ধরেন আপনি আজ থেকে কিছু খারাপ কাজ বর্জন করার সিদ্বান্ত নিলেন। লিস্ট টা যথাযথ না হইবার সম্ভাবনা প্রবল কিন্তু এই মুহুর্তে যা মাথায় আসছে তাহা আমি তুলে ধরতেছি।
১। যথা সম্ভব মিথ্যা কথা বলা বাদ দিব। কাউকে মিথ্যা বলার ফলে যদি আমার বিশেষ কিছু সম্মান বাড়ে তবে অবশ্যই আমি সত্য কথা বলব। আমার যা নেই, অন্যকে মোটেও তা বলব না। পুর্বে যা যা বলেছি ধীরে ধীরে তাহা নিয়ে নিজের অবস্থান বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্কার করব যাতে আমার মান সম্মানের বারোটা সহজে না বাজে।
২। আমার সুবিধার জন্য সিস্টেম করাপ্ট হোক, এটা আমি চাই না। (মনে করেন পাসপোর্ট নিজে করতে গেলাম, তো পাঁচ/ছয় হাজার টাকার মধ্যে হইয়া যাইবে, সাথে পুলিশ ভেরিফিকেশন খরচ। আমি চেস্টা করব (ভেরিফিকেশন খরচ/ঘুষ) না দেবার। অথচ দালাল দ্বারা করাইলে সময় অনেক কম লাগবে, আট/দশ হাজার টাকার মত লাগবে কিন্তু আমার টাকা আছে বলেই আমি ইহা সিস্টেম নস্ট করতে সহযোগিতা করব না।)
৩। নামাজ পড়বার সময় কল্পনায় থাকবে আল্লাহর সামনে উপস্থিতি দেওয়া। আদালতে একজন আসামী যেমন নিজেকে অবনত রাখিয়া থাকে, নামাজে আমি আল্লাহর সামনে এমনি নত মন নিয়ে উপস্থিত হইব। আশেপাশের মানুষ যদি আমার নামাজ পড়া দেখে হাসাহাসি করে, আমি কেয়ার করব না। সময় সুযোগ হইলে তাদের নিজের মতামত (ইসলাম/কোরআন/আল্লাহর আসল চাওয়া আমাদের হইতে) তুলে ধরব। আল্লাহ আমাদের নামাজের জন্য কাঙাল নহেন বরং নামাজ ব্যাপারটা সম্পুর্ণ আমাদের নিজস্ব দরকারি বিষয়। আমরা যদি আল্লাহর নৈকট্য চাই, তবে ইহার বড় মাধ্যম হইতেছে নামাজ। এখানে নিয়ম রক্ষার নামাজ পড়া মানে নিজের পায়ে কুড়াল মারা।
৪। রাজনীতি/লোকাল পলিটিক্স হইতে যথা সম্ভব নিজেকে দুরে রাখতে চাইব। কারন রাজনীতির লোকেরা উঠতে বসতে মিথ্যা কথা বলে। নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে খুবই নম্রতার সহিত অন্যের সাথে আলাপ করব। নিজ দল/লোকের প্রচার/ভাল কিছু বলতে গিয়ে ইহা যেন কোনভাবেই মিথ্যা কথা না হয় সেইটা পদে পদে খেয়াল রাখব। আবার নিজ লোকের খারাপ কাজের সমর্থন না করে চিপায় চিপায় সরে গিয়ে নিজেকে অন্তত পক্ষে অন্যায়ের সাথে সহযোগী হওয়া থেকে আটকাইতে পারি।
৫। আমার প্রতিটি কথা বলার আগে দুই-বার ভাবতে সচেষ্ট হইব, যেন আমার কথা দ্বারা অন্যের ক্ষতি না হয়, মিথ্যা কথা না হয়, মিথ্যা আশ্বাস না হয়, চাপাবাজি না হয়, লোক ঠকানো না হয়, অন্য মানুষকে অযথা অপমান করে মজা না লুটি। নিজের মতের অমিল এমন মানুষের দাম কমানোর জন্য যেন গুজবে শামিল না হই।
আমি মাত্র কয়েকটি তুলে ধরতে সক্ষম হইলাম। আমি কোরআনের যা পড়েছি তার মধ্যে মুসলমান হইবার প্রাথমিক শর্ত হিসাবে মোটামুটি এইসকল পাইলাম। এখন কথা হইতেছে, এইগুলা পালন করা না করা আমাদের যার যার চয়েস। এই চয়েস সিরিয়াসলি নিলে যে পথে আগাতে হবে ইহার নাম সংগ্রাম। নিজের বিরুদ্ধেই সংগ্রাম করতে হইবে এক নম্বরে। এরপরে নিকট লোক/বন্ধু/আত্মীয়/প্রতিবেশি/কলিগেরা তারপরে আসে সমাজ, দেশ ইত্যাদি।
ইহাই হইতেছে প্রকৃত জিহাদ। যে জিহাদের কথা আমাদের ইসলামের তথাকথিত ধারক/বাহকেরা প্রচার করে না। কারন তারা একটা কৃত্রিম ইসলাম প্রতিস্টিত করে রাখিয়াছে। এই কৃত্রিম ইসলাম এমনভাবে আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হইয়াছে যে আমরা সম্পুর্ণ ভুল এক ইসলাম পালন করতেছি যেখানে খুব সহজে ইসলামের আদর্শের সাথে শতভাগ সাংঘর্ষিক জংগিবাদ খাপ খায় এমনকি উহাকে উল্টা জিহাদ হিসাবে বলা হইতেছে। ভাবেন অবস্থা!
একটিস সফল জীবনের সংজ্ঞা আমার কাছে এইরকম-
জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যিটা হচ্ছে মৃত্যু। ইহা ইনেভিটেবল নহে। অতএব এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে সুস্থ দেহ ধারণ করার মত+ মা-বাবার সেবা+স্ত্রী পুত্র ব্যয় নির্বাহ করার মত সম্পদ অর্জনের টার্গেট থাকিবে। আমি সম্পদ বাড়াইতে সচেস্ট থাকব কিন্তু কোনভাবেই অন্য মানুষের ক্ষতি না করে, কোনভাবেই সিস্টেম করাপ্ট না করে যেভাবে পারা যায়, যত নীরিহ হই সমস্যা নাই। তবে নস্টের অগ্রযাত্রায় আমি অংশ না নিয়ে কোনরকমে পুরো জীবন কাটাইতে পারিলেই ইহার নাম সফলতা।
ইহাই সফল জীবন।
এই সফল জীবনে সিভিল/এজুকেশন/বিজনেস/আইটি/ইনোভেশন/ক্যারিয়ার/ব্যাংক/বীমা/ফাইন্যান্স/এডমিনিস্ট্রেশন/ডিপ্লোমেসি দুনিয়ার তাবৎ পেশাধারীর দ্বারাই সম্ভব। দরকার হইতেছে চয়েস এবং প্রতিনিয়ত সংগ্রামের ইচ্ছা।
বড় সত্যিটা হইতেছে এই চয়েস আদম জাতকে আল্লাহ দিয়েছেন। কিন্তু শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ চয়েস নিতে চায় না অনেক কারনে। যেমন প্রতিস্টিত সমাজে যে পরিমাণ প্রতিকূলতা আসবে তা ফেস করা সোজা কথা না। বাস্তব বড় কঠিন। তাই মানুষেরা ভেবে নিয়েছে আদর্শিক ব্যাপার বই পুস্তকে থাকার জিনিস, বাস্তবের নহে। প্রাত্যহিক জীবনে ক্রমাগত আসতে থাকা সমস্যা গুলোকে সে ফেস না করতে চয়েস করে। তাই তো আমাদের চলমান জীবনে সুখ তো দুরে থাক, ক্রমাগত দুর্নিতি, অশান্তির মাত্রা যোগ হইতেছে। ইহার পরিবর্তন করতে হইবে নিজের ভেতর থেকে। আপনি কি মনে করেন ইহা সম্ভব?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:২৬