somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কম খরচে আবার ভারত পর্ব-৮ ( আধিক্য কালকা থেকে সিমলা টয় ট্রেন-৩)

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অন্য পর্বগুলো



যখন তারা দেবি স্টেশনটির আসলো প্রায় সব যাত্রীই সেখানে নেমে গেল।




তবে সেতুর সদ্য আন্টি আর তার যুবক ছেলে, আর সেতুর সদ্য ছোট ভাই আকাশদের পরিবার সিমলাতে নামবে। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী পরিবার সমেতে এখানে নেমে গেলেও সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কাজিন পঙ্কজদা থেকে গেলেন আমাদেরকে হেল্প করার জন্য।




ট্রেন ঘুরে ঘুরে শেষ পর্যন্ত যখন সিমলা স্টেশনে আসলো তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছটা বেজে গেছে। ৭,১০০ ফূট উঁচু খুবই সুন্দর পাহাড়ি এক রেল স্টেশন সিমলা।




স্টেশনে লাল পোশাকের কুলি আর হোটেলের দালাল ঘুরঘুর করছে। সেসবকে পাশ কাটিয়ে পঙ্কজদার পিছু আমরা বাইরে বের হয়ে এলাম।


পাহাড়ি হলেও স্টেশনটি বেশ বড়। এক জায়গায় দেখি ‘রেল মোটর’ ট্রেনটি ঘোরানোর ব্যাবস্থা রয়েছে।



স্টেশনের বাইরে অনেকগুলি ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে। সেসবকে পাশ কাটিয়ে আমরা পঙ্কজদার পিছু পিছু হেঁটে রাস্তা দিয়ে উপরের দিকে উঠতে লাগলাম। একটা শহর যে এতো সুন্দর হতে পারে তা সিমলায় না আসলে আমি জানতাম না। এটার কাছে দার্জিলিং কিছু না।



কিছুদূর চলার পর একটা সুদৃশ্য ভবন দেখিয়ে পঙ্কজদা বললেন এটা নাকি হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা ভবন। ব্যাপারটিতো আমার কাছে বিশ্বাসই হতে চায়নি। কারন আমি ভবনটির চারপাশে কোন নিরাপত্তাকর্মীতো দূরে থাকুক একটা ট্রেফিক পুলিশও খুঁজে পায়নি। আর আমাদের সংসদ ভবনের দু’কিলোমিটারের মধ্যে প্রবেশ নিষেধ!


বিধানসভা ভবনটিকে পাশ কাটিয়ে আমরা আরো উপরের দিকে হেঁটে উঠলাম। তারপর কয়েকটা সিড়ি নেমে এক সাইবার ক্যাফের পাশ কাটিয়ে চিপা একটা গলির মধ্যে দিয়ে গন্তব্যে পৌছালাম। এটি পঙ্কজদার পরিচিত এক হোটেল। হোটেলটির নাম হচ্ছে HOTEL DUKE. দুটো ডাবল বেডের বিশাল রুমটির ভাড়া ৬০০রুপি, গরম পানি সহ এটাচট বাথরুম। সেতু পঙ্কজদাকে অনুরোধ করলো ভাড়া আরো ১০০রুপি কমানোর জন্য। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি এর চাইতে কম কিভাবে হতে পারে। তবে সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। নাম এন্ট্রি করার সময় হোটেলের লোক জানালো যে তাদের হোটেলে বিদেশী গেস্ট রাখার অনুমতি নেই। সকালে পুলিশ এসে চেক করে বিদেশী অতিথি পেলে হোটেলের লাইসেন্স বাতিল করে দেবে। তখন আমরা পঙ্কজদার আত্নীয় হিসাবে তার নাম ঠিকানা ব্যাবহার করে হোটেলের খাতায় নাম এন্ট্রি করলাম।

রুমে ব্যাগ রেখে পঙ্কজদাকে নিয়ে বের হলাম খাওয়া দাওয়া করার জন্য। বের হবার সময় সবার জন্য হোটেলের কার্ড চেয়ে নিয়েছি। সিমলা কালিবাড়িকে পাশ কাটিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম সামনের দিকে।



রাস্তায় দেখি বিভিন্ন সাইজের বানর মারামারি করছে। লোয়ার বাজারের রাস্তায় এক ভেজ রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসলাম। পঙ্কজদা আমাদেরকে বসিয়ে রেখেই বিদায় নিলেন। কাল সকালে আবার আসবেন কথা দিলেন। বেচারাকে এখন বাসে করে অনেকদূর ফেরত যেতে হবে। শুধুমাত্র আমাদের জন্যই নিজের স্টেশনে না থেমে তিনি আমাদের সাথে সিমলা পর্যন্ত এসেছেন। যে ইন্ডিয়ানরা সহযাত্রীদের সাথে কথা পর্যন্ত বলে না সেখানে সেতুর জাদুতে পঙ্কজদা আমাদের জন্য কতো কিই না করলো।



খাইলাম পেট ভরে। সেতু তার স্বভাবমতো এটা ওটার অর্ডার দিয়ে যাচ্ছে আর আমরাও সেগুলোর স্বদগতি করে চলেছি। রেস্তোরাটির পাশেই সাইবাবার ধর্মাবলম্বীদের উপসনা গৃহ। খাওয়ার ফাকে ফাকে তাদের উপসনা উপভোগ করে চলেছি। ভেজ খাবার সত্যিই খুব মুখরোচক। খাবারের অর্ডার দিলে সঙ্গে সঙ্গে তা রান্না করে গরম গরম হাজির করে। সারাদিন পর গরম ভাত খেয়ে কি যে তৃপ্তি পেলাম তা বলার মতো না। ভোজন শেষে ভাগাভাগি করে বিল চুকিয়ে বের হয়ে এলাম। সেতু আর নিয়ন নাকি খুব ক্লান্ত। তারা চললো হোটেলের দিকে। আর আমি আগের রাতে না ঘুমিয়ে সারাদিন দাঁড়িয়ে ট্রেন জার্নি করেও ততোটা ক্লান্ত নয়। আমি চললাম ম্যালের দিকে।




রাত প্রায় নটা বাজে। জায়গাটা একদম ফাঁকা।


আমি ঘুরে ঘুরে ইংরেজ স্থাপনা দেখছি। আলো ঝলমলে এসব ভবন দেখতে খুবই ভালো লাগছে। বেশ ঠান্ডা পড়েছে।







হাটতে হাটতে চার্চ পর্যন্ত গেলাম। হলুদ রঙের ভবনটিতে হলুদ আলো পড়েছে, দেখতে খুব সুন্দর ।







পাশেই রয়েছে সিমলার পাবলিক লাইব্রেরি। এসব দেখতে দেখতেই একটা সমস্যা হয়ে গেল। ঠান্ডা আবহাওয়া আমার পেটে একেবারেই সহ্য হয়না। পেটে এমন চাপ অনুভব করলাম যে হেঁটে হোটেলে ফিরবো সে সাহস করলাম না। প্রায় দৌড়ে চললাম। পথ যেন ফুরাচ্ছে না। অবশেষে হোটেলে পৌছাতে পারলাম। প্যান্টের বেল্ট খুলতে খুলতে রুমে ঢুকলাম। কিন্তু বিধি বাম! সেতু রয়েছে টয়লেটে। আমার কাতর কন্ঠে অনুনয় বিনয় শুনে বের হয়ে এলো ও। কিন্তু বের হলো একেবেরে দিগম্বর হয়ে, শুধু প্যান্টটা সামনে ধরে রেখে। মনে হলো অর দুগালে দুটো চুমু দিই, কারন প্যান্ট পড়তে গিয়ে ও যদি আর ৫সেকেন্ডও সময় নিতো তাহলে আমার ভয়াবহ সর্বনাশ হয়ে যেত। কোন রকমে ভেতরে ঢুকলাম অকে টপকে। আহ কি শান্তি!
সারাদিনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলার জন্য ভাবলাম গোসল করে ফেলি। গিজার না চালিয়ে দুমগ পানি গায়ে ঢেলে দেখি যে ভয়াবহ ঠান্ডা। গোসল করা বাদ দিয়ে কোন রকমে গা মুছে বের হলাম। কাপড় বদলে সোজা কম্বলের তলায়। আমি এবার এসে কোন মোবাইল সিম কিনিনি, খামাখা পয়সা খরচ। তাছাড়া ফোনে টাকা থাকলে শুধু মনে হয় দেশের এই দোস্তকে জানায় আমি এখন এখানে, ওই দোস্তকে জানায় আমি এখন ওখানে।কি দরকার! তবে সেতুরা সিম কিনেছে। ওদের ফোন থেকে আমার বাবার সাথে কথা বললাম। জানালাম আমি ভালো আছি। তারপর কম্বল মুড়ি দিয়ে চোখ বুজলাম।



আধিক্য কালকা থেকে সিমলা টয় ট্রেন পর্বে মোট খরচঃ
১। কালকা থেকে সিমলা টয় ট্রেন ভাড়া =৫০ রুপি
২। সকালের টুকটাক খাওয়া=৩০ রুপি
৩। দুপুরে ট্রেনের সহযাত্রীরা খাওয়াইছে
৪। রাতের খাওয়া=৮০ রুপি
৫। আমার ভাগের হোটেল ভাড়া=২০০ রুপি
মোট=৩৬০ রুপি
১০০টাকায় ৮২ রুপি হিসাবে এই পর্বের মোট খরচ=৪৩৯ টাকা।


আধিক্য কালকা থেকে সিমলা টয় ট্রেন পর্বের আরো কতগুলো ছবি

























সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×