somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের দেউলিয়া দেশপ্রেমের পূর্নজাগরণ

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মতো যারা সত্তর দশেকের শেষ থেকে শুরু করে নব্বই দশকের মাঝামাঝির মধ্যে জন্মেছে এবং পারিবারিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার শিক্ষা পায়নি তারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা শব্দটিকে ভাল না বেসে অনেকটা অবহেলা করতে শিখেছে। মুক্তিযুদ্ধ যে একটা জাতির জন্য কত আবেগের তা তারা বুঝতে পারেনি। তাদের বেশিরভাগই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জেনেছে যে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গ্রেফতারকৃত হয়ে পাকিস্তানে বন্দী ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ শাসন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য বাকশাল গঠন করেছিলেন। আমার মতোই এই প্রজন্মটি জেনে এসেছে যে বঙ্গবন্ধুর ছেলেরা হেন কোন খারাপ কাজ নেই যা করেনি এবং বঙ্গবন্ধু তা প্রশ্রয় দিয়েছেন, এর মধ্যে অন্যতম ছিল শেখ কামাল কর্তৃক মেজর ডালিমের বউ অপহরণ। মুজিব পরিবার নিয়ে এরকম পুরোপুরি সত্য-বিবর্জিত অনেক গুজব প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে।

শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার যে দীর্ঘ ইতিহাস তা আমরা জানিনি। এমনকি ৭ মার্চের ভাষণ, যা শুনলে ইতিহাস-না-জানা আমারও রক্ত প্রবাহ দ্রুততর হতো, কেবল বিশেষ দিবসগুলোতে একমাত্র আওয়ামী লীগের অফিসগুলোতেই মাইকে বাজানো হতো। আমাদের পাঠ্য বইয়ে শেখ মুজিব একেবারেই অনুপস্থিত ছিলেন, সাত বীরশ্রেষ্ঠর জীবনীই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শিক্ষা। তারপরও ঐটুকুও বারবার পড়তাম। মতিউর রহমানের উড়োজাহাজ নিয়ে বাংলাদেশে আসার প্রচেষ্টা নিয়ে কত স্বপ্ন দেখতাম! দেখতাম মতিউর রহমান উড়োজাহাজ নিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন; তারপর পাকিস্তানীদের সাথে উড়োজাহাজ যুদ্ধ করছেন। মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর আরো দুটো দিন বেঁচে থেকে বিজয় দেখতে পারলেন না বলে কী যে কষ্ট হতো! স্বপ্ন দেখতাম মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর আরো দুটো দিন বেঁচে আছেন এবং পতাকা ও রাইফেল হাতে বিজয়োৎসব করছেন। এমনসব স্বপ্ন দেখতে কী যে ভাল লাগতো!

ওটুকুই সব। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক ও পারিবারিকভাবে যেমন মুক্তিযুদ্ধের শিক্ষা পাইনি, তেমনি শিক্ষার জন্য আমাদের ছিল না কোন শিক্ষানীতি, যা আমাদেরকে একটি উদ্দেশ্যহীন শিক্ষায় (কু)শিক্ষিত করেছে। আমাদের শিক্ষাকে একেবারে উদ্দেশ্যহীন বলাও যুক্তিসংগত হবে না। যে উদ্দেশ্যহীন শিক্ষা আমরা পেয়েছি তা আমাদেরকে উদ্দেশ্যহীন করলেও তখনকার রাজনীতিক/রাষ্ট্রনায়কদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য খুবই উপযুক্ত ছিল। বারবার শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়েছে, সুপারিশ এসেছে কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি; কারণ তা রাষ্ট্রনায়কদের উদ্দেশ্যকে সমর্থন করে না। এর ফল হয়েছে যে আমরা শিক্ষিত হয়েছি কিন্তু আলোকিত হয়নি, উল্টো ক্রম-অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছি। আমাদের সুন্দর ও সুদীর্ঘ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকেও শিক্ষার সংকটে আমরা দেশপ্রেমিক হতে পারিনি; ক্রমাগত দেশপ্রেম হারিয়ে দেউলিয়া হয়েছি।

দেশপ্রেমে দেউলিয়া ও অন্ধকারে নিমজ্জিত একটি প্রজন্মকে কাজে লাগিয়েছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো যখন রাজনৈতিক টানাপোড়েনের হিসেবে ব্যস্ত তখন এই পরাজিত শক্তি তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে গোপন এজেণ্ডা বাস্তবায়নে ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করেছে। তারই ফল আজকের এই জামাত শিবির।

যদিও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনরূপ সংশোধন হয়নি, হয়নি শিক্ষাব্যবস্থারও তেমন পরিবর্তন, তারপরও অনলাইনে তথ্যের অবাধ প্রবাহই আজকের তরুণ প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছে। ইতিহাসের তেমন কিছু না জেনেও আমার মতো যারা মতিউর বা মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতো তারাও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েছে, আমাদের আগের প্রজন্মের যারা এতদিন রাজনৈতিক দৈন্যতার চিত্র দেখতে দেখতে স্বপ্ন দেখতে ভুলে গিয়েছিল তারাও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হতেও দেরী হবে না। প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন দিয়েই হোক একটি সুস্থ সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের বাস্তবায়নের যাত্রা। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমার মতোই স্বপ্ন দেখুক, "আহঃ রাজীব-শান্তরা যদি আর কটা দিন বেঁচে থাকতো, তাহলে একটি সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে পারতো!"
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×