দোকানে বসে চা খাচ্ছি। একটু দূরে দুই বন্ধুর কথোপকথোন....... আমি খেয়াল করে শুনছিলাম...
.
দোস্ত মহররমের ১০ তারিখ কিভাবে উৎযাপণ করবি?
আশুরার ২টি রোজা পালনের করবো ইনশাআল্লাহ, কারণ আশুরার রোজা রাখলে একওমরা থেকে আরেক ওমরা পর্যন্ত সকল গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আমাদের মসজিদের হুজুর জুমার বয়ানে এটা বলেছেন। আর কিছু নফল ইবাদত করবো, আর চেষ্টা করবো এই মাসে যেনো কোনো গুনাহ না করি। কারণ আল্লাহর কাছে আরবী মাসের মধ্যে ৪টি মাসের গুরুত্ব অপরীসীম। আল্লাহ সুবহানাহু অতায়ালা এই মাসগুলোতে কোনো অন্যায়, অপকর্ম করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তার সেই মাসগুলোর মধ্যে মহররম মাস অন্যতম। এটাও হুজুরের বয়ানে শুনেছি।
.
কী বলছিস এসব? তুই হুজুর হয়ে গেলি নাকি? গতবছর আমরা কী করছি মনে নেই? আমার আতশবাজিসহ পুরো এলাকাতে চান্দা তুলেছিলাম। আর টোটাল টাকা দিয়ে আমরা বিভিন্ন আয়োজন করেছিলাম। হোসেনের শোকে আমরা হায় হোসেন! হায় হোসেন!! বিলাপ করেছিরাম এবং শিন্নি করে সবাইকে খাওয়াইছিলাম। সেসব আনন্দ ফুর্তি এবারে সব মাটি হয়ে যাবে?
.
নারে বন্ধু, আনন্দ মাটি হবে কেনো? বরং আনন্দ আরো বেশি হবে কারণ, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দেখানো পথে চললে আরো বেশি আনন্দ পাওয়া যাবে। আর মহররম তো হোসের (রা.) নির্ভর নয়, মহররমের গুরুত্ব সেই আদিকাল থেকেই। দুনিয়া সৃষ্টিকাল থেকেই মহররমের গুরুত্ব অনুধাবন ও তার শুকরিয়া আদায়ে বিভিন্ন আমল করেছেন বিভিন্ন নবী রাসুলগণ। ঘটনাক্রমে মহররম মাসে হোসেন (রা.) সহ নবী বংশের অনেকেই শহীদ হয়েছেন। কিন্তু মহররম বিশেষায়িত সৃষ্টির শুরু লগ্ন থেকে অনেক কারণে। সেসব পরে এক সময় বলবো। এখন শুধু এটুকু বলি, আল্লাহ তায়াল মুসলমানদেরকে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে গায়েরী সাহায্য দিয়ে মুসলমানদের বিজয় দান করেছেন। আর তার শুকরিয়া স্বরুপ মুসলমানরা আল্লাহ সুবহানাহু অতায়ালার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপণ করে আসছে বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে। অথচ আমরা ইসলামকে না জেনে বাতিলের অনুসরণে অনেক বেদয়াতী কাজ করেছি বিগত বছরগুলোতে। এখন থেকে ঐ বেদয়াতী কাজগুরো আর করবোনা। সকল বেদয়াদ পথভ্রষ্ট! আর সকল পথভ্রষ্টতা জাহান্নামী। এসব বিষয়গুলো আমাদেরকে হুজুর খুব সুন্দরভাবে দলিল প্রমাণ দিয়ে জুমাআর বক্তব্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তুই তো গত জুমআয় আসিসনি, আগামী জুমআতে হুজুর আরো বিস্তারীত বলবেন তুই অবশ্যই আগামী জুমআতে আসবী।
.
আচ্ছা দেখি আসবো।
.
এরপরে ওরা ওখান থেকে চলে গেলো, আমি মনে মনে বললাম আলহামদুলিল্লাহ! ওদের মসজিদের হুজুর নিশ্চয়ই অনেক ভালো আলেম।
জুমআতে বিষয়ভিক্তিক আলোচনা সুন্দর ও সহজভাবে ফুটিয়ে তুললে অনেকে মানুষেরই হেদায়েতের উছিলা হতে পারে। অথচ এখনকার বেশিরভাগ মসজিদে কমিনি নির্ভর আলোচনা হয়। অর্থাৎ মসজিদ কমিটি নাখোশ হবে এমন কোনো আলোচনা করা যাবে না। তাহলে চাকুরী চলে যাবে। আবার অনেকে ইসলাম সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে জুমআর বয়ানে বিভিন্ন কিচ্ছা কাহিনী বলতে থাকে। আলোচনায় ইতিহাস বিকৃত করে। সাধারণ মুসল্লিরা তা না বুঝে বিশ্বাস করে, আর তা নিয়েই একে অপরের সাথে বিতর্ক করে, আর হুজুরদেরকে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করে। তাই গরীবের হজ্ব তুল্য এইদিনে ইসলামের সঠিক দিকগুলো সকল মুসল্লিকে বুঝিয়ে দিয়ে, সবাইকে আমলী জীন্দেগী গঠনে উৎসাহিত করা উচিত। আল্লাহ সুবহানাহু অতায়ালা আমাদেরকে সঠিকভাবে ইসলামকে বুঝার ও মানার তৌফিক দান করুন। আমিন।
.
__সাজিদ আল সাহাফ