somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল্লাহমুখী বান্দার সাহায্য অবধারিত!

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


" দাখিল পরীক্ষা দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছি। স্বপ্ন ঢাকাতে কোনো একটি কাজ জোগার করা। বিশেষভাবে বলতে গেলে গ্রামে মাদরাসায় পড়া অবস্থায় বাজারের ফার্মেসীতে ফাকে ফাকে সময় দিতাম। আর তাতে কিছু ঔষধের জ্ঞান হয়েছে। সেটাই আজ আমার ভরসা। আমার এলাকার কয়েকজন বিত্তশালীরা ঢাকাতে ঔষধের ব্যবসা করেন। সেখানেই কাজ পাওয়ার আশ্বাস পেয়ে ঝালকাঠি থেকে ঢাকার পথে পা বাড়িয়েছি।

আমাদের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। বলতে গেলে খুবই গরীব ঘরের ছেলে আমি।। দুইভাই একবোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। পড়াশুনা খুব ভালোভাবে করতে পারিনি। তাই ভাবলাম জীবনে কিছু একটা করতে হলে কোনো একটি কাজ শিখতে হবে। আর সামনে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার মত কোনো অবস্থাও নেই আমার। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঢাকাতে কোনো একটি কাজ করে নিজের পড়াশুনা চালিয়ে যাবো এবং পরিবারকেও যতটা সম্ভব সাহায্য করবো।

ইদানিং হঠাৎ হঠাৎ রাতে ঝড় ওঠে। আর সেকারণে নদী পথের যাতায়াত একটু ভয়ের। তাই "সাবধানের মাইর নেই" ভেবে মা বলে দিয়েছে বরিশাল থেকে বড় লঞ্চে উঠতে। মায়ের কথা অনুযায়ী বরিশালে এসে "সুন্দরবন-৭" উঠেছি। লঞ্চে উঠে মনে মনে ভাবলাম আমি যেন কোনো আলেম বা হুজুরের কাছাকাছি বসার জায়গা পাই। লঞ্চে উঠে দেখি প্রচন্ড ভির। ভাবলাম আমি হুজুর মানুষ, এই ভিরের মধ্যে কারো বিছানার কোণে একটু বসার অনুরোধ করলে, আমাকে জায়গাতো দিবেইনা, উল্টো ঝাড়ি দিবে। তাই কোথাও কোনো জায়গা না পেয়ে, খুঁজতে লাগলাম কোনো হুজুর বা মাদরাসা ছাত্র যাত্রী হিসেবে আছে কিনা!

অবশেষে দোতালায় এক হুজুরকে দেখতে পেলাম। তার কাছে বসার সাহায্য চাইলে তিনি আমাকে হাসিমুখেই বসতে দিলেন। শুকরিয়া আদায় করলাম আল্লাহ আমার ক্ষুদ্র ইচ্ছাটিও পূরণ করেছেন। অতপর রাতে যখন ভারা উঠাতে আসলো লঞ্চ কর্তৃপক্ষ, পাশের একজনকে জিজ্ঞেস করলাম ভারা কত করে ভাই? বলল ২০০ টাকা। মনে মনে ভাবলাম, আমার কাছে আছে ২৪০ টাকা। লঞ্চভারা ২০০ টাকা হলে বাকিটা পথ আমি কিভাবে যাবো্? রাতেওবা কী খাবো? আল্লাহর কাছে বললাম আল্লাহ! তুমি আমাকে ২৪০ টাকার মধ্যে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিও।

আশেপাশের সবার ভারা উঠিয়ে আমার ভারা চাইলে আমি বললাম, কত করে ভারা?
বললো ২০০ টাকা।
আমি বললাম ২০০ টাকাই দিতে হবে?
হ্যাঁ ২০০ টাকা দেন।
আমি অনুপায়ে পকেটে হাত দিয়েছি টাকা বের করার জন্য......
ঠিক এমন সময় ভারা উত্তলোন করা ব্যক্তি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কী করেন?
আমি বললাম, আমি মাদরাসার ছাত্র। দাখিল পরীক্ষা দিয়ে ঢাকাতে যাচ্ছি একটি কাজের খোঁজে!
দেখলাম কিছুক্ষণ তিনি চুপ করে থেকে কী যেন ভাবলেন!
তারপর আমাকে বললেন, দেন, আপনি ১০০ টাকা দেন।
খুশিতে ও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাতে আমার চোখ দিয়ে পানি এসে গেলো!
আমি ১০০ টাকা বের করে দিলাম।

আর ঠিক তখনই আশেপাশের কয়েকজন যাত্রীভাই ভেটো দিয়ে বললেন, ভারা ২০০ টাকা করে, আমাদের কাছ থেকে নিলেন ২০০টাকা। হুজুরের কাছ থেকে ১০০ টাকা নিলেন কেনো?

লঞ্চের কর্তৃপক্ষ জবাবে যা বললেন, তাতে তৃপ্তি আর প্রশান্তির শীতলতা আমার হৃদযে ছড়িয়ে পড়লো!
তিনি আমাকে দেখিয়ে বললেন, উনি মাদরাসার ছাত্র। আল্লাহর কালাম ও রাসুলের হাদীস পড়াশুনা করেন, তাকে যদি আমি একটু সাহায্য করি, হয়ত এর উছিলায় আল্লাহ আমার কোনো পাপ মাফ করে দিতে পারেন।

একথা শুনে আর কেউ কোনো কথা বললোনা। আমি ইশার নামাজ পড়ে আল্লহর কাছে অজস্র শুকরিয়া আদায় করলাম্। হে আল্লাহ যার উছিলায় তুমি আমাকে সাহায্য করেছো, কোনো না কোনো উছিলায় তাকে তুমি সাহায্য করো। তাকে তুমি ক্ষমা করো। "

আমার রুমমেট ডাঃ মোঃ শামীম শিকদারের ফার্মেসীতে একজন নতুন কর্মচারী এসেছেন গ্রাম থেকে। ওর নাম আমিনুল ইসলাম। নিজের মুখেই সে তার গ্রাম থেকে ঢাকাতে আসার এই ঘটনাটি বলেছে। ওর ছোট ছোট এই ঘটনার মধ্যে কত বড় যে শিক্ষা আছে, তা একটু খেয়াল করলেই বুঝা যায়। আল্লাহর কাছে যে যেমনই সাহায্য কামনা করেন, আল্লাহ তাকে ঠিক তেমনিই সাহায্য করে থাকেন। আল্লাহর সাহায্য অবধারিত।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×