সিরিয়া ও ইরাকে নাটকীয় আভির্ভাব। মরুঝড়ের উন্মত্ত গতিতে মিসর ও লিবিয়ায় ঢুকে পড়া। টর্নেডোতে ভেংগে পড়া বৃক্ষশাখার ন্যায় পাকিস্তানি তালেবান গোষ্ঠীগুলোর আনুগত্য স্বীকার। অবশেষে এই প্রথম আরবের বাইরে খোরাসানে আগমন বার্তা। ইতিমধ্যেই মিসরের একটি দল তাদের আনুগত্য স্বীকার করেছে যাদের নিকট রয়েছে এক কোটি বিশ লক্ষ আর্মস
(প্রথম আলো, 1 মার্চ, 2015)
উল্লেখ্য খোরাসান ইসলামী খিলাফাতকালে একটি প্রদেশের নাম ছিলো, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আফহগানিস্তানের বলখ, মাযার শরীফ ইত্যাদি এলাকা। বুঝা যাচ্ছে তালেবানের সাথে তাদের কোন সমঝোতা হয়েছে।
বিশ্ব মিডিয়া খুব জোরেশোরে তাদের নৃশংসতার কথা প্রচার করছে। জর্ডানি পাইলট মোয়াজ আল কাসাসবাহ কে পুড়িয়ে মারার ভিডিও প্রচারিত হবার পর মুসলিম নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলোও তাদের সংবাদ প্রচার বন্ধ করেছে। যেমন আল জাজিরা। কিন্তু প্রশ্ন হলো এত কিছু সত্বেও তাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা যাচ্ছে না বরং আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত আরব জোটের বোম্বিং যত জোরালো হচ্ছে, পাল্লা দিয়ে তাদের সেনাসংখ্যা যেন বাড়ছে! এর কারণ কী?
প্রথমেই যে কথাটি প্রণিধানযোগ্য। যারা তাদেরকে নৃশংস হত্যাকারী বলে ঘোষণা দিচ্ছে, গালাগাল করে পত্রিকায় বড় বড় প্রবন্ধ লিখছে তারা কেউই আইএস যাদের বিরুদ্ধে লড়ছে তাদের দ্বারা নির্যাতিত হয়নি। তারা বিবেকের তাড়নায় অনেকেই লিখছেন না। লিখছেন পেটের যাতনায়। সুতরাং যেভাবে, যে ভাষায় লিখলে জনতা খাবে, সম্পাদক নিবে তারা সে ভাষায়ই লিখবেন। শুধু সন্ত্রাসী, হত্যাকারী নয় প্রয়োজনে কু...বাচ্চা, শু.....বাচ্চা বলতেও পিছপা হবেনা! পক্ষান্তরে যারা নির্যাতিত, নিপীড়িত হয়েছেন নানা সময়ে, বিভিন্ন বাহিনীর হাতে, তাদের সেন্টিমেন্ট হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। পুরো 90 ডিগ্রী উল্টো। তারা ভাববে এতে যোগ দিলে পিতৃহত্যা-মাতৃহত্যা,ভাই কিংবা বোন হত্যার উপযুক্ত বদলা নেয়া যাবে। তারা কখখনোই একে সন্ত্রাসী দল বলবে না, বরং ত্রাতা ভাববে। তাই যতক্ষণ না এই সমস্যার গোড়া কাটা হচ্ছে, সমাধান সম্ভব না। আইএসের জন্ম মার্কিন কারাগারে। কারাগারে মানুষকে নেয়া হয় সংশোধনের জন্য, তারা সেখানে গিয়ে "সন্ত্রাসী" হয়েছে! কেন? নিশ্চয়ই সেখানে এমন কোন আচরণ তাদের সাথে করা হয়েছে যা তাদেরকে প্রতিশোধপরায়ন হতে বাধ্য করেছে। ওয়েস্টার্ন ছেলেদের কী নেই! কোন বস্তুর অভাব তাদেরকে পৃথিবীর সমস্ত ভোগপণ্য ছেড়ে জ্বলন্ত আগুনে আর উত্তপ্ত লৌহশলাকার নিচে আত্মহুতি দিতে উদ্বুদ্ধ করলো?ভাবা দরকার।
দুই :
আইএস বা এজাতীয় দলগুলো আছে এমন এক যুদ্ধক্ষেত্রে যার চারদিকে কোন আলো নেই। কোন আশা নেই। তাদের পাশে কেউ নেই। তাই তারা মরিয়া হয়ে যুদ্ধ করছে। যাকে পাচ্ছে তাকেই মারছে। কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। অবশ্য এই সমস্যাটা পৃথিবীর প্রায় সব বিদ্রোহী দলেই থাকে। বার্মিজদের যেমন থাকে, হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদেরও থাকে। আরাকান-গুজরাটে কত হাজার মুসলিম আগুনে প্রাণ দিয়েছে তার পরিসংখ্যান নিয়ে কাউকে ব্যতিব্যস্ত হতে দেখা যায় না।"সন্ত্রাস"দমনে জোটবদ্ধ হতেও দেখা যায় না। কারণ যারা মরছে তারা মুসলমান, যারা মারছে তারা নারায়ে তাকবীর ধ্বনি দিচ্ছে না, দিচ্ছে হরিবোল!! সুতরাং এতে বিচলিত হবার কিছু নেই। মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে না। যারা মরছে তাদের অধিকার থাকলেই না লংঘন হবার সম্ভাবনা! যদি সেটাই না থাকে তাহলে তো মাথাও নেই ব্যথাও নেই! ব্যস!! আমি আইএস বা এজাতীয় গোষ্ঠীগুলোর নিরপরাধ মানুষ হত্যার বৈধতার কথা বলছি না। শুধু এ কথাটা বলতে চাইছি, এভাবে কখনো সমস্যার সমাধান হয় না। বরং নিরীহ কিন্তু বিবেকবান মানুষেরা যখন একচোখো দমননীতি দেখে তারাও ক্ষুব্ধ হয়।
তিন :
তাদের বিরুদ্ধে চালানো সব নির্যাতনকাহিনী সত্য, এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। বরং উল্টোটাই অধিক সত্য। ইরাক -ইরানের সরকারি বাহিনী রীতিমতো শাখা খুলে মিথ্যা প্রচারণায় নেমেছে। ইউটিউবে এর ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে। পার্থক্য এই যে, ইরাকী বাহিনীর প্রচারিত ভিডিওগুলো বিদ্রুপাত্মক, শুরুতে ও শেষে তাদের লোগো প্রদর্শিত হয়। ফলে সহজেই সবাই বুঝতে পারে এটা কী। আর ইরানী ভিডিওগুলো উচ্চতর প্রযুক্তিনির্ভর। ছাড়াও হয় আইএসের নামে। সারা পৃথিবী ধোকা খায় কিংবা ধোকা দেয়া হয়। পরিকল্পিত ভাবেই দেয়া হয়। ইতিমধ্যেই তাদের প্রচারিত নানান ভিডিওর অসত্যতা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। মনে রাখা ভালো প্রকাশিত হলেও "প্রচারিত" হয়নি!আগুনে পুড়িয়ে জর্ডানি পাইলট মারার অসারতা প্রমাণ করে অসংখ্য ভিডিও আপলোড হয়েছে। কিন্তু কেউ এগুলোর কথা বলছে না। কেন? যে ইউটিউবে পোড়ানোর ভিডিও এসেছে এগুলোও সেখানেই এসেছে। একটা প্রচার পাবে আরেকটা পাবে না! কেন??
নিশ্চয়ই সর্ষেতে ভূঁত আছে!!!
গ্রাফিক্সের মা

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



