরে বেড়ায়। কিভাবে পেন এর খাপ খুলতে হয় থেকে শুরু করে কিভাবে শ্বাশুড়ির মাথায় তেল মালিশ করতে হয়! কি ভাবছেন মানুষ ওসব দেখেনা? মজার ব্যাপার কোন সুন্দর, উপকারী বিষয়ের চেয়ে এসব ভিডিও মানুষ আরো বেশি দেখে! সৃষ্টিশীলতার জায়গায় চূড়ান্ত ভাড়ামী, বোকামি, পাগলামি বেঁচাকেনা হচ্ছে!
ভাইরাল সিনড্রম এবং নেগেটিভিটি:
সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু কিছু মানুষকে দেখলে মনে হয় তাদের খেয়ে দেয়ে আসলেই কোন কাজ নেই। নিজস্ব কাজ বা স্বপ্ন থাকলে যেকোন উঠতি তারকা থেকে শুরু করে লিজেন্ডারি মানুষ, সকলের মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হতো না, আর সেই বিতর্কের পক্ষে বিপক্ষে জাতি ভাগ হয়ে যেত না! উই জাস্ট ক্যান্ট লেট এনিথিং গো! সবকিছুকে ধরে বসে থাকতে হবে! কারো কথা বা কাজে পান থেকে চুন খসলেই হলো! ভার্চুয়াল বুলিরা সেই মানুষটিকে যত রকম মানসিক টর্চার করা যায় করে যাবে। কেউ একজন নিজের একটি ব্যক্তিগত ওপিনিওন দিল, সেটা হয়ত এক অংশের দর্শকের সাথে মিলল না, ব্যাস সেই মানুষটি সহ তার ভক্তদের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে সফল ও বিজয়ী অনুভব করবেন অনেকে।
রিসেন্ট এমনি একটি ভাইরাল টপিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি মানুষের উপচে পড়া ঘৃণা দেখে আমি হতবাক হয়েছি, লজ্জিত বোধ করেছি! আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি ওনাকেও এভাবে অসম্মান করা যায়! ওনার গল্প, কবিতা, গান এবং অন্যান্য সৃষ্টিকর্ম অনেকের পছন্দ না হতেই পারে, তাই বলে এমন গালাগালি? তার মতো গুণী, কালজয়ী কাউকে এভাবে ছোট করা যায়? এতে কি রবী ঠাকুর ছোট হলেন নাকি তাকে সম্মান দিতে না পারা মানুষেরা নিজের মূর্খতা ও কুশিক্ষা প্রমাণ করল?
যেকোন বিষয়ে এত বেশী নেগেটিভিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার একটি কারণ আমাদের বাস্তবতা! ট্রাফিক জ্যাম, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, সাউন্ড/ওয়াটার/এয়ার পলুশন, মশার কামড়ে - গাড়ির আঘাতে প্রতিদিন আপনজন হারানোর ব্যাথা, ভীড় - সবকিছুর লম্বা লাইন, পারিবারিক ও সামাজিক চাপ এগুলো তো আছেই। কিন্তু নানা উন্নত দেশেও সোশ্যাল মিডিয়া সমাজে নেগেটিভিডি ছড়িয়ে দিচ্ছে। তার কারণ কি? কারণ বাস্তবিক জীবনে সোশ্যাল মিডিয়ার এডেড প্রেশার! প্রতি সপ্তাহে একবার রেস্টুরেন্ট থেকে ছবি দিতেই হবে! দামী বাড়ি, গাড়ি, স্বামীর জন্যে কি রান্না করলাম, বোনকে কত টাকা সালামী দিলাম এমনকি মাদারস ডে তে মা কে কি উপহার দিলাম সেটাও সবাইকে ঘটা করে জানাতে হবে! নাহলে তো মান থাকবেনা। ফেসবুক ওপেন করলেই কোন আত্মীয়কে দামী গাড়িতে, কোন বন্ধুকে দামী বাড়িতে দেখে মনে হিংসা, স্ট্রেস বেড়ে যাচ্ছে। রাগ থেকে ক্ষোভ, ক্ষোভ থেকে ঘৃণা আর ঘৃণা থেকে গণপিটুনীতে নিরীহ কাউকে হত্যা করা! প্রথমে যে রাগের প্রকাশ ছিল ভার্চুয়াল কমেন্টে সীমাবদ্ধ তা এখন বাস্তব এমনকি জাতীয় জীবনেও ভয়াবহ রং দেখাচ্ছে!
নারী পুরুষের দ্বন্দ্ব!
ইউটিউবে বেশিরভাগ বাংলা গান, নাটকের নিচে একটি অংশ নারীকে ছোট করে মন্তব্য করে। "আজকালকার" মেয়েরা কতটা খারাপ, বাজে, ছলনাময়ী, অশালীন, অনৈতিক জীবন যাপন করছে সেসব নিয়ে সমালোচনা চলছে অবিরাম। মজার ব্যাপার যেসব "আজকালকার" ছেলেরা এসব মন্তব্য করছে তারাও খুব একটা সুস্থ, শালীন জীবনধারণ করছেনা। কিন্তু সমাজ যে তাকে শিখিয়েছে, "তোমার পাপ ভুল আর কোন মেয়ের ভুল পাপ!"
ধর্ষণ হলে মেয়েটিকেই দোষারোপ করা হচ্ছে। একটি মেয়ে ধর্ষিতা হলে প্রথমে আম জনতা মেয়েটির বয়স দেখবে, বেশি ছোট হলে বেচারারা চুপ হয়ে যাবে। যদি কিশোরী/তরুণী/যুবতী হয়ে থাকে তবে ধর্ষণের সময়ে তার বুকে ওড়না ছিল কিনা সেটা দেখবে। যদি থাকে তবে মেকআপ ছিল কিনা সেটা দেখবে। যদি এসব রিকোয়েরমেন্টে পাশ করতে না পারে তবে ধর্ষিতা অথবা মৃত মেয়েটিকে বাজে ভাবে গালাগালি করা হবে। মেয়েটির বাবা মা কে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হবে। ধর্ষককে মেয়েটি আহবান জানিয়েছিল সেটা প্রমাণ করে দেওয়া হবে। যদি খুব শালীন পোশাকের, মেকআপহীন মেয়ে হয় জনতা কনফিউজড হয়ে যাবে! কোন একটা মেয়েকে তো দোষ দিতেই হবে। কি করা যায়? কি করা যায়? হ্যাঁ, এটা প্রচার করা হবে যে মিডিয়ার মেয়েগুলো স্বল্পবসনা হয়, তাদের দেখেই ছেলেদের মাথা ঘোরে আর আশেপাশের মেয়েদের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে!
আমি মানছি যেকোন নারী পুরুষের অশালীন পোশাক, কথা, ভাবনার মধ্যে থাকা উচিৎ না। কিন্তু তাই বলে ধর্ষণ করে শাস্তি দিতে হবে?
মনে রাখবেন যেই মুহূর্তে আপনি একটা স্ট্যান্ডার্ড সেট করবেন, যেমন, "যেসব মেয়ে ওয়েস্টার্ন পোশাক পড়ে তাদের ধর্ষিত হওয়া উচিৎ" সেই মুহূর্তে অন্য কোন জায়গায় অন্য কোন পুরুষ আরেকটি স্ট্যান্ডার্ড সেট করছ, "যেসব মেয়ে লিপস্টিক/টিপ/কাজল/পারফিউম ব্যবহার করে তারা ধর্ষন ডিজার্ভ করে", এই স্ট্যান্ডার্ড হয়ত আপনার বোনের সাথে মিলে যায়! সো নেভার জাজ উইমেন সো মাচ, বিকজ সাম আদার মেন উইল বি জাজিং ইওর স্টিস্টার উইথ ইকুয়াল ব্রুটালিটি।
নিজে ভালো থাকুন, নিজের পরিবারের মানুষদের নীতি শিক্ষা দিন। ব্যাস হয়ে গেল। একটি সমাজে সব ছেলে যেমন একরকম নয়, কেউ সিম্পল, ধার্মিক আবার কেউ অনেক ফ্যানেশবল, রকস্টার - তেমনি সব মেয়েরাও এক নয়। যতক্ষন একটা মেয়ের নিজের মতো নিজের মধ্যে আছে, আপানর কোন ক্ষতি করছেনা, ততক্ষন পর্যন্ত আপনার কোন অধিকার নেই তাকে ছোট করার।
পরকীয়া সমাজের একটা বর্ধিত সমস্যা। সেখানে অবাক ভাবে দু ক্ষেত্রেই মেয়েটিকেই দায়ী করা হয়। যদি একজন পুরুষ তার বউকে ছেড়ে অন্য নারীর কাছে যায়, তবে "অন্য" নারীটি দোষী কেননা সে মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের জীবন ধ্বংস করল, পুরুষটিকে নিজের স্বার্থে হাত করল। আর বউই বা কেমন বউ যে স্বামীকে ধরে রাখতে পারে না? অপরদিকে যদি একজন নারী নিজের স্বামীকে ধোঁকা দেয় তবে "অন্য" পুরুষটিকে নিয়ে কিন্তু কোন আলোচনা হয়না। সেখানেও মেয়েটি বাজে, চরিত্রহীনা! চাকুর ওপরে আপেল পড়ুক বা আপেলের ওপরে চাকু, কাটবে তো আপেলই!
আমার মতে, "তৃতীয়" নারী বা পুরুষেরাও এমনকিছু পবিত্র নয়, তবে সবসময় সেই বেশী দোষী যে কমিটমেন্ট ব্রেক করে সে হোক নারী বা পুরষ। আমার এই সহজ ভাবনাটি সমাজের অনেকেই বিশ্বাস করেন না। কোন মেয়ের পরকীরা বা যেকোন খারাপ কাজ নিয়ে বেশি লাফালাফি করলে অন্য কোন মেয়ের এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের কেসকে ধামাচাপ দিয়ে কিছু ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে দেওয়া যায়! ইউটিউব, ফেসবুক এমনকি ব্লগেও নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা এবং উপস্থিতির হার বেশি। এর কারণে মেয়েদের পয়েন্ট অফ ভিয়্যু চাপা পড়ে যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢোকামাত্র এসব একতরফা এটাকিং কথা পড়ে নারীরা মানসিক ভাবে স্ট্রেসড হচ্ছেন নিশ্চিতভাবে।
আবার অনেক নারী নিজেরাই কথায় কথায় পুরুষদের এটাক করছেন। "ছেলেরা একেকটা জানোয়ার" এই কথার মধ্যে নিজের বাবা ও ভাইকেও যে জড়িয়ে ফেলছেন সেটা বুঝতে পারছেন না।
যদিও প্রচুর নারী ও পুরুষ একে অপরকে সম্মান দিয়ে খুব সুন্দর মন্তব্য করছেন, সমাজিক নানা বিষয়ে সচেতনতা তৈরির ভিডিও বানাচ্ছেন। কিন্তু সেসব ভিডিও বেশি মানুষ দেখেনা, অন্ধ ও কুসংস্কারচ্ছন্ন, পশ্চাৎপদ চিন্তাধারার, গালাগালির ভিডিওগুলোরই বেশি প্রচার ও প্রসার হচ্ছে। ভালো পুরুষ ও নারীরা হেরে যাচ্ছে। আর তার জন্যে দায়ী আমরাই। শুধু মাত্র কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমরাই নষ্ট খাবার খাচ্ছি ও খ্যাতি দিচ্ছি।
কোন সুস্থ ও সরল কিশোর বা তরুণ যদি নারীর প্রতি অসম্মানজনক মন্তব্য প্রতিদিন পড়ে, মনের অজান্তেই সেও নারীদের ছোট করে দেখা শুরু করবে। সে যখন যেখবে "আরেহ বাহ! ধর্ষণ করলে তো সমাজকে পাশেই পাব!" সেও ধর্ষক হয়ে যাবে। অন্য নানা প্রকার খারাপ কাজ করে দোষটা নিজের মায়ের ওপরে, প্রেমিকার ওপরে বা অন্য কোন নারীর ওপরে দিয়ে দেবে। যত দোষ, নারী ঘোষ! তার চেতনা মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াবেনা, বরং সোশ্যাল মিডিয়ার জং ধরা শেকলে আটকে থাকবে।
আমি বলছিনা যে মেয়েরা খারাপ হয়না, তবে মেয়েরা খারাপ কিছু করলে অনেক বেশি পস্তাতে হয় ছেলেদের তুলনায়। এতে করে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। তারা খারাপ কাজে বেশী আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের ভবিষ্যৎ গোল্লায় যাচ্ছে।
সেলিব্রেটি!!!?? রিয়েলি?
আরো একটি ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, অশালীন ও নোংরা সব কন্টেন্ট ভাইরাল হওয়া! অনেক মানুষই আজকাল "সেলিব্রেটি!!!" ইউটিউবার কেননা তারা ধর্মকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছে অথবা কোন রাজনীতিবিদ, ক্রিকেটার, অভিনেতা, গায়ক, সাংবাদিক বা যেকোন বিখ্যাত ব্যক্তিত্বকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে! সব ধর্ম বা মানুষকে সবার ভালো নাই লাগতে পারে। তাই বলে নোংরা ভাষায় গালাগালি, অশালীন মিমস বানানো কতটা যুক্তিসঙ্গত? ভদ্রভাষায় সমালোচনা করা যায়না? এসব মানুষদের দোষও দিতে পারিনা, যা বিক্রি হচ্ছে তাই তারা বেঁচে দিচ্ছে। কষ্ট লাগে কমেন্ট সেকশন দেখলে। শয়ে শয়ে মানুষ বাজে সব ভাষা ব্যবহার করছে। কি ভীষন রাগ মানুষের মধ্যে! সবকিছু নিয়ে!
কারো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক চেতনা আপনার থেকে আলাদা? কেউ আপনার প্রিয় গায়কের গানে ডিজলাইক দিল? ব্যাস সেই মানুষটির রুচি পছন্দ, পরিবারকে টেনে এনে গালাগালি করলেন। একবারো ভাবলেন না সেই মানুষটির নিজস্ব চয়েস থাকতেই পারে! সব ধরণের ভিডিও হোক সে গান কবিতা, কমেডি বা ধর্ম রাজনীতি, মন্তব্যের সেকশনে শুধু গালাগালি, ঝগড়াঝাটি, দল বানিয়ে একে অপরকে ছোট করার উৎসব চলতে থাকে! নানা ধরণের অবাস্তব গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে একটি মহল সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে, আর সাধারণ মানুষ বিবেক বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে সবকিছু গিলছে। আজকাল মানুষ এক মুহূর্ত শান্তিতে থাকতে পারেনা, অন্যকে শান্তি দিতে পারেনা। অজানা অচেনা মানুষের সাথে যেকোন মুহূর্তে নির্দ্বিধায় ঝগড়া বাঁধিয়ে দিচ্ছে!
ভবিষ্যৎ কি?
আজকের বাচ্চা ছেলেটিই কালকের পুরুষ হবে, আর মেয়েটি হবে একজন নারী - এজন্যে ইউটিউবের যেসব মন্তব্য কোন ধর্ম, জাতি, গোষ্ঠিকে একতরফা ভাবে আক্রমণ করে যায়, তাদেরকে শাস্তির আওতায় এনে সেসব মন্তব্য ডিলিট করতে হবে।
অশিক্ষিত কুরূচিপূর্ণ মানুষদের পাবলিক্যালি মন্তব্য করতে দেওয়া যাবেনা। কেননা কার কোন মন্তব্য কোন বাচ্চা পড়ছে আর কি শিখছে আমরা জানিনা। এসকল বিষয়ে মনিটরিং খুব জরুরি। সব দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে দিলেও হবেনা। আমাদের সাধারণ মানুষদেরও মূর্খতাপূর্ণ ও অসচেতন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। বাবা মায়েরও উচিৎ না ছোট বাচ্চা বা ইভেন কিশোর কিশোরীদেরও সোশ্যাল মিডিয়ায় আসতে দেওয়া। এই আসক্তি ওদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে যেকোন সৃষ্টিশীলতা ও বিবেক, আবেগের মারাত্মক ক্ষতি করছে। একটা বয়সে মনটা কাদার মতো থাকে, যা দেখে, পড়ে, শোনে তাই শেখে মানুষ। সেই বয়স পার হবার আগে কারো ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটা, টিকটক, মিউজিক্যালি ইত্যাদি কি এটা জানার দরকার আছে বলে মনে করিনা।
একজন অপরাধী সে নারী হোক বা পুরুষ একদিনে হয়না, বাস্তবিক ও অন্তজার্লীয় সমাজের বড় মানুষদের কথা ও আচরণে স্লো পয়জনিং হতে হতে তার মানবিক চেতনা মারা যায়। অনেক শিশু, নারী ধর্ষিত, খুন হলো, অনেক পুরুষ অর্থনৈতিক ও মানসিক ভাবে ক্ষতির শিকার হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করল। এখন তো সাবধান হওয়া উচিৎ আমাদের, নাহলে আজকের রিপিট টেলিকাস্ট দেখতে হবে আগামিতে।
সুন্দর মনে, সুন্দর চেতনায়, সুন্দর বিষয়বস্তু ও মন্তব্যের চর্চা হলেই তো আমরা সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ পাব।
ছবিসূত্র: অন্তর্জালের অলিগলি!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৩১