somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবিতাঃ নিষিদ্ধ সিঁড়ি

০২ রা জুলাই, ২০২২ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই সমুদ্র
এই অস্থিরতা
এই তুমি
এই মন্থর বাতাস
প্রতিটি নিঃশ্বাস—
ফেলে দেওয়া আত্মার মতন
যে আত্মা হাঁটতে হাঁটতে
মাতৃত্ব ভুলে যায়
পিতৃত্ব অস্বীকার করে—
শাদা কুকুরের মতোন
কালো কুকুরের মতোন
বাদামী কুকুরের মতোন
মানুষের কাছে অদৃশ্য হয়ে
গভীর ইচ্ছের কাছে হেরে যায়।
বারবার হেরে যায়—
হারতে
হারতে
আবার হেরে যায়...

ডুবে যায়—
কালো একটি নামের মধ্যে
যে নামের মধ্যে তুমি আছো
যে নামের মধ্যে সিঁড়ি আছে
যে নামের মধ্যে শাদা পৃষ্ঠাগুলো
যে নামের মধ্যে কলম
যে নামের মধ্যে টেবিল
যে নামের মধ্যে চেয়ার
যে নামের মধ্যে দুনিয়া নামের আমরা
আমাদের মতো খুড়িয়ে খুড়িয়ে
নিষিদ্ধের মতো তারা গুনতে গুনতে
তোমার মতো নতজানু হয়ে—
তোমার ইচ্ছের মতো হামাগুড়ি দিয়ে
চোখের মতো
ঝাউগাছের মতো শনশন করে
কেবল চিৎকার করে—
আমি ভালোবাসি সেই সৃষ্টিকে
আমি ভালোবাসি—
আমি ভালোবাসি; সেই নিমগ্নতাকে
যে নিমগ্নতা—কেবলই ডুবে থাকতে দেয়
ডুবিয়ে রাখে তোমাকে-আমাকে।
আমাদের মুছে যাওয়া সেইসব স্মৃতির মধ্যে
আমাদের ফেলে রাখা সেইসব ইচ্ছের মধ্যে
আমাদের ছিঁড়ে ফেলা সেইসব টুকরো কাগজের
সঙ্গমের মধ্যে—
আমাদের অস্থির, উন্মাদ গন্ধের মধ্যে...
সেখানেও আমাকে পাবে
সেখানেও আমি আছি,
তোমার স্তনে
তোমার নিপলে
তোমার নাভীতে
সবখানে আমি আছি
স ব খা নে—

আমাকে ছুটি দিয়ে
তুমি বেঁচে আছো!
কোথায় আছো?
কোথাও নেই
তুমিও নেই, আমিও নেই
অথচ আমরা আছি
জোছনার মতো
লাল পথের মতো—গতিময়;
মিথ্যে শব্দের মতো গোছানো
খুব গোছানো
খুব অন্তরীণ,
অভ্যন্তরীণ শোক-শব্দের মতো।
ভেসে
ভেসে
যারা চলে গেছে
অন্য স্রোতের গতি দেখে
অন্য পথে, অন্য গ্রহে
অন্য তুমিতে
অন্য আমিতে।
সেখানেও আমি
সেখানেও তুমি
সেখানেও আমরা!
আমাদের মতো
বেঁচে আছি।
যদিও তুমি ছিঁড়ে ছিঁড়ে
কষ্টের টুকরো
কষ্টের চিরকুট—
ভাসিয়ে দিয়েছো সমুদ্রে,
ভাসিয়ে দিয়েছো চোখের
টপটপ পানির মধ্যে
তবুও আমি বেঁচে আছি
তোমার দৃষ্টির ফোঁটায়
তোমার শ্বাস-প্রশ্বাসে।

মৃত্যু, নরম করে
খুব নরম করে—ডেকে দিও
তোমার মতো
ডেকে দিও আমাকে।
ছেড়ে দিও হুরের নাভীতে,
মোহনায়,
শাদা চুলের ইচ্ছায়—
অনিচ্ছার মতো আমি জেগে আছি...
জেগে থাকবো তোমার ঘোরে
যে ঘোর বাঁচিয়ে রাখে
কেবলই বাঁচিয়ে রাখে—
কোনো শখের পল্লীতে
কোনো তারার যোনিতে
সেই সব শব্দের মতো
সেইসব গণিতের মতো
সেইসব ডুবের মতো
আমিও ডুবে যাবো।
ডুবে ডুবে চলে যাবো
কোনো বাস
কোনো স্রোত
কোনো ক্যান্টনমেন্ট
কোনো এপ্রোন
কোনো খানবাড়ি
তখন কেউ থাকবে না আমাদের মধ্যে।
কেবল আমরা থাকবো
নরম তুলোর মতো
হাওয়ায় উড়ে যাওয়া ঈশ্বরের মতো
গাঢ় সবুজ জীবনের মতো
তাচ্ছিল্যে বেড়ে ওঠা প্রেমের মতো
আচ্ছন্ন জীবনের মতো
প্রেমের সিঁড়িতে সিঁড়িতে—
যে সিঁড়িতে তুমি আছো
তোমার ঘাম আছে
তোমার কাম আছে
তোমার উচ্ছলতা আছে
সেই সিঁড়িতে
আমি চলে যাবো
আমি ডুবে যাবো
আমি ভেসে যাবো
ঢেউয়ের ডাকে
যে ডাক আমাকে
চিরদিনের মতো ছেড়ে দেয়
মুছে দেয়
সেই ডাকে
আমি মুছে যেতে চাই
ভেসে যেতে চাই—

ভুল ও হুঁলের অন্ধকারে
ভুলের মতো বাতাসে; তুমি আছো
তোমার মতো অস্থিরতা নিয়ে
তোমার মতো ভালোবাসা নিয়ে
যে ভালোবাসা আমাকে শিখায় পরি নামের একটি শব্দ
যে ভালোবাসা আমাকে নামাজের মতো
যে ভালোবাসা আমাকে রুকুর মতো
যে ভালোবাসা আমাকে সেজদার মতো
যাপন শিখায়—
সে ভালোবাসা থেকে
আমি কখনো কোথাও যাবো না
কোথাও যাবো না।

নিভে যাবো অন্ধের মতো
নিভে যাবো বোবার মতো
যে বোবারা চেপে রাখে আলো
যে বোবারা চেপে রাখে অস্থিরতা
যে অন্ধকার ঢেকে রাখে খইখই ছটফট
যে বোবারা ঢেকে রাখে ল্যাম্পপোস্টের এতিম বালু
যে বোবারা ঢেকে রাখে মধ্য রাতের নিঃসঙ্গতা
একাকী প্রেমিকের গরম চোখ।
সেখানে তোমাকে নিয়ে
আমি আমার মতো
একটা যাদুঘর
একটা পথ
একটা সমুদ্র
একটা ঢেউ
একটা নামফলক উন্মোচন করবো।

একটা মন পুড়ে যাচ্ছে
একটা মন ডেকে যাচ্ছে
কোথায় তুমি?
কোথায় আলো
সব থেকে কুড়িয়ে কুড়িয়ে
সব মনোযোগ আমার দিকে নিবো।
সব মনোযোগ শব্দের মধ্যে
ব্রাকেটের মধ্যে গুছিয়ে গুছিয়ে
না গোছানোর মধ্যে বিলিয়ে দিবো—
ঢেউয়ের চুলে চুলে
আগুনের ঠিকানায়, নামে—অভ্যাসে
যে অভ্যাস থেকে তুমি
ছেটে ফেলেছো আমাকে
ছেটে ফেলেছো সমুদ্র
ছেটে ফেলেছো ঢেউ
ছেটে ফেলেছো বিছানা।
যে বিছানায়
যে সঙ্গমে, তুমি-আমি একীভ‚ত হয়ে
একা...খুউব একা
খুউব নিঃসঙ্গ হয়ে গেছি।
নিঃসঙ্গ হয়ে গেছি শেষ রাতের ঝাউ গাছের মতো
পাহাড় থেকে ফিরে আসা পানির মতো।
সেখানে তুমি-আমি—আমরা বেঁচে থাকবো
কান্নার মতো
বেঁচে থাকবো—মরে যাওয়ার মতো
বেঁচে থাকবো মুক্ত-স্বরের মতো।

যদি ভুলে যাও আমাকে
ভুলে যাও গেঁথে রাখা মুহূর্তগুলো;
সেখানেও আমি—সবখানে আমি
তোমার বিছানায়,
তোমার ব্যালকনিতে,
তোমার গেস্টরুমে
তোমার ওয়াশরুমে—
কোন্্খানে আমি নেই!
সবগুলো শোকেসে
তোমার সবগুলো বইয়ে আমি আছি
আমার সবগুলো কবিতায় তুমি আছো।
তোমাকে আমি বাঁচিয়ে রেখেছি
তোমাকে আমি বাঁচিয়ে রাখবো
তুমি বেঁচে থাকবে
একাকী; খুউব একাকী—
আমার ভালোবাসার মতো
আমার প্রেমের মতো
আমার অস্থিরতার মতো
অদৃশ্যের মতো
তুমি বেঁচে থাকবে...

২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ খ্রি., কলাতলি বিচ, কক্সবাজার।

#সানাউল্লাহ_সাগরের_কবিতা
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০২৩ সকাল ১০:৫৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×