somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষণিকা

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি আমাদের পুরানো বাড়িটা ভেঙে ফেলা হলো। মালপত্র সরানোর সময় আমি আমার ঠাকুরদা স্বর্গীয় আনন্দ রায় চৌধুরির লেখা একটা ডায়েরি খুঁজে পেয়েছি। নিচের লেখাটি সেখান থেকে নেয়া। তারিখ ৩০শে মার্চ,১৯৩১ইং। নামটি অবশ্য আমার দেয়া, ক্ষণিকা।“




দুজনেরই একই কামরায় আসন পড়িয়াছিল। বাষ্পীয় রেলে চাপিয়া দার্জিলিং যাইতেছিলাম। শ্রেণীটি ছিল প্রথম এবং তাহাতে শুধুমাত্র আমরা দু’তরফই ছিলাম। তাহার সহিত ছিল দুইখানা বাসকো আর একখানা দাসী। আমি একাই ছিলাম। সদ্য বিলাত হইতে আইনের ডিগ্রী লইয়া আসিয়াছি। বিবাহের জন্য বাড়িতে পাত্রী খোঁজা আরম্ভ হইয়াছে। বঙ্গদেশে তো দেখি সুন্দরী, সুলক্ষণা, সুকন্ঠী, গৃহকর্মে সুনিপুনা ইত্যাদি বিশেষনে বিশেষায়িত কন্যার অভাব নাই! ঘটকের তোড়জোড় দেখিয়া মনে হইলো মুখশ্রী ও যোগ্যতায় আমিও বুঝি ততোটা মন্দ নই। কিন্তু এখনই ঐ দিল্লীকা লাড্ডু খাইতে আমার মত নাই। অতএব বাড়ি হইতে পলায়ন। একমাস ধরিয়া ভারত ভ্রমণ করিতেছি। এইবারকার উদ্দেশ্য কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন।

তীক্ষ্ণ শব্দে ভেঁপু বাজিয়া উঠিল আর রেলগাড়িটি প্ল্যাটফর্মের ব্যাস্ততাকে ছাপাইয়া সামনে এগুতে লাগিল। বাহিরের চাঞ্চল্যতা হইতে মুখ ফিরাইয়া তাহাকে নিরীক্ষণ করিতে লাগিলাম। বয়স ২২-২৩ বছর। গোলাকার মুখে টানাটানা চক্ষু যাহাতে কিঞ্চিৎ কাজলের আভাস। তীক্ষ্ণ নাক। উপরের পাটির মুক্তোর মতো দাঁত নীচের ঠোঁটটাকে কিছুটা কামড়াইয়া আছে, যেখানে একখানি গজদন্ত তাহার অস্তিত্বকে সগর্বে জানান দিতেছে। বুঝিলাম ঠোঁট কামড়ানো তাহার মুদ্রেদোষ। পরনে সবুজ রঙের পুরোহাতা জামা আর সাদা রঙের ঢাকাই জামদানি। শাড়িটি পিরীলি ঠাকুর বাড়ির ধরণে কুঁচি দিয়ে পড়া। সাদা রঙের কাশ্মিরী শালখানি খুব আলতো ভাবে শরীরে জড়ানো। বুকে একখানা সোনার ব্রোচ। পায়ে কাপড়ের নকাশাদার ফুলতোলা জুতো। চুলগুলো হাতখোপা করিয়া বাঁধা যাহাতে অবহেলায় একখানা রুপোর কাঁটা গোঁজা রইয়াছে। শঙ্খ শুভ্র নিরাভরণ হাতে একখানা ইংরাজি নভেল, যা তাহার চোখের সম্মুক্ষে ধরা। একজন সুপুরুষ যুবক যে তাহার সম্মুখে উপবিষ্ট সে ব্যাপারে তাহার কোনরূপ চাঞ্চল্যই নাই। কতোক্ষণ বিভোর হইয়া তাহার দিকে তাকাইয়া ছিলাম জানি না। সম্বিৎ ফিরিল দাসীটির কথায়, তাহাকে কহিল,”কোনি দিদি, তুমার জলখাবার খাওনের টাইম হইছে“। বুঝিলাম তাহার নাম কনকচাঁপা। আর আমার বুকে তখন লক্ষ ভ্রমরের গুঞ্জন।

কিভাবে ৭ঘন্টা কাটিল জানি না। দার্জিলিং ইষটিশন আসিল। দাসীটি আগে নামিয়া একখানা কুলি ডাকিয়া বাসকো দুইখানা নামাইলো। ভীড় কমিলে কনকচাঁপা নামিলেন, আর তাহার পিছু আমি। একজন সৌম্যদর্শন বয়স্ক ভদ্রলোক আগাইয়া আসিল তাহাকে দেখিয়া,’welcome, welcome Mrs. মূখারজী। Welcome to our school. We are very proud to get you. বিশেষত আপনার মতো একজন বিদূষীকে teacher হিসেবে আমাদের মাঝে পেয়ে। আপনার মতো কিছু মানুষ এগিয়ে আসে বলেই তো আমরা বাবা-মা হারানো ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের এই Orphanage-কে এগিয়ে নিতে পারছি। যাই হোক, আশা করি আসবার পথে কোনরূপ অসুবিধা হয়নি। অনেকগুলি Project আছে আমাদের। বিধবা, অসহায় নারী, দুস্থ মাতা, বয়স্ক পুনর্বাসন.........

ভদ্রলোক আরো কি কি যেন বলিয়া যাইতেছিলেন। কিন্তু একখানা শব্দ যেন আমার কানে গরম শীশা ঢালিয়া দিল। গলার কাছে একরাশ কষ্ট দলা পাকাইতেছে। হা ঈশ্বর, তুমি এতো নিষ্ঠুর! মিসেস মূখারজি; তারমানে কনকচাঁপা বিধবা!

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×