somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগার থাবা বাবা (রাজিব)-এর মৃত্যু ও তাঁর নাস্তিকতা বিষয়ক বিতর্কের সমাপ্তি

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজিব ভাইয়ের মৃত্যুতে আমি এতই মুষড়ে পড়েছিলাম যে আমি কী করব, কী করা উচিত; কী বলব বা কী বলা উচিত ভেবে পাচ্ছিলাম না। ফেসবুক-ব্লগে রাজিব ভাইয়ের নাস্তিকতা নিয়ে জামাতসহ অনেকের প্রচার-প্রচারণা-উত্তেজনা দেখেছি। রাজিব ভাইয়ের নাস্তিকতা চর্চা নিয়ে অনেক ডিফেন্সও প্রত্যক্ষ করেছি। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই।

ধর্ম চর্চা কি মানুষের জন্মগত প্রাপ্ত? আমি বলব- না। ধর্ম বা ঈশ্বর একটি জ্ঞান; অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান। একটি শিশু জন্মের মাধ্যমে কোন ধর্মপ্রাপ্ত হয় না; কোন ঈশ্বর-জ্ঞানও প্রাপ্ত হয় না। পরিবারে তার বাবা-মা-প্রতিবেশী-আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু-বান্ধব সর্বোপরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিশুটি ধর্ম বা ঈশ্বরজ্ঞান লাভ করে। সে জ্ঞান লাভ করার পূর্বে কিন্তু একটি শিশু নাস্তিকই (যদি ঈশ্বর-জ্ঞানহীনতাকে নাস্তিকতা বলি)।

একটি শিশু যখন একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে তখন সে ক্রমে ইসলাম ধর্ম-জ্ঞান প্রাপ্ত হয় এবং শিশুটি মুসলমান হয়। তেমনি একটি শিশু হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করলে সে ক্রমে হিন্দু ধর্ম-জ্ঞান প্রাপ্ত হয় এবং শিশুটি হিন্দু হয়। সব ধর্মানুসারীদের ক্ষেত্রেই এমনটাই হয়। রাজিব ভাইয়ের সাথে বিভিন্ন সময়ে কথা বলে যা জেনেছিলাম- তাঁর বাবা ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে রাজিব ভাইকে কখনোই তেমন উৎসাহিত করেননি। রাজিব ভাইয়ের নাস্তিকতা অনেকটাই পরিবার থেকে প্রাপ্ত, যা অনেকটা আমার ছেলের মতই।

যদিও ধর্ম বিষয়টি মুখস্থ করার কোন বিষয় নয়, ধর্ম পুরোপুরিই একটি জ্ঞান; যে জ্ঞান কোনভাবেই মুখস্থ-জ্ঞান হওয়া উচিত নয়; আমাদের সমাজ ও পরিবার ধর্মকে মুখস্থ-জ্ঞান হিসেবেই বিবেচনা করে আসছে। এজন্যই একজন মুসলমানের সন্তান মুসলমান হয়, হিন্দুর সন্তান হিন্দু হয়। আমাদের সমাজের প্রচলিত ধারানুসারে ধর্ম নির্ধারণ করে দেয় পরিবার ও পরিবারলব্ধ জ্ঞান, কোনক্রমেই তার স্বশিক্ষালব্ধ জ্ঞান নয়।

এজন্যই স্বশিক্ষিত ব্যক্তিরা যখন আবিষ্কার করে যে তাঁর ধর্মটি কোনক্রমেই তাঁর নিজস্ব শিক্ষালব্ধ জ্ঞান নয়, পুরোই পরিবার আরোপিত ধর্ম তখন অনেকেই তাঁর নিজ ধর্ম পালন থেকে বিরত থাকেন।

পরিবার আরোপিত ধর্মটি সবসময়ই কিছু সংকীর্ন ধ্যান-ধারণা পোষণ করে থাকে, স্বশিক্ষিত ব্যক্তিটি সে সংকীর্ণতার উর্ধে উঠে বৈশ্বিক মানবিক ধর্মের ধারক হতে চান। সে পথে চলতে গিয়ে কেউ কেউ একেবারেই নীরব থাকেন, তার পরিবারের ধর্মটির সংকীর্ণতাকে সংশোধনের কথা চিন্তা করেন না; কেউ কেউ সরব হয়ে তার পারিবারিক ধর্মটির সংকীর্ণতাকে সংশোধনের চেষ্টা করেন। রাজিব ভাই ছিলেন দ্বিতীয় দলের।

রাজিব ভাই বা অন্য নাস্তিকদের বেশিরভাগই সবধরণের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব থাকেন বা থাকতে দেখি (আমি এখানে মূলত নাস্তিকদের সংখ্যানুপাতে বেশি থাকার ব্যাপারটাকে বুঝিয়েছি)। নাস্তিকদের স্বশিক্ষা ও বৈশ্বিক-মানবিক প্রেম তাঁকে অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে নীরব থাকতে দেয় না।

কিন্তু কোন নাস্তিকই হিংস্রতাকে লালন করেন না, রাজিব ভাইও করতেন না। নাস্তিকরা সবসময়েই বলে থাকে কলমের জবাব কলম দিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীলদের কলম কখনোই ধারালো হয় না, তাই তাদের অস্ত্রের আশ্রয় নিতে হয়। যার নিষ্ঠুর উদাহরণ হয়ে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ হলেন আমাদের রাজিব ভাই।

রাজিব ভাইকে যে তাঁর লেখার জন্য হত্যা করা হয়েছে এমন নয়। তাকে হত্যা করা হয়েছে শাহবাগ আন্দোলনকে বিভক্ত করার জন্য, তাদের অপপ্রচারকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। রাজিব ভাইয়ের যে ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগ আছে এটা আমি জানতামই না, কোনদিন শেয়ার করতেও দেখিনি। রাজিব ভাইকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে শাহবাগের আন্দোলনকারীদের বিভাজিত করার যে প্রচেষ্টা ওরা করতে চেয়েছিল মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রকৃত মানুষের কাছে মানুষের পরিচয় কেবল মানুষ- হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, আস্তিক-নাস্তিক নয়। প্রকৃত মানুষের কাছে- "মানুষের চেয়ে বড় কিছু নেই, নহে কিছু মহীয়ান।"
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪২
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×