একজন কাউকে খুন করলে সেটা হয় হত্যা। আর আপনাদের সিস্টেম ও আপনারা সবায় মিলে যখন একজন উদ্যমী তরুণকে জবাই করেন সেটার নাম হয়ে যায় আত্মহত্যা!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেটাও তাই আত্মহত্যা করেছে। অথচ এর আগে সে বারেবারে হত্যার শিকার হয়েছে। তার যতো স্বপ্ন, বেঁচে থাকার যতো আশা সব একে একে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগে দেখলাম জগন্নাথের একজন সাত তলার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে স্বেচ্ছা খুনকে বরণ করেছে। এরা সবাই চাকরিপ্রার্থী। একটা চাকরি চায়। বেঁচে থাকার জন্য, সমাজে মুখ দেখানোর জন্য কিছু একটা করতে চায়। এটা এমন এক সমাজ, এই সমাজে মুখ দেখা যায় খুব কম, শুধু মুখোশের উকিঁঝুঁকি, বাগাড়ম্বর।
বিনিময়ে চাকরি না পাক খানিকটা সহানুভূতি পেলেও হয়তো প্রাণটা বেঁচে যেত! কিন্তু কে হাত বাড়াবে? আমি সবখানে দেখি ছুতা ধরে দূরে ঠেলার, একা একা ভোগ করার বাহানা। নিজে রাজা হয়ে, দলদাসদের প্রজা বানিয়ে সর্বভোগের বাসনা। তারা ভিন্নমত দূরের কথা, মতামত দিতে পারে এমন মানুষ সইতে পারে না। তাদের প্রথম ও একমাত্র পছন্দ হলো-বোবা কালা-অথর্ব। যার কাছে সূর্য পশ্চিমে উঠলেও সই আবার রাতের আকাশে চাঁদের বদলে অবাক করা আলুর দেখা মিললেও ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য-কারণ আর কিছু না, ষাঁড় বলেছে। স্যার খুশি থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে একটা চাকরি হয়ে যাবে।
আমি এক নামী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া বিভাগের এক নামী অধ্যাপক কাম চেয়ারকে দেখেছি, যার মুখে সত্য বলতে কিছু নেই। ‘শুওর’ শব্দটা ছাড়া ওর চরিত্র বুঝানো মুশকিল আসলে। যদি কখনো ওর বিপরীতে কোনো নারী সহকর্মী ধর্ষণের কাহিনী শুনি অবাক হব না। সে তার আশপাশে নারীসঙ্গ ছাড়া আর কিছু এনজয় করে বলেও তাকে দেখে মনে হয় না। কোর্ট টাই পরে ক্রেতাদূরস্থ এক দুবৃত্ত। নিপাট মূর্খও হয়তো। (যদ্দূর দেখেছি তাতে কিছু গল্প বা ছোটখাট উপন্যাস করে ফেলা যায়।) এমন দুবৃত্তে আসলে এই দেশের প্রতিটি সেক্টর ভরা। ওরা বশংবাদ ভেড়ার পাল চায়, বা ভেড়ী! এরা নিজেরা বিলাই বলে বাঘের ছায়া দেখলে আঁতকে উঠে।
এই একজনকে টেনে এনে, বলে, শুনিয়ে লাভ কি? আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ারে বসে থাকা যাদের আমরা শিক্ষক বলি তারাতো সৃষ্টিতে না, ধ্বংশের বেলা সবসময়েই কয়েক দাগ এগুনো। এই সত্য সব যুগে, সব কালেই ছিল বলে ধারণা করি। তবে এখনকার মতো এতটা নগ্ন হয়তো ছিল না আগে।
এই শিক্ষক নামীয় জীবরা হলেন, 'ভাত দেবার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই। তাদের পড়ানোর মুরোদ নেই, নিজের কাজটা ঠিক করে করার সক্ষমতা নেই কিন্তু অপমানের বেলায় জিহ্বা আর থামে না। দালালি করতে করতে, চাটতে চাটতে নিজেকে এমন এক মাননীয়র পর্যায়ে নামিয়ে নিয়ে আসে জুতা দিয়ে পেটালে জুতার জাত যায়। এরাই হলো শিক্ষক। এই জাতিকে শিক্ষিত করার, সভ্য করার মহান দায়িত্ব তাদের কাঁধে।
ফলে আত্মহত্যাও একটা সমাধান এই জনপদে। এক ধরণের মুক্তি ও স্ব:স্তি। অন্তত চোখের সামনে কি হচ্ছে, আর যা হচ্ছে তা দেখে চুপ থাকার যন্ত্রণা নিয়ে, নিজের সামনে অথর্ব, অযোগ্য কাউকে পদ বাগিয়ে নিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসতে দেখার যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না।
ভাবছি,
মাহাদীতো প্রচলিত কায়দায়ও মেধাবী। বিভাগের সেরা রেজাল্টধারীদের একজন। তবু তাকে গ্রহণ করার সময়/সদয় হলো না কারো! কেউ করেও না-এটাই নিয়ম এখানে! তরুণদের এই মৃত্যুর মিছিল দেখে এই রাষ্ট্র লজ্জ্বিত না! অথচ তারুণ্যের এমন আত্মাহুতি আমাকে বাকরুদ্ধ করে। যন্ত্রণায় বুকটা ধরে আসে।
মন চায়, চিল্লাইয়া সব তরুণকে বলি, বেঁচে থাক। আজ যার কারণে তুই বঞ্চিত কাল তার অপদস্থ হওয়ার দিনটা দেখার জন্য হলেও তোর বেঁচে থাকা দরকার। সেইদিন দর্শক সারিতে থাকতেও হলেও, আর কিছু না হোক শ্লেষের হাসিতো হাসতে পারবি।
বেঁচে থাক, চিরদিন কাহারো সমান যায় না-এই কথাটা সত্য বলে। সুতরাং তুই বেঁচে থাক, একদিন তোর দিন আসবে বলে। তুই বেঁচে থাক ভাই, তোর স্বপ্নগুলো বেঁচে থাকা জরুরি বলে…
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৯