somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুরস্ক কেন গাজা যুদ্ধে জড়ায় না ও জাতিয়তাবাদী তুর্কি নেতার আবেগ

২০ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুধু এরদোয়ান বা তার দলের নেতারা নন ফিলিস্তিন ইস্যুতে আবেগ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে তুরস্কের অন্যান্য দল ও রাজনীতিবিদদের। এতে একটা বিষয় পরিষ্কার নাকের ডগায় চলমান এই অন্যায় তুর্কিরা মেনে নিতে পারছে না। বিনা বাধায় একসময় নিজেদের শাসিত ভূমিতে ইসরায়েলের এমন আগ্রাসন তাদের কাছে অপমান ও গাত্রদাহেরও কারণ।



ফিলিস্তিন ইস্যুতে তুর্কি সরকার বা এরদোয়ান বরাবরই সরব। তুর্কি ভাষাটা জানি বলে এই নির্যাতন নিয়ে বলতে গিয়ে এরদোয়ানের আবেগ খানিকটা হলেও বোঝার চেষ্টা করি। তার কথা বলার ভাষায়, চেহারায় ফোটে উঠে একধরনের অসহায়ত্ব, আছে হুঙ্কারও। আপনারা যারা শুধু কথা কেন কাজ কই? সৈন্য পাঠায় না কেন? ইত্যাদি বলে তোপ তাগান তারা এ আবেগ বা অসহায়ত্ব অনুভব করতে চান বলে মনে হয় না।

আমার মতে, তুর্কিদের সামর্থ্যই নেই সরাসরি ফিলিস্তিনে গিয়ে যুদ্ধ করার। আর কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে? এখানে কি শুধু ইসরায়েল? কিন্তু তুর্কিরা প্রকাশ্যে বা গোপনে বরাবরই গাজায় আছে। হামাস যে বছরের পর বছর এভাবে টিকে আছে সেটা তুর্কি-কাতারী আর সাধারণ আরব শেখ ভাতৃত্বের সীসা ঢালা প্রাচীরের জোড়েই। মিশর সরকার সীমান্ত বন্ধ করে রাখলেও মিশর ও মিশরীয়দের সাথে হামাস নেতাদের যাতায়াত, যোগাযোগ থেকেই যায়। মিশরের ভেতর থেকে এ কাজটা কারা করে দেয়! লোকজন মুসলিম ব্রাদারহুডের নাম নিতেও ভয় পায়, পেছনে ট্যাগ লেগে যায়। তালেবান এখন পশ্চিমাদের স্বীকৃতিতে শুদ্ধ আর ব্রাদারহুড আরব শাসকদের কাছে চির নিষিদ্ধ গন্দম ফল!

ইরান, অন্য জাতি, রাষ্ট্র বা গোষ্ঠীদের কেউ কেউ ফিলিস্তিনের পাশে আছে। তাদেরও পেছন থেকে রসদ জোগায় কাতার। আরেকটা রাষ্ট্র নিরবে কাজ করে যায়। সেটা হলো কুয়েত। কুয়েতের এমন অবস্থানে জন্য দেশটিতে শাসকের পরিবর্তন চায় সৌদি ও আরব আমিরাত। মিশরে ব্রাদারহুডের রাজনীতি, মধ্যপ্রাচ্যে কাতারের ভূমিকা, তুরস্কের ক্রমবর্ধমান প্রভাব, ইয়েমেনে ব্যর্থ সৌদি অভিযান এমন নানা ইস্যুতে কুয়েতের উপর খ্যাপা অন্য আরব শাসকেরা।

ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শের প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফিলিস্তিনী পতাকা টানানোর পরদিন দেখা গেল এরদোয়ান সরকারের প্রধান মিত্র কট্টর জাতীয়বাদী দল এমএইচপির (এম-এইচ-পি তুরস্কের তৃতীয় বৃহত্তম দল, তুর্কি ভাষায় ‘মে-হে-পে’ বলা হয়।) প্রধান দেভলেত বাহচেলিকে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা নিয়ে আবেগী ও উচ্চকণ্ঠ হতে।

ফিলিস্তিন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দেভলেত বাহচেলি বলেছেন- ‘১০৪ বছর ধরে জেরুজালেম (তুর্কিরা কুদুস বলে) আমাদের জন্য আকুল হয়ে আছে। আমরা জেরুজালেমের জন্য ব্যাকুল। পবিত্র এ শহরটি হলো শান্তি, সম্মান, বিশ্বাস এবং সভ্যতার চারণভূমি। জেরুজালেম মানেই ইতিহাস। মানুষের চোখের সামনে একদিকে যেমন সেই ইতিহাসকে আজ ভূলুণ্ঠিত করা হচ্ছে অন্যদিকে চলছে লুণ্ঠন।`

এখানে ১০৪ বছর হলো সেই বছর (১৯১৭ সাল) যখন উসমানীয়রা ফিলিস্তিন তথা জেরুজালেম শহরের উপরে নিয়ন্ত্রণ হারায়। সেদিন বিট্রিশদের পক্ষে আজকের ফিলিস্তিনী আরবরাও তুর্কি শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ করেছিল। আরেকপ্রান্ত থেকে আক্রমণ শানাচ্ছিল আর্মেনীয়রা। বিশ্বস্থ বন্ধু বা ভাইয়ের মতো কেবল পাশে ছিল বলকান মুসলিমরা, এখনো তারা তেমনই আছে। রাশিয়ার তাতার আর চীনের উইঘুররা যেমন তুর্কিদের সাথে এক আজন্ম ভাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ। উসমানীয়দের পতনে তাদের ভাগ্যেও সমানভাবে বিপর্যয় নেমে এসেছিল সে সময়। হাজার হাজার তাতার হত্যার শিকার হয়েছিল বা দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিল।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাহচেলির এ আবেগকে সমর্থন জানাচ্ছেন তার সমর্থকেরা। এরদোয়ান তথা একেপি’র সমর্থকরাও মিত্র নেতার হয়ে আরও আবেগ ঢেলে দিচ্ছেন। তারা বলছেন অচিরেই আমাদের এ আকাঙ্খার সমাপ্তি ঘটবে। আমরা আবার জেরুজালেমে মিলিত হবো!

আলোচনায় উইঘুর ইস্যুও: তবে কোন কোন তুর্কিকে দেখা যাচ্ছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয় সাম্রাজ্য ভাঙ্গার পেছনে আরবদের বিশ্বাসঘাতকার প্রসঙ্গ টেনে ক্ষোভ ঝাড়তে। ফিলিস্তিনীদের কাঠগড়ায় তুলতে। একই সাথে তাদের কেউ কেউ কেন উইঘুর নির্যাতন নিয়ে কেউ কথা বলছে না সে প্রসঙ্গও তুলছেন।

জাতীয়তাবাদী এই গোষ্ঠিটি বলছে-উইঘুররা (দউ তুর্কিস্তান/ইস্ট তুর্কিস্তান) আমাদের জাতি ভাই। তারা কখনো আমাদের ছেড়ে যায়নি। আমরাও না। আজ যখন তারা বিপদে আমরা কেন চুপ? চীনের ভয়ে? দেখি তাদের জন্য কথা বলেন। অনেকে উইঘুর নিয়ে নিশ্চুপ থাকায় এরদোয়ানসহ তুর্কি রাজনীতিকদের ভৎসর্ণা করছেন। তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষ তথা কামাল পাশার অনুসারীদের মধ্য এক দল আছে যারা যে কোন মুসলিম ইস্যুতে নিরবতা পালন করেন। কেউ কেউ বিরোধিতা করেন।

তুর্কি কট্টর জাতিয়তাবাদীরা তুর্কি জাতিসত্ত্বার বাইরে আর সবকিছুকেই অস্বীকার করে। মেভলেত বাহচেলী এমন একটি কট্টর অংশেরই নেতা। তবে এরদোয়ান তথা একেপি বা আক পার্টির সাথে তাদের দীর্ঘদিনের মিত্রতার দরুন তারা সেই কট্টর অবস্থান থেকে কিছুটা হলেও সরে আসছে বলা যায়। এরেদায়ানের চলমান পররাষ্ট্রনীতির বড় সমর্থকও তারা।

নানা আলোচনা সমালোচনা ও তর্ক বিতর্কের পর দেখা যাচ্ছে তুর্কিরা এক কাতারে শামিল হয়ে ফিলিস্তিনীদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে। এবেলা অনেক ক্ষেত্রে ধর্মকে ছাড়িয়ে কখনো আঞ্চলিকতাবাদ, কখনো মানবতাবাদ প্রধান হয়ে উঠছে। আমিও ব্যক্তিগতভাবে চাই ধর্মের ভিত্তিতে না, মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াক মানবতার ভিত্তিতে।

এই যে কোন একটা ইস্যুতে তুর্কিরা অভ্যন্তরীনভাবে একমত হতে পারে বা একই সুরে কথা বলতে পারল এটা আমার কাছে বেশ তাৎপযপূর্ণই মনে হয়। কখনো শাসক পরিবর্তন হলেও পররাষ্ট্রনীতিতে মুসলিম বিশ্বের প্রাধান্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহতই থাকবে বলে মনে হচ্ছে।


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৬
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×