somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘লাবণ্য দাশের সাথে দেখা হওয়ার পর’ গল্পের বই থেকে কিছু অংশ...

২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘ প্রথম ছায়া আমার দিকে গভীর করে তাকায়। তার চোখে যেন কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা। কী খুঁজছে সে? আমি নিজের পুরো শরীরটা একবার ঘুরে আসলাম। ধাস্তাধস্তি করার কারণে আমার পুরো শরীরটাই ক্ষত-বিক্ষত। আর পশুত্বের চিহ্ন রাখতে এরাও কম করেনি। ইচ্ছে মতো অত্যাচার করেছে। আমি বোবা রোবটের মতো সয়ে গেছি। বাধ্য হয়েছি। মুখ, হাত-পা বাঁধা একটা মানুষ আর কী করতে পারে! বাম পাশটা ফেটে পুরো কপালটায় রক্তে মাখামাখি হয়ে লেপ্টে আছে। নিচের ঠোঁটের ডান পাশটা ফেটে রক্ত গড়িয়ে জমাট হয়ে আছে। গলার নিচে বেসামাল কামড়ে ছিলে গেছে অনেকটা। বাম স্তনের নিচে নখের আঁচড়ে এমন হয়েছে যে, শকুনের খুবলে খাওয়া মড়ক মনে হচ্ছে নিজেকে। নাভীর নিচের দিকটার অবস্থা আরও খারাপ। পিংক কালারের পাজামাটার অধিকাংশই ছেঁড়া। পাজামাটা ওরা কোনো রকম পেচিয়ে রেখেছে ঠিক। কিন্তু ফিতাটা বেঁধে রাখার প্রয়োজন মনে করেনি। কেনই বা করবে! কী আর প্রয়োজন আছে সংরক্ষণের! ঢেকে রাখার! বুকের মতো উন্মুক্ত হলেও আমার শরীর এখন আর কাউকে কামোদ্দীপক করে তুলতে পারবে না। যোনির চারপাশ ক্ষত আর রক্তে মাখামাখি। নাহ্ আমার কাছে কিছুই নেই এখন! যার দিকে কেউ ওমন ভঙ্গিতে তাকাতে পারে। আমি সন্দেহের মধ্যে পরে গেলাম। বাকি দুজন আদর্শ শ্রমিকের মতো মাটি খুঁড়ে যাচ্ছে। তাদের কাছে এই মুহূর্তে এর চেয়ে কোনো জরুরি কাজ নেই। সত্যিই তো নেই। তারা এ ছাড়া আর কী করবে! আমি নিজেকেই প্রশ্ন করি। আমি হলে কী করতাম? নাহ্ আমি কোনো যুক্তি দাঁড় করাতে পারছি না। ইস্ আমি যদি হাতটা একটু নাড়াতে পারতাম! ছুঁয়ে দেখতে পারতাম আমার যত্নে রাখা শরীর। শরীরের প্রিয়সব স্থান। রাফির ভালোবাসা... ’

[ ‘চাঁদের মুখোমুখি রাত ‘ গল্প থেকে ]

আমি আর সীমান্ত বাসন্ডা নদীর পাড় ধরে হাঁটছিলাম। আজও লাবণ্যকে স্বপ্ন দেখার কথা বললাম। আজ আর সীমান্ত হাসলো না। ওকে কেমন চিন্তিত মনে হলো।
‘জানিস গত রাতে আমি তসলিমাকে স্বপ্ন দেখেছি।’
আমি জোরে হাসলাম। এ হাসি শরীয়তের তিন প্রকার হাসির আওতায় আটকে থাকলো না। আমার হাসি দেখে সীমান্ত কিছুটা বিরক্ত হলো।
‘আচ্ছা তুই প্রতিরাতে জীবনানন্দের বউকে স্বপ্নে দেখতে পারিস। আর আমি সিঙ্গেল তসলিমাকে স্বপ্ন দেখতে পারবো না?’

.......
শহরের বইপত্র লাইব্রেরী থেকে তসলিমার বই কেনার সময় আমি ওর মুখে দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আহারে বেচারা। কেমন খুশি খুশি মন! কিন্তু এই খুশিখুশি মুখটা মুহূর্তেই চিন্তিত মনে হয়। কারণটাও আমার অনুমেয়। যে কোনো শরীয়া বিরোধী বিতর্কিত বই আমাদের ছাত্রাবাসে রাখা নিষেধ। পাঠ তো দূরের কথা। তারপরও নসীম হিযাযীর সাথে সাথে আমি আর সীমান্ত হুমায়ুন আযাদ-তসলিমা নাসরিন পড়ি। এই পড়া প্রজেক্টকে বাস্তবায়ন করতে আমাদের রীতিমত এক যুদ্ধ জয়ের কৌশল অবলম্বন করতে হয়। একরুমে আমরা ছয়জন থাকি। বড় রুম। ছোট ছোট ছয়টা চৌকি। চৌকির সাথে ছোট একটা করে টেবিলও। টেবিলে ক্লাসের বই সাজানো থাকে। বাকী জিনিসপত্র চৌকির নীচে তোরঙ্গতে রাখতে হয়। আমাদের অন্য চারজন রুমমেইটের একজন আবার কুরআনে হাফেজ। যে কারণে এশার নামাজ ফাঁকি দিয়ে রুমে তালাবদ্ধ হয়ে বসে থেকে টেবিল লাইট জ্বালিয়ে বই পড়ার কৌশলও সবসময় নিরাপদ হয় না। তার থেকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অসুস্থতার অজুহাতে রুমে তালাবদ্ধ থেকে নিষিদ্ধ বই পড়ার কৌশলই ভালো কাজ দেয়। কারণ নামাজে যাওয়ার সময় একবার এবং নামাজ চলাকালীন সময়ও মাঝে মাঝে রুম চেক করা হয়। যাতে কেউ ফাঁকি দেয়ার সুযোগ না পায়। তবে সুবিধার বিষয় হলো হাফেজ সাহেব অল্প বয়সে বিয়ে করার কারণে অধিকাংশ সময়ই বাড়িতে থাকে। তার বাড়ি থাকার সুবাধে আমরা তসলিমা ধরনের বিভিন্ন বই এশার নামাজের সময় ও ক্লাস ফাঁকি দেয়ার সময় পড়তে পারি।

[ ’লাবণ্য দাশের সাথে দেখা হওয়ার পর' গল্প থেকে ]

..................................
বইয়ের নাম: লাবণ্য দাশের সাথে দেখা হওয়ার পর
লেখকের নাম: সানাউল্লাহ সাগর
বইয়ের ধরন: গল্পের বই
প্রকাশক: অনুপ্রাণন প্রকাশন
প্রকাশকাল: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ খ্রি.
প্রচ্ছদ: আল নোমান
মলাট মূল্যঃ ২০০ টাকা

স্বাগতম অনুপ্রাণন প্রকাশন ‘র ২৩১-২৩২ নং স্টলে।
দেখা হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়...
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৫৪
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×