আচ্ছা, বলতো! তোমার এক্স হাজব্যান্ডের সাথে ব্রেকআপ হল কেন?
পাশে বসা ছয় বছরের নিতি মাকে সাথে সাথেই প্রশ্ন করল, মা! এক্স হাজব্যান্ড কী??
মা কিছু না বলে টিভি অফ করে চলে গেলেন!!
হ্যাঁ! এমনটাই ঘটছে আমাদের টিভি নাটকে। সামাজিকতার আবরণ ভেঙে "সাহসিকতার" আবরণে আবৃত হচ্ছে! আর আমাদের বারটা বাজাচ্ছে।উঠতে বসতে এক্স হাজব্যান্ড, এক্স হাজব্যান্ড জপছে। বয়ফ্রেন্ড শব্দটা ঠিক কী কারণে হটাৎ ডিভোর্স পেল বুঝলাম না। তবে মনে হয় এর অন্যতম কুশিলব, গাধানাট্যকাররা ! হ্যাঁ, গাধা ছাড়া আর কোনো বিশেষণ খুঁজে পাচ্ছি না। যে ছেলেটা স্কুলে - গরুর চারটি ঠেং আছে, এর গোবরের রঙ কালো, ইহা একটি গৃহপালিত পশু -এই রচনা লিখতে পারত না, পরীক্ষায় ছক্কা মারত। সে এখন রীতিমতো নাট্যকার!! এর থেকে জাবর কাটা ঘাস ছাড়া আর কী আশা করা যায়?
প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ তার কোন এক বইয়ে লিখেছেন : মধ্যবিত্ত বাঙালির মদপানের সুচনা হয় অন্যের পয়সায়, প্রেমের শুরু কাজিন থেকে আর প্রথম যৌনতা কাজের মেয়ের সাথে! এর সাথে এখন একটি বাড়াতে হবে : প্রথম চিত্র পরিচালনা প্রেম বিষয়ে।
বেচারা গাধানাট্যকারকে দোষ দিয়েই বা লাভ কী। ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়েছে টিভি চ্যানেল (এর পুরোপুরি কৃতিত্ব অবশ্য "মিডিয়াপ্রিয়" আওয়ামী সরকারের) । হেনতেন উপলক্ষে এরা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। গল্প প্রতিযোগিতা। পুরস্কার? সেরা তিন গল্প দিয়ে চ্যানেল মালিকের চুরি হওয়া লোটা ফিরে পাওয়া উপলক্ষে নাটক নির্মিত হবে!!! উদীয়মান নাট্যকাররা তখন ভেল্কী দেখান, অতীত জীবনে করা লুচ্চামিগুলোকে মোডিফাই করে একখান নাটক খাঁড়া করে ফেলেন!! হা হা।
এক সময় বাংলা ছবির "মহিলারা" পরিচিত ছিলো আটার বস্তা হিসেবে! এখন এই আটার বস্তার আনাগোনা নাটকেও শুরু হয়ে গেছে। গুণেমানে নাটক-চলচ্চিত্র এখন একাকার হয়ে গেছে, শুধু চৌধুরী সাহেব ডায়ালগটা ছাড়া! লোটা-বদনার মডেলরাও অনায়াসে ঢুকে পড়ছে অভিনয়ে। এদের দেখলে মনে হয় একে ঠোঁটকাটা রোগের মডেল হিসাবে ভাল মানাতো!! দাঁতের এমনই বাহার!!!
ছোট্টবেলা বিনোদনের অন্যতম উপায় ছিল একসাথে বসে নাটক দেখা। কী ছিল না এতে?? শিক্ষা, হাস্যরস, সামাজিক অবক্ষয় ও সিজনাল টপিক কেন্দ্রিক মজার মজার নাটক। আর এখন??
একা একা দেখলেও ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় কখন না জানি খাবলা-খাবলি শুরু হয়ে যায়!!!
একজন "ফেমাস" অভিনেতার কথা না বলে পারছি না। তাহসান। এই লোকের ব্যাক্তিজীবন সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না, তবে তার নাটকগুলো দেখে মনে হয় এই লোক ঘসাঘসি ছাড়া কিছুতেই "স্বাদ" পায় না। মহান প্রেমের নাটক করার জন্যই যেন তার এখানে আসা!! আরে রুচি বদলানোর জন্যও তো মানুষ মাঝে মাঝে টপিক চেঞ্জ করে, নাকি?? হাতাহাতি কত আর মজা লাগে??
এতসব কিছুর মাঝেও কিছু প্রতিভাবান ভালো নাট্যকার আছে যাদের ফলে এখনও এটা দেখতে সাহস করা যায়। কিন্তু যে দ্রুত গতিতে "সমাজকেন্দ্রিক" নাটক "শরীরকেন্দ্রিক" হয়ে যাচ্ছে, বেশিদিন লাগবে না সুড়ুত করে তা শরীরের বিশেষ অঙ্গে ঢুকে যেতে! আশা করি কখনোই সে সময়টুকু না আসুক।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



