দেয়ালটা সাদা চুনকাম করা। পুরো দেয়ালের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য কালো কালি দিয়ে কিছু কড়া কথা লেখা আছে,
"এই দেওয়ালের গায়ে পান খেয়ে পিকা ফেলা নিশেদ! আদেশ অমান্যে কাঠন শাস্তি।"
নতুন চুনকাম করে দেয়ালে লেখা হয়েছে, কিন্তু ‘কঠিনের’ জায়গায় হ্রস্বিকার এর জায়গায় ঢেউটা মুছে গিয়ে ‘কাঠন’ হয়ে গেছে। রাগীব দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশে কেউ আছে কি না দেখে নিতে নিতে সে একটা সিদ্ধান্ত নিল, পান খেয়ে পিক সে এই দেয়ালেই ফেলবে। সে জীবনে আগে কখনো পান খায়নি। তবে এই দেয়াল দেখে তার কেন যেন খুব ইচ্ছা করছে পান খাওয়ার। নিষিদ্ধ কাজের প্রতি মানুষের আকর্ষণ প্রবল। বাড়িটার শেষ সীমানার কাছেই একটা টংয়ের দোকান। যে পরিচ্ছন্ন সাদা দেয়ালের পাশে টংয়ের দোকান থাকবে সেই দেয়ালে মানুষজন পিক ফেলবে না এটা রাগীবের বিশ্বাস হচ্ছে না।
রাগীব পাঁচ টাকা দিয়ে এক খিলি পান কিনলো। জর্দার গন্ধে তার মাথা ঘুরছে। ঘুরুক, তবুও সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পানের পিক ফেলবেই। কিছুক্ষণ পানের জাবর কাটার পর তার মুক ভর্তি থুথু জমে এলো। আস্তে আস্তে সে দেয়ালের লেখাটির দিকে তাকালো। যেখানে লেখা সেখানেই সে পিক ফেলবে। পিকগুলো সিরিঞ্জে ভরে পুরো লেখাটায় স্প্রে করে দিলে ভালো হতো। মুখ দিয়েও করা যায়, তবে মুখ দিয়ে করার ইচ্ছা তার এই মুহুর্তে নেই। মাথা ঘুরছে। তবে প্রতিদিনই অনেক মানুষ এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এই বাড়ির দেয়ালে পিক ফেললে একসময় পুরো লেখাটাই পিক দিয়ে ভরে যাবে। পান মুখে নিয়ে তার মাথায় কবি সুকান্তের ‘হে মহাজীবন’ কবিতার শেষ দুটি লাইন ভিন্নভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে,
“পানের রাজ্যে পৃথিবী পিকময়, সাদা দেয়াল যেন পানের বাটা।”
রাগীব "পানের পিকা" শব্দ দুইটার উপর পর পর দুইবার পিক ফেললো। শব্দ দুইটার তাৎপর্য কোন পথচারীকে বোঝানোর জন্যই ফেলা। যাতে কোন লোক যেন এই বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখে বুঝতে পারে ‘এই হলো পানের পিকা, যা ফেলা নিশেদ।’ পিক ফেলেই রাগীবের দৌঁড়ে যাওয়া উচিৎ ছিল, কিন্তু সে যাচ্ছে না। আবারো সে আশেপাশে ভালো করে তাকালো। আশেপাশে কেউ নেই। টংয়ের দোকানদার শুধু উকি মেরে তাকিয়ে আছে। রাগীব তার দিকে চোখ রাখতেই সে চোখ ফিরিয়ে সুপারি কাটতে ব্যস্ত হয়ে গেল। যেন এমন কাজ প্রতিদিনই ঘটে।
বাংলাদেশে যে আইন সম্পর্কে যত কড়া করে বলা হয়ে থাকে, সেই আইনের ফাঁক তত বেশি। এই তথ্য রাগীবের অজানা না। তাই সে জানতো, পানের পিক সম্পর্কে যখনই এই দেয়ালে আদেশনামা লেখা হয়েছে বাড়ির কর্তা তখন থেকেই নিশ্চিন্ত মনে নাকে তেল দিয়ে ঘুমুতে গেছেন। যেন এই লেখাগুলিই তার বাড়ির দেয়ালের প্রহরী হিসেবে কাজ করছে।
ছিঁচকে চোরেরা দুই এক বাড়িতে চুরি করে কিংবা ভীরের মাঝে পকেট মেরে পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে বেড়ায় মাসের পর মাস। আর বড় বড় অপরাধীরা পুলিশের সঙ্গে বসে একসাথে চা-সিগারেট খায়।
*** এটি ২০১৪ বইমেলায় প্রকাশিতব্য আমার দ্বিতীয় উপন্যাস 'গোধূলি এর ১০ম অধ্যায়। ব্লগের বন্ধুদের সাথে প্রথম শেয়ার করছি। কেমন লাগল জানাবেন। উৎসাহমূলক প্রশংসাসুলভ মন্তব্যের চেয়ে যৌক্তিক ও গঠনমূলক সমালোচনার জন্য অপেক্ষায় আছি। সবাইকে ধন্যবাদ। :-)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৬