somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যর্থ প্রেমের ধারাবাহিক পর্ব-৬

০১ লা মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
প্রথম পাঠকদের জন্য:

পর্ব-১
পর্ব-২
পর্ব-৩
পর্ব-৪
পর্ব-৫



মেয়েটির চোখের জল দেখে আমারও হৃদয়টা ভিজে উঠল! এবার কিছুটা নমনীয় হয়ে কাউন্টারের পিছনে ঝোলানো বড় ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখি ১টা বাজে, হাতে এখনও ২ ঘণ্টা সময় রয়েছে। তাছাড়া ফ্লাইট ৫টায়, আর গোছ-গাছ করতে তেমন একটা সময় লাগবে না, প্রায় সবকিছু গোছানোই রয়েছে। শুধু ছোট্ট একটা লাগেজে সামান্য কিছু পোশাক ভরে নিলেই কাজ শেষ। তা করতে বড়জোর ৫ মিনিট লাগবে। ঠিক আছে মেয়েটাকে কিছুটা সময় দেয়া যেতে পারে, সিন্ধান্ত নিয়ে ফেলি আমি।

- আচ্ছা আপনি কোথায় যেন যাওয়ার কথা বলছিলেন? চলুন যাওয়া যাক।
- উম্, নাহ্ থাক, আপনার আবার দেরি হয়ে যাবে। তাছাড়া আপনি যাকে রিসিভ করতে যাচ্ছেন তিনি ব্যপারটা জানলে তা আপনার জন্য মোটেই ভালো হবে না।
- আরে নাহ্, কিচ্ছু হবে না, চলুন আপনাকে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় দেয়া যেতে পারে। তবে শর্ত হলো হোটেল থেকে বেশি দুরে যাওয়া যাবে না।
- কেন এমন শর্ত কেন? বেশী দুরে গেলেই বা সমস্যা কি?
- না, মানে আমাকে তো আবার হোটেলে ফিরতে হবে এয়ারপোর্ট যাওয়ার আগে তাই বলছিলাম আর কি!
- ও, আচ্ছা। কিন্তু বুঝলাম না আপনাকে কেন হোটেলে আবার ফিরতে হবে?
- সে আপনার না বুঝলেও পৃথিবী অচল হয়ে যাবে না। চলুন, কোথায় নিয়ে যেতে চাইলেন সেখানে গিয়ে কথা বলি।
- আপনার যদি খুব অসুবিধে না হয় তাহলে আমাকে কিছুটা সময় সত্যি দেবেন আপনি?
- কি আশ্চর্য সেই কখন থেকে আমি আপনাকে বলছি আপনি এক-দেড় ঘণ্টা সময় পাবেন, শুধু শুধু এটা সেটা বলে দেরি না করে চলুন যাওয়া যাক।

দুজনে হোটেলের গেট দিয়ে বেরিয়ে পড়ি। আমি একটা ট্যাক্সি ডাকার চেষ্টা করতেই মেয়েটি হোটেলের পার্কিং লটের একটি গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়িটা নিয়ে সোজা আমার পাশে দাঁড় করিয়ে তার পাশের দরজাটি খুলে দিয়ে বলল, ওয়েলকাম!

লাল টকটকে একটি মিনি ক্যাডিলাক। কানাডার ট্রাফিক মুক্ত বড়সড় হাইওয়ে ধরে ছুটে চলছে। গাড়ির হুড নামানো, ফলে বাতাসের ঝাপটায় মেয়েটি কুচকুচে কালো দীর্ঘ চুলগুলি বাতাশে উড়ছে তার মাথার পেছনে। মাঝে মধ্যে দুয়েক গোছা অবাধ্যের মত এসে পড়ছে তার কপোলের ওপর, সে তা বার বার সরিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও আবারও ফিরে আসছে অবাধ্য প্রেমিকের মতো তার টুকটুকে গালের ওপর।

আমি মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছি তার এ অপরূপা সৌন্দর্য! কে এই মেয়ে? একে আগে কোথাও দেখেছি বলে তো মনে পড়ছে না! কিন্তু সে তো আমার সব খবরাখবর জানে, কবে কোথায় আমার কোন প্রোগ্রাম, কোথায় কি বলেছি, কোথায় কি নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করি। কোথায় কখন থাকছি, কোথায় যাচ্ছি বা কোথায় যাবো সবই প্রায় জানে। কিন্তু তাহলে আজকেই যে আমার বিকেল ৫টায় ফ্লাইট এটা সে কেনো জানে না। সে উল্টো মনে করে বসে আছে আমি আমার ফিঁয়াসে বা প্রেমিকাকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্ট যাচ্ছি। যাক সে যেহেতু জানে না তাহলে বিষয়টা নিয়ে তার সঙ্গে একটু মজা করা কি উচিত হবে আমার না কি তাকে সব কিছু সরাসরি বলে ফেলাই ভালো হবে। নাহ সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।

-কি বিজ্ঞানী মশায় কি কোন বড় সমস্যার সমাধান নিয়ে ব্যস্ত?
- না মানে, এই আর কি!
- আমার ভার্সিটির অনেক ছেলেই স্বপ্ন দেখে আমার গাড়িতে পাশের এই আসনে বসে আমার সঙ্গে লং ড্রাইভে যাচ্ছে। তাদের সেই স্বপ্নটা নাকি বাস্তব হলে তাদের মত ভাগ্যবান আর কেউ হবে না বলে তারা মনে করে।
- জ্বী? আমি আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না!
- আপনি আসলেই একটা বুদ্ধু!
- জ্বী?
- আরেহ অমন জ্বী জ্বী না করে এবার গাড়ী থেকে নামুন দেখি!

ইতিমধ্যে গাড়িটি কখন যে পার্কিং লটে পার্ক করে ফেলেছে টের পাইনি একদম। গাড়ি থেকে নেমে চারদিকে চেয়ে আমার হৃদয় জুড়িয়ে গেলো! ইশ্, পৃথিবীতে এত সুন্দর যায়গাও রয়েছে না দেখেলে জানা হতো না! সবসময় বিজ্ঞানের কাঠ-খোট্টা রসকসহীন বিষয়গুলো নিয়ে পড়ে থাকার ফলে মনে হচ্ছে আমি আরও সুন্দর সুন্দর কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর রং, রূপ, রস, গন্ধ আহরণের সুযোগ বঞ্চিত রয়ে গেছি দেখছি।

- কি হলো? আপনাকে কি এভাবে চারিদিকে চেয়ে থাকার জন্য এখানে নিয়ে এলাম, নাকি আপনি এ জগতে একাই রয়েছেন?
- জ্বী?

প্রায় ধমকে উঠল মেয়েটা এবার।

- ক্লাসের বাধ্য ছাত্রের মতো কথায় কথায় অমন জ্বী জ্বী একদম সহ্য হচ্ছে না কিন্তু আমার! আপনি কি এভাবেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চারিদিকে দেখবেন না আমার হাতটি একটু ধরবেন?
- হাত ধরব! কেন?

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:০৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×