আমার বড় ভাইয়ার দুইটা মেয়ে। ছোট মেয়েটার নাম আনু। এখনো কথা বলতে পারে না। ওর কথার জগত শুধুমাত্র মা,মামা,দাদি,দাদা,আব্বু বলার অবিরাম চেষ্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমি তো আর ওদের সাথে থাকি না তাই ফোনে ওর কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত থেকেই সন্তুষ্ট থাকি। কিছুদিন আগে আনু ওর আম্মুর সাথে ঢাকায় এসেছে বেড়াতে। ওর নানুরা ঢাকায় থাকে। আমি গেলাম ওদের সাথে দেখা করতে। আমাকে দেখে আনু আর কারো কাছেই যাবে না! আমি তো পুড়াই অবাক! এতটুকুন একটা মেয়ে, আমাকে চিনল কি করে!!
আমি ওকে না বলতেই আমার গালে কয়েকটা চুমু! আমার গলা ধরে কোলে বসে রইলো। পরের দিন আমার পরিক্ষা ছিল। তাই মাত্র ৩০ মিনিটের মত থেকেই আমি রওয়ানা দিলাম।কিন্তু সে আমার কোল থেকে নামবেই না! আনুকে কোলে নিয়ে রিক্সায় উঠলাম।আনু তো ভীষণ খুশী আমার সাথে আসবে! কিন্তু আমি তো ওকে আনব না। যেই ওর মা আমার কোল থেকে ওকে নামাতে গেল, অমনি কান্না কাটি শুরু । আবার কোলে নিলাম। পুনরায় যখন ওকে ওর আম্মুর কাছে দিলাম, হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কান্নাকাটি শুরু করলো। রিকশা আমার গন্তব্যে রওনা দিল। আমি তাকিয়ে দেখলাম আনু কাঁদছে। ওর আম্মু ওকে থামানোর চেষ্টা করছে।
পরিচিত জনেরা বলে থাকেন আমার ইমশন কম। আমারও তাই ধারণা। কাছের কোন আপনজন মারা গেলেও আমার চোখ দিয়ে এক ফোটা জল বের হয় না। আমার মা বলে থাকেন, তার ধারণা সে মারা গেলেও নাকি আমি কাঁদবো না। মন যতই খারাপ হোক না কেন শত চেষ্টা করেও আমার চোখে জল আনতে পারি না!!
আনুকে রেখে যখন রিকসায় আসছিলাম, আমি টের পাচ্ছিলাম আমার দুই চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। বুঝতে পারছিলাম ভালবাসাবিহীন কংক্রিটের এই শহরে আমার দুই চোখ দুর্লভ ভালবাসার সন্ধান পেয়েছে। সেই আনন্দে আমার দুই চোখ কয়েক ফোটা জল বিসর্জন না দিয়ে কি পারে?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৪